বাংলাদেশের রেল পরিবহণের বর্ণনা

বাংলাদেশের রেল পরিবহণের বর্ণনা
Description of Rail Transport in Bangladesh
১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা থেকে জগতী পর্যন্ত ৫৩ কি.মি. রেল লাইন নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেল যুগে প্রবেশ করে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের প্রায় ২৭০৬ কি.মি. রেলপথ নিয়ে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে গঠিত হয়। তন্মধ্যে ৮৭ কি.মি. ব্রডগেজ, ১৮০০ কি.মি. মিটারগেজ এবং ৩১ কি.মি. নেরোগেজ রেলপথ ছিল। ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর পর্যন্ত রেলপথ টানা হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটটি এবং ঢাকা চট্টগ্রাম পথে চলাচলকারী কর্ণফুলি এক্সপ্রেস বেসরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। অচিরেই অন্যান্য পথেও বেসরকারি তত্ত্বাবধানে রেল চলাচল শুরু হবে।
রেলপথের পরিমাণ ঃ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর সাবেক পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ের ২৮৫৭ কি.মি. রেলপথ নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময় মোট রেলপথের মধ্যে ৯২ কি.মি. ব্রডগেজ এবং ১৯৩৪ কি.মি. মিটারগেজ রেলপথ ছিল। ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের সর্বমোট রেলপথের পরিমাণ প্রায় ২,৮৭৭ কি.মি। তন্মধ্যে ৬৫৯ কি.মি. ব্রডগেজ, ১৮০৮ কি.মি. মিটারগেজ এবং ৪১০ কি.মি. ডুয়েল গেজ রেলওয়ে। সাবেক পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে ১৯৪৭-৭১' পর্যন্ত মোট ১৫১ কি.মি. রেলপথ নির্মাণ করে । তন্মধ্যে ৪৮ কি.মি. ব্রডগেজ এবং ১০৩ কি.মি. মিটার গেজ। এছাড়া এ সময় ৩১ কি.মি. নেরোগেজ পথকে মিটার গেজে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৭৪টি ব্রডগেজ রেলপথের এবং ৩৪২টি মিটার গেজ রেলপথের স্টেশনসহ ৫১৬টি স্টেশন আছে ।
পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ ঃ ১৯৭১-৭২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে ১,৯৩,৪১,০০০ যাত্রী বহন করে । পক্ষান্তরে ২০০৯-১০ সালে যাত্রী বহনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩০ কোটি ৫০ লক্ষে (কি.মি. হিসেবে) দাঁড়ায় । ১৯৭২-৭৩ সালের তুলনায় এটি প্রায় ৪২০ ভাগ বেশি । বর্তমানে আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু করায় রেলওয়ের যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯-২০১০ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে মোট প্রায় ৭১ কোটি মেট্রিক টন মাল (কি.মি. হিসেবে) পরিবহণ করে। এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট আয় হয় প্রায় ৫৬৬.৩০ কোটি টাকা। ২০০৯-২০১০ সালে পরিবাহিত পণ্যের মধ্যে ১৬% গম, ৯% পাটজাত দ্রব্য, ১২% চাল ও ধান, ৫% সিমেন্ট, ৪% লবণ, ৩% কয়লা, ৫% পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্য ও ১০% চিনি ছিল ।
রেলপথের ধরন ঃ ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশে তিন ধরনের রেলপথ ছিল । যথা-(ক) ব্রডগেজ, (খ) মিটার গেজ এবং (গ) নেরো গেজ । ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের রেলপথগুলো মিটার গেজ এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের রেলপথগুলো ব্রডগেজ । ১৯৭০-৭১ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে ৩১ কি.মি. নেরোগেজ রেলপথকে ব্রডগেজে রুপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে সাবেক পটুয়াখালী, বরগুনা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি জেলায় কোন রেলপথ নেই । অবশ্য ইতোমধ্যে বরিশাল জেলায় রেলপথ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে এবং সিরাজগঞ্জ যমুনা সেতু হয়ে টাঙ্গাইল পর্যন্ত রেল লাইন চালু হয়েছে । এর ফলে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রেলওয়ে সংযোগ প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে । জামতৈল (যমুনা সেতু হয়ে) হতে জয়দেবপুর পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ কাজ শেষ হলে দুই অঞ্চলের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে ।
·
রেলওয়ের সরঞ্জাম ঃ ১৯৭১-৭২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের ১৪৮টি ব্রডগেজ, ৩৪৭টি মিটার গেজ ও ৬টি ডুয়েলগেজ ইঞ্জিন (সর্বমোট ৫০১টি), ১৬৩৯টি কোচ এবং ১৬,০৭১টি মালবাহী ওয়াগন ছিল। ২০০৯-২০১০ সালে রেলওয়ের ইঞ্জিনের সংখ্যা ছিল ২৮৬টি, যাত্রীবাহী গাড়ির সংখ্যা ১৪৭২টি, মালবাহী ওয়াগনের সংখ্যা ৯৯৭০টি এবং রেলওয়ের অন্যান্য পরিবহণের সংখ্যা ৩৩ খানা ।
বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রেলপথসমূহ ঃ বাংলাদেশের রেলওয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম অনুযায়ী একে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায় । যথাঃ (ক) বৃটিশ আমলের রেলপথ, (খ) পাকিস্তান আমলের রেলপথ ও (গ) বাংলাদেশ আমলের রেলপথ। আবার গেজের শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী বাংলাদেশ রেলওয়েকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায় ।
(ক) মিটার গেজ রেলপথ ঃ বর্তমানে বাংলাদেশে ১৮০৮ কি.মি. মিটার গেজ রেলপথ আছে । যথাঃ
১। চট্টগ্রাম-লাকসাম-আখাউড়া-ভৈরব বাজার-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। এ রেলপথটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রেলপথ ৷
২। ঢাকা-টঙ্গী-ময়মনসিংহ-জামালপুর-বাহাদুরাবাদ ঘাট রেলপথ ।
৩ । জামালপুর-জগন্নাথগঞ্জ ঘাট রেলপথ ।
৪ । লাকসাম-চাঁদপুর এবং লাকসাম-মাইজদি রেলপথ ।
৫। ভৈরব বাজার -কিশোরগঞ্জ-গৌরিপুর-ময়মনসিংহ রেলপথ । ৬। আখাউড়া-সিলেট-ছাতক রেলপথ ।
৭ । গৌরিপুর-নেত্রকোনা মহনগঞ্জ রেলপথ ।
৮। হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ রেলপথ ।
৯ । চট্টগ্রাম-দোহাজারী এবং চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-নাজিরহাট-ফটিকছড়ি রেলপথ ।
১০ । শান্তাহার ফুলছড়ি-লালমনিরহাট-হাতিবান্দা রেলপথ ।
১১ । বোনাপাড়া-বগুড়া-শান্তাহার রেলপথ ।
১২। রংপুর-পার্বতীপুর-দিনাজপুর-পঁচাগর রেলপথ ইত্যাদি ।
(খ) ব্রডগেজ রেলপথ ঃ ২০১৩-২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্রডগেজ রেলপথের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৫৯ কি.মি. ও ডুয়েল গেজ ৪১০ কি.মি. । এর অধিকাংশই রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে অবস্থিত । যথাঃ
১। খুলনা-যশোর-দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা-ঈশ্বরদী-শান্তাহার-পার্বতীপুর-সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেলপথ। এটি বৃহত্তম রেলপথ ।
২। ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ-ভুয়াপুর রেলপথ ।
৩ । ঈশ্বরদী-আবদুল্লাপুর-রাজশাহী-আমনুরা-ভোলারহাট রেলপথ ।
৪। কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি-ফরিদপুর এবং কুষ্টিয়া-গোয়ালন্দ কাশিয়ানী রেলপথ ।
-
(গ) ডুয়েল গেজ ঃ বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৭৪.৮৩ কি.মি. ডুয়েল গেজ রেল লাইন আছে । বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য রেল জংশন/রেলকেন্দ্র
১। মিটার গেজ ঃ চট্টগ্রাম, পাহাড়তলি, ফেনী, লাকসাম, আখাউরা, ভৈরব বাজার, ঢাকা, টঙ্গি, কুলাউড়া, সিলেট, ময়মনসিংহ, জামালপুর, গৌরিপুর, নরসিংদী ও শায়েস্তাগঞ্জ ।
২। ব্রডগেজ : ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, যশোর, আবদুল্লাহপুর, কালুখালী, পাঁচুড়িয়া, খুলনা, শান্তাহার, পার্বতীপুর সৈয়দপুর ।
বাংলাদেশ রেলপথের বর্তমান অবস্থা Present Scenario of Bangladesh Railway
রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি পরিবেশ বান্ধব, নিরাপদ এবং সুলভে মালামাল পরিবহণের নির্ভরশীল মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের রেল লাইনের দৈর্ঘ্য ২,৮৭৭ কি.মি. (ব্রড গেজ ৬৫৯ কি.মি., ডুয়েল গেজ ৪১০ কি.মি. এবং মিটার গেজ ১,৮০৮ কি.মি.)। বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর জামতৈল হতে জয়দেবপুর পর্যন্ত নির্মিত ডুয়েল গেজ রেল ট্র্যাক পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত করেছে ।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট ৪৬টি প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ৩,৯৫১.২৭ কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ থেকে ২০১২৩-১৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের সার্বিক কর্মকান্ড সারণিতে তুলে ধরা হলো। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ের বাণিজ্যিক ও আর্থিক সফলতা অর্জনে এবং পেশাগত জ্ঞানের ভিত্তিতে পরিচালনার লক্ষ্যে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন অর্পন ও এর পরিচালনা কাঠামো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, এডিবি'র সহায়তায় অর্গানাইজেশনাল রিফর্মস শীর্ষক একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ের বিভিন্ন কর্মকান্ডে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্তকরণের বিশেষ কার্যক্রমসহ নিম্নলিখিত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
১। স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ ও নিয়মিত অবসর গ্রহণের মাধ্যমে কর্মচারী সংখ্যা ৫৮,০০০ হতে ২৭,৯৭১ তে হ্রাস;
২। অলাভজনক শাখা লাইন, স্টেশন, ওয়ার্কশপ, শেড ইত্যাদি এবং অলাভজনক যাত্রিবাহী গাড়ি বন্ধ করা;
৩। পাবলিক সার্ভিস অবলিগেশন (পিএসও) চালু করা;
৪। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ট্যারিফ নির্ধারণ এবং
৫ । রলওয়ের কার্যক্রমে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্তকরণ ।
রেলওয়ের খাতের সার্বিক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে এর সামগ্রিক কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে এডিবি'র সহায়তায় ২৫27.43 কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে সেক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট' শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে । এ প্রকল্পের কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে (ক) সিগন্যালিংসহ টংগী-ভৈরববাজার পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ এবং (খ) বাংলাদেশ রেলওয়ের সংস্কার । ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়েকে যুগোপযোগীকরণ এবং আধুনিকায়ন এ সকল কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রমকে ৬টি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত মডিউলে বিন্যস্ত করে সুসমন্বিতভাবে এ মডিউলগুলো অনুসরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়েকে অধিকতর গতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে । এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়েকে গ্রাহকমুখি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত কর; লাইনস অব বিজনেসে পুনর্গঠনকরণ: সম্পদ রেজিস্টার প্রস্তুতসহ আর্থিক, প্রশাসনিক ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নতকরণ প্রভৃতি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া, পরামর্শ সেবা ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সংস্কারে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা প্রদানেরও উদ্যোগ এ প্রকল্পে গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি সরকারি মালিকানাধীন কার্যকরি কর্পোরেট সংস্থায় পরিণত হবে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]