বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেলপথের গুরুত্ব আলোচনা কর ।

রেলপথের গুরুত্ব
Importance of Railway to the Economy of Bangladesh
বাংলাদেশের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি দেশের প্রধান প্রধান শহর, বন্দর, বাণিজ্য ও শিল্পকেন্দ্রের সাথে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংযোগ সাধন করেছে। বাংলাদেশ নৌ পরিবহণের গুরুত্ব হ্রাস পাওয়ার সংগে সংগে অধিকমাত্রায় দূরবর্তী স্থানে পণ্য পরিবহণের জন্য রেলওয়ের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নে পরিবহণের মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশের রেলপথের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো ।
.
১। পণ্য পরিবহণ ঃ বাংলাদেশে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে রেলওয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর, শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রের সাথে রেলওয়ের যোগাযোগ রয়েছে বলে প্রচুর পরিমাণ শিল্পজাত পণ্য একস্থান হতে অন্যস্থানে পরিবাহিত হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে রেলপথের সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে রপ্তানিযোগ্য কাঁচামাল বন্দরে আনয়ন করা হয়। ২০১৩-১৪ সালে বাংলাদেশের রেলওয়ে পরিবহণের মাধ্যমে প্রায় ৬৭৭.৩৫ টন কি.মি হিসাবে (মিলিয়ন) পণ্য সামগ্রী পরিবাহিত হয় ।
২। যাত্রী পরিবহণ ঃ বাংলাদেশের পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল, ঝালকাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও রাঙ্গামাটি জেলা ব্যতীত সর্বত্রই রেলপথ আছে । এ রেলপথের মাধ্যমে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী একস্থান হতে অন্যস্থানে আসা যাওয়া করে। রেলপথে ভিন্ন ভিন্ন ভাড়ার স্তর রয়েছে বলে সকল শ্রেণীর যাত্রী রেলপথের মাধ্যমে পরিবাহিত হতে পারে। সুতরাং যাত্রী পরিবহণ করে বাংলাদশের রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৩। কৃষি উন্নয়ন ও কৃষি উন্নয়নে রেলপথের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত বা দেশে উৎপাদিত কৃষি উপকরণ তথা সার, বীজ, কীটনাশক ঔষধ, মাড়াই কল, সেচ যন্ত্রপাতি প্রভৃতি শহরাঞ্চল থেকে জামালে কৃষকদের নিকট পৌঁছে দিতে রেল পরিবহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার গ্রামানের কৃষিপণ্য শহর বা বন্দরে পরিবহণের কাজেও রেলপথ ব্যবহৃত হয়। এভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কৃষি উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে ।
৪। সুষম উন্নয়ন ও একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুষম উন্নয়ন অপরিহার্য । রেল পরিবহণ উৎপাদনের উপকরণগুলো সুষমভাবে কটন করে দেশে সুষম উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। এছাড়া রেল পরিবহণ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পদ বণ্টনে সামঞ্জস্য বিধান করে। এতে কোন বিশেষ স্থানে সম্পদের কেন্দ্রীভূতকরণ হয় না ।
৫। রাজনৈতিক যোগাযোগ : বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত শহর কেন্দ্রিক। শহরেই রাজনৈতিক দলগুলোর সংগঠন ও প্রসারণ ঘটে। এ সকল রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি, আদর্শ গ্রামাঞ্চলের মানুষের যারে পৌঁছানোর জন্য রেলওয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
৬। শহর ও গ্রামের মধ্যে যোগাযোগ ও রেল পরিবহণ ব্যবস্থা গ্রাম ও শহরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। গ্রাম হতে কৃষিপণ্য শহরে এবং শহর হতে শিল্পপণ্য গ্রামে পরিবাহিত হয় । ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এছাড়া যাত্রী সাধারণও কম খরচে গ্রাম ও শহরের মধ্যে চলাচল করতে পারে।
৭। জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলা ও দেশের বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক অথবা রাজনৈতিক দুর্যোগ দেখা দিলে দ্রুত পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজন। পরিবহণের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশের রেলপথ রিলিফ, সাহায্য, খাদ্যদ্রব্য, সৈন্য, অস্ত্র, বস্ত্র ইত্যাদি সরবরাহ করে দেশের জরুরি অবস্থার মোকবিলা করছে।
৮। কর্মসংস্থান ও রেলওয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী, কর্মকর্তা চাকরি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। রেলওয়েতে দিনমজুর হিসেবেও বহু লোক কর্মরত আছে। এছাড়া রেলওয়ের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অনেকে শ্রম নিয়োগ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে ।
৯। সংস্কৃতি আদান-প্রদান ও আয়তনে বাংলাদেশ ক্ষুদ্রাকৃতির দেশ হলেও এদেশের বিভিন্নাঞ্চলের মানুষের আচার ব্যবহার, চালচলন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। রেলওয়ে বাংলাদেশের বিভিন্নাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সংস্কৃতি স্থানান্তরে সাহায্য করে ।
১০। শিল্পোন্নয়ন ও কাঁচামাল সংগ্রহ ও উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ করে রেলওয়ে শিল্পোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালান করে। বাংলাদেশে বড় বড় শিল্পাঞ্চলগুলো রেলপথের সন্নিকটেই অবস্থিত, শ্রমিক সরবরাহেও রেলপথ বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
১১। রাজস্ব বৃদ্ধি ঃ বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি খাতের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন। প্রতি বছর রেলপথের মাধ্যমে প্রচুর যাত্রী ও পণ্য পরিবাহিত হয়। 'এতে সরকারের যথেষ্ট রাজস্ব আয় হয়। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি রোধ করতে পারলে রাজস্বের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেত। দেশের উন্নয়ন কাজে এসব রাজস্ব ব্যয়িত হয় ।
১২। দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা ঃ রেলপথের মাধ্যমে অত্যন্ত সহজভাবে কৃষি ও শিল্পপণ্য উদ্বৃত্ত অঞ্চল থেকে ঘাটতি অঞ্চলে সরবরাহ করা যায় ফলে দেশে দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা বিরাজ করে । উপরের আলোচনা হতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে দেশের অর্থনীতিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
বাংলাদেশের রেল পরিবহণের সমস্যা Problems of Rail Transport of Bangladesh
বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে এটি যথার্থ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ সমস্ত সমস্যাগুলো কিছুটা ঔপনিবেশিক আমলের সৃষ্টি । নিম্নে বাংলাদেশ রেলওয়ের সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হলো ।
১। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ঃ বাংলাদেশের রেলপথের উন্নয়নে সুষ্ঠু পরিকল্পনা খুব কমই হয়ে থাকে । রেলপথ নির্মাণ, সম্প্রসারণ, মেশিন নির্মাণ, যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন, মেরামত, নতুন বগি আমদানি, লোক নিয়োগ বা প্রশিক্ষণের ব্যাপারে কখনোই কোন বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা গ্রহণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ের সমস্যা দিনে দিনে বেড়েই চলছে ।
২। অর্থনৈতিক সমস্যা : একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা বরাদ্দ করা সম্ভবপর হয় না। অর্থনৈতিক কারণে যমুনার ওপর রেলসেতু নির্মাণ করে পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের রেলওয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন এখনোও সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। এছাড়া অর্থের অভাবে গত ২৪ বছরে রেলওয়ের কোন নতুন লাইন সম্প্রসারণ হয়নি, বরং সংকোচিত হয়েছে।
৩। ত্রুটিপূর্ণ সংকেত পদ্ধতি ঃ বাংলাদেশ রেলওয়ের সিগনালিং সিস্টেম বা সংকেত পদ্ধতি অত্যন্ত পুরানো আমলের। সংকেত প্রদানকারীকে আউটার সিগনালে গিয়ে ট্রেনের গতিবিধির সংকেত দিতে হয়। এ অবৈজ্ঞানিক সংকেত দানের ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে ।
৪। প্রশাসন ব্যবস্থার অদক্ষতা : বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা অত্যন্ত অদক্ষ। স্বাধীনতার পর এ সমস্যা আরও তীব্রতর হয়। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে রেলওয়ে ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনের ক্ষমতা তাদের নেই । জাতীয়তাবোধ ও দেশ প্রেমের অভাব, অদক্ষ লোক নিয়োগ, প্রশিক্ষণের অভাব এবং অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির কারণে প্রশাসন ব্যবস্থাকে উন্নত করা সম্ভবপর হচ্ছে না ।
৫। স্লিপারের অভাব ও রেলের গতি ঠিক রাখা, দুর্ঘটনা এড়ানো এবং রেল লাইনকে শক্তিশালী রাখার জন্য লাইনের নিচে স্লিপার বসাতে হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের লৌহ নির্মিত স্লিপারগুলো পাকিস্তানি আমলের। স্বাধীনতার পর লৌহ নির্মিত বা কাঠ নির্মিত স্লিপারের অভাবে পুরানো স্লিপারগুলো পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে না।
৬। ইঞ্জিন ও বগির অভাব ঃ প্রয়োজনের তুলনায় বাংলাদেশ রেলওয়েতে ইঞ্জিন ও বগির সংখ্যা অত্যন্ত কম । ফলে একই ইঞ্জিন ও বগি বারংবার ব্যবহারের ফলে মাঝে মাঝেই ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়।
৭। মান্ধাতার আমলের রেলট্রাক ঃ বাংলাদেশের রোকগুলো বৃটিশ আমলে স্থাপিত। নিম অনুযায়ী ৪০ বছর পর রেলট্রাকগুলো তাদের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। অথচ বাংলাদেশ রেলওয়ের রেলট্রাকগুলোর বয়স প্রায় ৭০/৮০ বছর। এ সকল মান্ধাতার আমলের রেলট্রাক দিয়ে আধুনিক রেলওয়ের উন্নয়ন সম্ভব নয় ।
৮। টেলিযোগাযোগ নির্ভরতা ঃ বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব কোন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। ফলে তারা টিএন্ডটি এর ওপর নির্ভরশীল। টিএন্ডটি বোর্ডের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা রেলওয়ের কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এছাড়া টেলিফোনের তার চুরি এবং যান্ত্রিক গোলয়োগের ফলেও রেলের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয় ।
৯ । বিনা টিকিটে ভ্রমণ ঃ বিনা টিকিটে যাত্রীর সংখ্যা স্বাধীনতার পর বহুগুণে বৃদ্ধি পয়েছে । এতে রেলওয়ের রাজস্বের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে । বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ অনেকে কোন অপরাধমূলক কাজ মনে করে না। এটি নৈতিক অবক্ষয়ের ফল ।
১০। পাথরের অভাব ঃ ট্রেনের ওয়েটকে মোকাবিলা করার জন্য স্লিপারের নিচে কমপক্ষে ৮ইঞ্চি পাথর থাকার দরকার । বাংলাদেশ রেলওয়েতে পাথরের পরিমাণ গড়ে মাত্র ৪ ইঞ্চি । এতে রেল লাইনের শক্তি হ্রাস পেয়েছে।
১১। অত্যধিক ভিড় ঃ স্বাধীনতার পর রেলপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ অনেক গুণ বৃদ্ধি পেলেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়েনি । ফলে প্রতিটি ট্রেনে অসম্ভব ভিড় পরিলক্ষিত হয়। ট্রেনের অভ্যন্তর ভাগে ঠাসাঠাসি করে দাঁড়ানো ছাড়াও ট্রেনের ছাদে ও দরজায় প্রচন্ড ভিড় পরিলক্ষিত হয়। অনেক যাত্রী ট্রেনের টিকিট করেও ট্রেনে ওঠতে পারে না ।
১২। ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঃ ট্রেনের ত্রুটিবিচ্যুতি, ত্রুটিপূর্ণ রেল লাইন, দুষ্কৃতিকারীদের নাশকতামূলক কার্য, চালকের, পরিচালকের, সিগন্যালম্যানের অবহেলা বা ভ্রান্তি, টেলিযোগাযোগের অব্যবস্থা প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশে ঘন ঘন রেল দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে প্রতি বছর প্রচুর জীবন ও সম্পদ ধ্বংস হয়।
১৩। ওয়াগনের অভাব ঃ বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট যাত্রীবাহী কোচ ও মালবাহী ওয়াগনের সংখ্যা মাত্র ১১,৬৪৯টি । ক্রমবর্ধমান যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের জন্য এটি একেবারে অপ্রতুল।
১৪ । ডাকাতি ও চুরি : পর্যাপ্ত রেলপুলিশের অভাব এবং কর্মে অবহেলার কারণে রেলযানের, লাইনের বা ওয়ার্কসপের যন্ত্রপাতি, কায়লা, তেল, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, স্লিপার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি চুরি রেলওয়ের একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। অনেক সময় এসব চুরি রেল কর্মচারীদের যোগসাজশে সংঘটিত হয়।
১৫। টিকিট সংগ্রহের অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ঃ রেলযাত্রীদের নিকট হতে টিকেট সংগ্রহ করার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় তাতে কোন যাত্রী ইচ্ছা করলেই পালিয়ে যেতে পারে। এতে যাত্রীরা ভবিষ্যতেও বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করতে উৎসাহ রোধ করে ।
১৬। সুযোগ-সুবিধার অভাব ঃ বিশ্বের অন্যান্য দেশের রেল যাত্রীদিগকে যে সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, সে তুলানায় বাংলাদেশে যাত্রীদের জন্য কোন সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। ট্রেনের অভ্যন্ত রে ভাঙা ও নোংরা সীট, বাথরুমে পানির অভাব এবং স্টেশনে বিশ্রামগারের অভাব ও দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানায় যাত্রীদের যাত্রা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
১৭। রেলযাত্রী ও জনসাধারণের উদাসীনতা ঃ রেলওয়ের অব্যবস্থা, চুরি, দুর্নীতি প্রভৃতি চেখের সামনে দেখেও রেলযাত্রী বা জনসাধারণ খুব উদাসীন থাকে । অর্থাৎ এ সকল সামাজিক অপরাধগুলোকে সহজেই গ্রহণ করতে জনসাধারণ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।
১৮। দক্ষতার অভাব ঃ রেল পরিবহণে দক্ষ কর্মচারীর অভাব রয়েছে। কর্মচারীদের দক্ষ করে তোলার জন্য তেমন কোন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট নেই ।
উপরে উল্লিখিত সমস্যাগুলো ছাড়াও আরও বহু সমস্যা রেলওয়ের স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যাহত করছে। এ সকল সমস্যাগুলো কিছুটা হ্রাস করতে পারলেও রেলওয়ে তার জীবন ফিরে পাবে ।
রেল পরিবহণের সমস্যা সমাধানের উপায় Means to Solve the Problems of Rail Transport
বাংলাদেশ রেলওয়ের সমস্যাগুলো নিম্নোক্তভাবে সমাধান করা যেতে পারে ।
১। দক্ষ প্রশাসন ঃ দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা যে কোন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের চাবিকাঠি। দক্ষ ব্যবস্থাপনা সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে সর্বাধিক সুবিধা আদায় করতে পারে । বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রশাসনের সর্বস্তরে দক্ষ ও যোগ্য লোক নিয়োগ করে দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
২। ডাকাতি ও চুরি ঃ রেলওয়ের সম্পদ চুরি অচিরেই বন্ধ করতে হবে। এটি অত্যন্ত কঠিন কাজ । কারণ এর সাথে রেলওয়ের অনেক কর্মচারী জড়িত থাকে । কড়া হিসাবরক্ষণের পদ্ধতি প্রয়োগ করে এবং নিরাপত্তা প্রহরীর ব্যবস্থা করে এ সমস্যার আংশিক সমাধান করা যেতে পারে ।
৩। আধুনিক যন্ত্রপাতির সরবরাহ ঃ রেল পরিবহণকে নিরাপদ ও আনন্দদায়ক করার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে ।
৪। সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ঃ বাংলাদেশ রেলওয়ের সংস্কার, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের প্রয়োজন। পরিকল্পনা যেন শুধু ফাইলের ভিতরেই সীমাবদ্ধ না থাকে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
৫ । বিনা টিকিটে ভ্রমণ রোধ ঃ বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ বাংলাদেশে এক নিয়মিত ব্যাপার । একে অনেকেই কোন অপরাধ বলে মনে করে না । কঠোর পাহারার ব্যবস্থা করে এর আংশিক সমাধান করা যেতে পারে । তবে জনগণের নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন না ঘটলে এ সমস্যার মূলোৎপাটন সম্ভব নয় ।
৬। অর্থনৈতিক সুবিধা ঃ রেলওয়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য বাজেটের পরিমাণ বাড়াতে হবে । রেলওয়ে তাদের নিজস্ব অব্যবহৃত স্থায়ী সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করতে পারে ।
৭। দুর্ঘটনা হ্রাস ঃ নতুন রেলট্রাকের ব্যবস্থা করে, ত্রুটিপূর্ণ স্লিপার বদলিয়ে, স্লিপারের নিচে পর্যাপ্ত পাথরের ব্যবস্থা করে, নতুন ইঞ্জিন আমদানি করে, সিগনালিং সিস্টেমের উন্নয়ন সাধন করে এবং সর্বোপরি রেল কর্মচারীদের সততা ও দায়িত্ব জ্ঞান বাড়িয়ে দুর্ঘটনা হ্রাসের ব্যবস্থা করতে হবে ।
৮। রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা ঃ রেল দুর্ঘটনা হ্রাস করবার জন্য ইঞ্জিন, রেলগাড়ি, রেল লাইন ও রেলওয়ের অন্যান্য যন্ত্রপাতি সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রক্ষণাবেক্ষণ কার্যে দক্ষ লোক নিয়োগ করা একান্ত প্ৰয়োজন ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]