শিক্ষা নীতি - ২০১০ জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

শিক্ষা ও প্রযুক্তি Education and Technology
সঠিক শিক্ষা কাঠামো এবং যথাযথ শিক্ষা পদ্ধতি দেশের উন্নয়নের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক । তাই শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। দিন বদলের ইশতেহার, রূপকল্প-২০২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুগোপযোগী ও কর্মমূখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের পদক্ষেপ হিসেবে ২৪টি লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯-১০ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর মেয়াদে জাতীয় শিক্ষা নীতি- ২০১০” ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে। মানবতার বিকাশ এবং জনমুখী উন্নয়নে ও প্রগতিতে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, নিজের এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলাই এ শিক্ষা নীতির মূল উদ্দেশ্য ।
শিক্ষা নীতি - ২০১০ Education Policy - 2010
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট সরকার প্রতিষ্ঠার পর জাতির সামনে এক নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয় । দিন বদলের ইশতেহার, ভিশন-২০২১ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য, জনগণের অভূতপূর্ব সমর্থন এবং প্রত্যাশা এই সম্ভাবনা বাস্তয়বায়নের বিপুল সম্ভাবনা সৃষ্টি করে দেয়। দায়িত্ব গ্রহণের কিছুকাল মানসিকভাবে বেশী কর্মক্ষম হয়। এজন্য দেশের মানব সম্পদের উন্নয়ন করতে হবে এসব মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে ।
১১। যুব ও ক্রীড়া উন্নয়ন ঃ যে কোনো দেশের যুবকরা দেশের সর্বাধিক সম্ভাবনাময় শ্রমশক্তি । তাই যুব সমস্যার গভীরতা উপলদ্ধি করে দেশের বেকার যুবকদের দক্ষতা বৃদ্ধি উদ্দেশ্যে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ঋণ সহায়তা প্রদান, যুব অনুদান ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে যুব সমাজকে মানব সম্পদে পরিণত করার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ প্রয়োজন ।
১২। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও মানব সম্পদ উন্নয়নে দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া উপায় নেই । কী সরকারি, কী বেসরকারি সকল ক্ষেত্রেই দুর্নীতির কারণে সকল সুযোগ-সুবিধা কিছু মানুষ কুক্ষিগত করে রাখে । সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে এ অচলায়তন ভাঙ্গতে পারলে মানব সম্পদ উন্নয়নের গতি বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে । ১৩। সামাজিক নিরাপত্তা ঃ মানব সম্পদের উন্নয়নের জন্য মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা ও নাগরিক সুবিধা বাড়াতে হবে। কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের শিক্ষা ভাতা, স্বাস্থ্য ভাতা, বেকার ভাতা, দূর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ, বয়স্ক ভাতা ও ভবিষ্যত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শ্রমিকদের দক্ষতা আরও বাড়িয়ে মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটানো যায় ।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে রাতারাতি মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটে যাবে তা ঠিক নয়। তবে মানব সম্পদ উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ করে উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা গেলে বাংলাদেশের মানুষও ধীরে ধীরে মানব সম্পদে রূপান্তরিত হয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আমাদের প্রত্যাশা ।
সামাজিক খাতে মানব উন্নয়ন ও সরকারি ব্যয়-
Human Development and Public Outlay for the Social Sector

দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক অবস্থার উন্নয়নকল্পে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বৃদ্ধি করা হয়েছে । যার ফলে মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য সামাজিক খাতে বিনিয়োগও বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক খাত উৎপাদন, আয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অধিকতর মূল্য সংযোজনে যথেষ্ট অবদান রাখে । এ কারণেই ১৯৯৫ সালে কোপেনহেগেন-এ অনুষ্ঠিত 'সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলন' এর ঘোষণা মোতাবেক বাংলাদেশ সরকার শতকরা ২০ ভাগের অধিক হারে অর্থ সামাজিক খাতে ব্যয় করে আসছে। বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতকে মানব সম্পদ উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে । তাই গত বছর বাজেটে শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকার বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়নের পর্যাপ্ত বরাদ্দ রেখে বাস্তবসম্মত কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সূচকের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে। ফলে প্রজনন হার হ্রাস, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস, যক্ষ্মা ও AIDS বিস্তার রোধ, গড় আয়ু বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনের মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে।
২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত সামাজিক খাতে উন্নয়ন এবং অনুন্নয়ন বাজেট-এর সমন্বিত বরাদ্দ ও বরাদ্দের গতিধারা সারণিতে দেখানো হলো। লক্ষ্যণীয় যে, এ খাতে গত এক দশকে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন বাজেট মিলিয়ে মোট বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অর্থ বরাদ্দ Primary and Mass Education
সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালের মধ্যে সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। এ প্রেক্ষাপটে সরকার প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে এ খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিয়ে আসছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১১,৮৫৩.০৯ কোটি টাকা। ২০১১ সালের মধ্যে বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী একশত ভাগ ছেলে-মেয়েকে বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিতকরণ এবং ২০১৪ সালের মধ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের নিমিত্ত ইতোমধ্যে কতগুলো কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল উপবৃত্তি ৪০ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উন্নীতকরণ, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন এবং দেশের সকল উপজেলাসমূহকে মৌলিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা। সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ে ভর্তি, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, উপবৃত্তি ও ছাত্র-শিক্ষক সংযোগ ঘন্টা বৃদ্ধির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে সরকার যুগান্তকারী কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেছে উপবৃত্তি প্রকল্প, তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৩), রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন প্রকল্প, দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি, শহরের কর্মজীবি শিশুদের জন্য মৌলিক শিক্ষা প্রকল্প (২য় পর্যায়) এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য সাক্ষরতা-উত্তর ও অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্প-২।
বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৪৯,৫৩৯টি । এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দাড়িয়েছে ১,০৬,৮৫৮টি (মাদ্রাসাসহ)। প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্রী ভর্তির সংখ্যা ও হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে । ১৯৯১ সালে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অনুপাত ছিল ৫৫ : ৪৫। বর্তমানে তা প্রায় ৪৯.৯ ঃ ৫০.১ এ উন্নীত হয়েছে । সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতকরা ৬০ ভাগ পদ মহিলাদের নিয়োগের বিধান প্রবর্তনের ফলে মহিলা শিক্ষকের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহিলা শিক্ষকের সংখ্যা ১৯৯১ সালে ২১.০৯ শতাংশ থেকে বর্তমানে প্রায় ৬৪.২.৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত তিন বছরে মহিলা শিক্ষক নিয়োগের হার প্রায় ৭৪ শতাংশ । প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির হার বৃদ্ধি, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং ছাত্র-ছাত্রীর হার নিম্নের সারণিতে দেখানো হলো ।
৬। জাতি, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে আর্থসামাজিক শ্রেণী-বৈষম্য ও নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা অসাম্প্রদায়িক, বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা ।
৭। গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ বিকাশের জন্য পারস্পরিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী, বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা।
৮। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সাধনের জন্য শিক্ষাকে সৃজনধর্মী, প্রয়োগমুখী উৎপাদন সহায়ক করে তোলা, শিক্ষার্থীদেরকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলীর বিকাশে সহায়তা প্রদান করা ।
৯। মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে বিকশিত চিন্তাশক্তি কল্পনাশক্তি এবং অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতি স্তরে মানসম্পন্ন প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করা ।
১০ । বিশ্ব পরিমণ্ডলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিষয়ে উচ্চমানের দক্ষতা সৃষ্টি করা ।
১১ । শিক্ষাকে ব্যাপকভিত্তিক করার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া, শ্রমের প্রতি শিক্ষার্থীদেরকে শ্রদ্ধাশীল ও আগ্রহী করে তোলা এবং শিক্ষার স্তর নির্বিশেষে আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হওয়ার জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষায় দক্ষতা অর্জনে সমর্থ করা ।
১২। বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে মেধা ও প্রবণতা অনুযায়ী স্থানীক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষা লাভের সমান সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা, শিক্ষাকে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করা ।
১৩। সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে সম-মৌলিক চিন্তা চেতনা গড়ে তোলা এবং জাতির জন্য সম-নাগরিক ভিত্তি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সবধারায় শিক্ষার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে এক ও অভিন্ন শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যবই বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ । এই উদ্দেশ্যে মাধ্যমিক স্তরেও একইভাবে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে পাঠদান ।
১৪ । প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত চরিত্র গঠনে সহায়তা করা ।
১৫। জ্ঞানভিত্তিক তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর (ডিজিটাল) বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে (ICT) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য (গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি) শিক্ষাকে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করা ।
১৬ । প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিশুর/শিক্ষার্থীর সুরক্ষা ও যথাযথ বিকাশের অনুকূল আনন্দময় ও সৃজনশীল পরিবেশ গড়ে তোলা এবং সেটি অব্যাহত রাখা ।
১৭। শিক্ষার প্রত্যেক স্তরে যথাযথ মান নিশ্চিত করা এবং পরবর্তী স্তরে অর্জিত (শিক্ষার বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ) জ্ঞান ও দক্ষতার ভীত দৃঢ় করে পরবর্তী স্তরের সাথে সমন্বয় করা। এগুলো সম্প্রসারণে সহায়তা করা এবং নবতর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের সমর্থ করা। এই লক্ষ্যে শিক্ষা প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে প্রাথমিক, মা কি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ অবদান রাখার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা ।
পাই বর্তমান সরকার স্বল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করার লক্ষ্য অগ্রসর হয়। আঠারো সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষা নীতি প্রণয়ন কমিটি মাত্র চার মাসের মধ্যে একটি খস নীতি প্রণয়ন করার পর তা চূড়ান্ত না করে ব্যাপক জনতার মতামত গ্রহণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রচার করা হলে সকল মহলের বিপুল সাড়া পাওয়া যায়। সমাজের সকল স্তরের মানুষের মতামত, সুপারিশ ও পরামর্শ দিয়ে খসড়া শিক্ষা নীতিকে আরও সংশোধন সংযোজন করে চূড়ান্ত আকারে প্রণয়ন করা হয়েছে। এ শিক্ষা নীতি সম্পর্কে একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন। শিক্ষা নীতি কোনো অপরিবর্তনীয় বিষয় নয়, এটা পরিবর্তন ও উন্নয়নের পথ সবসময় উন্মুক্ত থাকবে। কোনো ভুল-ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করা যাবে। শিক্ষা একটি গতিশীল বিষয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়নের সঙ্গে সংগতি রেখে সবসময়েই এর পরিবর্তন বা আধুনিকীকরণ অব্যাহত থাকবে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যেই বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অব্যাহত উন্নয়ন ও প্রয়োগের অভিজ্ঞতা শিক্ষা নীতিকে অব্যাহতভাবে সমৃদ্ধ করবে।
জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য Objectives and Aims of National Education Policy - 2010
জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০ প্রণয়নে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বিধৃত সংশ্লিষ্ট নির্দেশনাসমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে । জাতিসংঘ শিশু অধিকার কনভেনশন, যেখানে প্রত্যেক সদস্য দেশের সকল শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ রয়েছে, সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা নীতির মূল উদ্দেশ্য মানবতার বিকাশ এবং জনমুখী উন্নয়ন ও গতিকে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, নিজের এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক, দেশ প্রেমিক ও কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলা। পাশাপাশি শিক্ষার মাধ্যমেই জাতিকে দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার বৈশিষ্ট্য ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এই শিক্ষা নীতি সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে গণমুখী, সুলভ, সুষম, সার্বজনীন, সুপরিকল্পিত, বিজ্ঞানমনস্ক এবং মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তি ও রণকৌশল হিসেবে কাজ করবে । এই আলোকে শিক্ষা নীতির নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও নীতিগত তাগিদ নিম্নরূপ
১। শিক্ষার সর্বস্তরে সাংবিধানিক নিশ্চয়তার প্রতিফলন ঘটানো এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা; সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের সচেতন করা।
২। শিক্ষার্থীদের চিন্তা-চেতনায় দেশাত্মবোধ, জাতীয়তাবোধ এবং তাদের চরিত্রে সুনাগরিকের গুণাবলীর (যেমন- ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, শৃংখলা, সৎ জীবনযাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্য, অধ্যাবসায় ইত্যাদি) বিকাশ ঘটানো ।
৩। ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ
প্রতিষ্ঠাকল্পে শিক্ষার্থীদের মননে, কর্মে ও ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করা ।
৪। জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা বিকশিত করে প্রজন্ম পরম্পরায় সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা ।
৫। দেশজ আবহ ও উপাদান সম্পৃক্ততার মাধ্যমে শিক্ষাকে শিক্ষার্থীদের চিন্তা-চেতনা ও
সৃজনশীলতার উজ্জীবন এবং তাদের জীবন-ঘনিষ্ট জ্ঞান বিকাশে সহায়তা করা ।
৮। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় মাঠ পর্যায়ে ১১০৯টি অফিসে ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়েছে এবং মাঠ পর্যায়ের সকল অফিস VPN/WAN এর মধ্যমে কেন্দ্রীয় অফিসের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে ।
৯। নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী নিয়োগ প্রদান, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে মানব সম্প উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে ।
১০। প্রতিবছর সারাদেশে পঞ্চম শ্রেণীর মুল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০০৯ সাল হতে সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্ন পত্রের মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং ২০১০ সাল এবতেদায়ী মাদ্রাসায় সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
১১ । তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৩) ২০১১-১২ অর্থবছর হতে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও বিদ্যালয় পর্যায়ে ইংরেজি শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ইংলিশ ইন একশন প্রকল্প বাস্ত বায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
১২ । উপবৃত্তি ৪০ শতাংশ হতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করাসহ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৮ লক্ষ থেকে ৭৮.১৭ লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে। স্কুল ফিডিং কার্যক্রম, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন, চর, হাওর-বাওর এলাকায় শিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং দেশের সকল উপজেলাকে মৌলিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনয়ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অবকাঠামোগত সুবিধাদি
অবকাঠামোগত উন্নয়ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের পরিবেশ উন্নয়নের পূর্বশর্ত। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত ১১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে, ৮৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনঃনির্মাণের কাজ চলছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬৬৮টি সরকারি এবং ৯৭টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনঃনির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, ৩৩৭টি সরকারি ও ১৯২টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনঃনির্মাণের কাজ চলছে এবং ৪৩৫টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কক্ষ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এছাড়া ৮৩০টি বিদ্যালয় সম্প্রসারণের কাজ চলছে। পিটিআই বিহীন নির্বাচিত ১২টি জেলা সদরে পিটিআই স্থাপন কার্যক্রম চলমান আছে । বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সমাপনী পরীক্ষা ও বৃত্তি প্রদান
অভিন্ন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে ২০০৯ সাল হতে সারা দেশে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১০ সালে এবতেদায়ী মাদ্রাসা সমাপনী পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। ২০১৩ সালের ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় অবতীর্ণ মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৫.১৯ লক্ষ এবং পাশের হার ৯৮.৫৮ শতাংশ। এবতেদায়ী মাদ্রাসা হতে সমাপনী পরীক্ষায় অবতীর্ণ মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২.৭৪ লক্ষ এবং পাশের হার ৯৫.৮০ শতাংশ। সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থীকে ট্যালেন্টপুল এবং প্রায় ৩২ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে সাধারণ বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের শ্রমজীবী শিশুদের জন্য শহর, নগরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে । শ্রমজীবী মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া
গৃহীত/গৃহীতব্য উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম
১। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্তকরণসহ পাঠ্যক্রম যুগোপযোগীকরণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে ।
২ । প্রাথমিক শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের লক্ষ্যে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি- ৩) বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন কাযক্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি ও উপস্থিতির হার বৃদ্ধি, ভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রীদের ঝরে পড়া রোধ এবং সংযোগ ঘন্টা (Contact hour) বৃদ্ধির বিষয়ে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে ।
৩। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মহিলা ও পুরুষ শিক্ষকের অনুপাত ৬০:৪০ অনুসরণ করা হয় । বর্তমানে মহিলা ও পুরুষ শিক্ষকের অনুপাত হলো ৬৪.২. ঃ ৩৫.৮।
৪। প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান (SLIP) ও উপজেলা এডুকেশন প্ল্যান (UPEP) পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ।
.
৫। দেশের ৩৩ লক্ষ নব্য-স্বাক্ষরের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে তাঁদের ক্রমান্বয়ে স্থানীয় বাজার চাহিদা ভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের আয় উৎসাহী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
৬। ছয়টি বিভাগীয় শহরের ১০-১৪ বছর বয়সী ১.৬৬ লক্ষ কর্মজীবি শিশুকে মৌলিক শিক্ষা
প্রদানসহ জীবনভিত্তিক ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে ।
৭। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা শ্রেণীতে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মডেল স্কুল ও মাদ্রাসা স্থাপন করা হচ্ছে। Teaching Quality Improvement (TQI) in secondary education প্রকল্পের আওতায় দূরবর্তী ও পশ্চাৎপদ স্কুলসমূহকে তথ্য প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করার লক্ষ্যে আইটি বেইজড মোবাইল ভ্যান চালু করা হয়েছে। এছাড়া ৫৬৮টি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ কম্পিউটার বিতরণ করা হয়েছে । নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানো, পরিবেশ সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্য প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তিসহ যুগোপযোগী ও কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে পাঠ্যক্রম প্রণীত হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা Secondary and Higher Secondary Education
দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের চাপ কমানোর লক্ষ্যে ৮০টি সরকারি বালক-বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ডাবল শিফট চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । অর্থের অভাবে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত দরিদ্র, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১২ পাশ হয়েছে। এ ফান্ডের আওতায় ষষ্ঠ হতে স্নাতক ও সমমান শ্রেণী পর্যন্ত দরিদ্র, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা বেতনে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি ও উপবৃত্তি প্রদান করা হবে। এজন্য সীডমানি হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ১,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের জন্য সমগ্র দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মিত হচ্ছে এবং বিদ্যমান ভবনসমূহের সংস্কার ও মেরামত কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে । শহর ও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার মফস্বলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে গুরুত্ব প্রদান করেছে । ঢাকা মহানগরীর যে সকল এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে সে সকল এলাকায় ৬টি কলেজ ও ১১টি স্কুল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৈদেশিক সহায়তায় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এ সকল প্রকল্পের আওতায় পাঠ্যক্রম আধুনিকায়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনসহ বিভিন্ন রকমের উন্নয়ন ও সংস্কারধর্মী কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে । বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গৃহীত Secondary Education Quality and Access Enhancement (SEQAEP) প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্যায়ন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠানকে কৃতিভিত্তিক প্রণদনা প্রদানের (Performance-based incentive) ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে । Secondary Education Sector Development Project (SESDP) এর আওতায় আইটি বেইজড
প্রদান করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্ক (BDREN) এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ছাত্র ও শিক্ষকদের সাথে আন্তর্জাতিক একাডেমিক কমিউনিটি এবং তথ্য ভান্ডারের সাথে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের কর্মরত ৪৪ জন এমফিল/পিএইচডি ফেলোকে গবেষণা কার্যে ৪.৫৮ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষাখাতে উচ্চতর গবেষণা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২২ জন গবেষককে গবেষণা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আরো ২৬ জনকে গবেষণা সহায়তার অর্থ প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্য হতে জাপান, চীন, তুরস্ক, রাশিয়া, ব্রুনাই, মরক্কো এবং কমনওয়েলথ প্রদত্ত মোট ১৩০টি বৈদেশিক বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার চাহিদা পূরণ, সম্প্রসারণ ও সুলভকরণের মাধ্যমে দক্ষ জনগোষ্ঠী সৃষ্টির লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের' সন্তান এবং প্রত্যন্ত অনুন্নত অঞ্চলের দরিদ্র অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য শতকরা ৬ ভাগ আসন সংরক্ষণ এবং এ সকল শিক্ষার্থীকে টিউশন ফি ও অন্যান্য ফি ব্যতীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগের বিধান রাখা হয়েছে ।
মাদ্রাসা শিক্ষা Madrasha Education
মাদ্রাসা শিক্ষাকে উন্নত ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে । মাদ্রাসার শিক্ষক ও অধ্যক্ষের বেতন ও মর্যাদা স্কুল/কলেজের সাথে অতীতের বৈষম্যের অবসান করে সমবেতন ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করা হয়েছে। মাদ্রাসায় অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১ হাজার মাদ্রাসায় নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কম্পিউটার ল্যাবসহ উন্নত ভবন ও শিক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া ৩৫টি মাদ্রাসাকে মডেল মাদ্রাসায় উন্নীতকরণসহ ১০০টি মাদ্রাসায় ভোকেশনাল শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়েছে। ৩১টি মাদ্রাসায় বিভিন্ন ইসলামী বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলছে ও শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। মাদ্রাসাতেও পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা এবং অষ্টম শ্রেণীর পর জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (স্কুলের ন্যায় সমমানের) চালু করা হয়েছে। এছাড়া একটি ইসলামী এরাবিক এফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।
আইসিটি কার্যক্রম ও শিক্ষা ICT Programme and Education
শিক্ষা ক্ষেত্রে আইসিটি কার্যক্রমের ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান অনলাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসএসসি, এইচএসসি, দাখিল, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা, শিক্ষক নিয়োগ ও নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ, এসএমএস এর মাধ্যমে এবং ই-মেইলের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের নিকট ৬০ দিনের মধ্যে প্রেরণ করা হচ্ছে। ২০১০ সালে এইচএসসি এবং ২০১১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১০ সালের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফল এসএমএস এর মাধ্যমে প্রাপ্তির ব্যবস্থাসহ ওয়েব সাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম সহজতর করার লক্ষ্যে Electronic Students Information Form (e-SIF) এর কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যানবেইস কর্তৃক স্থাপিত Online data query এর মাধ্যমে Criteria ভিত্তিক শিক্ষা উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ হতে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি প্রক্রিয়া অন-লাইনের মাধ্যম শুরু করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে দেশের প্রায় ১৩,৭০০টি মাধ্যমিক স্কুল, ৫২০০টি মাদ্রাসা ও ১৬০০টি কলেজে একটি ল্যাপটপ ও একটি মাল্টিমিডিয়া প্রদান এবং ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরীর ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। Secondary Education Sector Development Project (SESDP) এর আওতায় ২০টি বিদ্যালয় এবং ৩৫টি মাদ্রাসায় আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। Teaching Quality Improvement in Secondary Education (TQISEP) এর আওতায় ১৪টি টিটিসি, ৫টি এইচএসটিটিআই এবং ১টি বিএমটিটিআই এ কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। TQISEP প্রকল্পের আওতায় ১৭টি মোবাইল কম্পিউটার ল্যাব ও একটি সাইন্স ল্যাব দেশের পশ্চাৎপদ স্কুলগুলোতে ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের এ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে।
নারী শিক্ষা উন্নয়ন Women Education Development
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার স্তরে জেন্ডার বৈষম্য বিলোপ করে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে সংখ্যা সাম্য অর্জনে শ্রীলংকার পর একমাত্র বাংলাদেশই সক্ষম হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের কাতারভুক্ত বাংলাদেশের মতো মাথাপিছু আয় রয়েছে এমন অন্য কোন দেশ এ সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এ সফলতার অন্যতম কারণ হচ্ছে মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি কর্মসূচি। নারী শিক্ষার ব্যপক প্রসার ঘটিয়ে নারীদের ক্ষমতায়ন ও আর্থসামাজিক কর্মকান্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত ছাত্রী উপবৃত্তি প্রদান, বেতন মওকুফ সুবিধা প্রদান, বই ক্রয়ের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদান ও পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য পরীক্ষার ফি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে । তাছাড়া, মেধাবী ছাত্রীদেরকে সাধারণ মেধাবৃত্তি এবং বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষাবৃত্তির পরিমাণ ও সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে ।
শিক্ষার মানোন্নয়নে সংস্কারমূলক কর্মসূচি Reform Programmes to improve the Quality of Education
শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পাঠ্যক্রম আধুনিকায়ন, শিক্ষক প্ৰশিক্ষণ, পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনসহ বিভিন্ন রকমের উন্নয়ন ও সংস্কারধর্মী কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে । শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ওপর সরকার বিশেষ গুরুত্বারোপ করছে। সাধারণ প্রশিক্ষণের পাশাপশি বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইংরেজি ও গণিত বিষয় এবং সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত মুখস্থ নির্ভর, অনির্ভরযোগ্য এবং ফলাফলের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যহীন পাবলিক পরীক্ষার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অনুধাবন, প্রয়োগ, বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ ও মূল্যায়ন প্রভৃতি দক্ষতা যাচাইয়ের নিমিত্তে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ, মূল্যায়ণ ও সৃজনী ক্ষমতা বিকশিত হবে। লক্ষ্যনীয় যে, সরকার কর্তৃক বিবিধ পদক্ষেপ গ্রহণের
১৫ । কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে সুসংহত করার জন্য দেশের সমস্ত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীনে আনা হবে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে অধিকতর শক্তিশালী করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান ও জনবলের ব্যবস্থা করা হবে।
১৬। বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলায় একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। এছাড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, লেদার ইনস্টিটিউটসহ এ ধরনের অন্যান্য ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে ।
১৭। নতুন নতুন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে এবং সেগুলোর ব্যবস্থাপনা পর্যায়ক্রমে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ব্যবস্থা অনুসরণ করা হবে। তবে এগুলোতে অস্বচ্ছল পরিবারের ছেলে-মেয়েদের স্বল্প ব্যয়ে পড়ার সুযোগ থাকবে ।
১৮। বেসরকারি খাতে মানসম্পন্ন বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে উৎসাহিত করা হবে এবং এমপিও ভুক্তিতে অগ্রাধিকার প্রদান এবং যন্ত্রপাতি, সাজ-সরঞ্জামসহ আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে ।
১৯। বৃত্তিমূলক ও ডিপ্লোমা পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুবিধাদি ব্যবহার করে সান্ধ্যকালীন ও খণ্ডকালীন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে স্কুল পরিত্যাগকারী ও বয়স্কদের স্থানোপযোগী বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিমূলক শিক্ষাদান করে তাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার চেষ্টা করা হবে ।
২০। প্রকৌশল ডিপ্লোমা ও অন্যান্য ডিপ্লোমা পর্যায়ের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানের ভৌত সুবিধাদির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোর্সগুলো দুই শিফটে চালু করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে । তবে নির্ধারিত পাঠদান সময় মানসম্মত পর্যায়ে বজায় রেখে এ ব্যবস্থা করা হবে ।
২১। যারা অষ্টম শ্রেণী বা মাধ্যমিক পর্যায়ের যে কোন শ্রেণীর পরবর্তী পর্যায়ে যে কোন (আর্থিক, পারিপার্শ্বিক) কারণে পড়বে না তাদেরকে বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা এবং তারা যেন তাদের নির্বাচিত কারিগরি শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা সরূপ উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় । যুক্তিসঙ্গত স্বল্প সময়ের মধ্যে এ রকম শিক্ষার্থীদের অধিকাংশকে বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রমে নিয়ে আসা হবে ।
২২। যে সকল দেশে আমাদের দেশের মানুষ কাজ করতে যায় সে সকল দেশের শ্রম বাজার বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়াদি কারিগরি শিক্ষার পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং ঐ সকল দেশের ভাষার ন্যূনতম জ্ঞান লাভের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে ।
২৩। ভবিষ্যতে কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে ।
২৪। দেশ-বিদেশের কর্মবাজারের চাহিদার আলোকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক পর্যায়ের সকল কারিকুলাম নিয়মিতভাবে পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হবে ।
১২.২২ তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা
Information Technology Education
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
প্রায় দুই শতাব্দী আগে শিল্প বিপ্লবের কারণে সভ্যতার গতি প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছিল, একুশ শতকে তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবের ভেতর দিয়ে আবার সেই গতি প্রকৃতি পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে। এই তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবের
১। দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রাথমিক স্তরের সকল ধারায় প্রাক-বৃত্তিমূলক ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাক্রম চালু করা হবে । প্রাথমিক স্তরের সকল শিক্ষার্থীকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাক-বৃত্তিমূলক ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাসহ আট বছর মেয়াদি শিক্ষা অবশ্যই সমাপ্ত করতে হবে ।
২। অষ্টম শ্রেণী সমাপ্ত করার পর যারা কোন মূল ধারায় পড়বে না তারা ছয় মাসের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে জাতীয় দক্ষতামান ১ জনশক্তি হিসেবে পরিচিত হবে। বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষায় নবম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণী সমাপ্ত করে একজন যথাক্রমে জাতীয় দক্ষতামান ২, ৩ ও ৪ অর্জন করতে পারবে ।
৩। অষ্টম শ্রেণী সমাপ্ত করার পর অর্থাৎ প্রাথমিক স্তর উত্তীর্ণ একজন শিক্ষার্থী বৃত্তিমূলক/কারিগরি শিক্ষা ধারায় ভর্তি হতে পারবে। এই ধারায় যারা যাবে তারা যেন ধাপে ধাপে তাদের নির্বাচিত কারিগরি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে ।
৪ । অষ্টম শ্রেণী সমাপ্ত করার পর শিল্প-কারখানা এবং উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে স্থাপিত সরকারি টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউিট বা বেসরকারি বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে দেওয়া ১, ২ ও ৪ বছরের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিয়েও যথাক্রমে জাতীয় দক্ষতামান ২, ৩ ও ৪ অর্জন করতে হবে ।
৫। এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এবং জাতীয় দক্ষতামান -৪ এর সনদধারীরা ক্রেডিক সমন্বয়ের মাধ্যমে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য ডিপ্লোমা/ বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (একাদশ- দ্বাদশ)/ডিপ্লোমা-ইন-কর্মাস (একাদশ-দ্বাদশ)/ সমমানের কোর্সে ভর্তি হতে পারবে । তবে বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রম থকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ।
৬। কারিগরি ডিপ্লোমা পর্যায়ে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে যোগ্যতা যাচাই করে ক্রেডিক সমন্বয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্নাতক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা কোর্সে (ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল, কৃষি ইত্যাদি) ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে । ৭। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সকল শিক্ষাক্রমে যথাযথ দক্ষতা অর্জনের বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হবে । বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার সকল স্তরের শিক্ষাক্রমে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে ।
৮ । বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত হবে ১ ঃ ১২ ৷
৯। ১৯৬২ সালে শিক্ষানবিশ আইনকে যুগোপযোগী করে দেশে ব্যাপক ভিত্তিতে শিক্ষানবিশ (অ্যাপ্রেনটিসশিপ) কার্যক্রমের প্রবর্তন করা হবে ।
১০। সর্বস্তরের সকল শিক্ষকের জন্য শিক্ষণ প্রশিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে শিল্প কারখানায় বাস্তব প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সকল বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য ভিটিটিআই ও টিটিটিসি-র আসন এবং প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি করে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করা হবে ।
১১ । প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হবে । ১২। বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার জন্য বাংলা ভাষায় পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন পুস্তক প্রণয়ন, অনুবাদ ও প্রকাশনার ব্যবস্থা করা হবে ।
১৩। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ঘাটতি পূরণের জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হবে । ১৪। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হবে ।
1 বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া কমছে, শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি ও পাবলিক পরীক্ষায় শহর ও গ্রামে পাশের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১১ সনের এসএসসি পরীক্ষায় সারাদেশে মোট ১৫,৪৪৯টি স্কুল অংশগ্রহণ করে, এর মধ্যে স্কুল থেকে ৫০ শতাংশ হতে ১০০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাশ করেছে । শিক্ষার্থীর গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে School based assessment পাইলট ভিত্তিতে চালু করা হয়েছে ।
অর্থ বরাদ্দ
অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে । রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ধারাবাহিকভাবে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে উন্নয়ন খাতে ৩,১০০ কোটি এবং রাজস্ব খাতে ১০,০৭৯.২৩ কোটি টাকা মিলিয়ে মোট ১৩,১৭৯.২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে ।
বৃত্তিমূলক শিক্ষা The Scholarship Based Education
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য দক্ষ জনশক্তি জাতীয় উন্নয়নে একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের ফলে বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন কৌশল ও পদ্ধতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো আন্ত র্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহণ, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত অসম ও প্রতিকূল প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে । উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এ ম-প্রতিযোগিতায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি ও শ্রমের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক এবং তথ্য প্রযুক্তিসহ প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে দ্রুত দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করা হবে। লক্ষণীয় যে, বর্তমানে গ্রামে কৃষি থেকে শুরু করে যান্ত্রিক নৌকা, যন্ত্রচালিত আখ মাড়াইয়ের মেশিন, রাইস মিল, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুতায়ন, পাওয়ার লুম, যন্ত্রচালিত তাঁত ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে। দেশের প্রয়োজন ছাড়াও বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই চাহিদা আরো বাড়বে । কাজেই দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের আয় অনেক বৃদ্ধি সম্ভব। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বিবেচনায় রেখে দক্ষ জনশক্তি তৈরির কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে । এই শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিমরূপ ।
১। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি ও শ্রমের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ শিক্ষার মাধ্যমে দ্রুত দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা ।
২। দেশ ও বিদেশের চাহিদা বিবেচনায় রেখে সকল ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন স্তরের মানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তির দ্রুত সম্প্রসারণ ।
৩। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের আয় বৃদ্ধি করা ।
৪। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাকে গুরুত্ব প্রদান মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তদের মাধ্যমে যতবেশি প্রযুক্তি নির্ভর করা যায় সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে পরীক্ষ মুখস্থ করার পারদর্শীতা যাচাইয়ের চেয়ে সমস্যা সমাধানের দক্ষতার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
৫। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল স্তরে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও তদবির বন্ধ করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক বাছাই করতে হবে।
৬। বেতন বৈষম্য দূরীকরণ ও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ- সুবিধার দিক থেকে যে সকল বৈষম্য রয়েছে তা দূর করতে হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক- কর্মচারীদেরও যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল বেতনের বাইরে সকল সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করবে। এমনকি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে) জাতীয়করণ করা যেতে পারে।
৭। শিক্ষা প্রশাসনের দুর্নীতি রোধ ও শিক্ষা প্রশাসনের কাজ হচ্ছে নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের মনিটরিং করে শিক্ষার মান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখা। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসন বিশেষ করে এনসিটিবি, ডিজি যেভাবে দুর্নীতিগ্রস্থ তা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষা প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করে বিভাগীয় পর্যায়ে ডিজি অফিসের শাখা স্থাপন করা যায় ।
৮। পৃথক বেতন কাঠামো ঃ শিক্ষকদের মর্যাদা সবার উপরে। তাই শিক্ষকদের বেতন ও সুযোগ সুবিধা সবচেয়ে বেশি হওয়া উচিত। মেধাবী ছেলে মেয়েরা যাতে শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহী হয় সেজন্য উচ্চতর বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন করতে হবে শিক্ষকদের জন্য। তবে বর্তমান সরকার শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর বেতন স্কেল কার্যকর করার উদ্যোগ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ।
৯। একমুখী শিক্ষা কার্যকর : বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য একই মানের, একই সিলেবাসের (প্রাইমারী, মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে) শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। তবে বাংলা কিংবা ইংরেজি যে কোন মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীভূত হবে।
১০। প্রশিক্ষণ ও শিক্ষকদের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রতিবছর বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের উৎকর্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করা উচিত। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াবে। এজন্য প্রয়োজনে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আরো বাড়াতে হবে। এমনকি যুগোপযোগী কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়নের জন্য শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো যেতে পারে কিংবা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষক এনে দেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় ।
১১। ক্যাম্পাসভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ : উচ্চ শিক্ষার স্তরে বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ছাত্ররা রাজনীতি সচেতন অবশ্যই হবে তবে কোন দলের লেজুড় বৃত্তি না করে ছাত্রদের কল্যাণে ছাত্র সংগঠন করবে। তবে মিছিল মিটিং এগুলো অবশ্যই ক্যাম্পাসের বাইরে করতে হবে। তাহলে ক্লাস, কার্যক্রম ও পরীক্ষা ব্যাহত হবে না এবং সেশনজটও হবে না। ছাত্র রাজনীতি অবশ্যই ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত; মাস্তান কিংবা অছাত্র দ্বারা ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত নয় ।
৭। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃত অর্থে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
১। তৃণমূল পর্যায়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে জেলা উপজেলা/থানা পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং টেলিসেন্টার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
২। সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা এবং নীতিনির্ধারকদের কম্পিউটার বিষয়ক দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ।
৩। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় ও তদুর্ধ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কম্পিউটার বিষয়ক দক্ষতা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
১২.২৩ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা
The Role of Education in the Economic and Social Development
পৃথিবীর সকল দেশেই শিক্ষার গুরুত্ব রয়েছে । কারণ একমাত্র কার্যকর ও যুগোপযোগী শিক্ষাই উন্নত মানব সম্পদ তৈরির প্রধান উপকরণ যা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে । বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে শিক্ষার যথেষ্ট গুরুত্ব বিদ্যমান । যেমন-
১। ব্যক্তি উন্নয়ন ঃ যে কোন ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । অন্যদিকে ব্যক্তির উন্নয়ন ভিন্ন সমষ্টিক উন্নয়নও সম্ভব নয় ।
২। জাতি গঠন ঃ শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। দেশের জনগণের মধ্যে শিক্ষার আলো বিস্তারের মাধ্যমে আদর্শ জাতি গঠন করা যায় । মেরুদণ্ড ছাড়া যেমন মানুষ দাঁড়াতে পারে না তেমনি শিক্ষার আলো ছাড়া কোন জাতি চলতে পারে না ।
৩। দক্ষ উদ্যোক্তা ও শ্রমিক সৃষ্টি ঃ এদেশে এখনও দক্ষ উদ্যোক্তা এবং শ্রমিক সৃষ্টি হয়নি। একমাত্র যুগোপযোগী শিক্ষাদানের মাধ্যমে দক্ষ উদ্যোক্তা ও শ্রমিক তৈরী হতে পারে এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে হবে।
৪ । কুসংস্কার মুক্ত সমাজ বিনির্মাণ ঃ কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনে শিক্ষা সর্বাধিক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার মাধ্যমে জাতি কুসংস্কারমুক্ত হয়ে উন্নয়ন মনস্ক, উদার ও আধুনিক সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হতে পারে ।
৫। জনশক্তি রপ্তানি ও উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দেশের উদ্বৃত্ত জনসংখ্যাকে জনশক্তি বা মানব সম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করা যেতে পারে।
৬। দারিদ্র্য দূরীকরণ ঃ দারিদ্র দূরীকরণে শিক্ষা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। নারী শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রভৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশে দারিদ্র্য দূরীকরণে শিক্ষা প্রধান ভূমিকা
পালন করতে পারে।
৭। গবেষণা ও উদ্ভাবন ঃ একমাত্র শিক্ষার ক্রমোন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই উৎপাদন ক্ষেত্রে নতুনত্ব ধারণা উদ্ভাবন হতে পারে।
অংশীদার হয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দারিদ্র্য বিমোচনের একটি অভাবিত সুযোগ পেয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার করে সর্বক্ষেত্রে কাঙ্খিত দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বাচ্ছতা এনে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করার ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তির অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। তাছাড়াও তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি সরবরাহসহ সম্ভাবনাময় রপ্তানিখাত হিসেবে সফট্ওয়্যার, ডাটা প্রসেসিং বা কল সেন্টার জাতীয় service industry বিকাশে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিমরূপ ।
১। উপর্যুক্ত কর্মযজ্ঞের জন্য তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও গুণসম্পন্ন শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির প্রচেষ্টা চালানো ।
২। তথ্য প্রযুক্তিকে শুধুমাত্র কম্পিউটার বিজ্ঞানের মাঝে সীমিত না রেখে মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন, নেটওয়ার্কিং কিংবা সকল তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ ।
কৌশল
প্রাথমিক, মাধ্যমিক, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা
১। শিক্ষার একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে কম্পিউটারকে শিক্ষাদানে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ২। মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রবেশের পূর্বেই সকল শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলা হবে । ৩। তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হবে ।
৪ । মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের সঙ্গে কম্পিউটার বিষয় নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়া হবে ।
৫। বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার গ্রাফিক ডিজাইন, মাল্টিমিডিয়া, অ্যানিমেশন, ক্যাড (সিএডি)/সিএসএম ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হবে ।
উচ্চশিক্ষা
১। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানের কারিকুলামসহ কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ খোলা হবে ।
২। বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে জাতীয় পরীক্ষা পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করে তথ্য প্রযুক্তি জনবলে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হবে । প্রয়োজনে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে । ৩। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষার মান যুগোপযোগী করে শিক্ষার্থীদের
স্বতন্ত্রভাবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা করা হবে ।
৪ । বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র গড়ে তোলা হবে ।
৫। ২০১৩ সালের মধ্যে সকল স্নাতক ডিগ্রিধারী যেন কম্পিউটার ব্যবহারের মৌলিক দক্ষতা অর্জন করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে ।
৬। তথ্য প্রযুক্তিতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা এবং তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দানের সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে একটি তথ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে ।
১২। শিক্ষা উপকরণের যোগান ও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে প্রয়োজনীয় ও আধুনিক শিক্ষা উপকরণ পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ শিক্ষা উপকরণ না পেলে মানসম্মত শিক্ষাদান ব্যাহত হয় । উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বহুমুখী সমস্যা রয়েছে। রাতারাতি এত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে সমস্যাগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যদি ধাপে ধাপে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া যায় তবে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মতো যুগোপযোগী শিক্ষার ব্যবস্থা করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব হবে বলে আমাদের বিশ্বাস ।
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ
Steps Taken by Government for the Improvement of Education System
মানব সম্পদ উন্নয়নের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষা। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে চাইলে শিক্ষার উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। বিগত ১৫-২০ বৎসর ধরে সরকার শিক্ষার উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করছে। নিম্নে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো ।
১ । যে কোন স্তরের শিক্ষা সমাপনান্তে কর্মসংস্থানের লক্ষ্য সামনে রেখে শিক্ষা জীবনে লব্ধ শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কারিগরি দক্ষতা ও শ্রমবাজারের চাহিদার মধ্যে সমাঞ্জস্য বিধান করার আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এজন্য দ্রুত শ্রমবাজরে কারিগরি দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার চাহিদা ও সরবরাহ জরিপ করা হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ান্তে জরিপ অব্যাহত রাখা হবে ।
২। দেশে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি জনবলের চাহিদা নির্ণয় করে সে অনুযায়ী জনশক্তি গড়ে তোলা হবে। এ সকল ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে । তবে আর্থ-সামাজিক ও বিভিন্ন পশ্চাৎপদ অবস্থা থেকে আসা ছেলে মেয়েরা যাতে এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে তার সুযোগ ও ব্যবস্থা থাকবে ।
৩। শিক্ষা স্তর ও ধারা নির্বিশেষে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রযোজ্য শর্ত পূরণ সাপেক্ষে (যেমন- প্রশাসনিক ও ভৌত কাঠামো, ছাত্র ও শিক্ষক সংখ্যা, ছাত্র বেতন ও শিক্ষক পারিশ্রমিক, অর্থায়ন, শিক্ষাক্রম, সহশিক্ষাক্রম, শিক্ষার উপকরণ ইত্যাদি) যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধিত হতে হবে । নিবন্ধিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতিবছর বহিঃনিরীক্ষক দ্বারা নিরীক্ষিত হতে হবে এবং নিরীক্ষিত হিসাবের অনুলিপি নিবন্ধনকারী কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করতে হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ আইন
প্রণয়ন করা হবে ।
৪। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যে সকল ক্ষেত্রে বিশেষ কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন জনবলের তাৎক্ষনিক চাহিদা রয়েছে সে সকল ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থ ও উপকরণ বরাদ্দ ও উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ করে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদী নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে চাহিদা সম্পন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত পর্যাপ্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে ।
৫। যেসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয়ের উৎস আছে এবং যেসব প্রতিষ্ঠান চার্চ, ট্রাষ্ট ও দেশি-বিদেশি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত সে সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সরকারের শিক্ষাখাত থেকে বিশেষ
শিক্ষাখাতের উন্নয়নে ভবিষ্যৎ করণীয় Future Programme for the Development of Education Sector
বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিমাণগত যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হলেও শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন হয়েছে খুবই সামান্য । বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়নে ভবিষ্যতে যে সমস্ত আরও যেসব বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন সে সম্পর্কিত কয়েকটি প্রস্তাবনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
১। আধুনিক কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়ন;
২। প্রাথমিক শিক্ষার ড্রপ আউট রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
৩। শিক্ষকদের দায়িত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা;
৪ । নোট বই, টিউশনি ও কোচিং সেন্টার বন্ধ করা;
৫ । পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন;
৬। অধিক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষকতা পেশায় যোগদানে উৎসাহ প্রদান;
৭ । শিক্ষা প্রশাসনকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত করা ও দুর্নীতিমুক্ত করা;
৮ । বিনামূল্যে সময়মত বই বিতরণ ও শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি অব্যাহত রাখা ও আরো জোরদার করা; ৯ । আলাদা শিক্ষা সার্ভিস কমিশন গঠন;
১০ । শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো প্রবর্তন;
১১ । মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন (ধর্মীয় শিক্ষার সাথে যুগোপযোগী কোর্স অন্তর্ভূক্তকরণ);
১২ । সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পাসভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা;
১৩ । দেশের প্রতিটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা;
১৪ । নারী শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়া ।
উপরিউক্ত ব্যবস্থাগুলোর অধিকাংশই জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০১০” এ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। উক্ত শিক্ষা নীতিতে শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন কাঠামো, শিক্ষা সার্ভিস কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন প্রস্তাব রাখা হয়েছে । তবে এগুলো কতটা বাস্তবায়ন হবে তা সময়ই বলে দেবে ।
কারিগরী শিক্ষা Technical Education
দেশের যুবশক্তিকে উৎপাদনশীল দক্ষ নাগরিকে পরিণত করার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য দেশে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারের জন্য মাদ্রাসাসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভোকেশনাল কোর্স চালুকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অসচ্ছল পরিবারের তরুণ-তরুণীদেরকে আত্মকর্মসংস্থান উপযোগী ও দেশী-বিদেশী চাকুরির বাজার চাহিদার সাথে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য যুগোপযোগী ট্রেড কারিগরি শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রতি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে। বরিশালে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যে সকল জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নাই এমন ১০টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং বরিশাল ও সিলেট বিভাগীয় শহরে ২টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। বিদেশ গমনেচ্ছু ডাক্তার, নার্স ও বেকারদের জন্য আরবি, ইংরেজি, কোরিয়ান ও মালয় ভাষায় কথা বলার দক্ষতা প্রদানের নিমিত্ত দেশের ছয়টি বিভাগে ১১টি আধনিক ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বয়ন শিল্পে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল টেকনোলজিকে বাংলাদেশ ইউনিভারসিটি অব টেক্সটাইল-এ রুপান্তরের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা' প্রণয়ন করা হয়েছে । দেশে বর্তমান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১৯৪টি ।
উচ্চ শিক্ষা Higher Education
উচ্চ শিক্ষা প্রসারের জন্য ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, ঢাকা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে রাঙ্গামাটিতে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গাজীপুর জোলায় একটি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্ত বায়নাধীন Higher education quality enhancement শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সৃজনশীলতায় উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে গবেষণা পরিবেশ সৃজনের জন্য Academic innovation fund
৮ । গণতান্ত্রিক ধারণার বিকাশ ৪ শিক্ষার সঠিক বিস্তারের মাধ্যমেই সৎ, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল সু মাগরিক সৃষ্টি এবং গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটতে পারে।
৯। নারীর ক্ষমতায়ন : বাংলাদেশে বিপুল জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। নারীদের অশিক্ষিত, পরনির্ভরশীল রেখে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব হবে না। তাই নারীদের শিক্ষিত করে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে জাতীয় অগ্রগতি সাধন করা যেতে পারে ।
১০। স্বনির্ভর জাতি ও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য স্বনির্ভর জাতি প্রয়োজন। উন্নয়নের জন্য পরনির্ভরশীল হতে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পরিচিত হওয়া যায় না। স্বনির্ভর জাতি গঠনে পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে ।
8
১১। প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক অর্থনীতি ঃ বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এদেশের অবস্থানকে মজবুত করার কাজে উন্নত ও চাহিদানুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা প্রয়োজন । উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, সামাজিক অবকাঠামো উপাদান হিসেবে বাংলাদেশে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম । একমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থাই দেশের জনগণকে 'উন্নয়নমুখী' হিসেবে তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে বিরাজমান সমস্যার সমাধান Solution of Existing Problems in the Education Sector of Bangladesh
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত। শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষাখাতে বিরাজমান সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে বিরাজমান কয়েকটি প্রধান সমস্যা সমাধানের উপায়সমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হলো ।
১। প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ঃ জনসংখ্যার বিশালত্ব ও ব্যাপক দারিদ্র্য পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকারকে সহযোগিতা বজায় রেখে যেতে হবে। লক্ষ্য হবে একটাই, দেশের সব শিশু যেন মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুধু অর্থ বরাদ্দ যথেষ্ট নয়, মানসম্পন্ন শিক্ষকের যথেষ্ট বেতনাদি, উন্নত শিক্ষা সূচি এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক নেতৃত্ব, অভিভাবক এবং শিক্ষক শ্রেণীর আন্তরিকতা এ ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ ।
২। স্কুল ভবন নির্মাণ ঃ যে সকল অঞ্চলে বিশেষ করে গ্রামে কিংবা জনবহুল এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই সেখানে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়) স্থাপন করা যেতে পারে। তাছাড়া বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সকল পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দসহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে আরও সক্রিয় ও গতিশীল করে তোলতে হবে।
৩। ঝরে পড়া সমস্যার সমাধান : পিতা-মাতার দারিদ্র্যের কারণে অনেক শিশুই স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে পরিবারের জন্য বাড়তি আয়ের উদ্দেশ্যে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ঝরে পড়ার ক্ষেত্রেও এটি একটি উল্লেখযোগ্য কারণ । এসব দারিদ্র কর্মজীবি ছাত্রদের স্কুলের প্রতি আকৃষ্ট করা এবং তাদের স্কুলে ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সহযোগীতার ব্যবস্থা করা উচিত। স্থানীয় পর্যায়ে স্কুল পরিকল্পনার মাধ্যমে এসব সমস্যার কার্যকর সমাধান করা যেতে পারে এবং শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা আবশ্যক ।
বিবেচনায় বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ সকল প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে শিক্ষার স্তরভিত্তিক প্রযোজ্য অভিন্ন শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও অন্যান্য নীতিমালা বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করতে হবে। তবে বর্তমানে অধিক হারে বেতন আদায়কারী প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বেতন আদায়ের বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করা হবে । চাঁদা আদায়ের বিষয়টিও নীতিমালার আওতায় আনা হবে।
৬। জরিপে দেখা গেছে যে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি, মাদরাসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অস্তিত্ববিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানবিহীন সরকারি অনুদান ও বিদ্যালয়ে সরকার কর্তৃক দেয় অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে । অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ সকল ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও লোককে চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে । এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে, প্রয়োজনে জোরদার করা হবে ।
৭। পর্যায়ক্রমে সকল স্তরে শিক্ষাগত যোগ্যতা, শিক্ষালব্ধ দক্ষতা ও আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন জনশক্তির চাহিদার সমন্বয় বিধানের লক্ষ্যে কার্যক্রম প্রণয়ন করা হবে।
৮। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি ও বজায় রাখার স্বার্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে দলভিত্তিক রাজনীতির উর্ধ্বে রাখা জরুরি । এই লক্ষ্যে নীতমালা প্রনয়ন ও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে ।
৯। ব্যাংক, বেসরকারি শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদেরকে শিক্ষা বৃত্তি প্রদানে উৎসাহিত করা হচ্ছে ।
১০ । প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভিন্নমুখী বিচ্যুতি ও অসঙ্গতির কারণে শিক্ষক সমাজের একাংশের নৈতিকতাবোধের অভাবে দেশে ব্যাপকভাবে প্রাইভেট টিউশনের ব্যবস্থা এবং কোচিং সেন্টার চালু হয়েছে । যথোপযুক্ত প্রতিকারের উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের জন্য ক্ষতিকর এই ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও নিরুৎসাহিত করার জন্য আইন করা হয়েছে ।
১১। সর্বপর্যায়ের শিক্ষা সংক্রান্ত সকল তথ্য একত্র করে তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক একটি সমৃদ্ধ তথ্য ভান্ডার গড়ে তোলা হবে এবং সংশ্লিষ্ট সকলেই যাতে সহজে তা ব্যবহার করার সুযোগ পায় সে রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (BANBEIS)-কে এই লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি, নেটওয়ার্কিং, অর্থ ও জনবল দিয়ে আরো শক্তিশালী করা যায়। বেসরকারি উদ্যোগ ও শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ভান্ডার সৃষ্টি উৎসাহিত করা হবে ।
১২। শিক্ষার সকল স্তরে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর জন্য আচরণবিধি তৈরি করা এবং তা সংশ্লিষ্ট সকলকে অবগত করা জরুরি । এই লক্ষ্যে শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের জন্য পৃথক পৃথক উপযুক্ত কমিটি গঠন করে দ্রুত আচরণ বিধি তৈরির কাজ সম্পন্ন করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে । শিক্ষার কোন স্তরেই শিক্ষার্থীরা যেন কোনভাবেই শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের মুখোমুখি না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে ।
১৩। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সংখ্যা, প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং তাদের কাজের পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারণ করা হবে। এর জন্য একটি নীতি কাঠামো তৈরি করা হবে।
১৪ । শিক্ষা ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব, পর্যায়গুলোর মধ্যে সমন্বয় করা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজের সমন্বয় করা হবে ।
১৫ । বাংলা ভাষার উন্নয়নে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখা এবং ব্যাপকভাবে বিদেশি ভাষার আধুনিক বেই বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন শাখার জন্য প্রয়োজনীয় পাঠ্য বই বাংলায় অনুবাদ করার জন্য বাংলা একাডেমিকে উৎসাহিত এবং লোকবল ও অর্থবল দিয়ে সহায়তা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ।
অর্থ বরাদ্দ
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উন্নয়ন খাতে ৩২টি সেক্টর কর্মসূচি (HNPSDP), ২০টি চলতি বিনিয়োগ প্রকল্প, ২টি জেডিসিএফ প্রকল্প এবং ১টি চলতি কারিগরি সহায়তা প্রকল্পসহ মোট ২৩টি প্রকল্পের অনুকূলে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে মোট বরাদ্দ ৩৮১৫.৬৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে জিওবি (Government of Bangladesh, GoB) ১৫২৪.২৮ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ২,২৯১.৩৫ কোটি টাকা ।
স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচি Health, Nutrition and Population Sector Programme

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা পুষ্টি খাতে বিদ্যমান বাধাসমূহ দূর করে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ এবং পরিবার কল্যাণ, প্রজনন, স্বাস্থ্য এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচিকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে ২০১১-১৬ মেয়াদে ১৩,৫৭৩.১৬ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য এবং ৪৩,৪২০:৩৮ কোটি টাকা সরকারের অনুদানসহ সর্বমোট ৫৬,৯৯৩.৫৪ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব সম্বলিত Health, Population and Nutrition Sector Development Programme (HPNSDP) সেক্টর কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো জনগণের বিশেষ করে মহিলা, শিশু ও সুবিধা বঞ্চিতদের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেবা প্রাপ্তির চাহিদা বৃদ্ধি ও কার্যকর সেবা প্রাপ্তি সহজলভ্য করা । এ প্রোগ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহকে সচল রেখে স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ ও পুষ্টি সেবা প্রদান করা হবে । এছাড়া তিন স্তর বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কিমউনিটি পর্যায়ে কিমউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহকে শক্তিশালী করা হবে এবং এদের মধ্যে একটি রেফারেল ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে । জেলা পর্যায়ের সাথে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রবর্তন করা হবে জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা । এছাড়া পুষ্টি সম্পর্কিত সেবাকে মূলধারার 'সেবার সাথে যুক্ত করা হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে উর্বরতার হার (TFR) replacement level এ নেয়ার জন্য বিশেষ বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে । এছাড়া
নারী উন্নয়ন Women Development
জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী নির্যাতন বন্ধ, নারী পাচার প্রতিরোধ, কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা বিধান এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল স্রোতধারায় নারীর পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ নারীর সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা নিম্নরূপ।
১। জুলাই ২০১০ থেকে জুন ২০১৩ মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন জেলা মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (WTC) সমূহের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ৬৪টি জেলা মহিলা কর্মকর্তার কার্যালয়ে বিদ্যমান মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উন্নয়ন ও বৃত্তিমূলক আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দরিদ্র মহিলাদের (১৬-৪৫ বছর) দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৪৩০ লক্ষ টাকা ।
২। ট্রেনিং ফর ডিজএডভানটেজ ওমেন অন রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) জিরানী, গাজীপুর প্রকল্পের আওতায় প্রতি দুই মাস পরপর আবাসিকভাবে ৩২ জন করে প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করছে এবং তাদের বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকুরীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে । জানুয়ারি ২০১১ হতে ফেব্রুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত ১৫৩ জন প্রশিক্ষণার্থী চাকুরী পেয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ১৩০.০০ লক্ষ টাকা ।
৩। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে সরকারি অর্থানুকুল্যে তথ্য প্রযুক্তি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষিত, বেকার মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থান এবং কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যে জুলাই ২০০৮ থেকে জুন ২০১২ পর্যন্ত মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের ১৬৭৫.৪৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেলা ভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ৩০টি জেলায় বছরে ৪৮০০ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরের এডিপি'তে প্রকল্পের অনুকূলে ৩৮০.০০ লক্ষ টাকা
বরাদ্দ রয়েছে ।
৪। শহর অঞ্চলের দরিদ্র, বেকার, বিত্তহীন মহিলাদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা এবং প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে অক্টোবর ২০০৯ হতে সেপ্টেম্বর ২০১৩ মেয়াদে ১৮৮১.৯৬ লক্ষ টাকা ব্যয় সম্বলিত নগর ভিত্তিক প্রান্তিক মহিলা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ৪৬টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৭,৬০০ জন মহিলাকে বিভিন্ন ট্রেডে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং সম্ভাবনাময় প্রশিক্ষণার্থীর জাতীয় মহিলা সংস্থা পরিচালিত আবর্তক ঋণ তহবিলের অর্থ থেকে ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। ২০১১-১২ অর্থবছরের এডিপি'তে এ প্রকল্পের অনুকূলে ১৩২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
৫। নারী উদ্যোক্তাদের কর্মকান্ডকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে টেকসই করার লক্ষ্যে দেশের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য জুলাই ২০১১ হতে জুন ২০১৫ মেয়াদে ১৩৮৪.৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধান (২য় পর্যায়)
৬। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ ঃ সরকারী হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করতে হবে। ঔষধ না দিয়ে শুধুমাত্র ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন হাতে ধরিয়ে দিলে তাতে কোন লাভ হবে না। কেননা সরকারী হাসপাতালগুলোতে যারা চিকিৎসা নিতে আসে তাদের অধিকাংশই দরিদ্র। এত উচ্চ মূল্য দিয়ে ঔষধ ক্রয় করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় ।
৭। আধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সরবরাহ ও হাসপাতালগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা জরুরী। কেননা আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে রোগীর সঠিক রোগ নির্ণয় করতে পারলে রোগীদের হয়রানি ও চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমে আসবে ।
৮। ডাক্তারে ফী ও ঔষধের মূল্য কমানোর ব্যবস্থা ও বর্তমানে ঔষধের যে উচ্চমূল্য তাতে অধিকাংশ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে স্বাস্থ্যসেবা। কাজেই ঔষধের উচ্চমূল্য কমিয়ে আনতে হবে। দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করতে হবে। চিকিৎসকদের ফী কমিয়ে আনা দরকার, প্রয়োজনে সরকার চিকিৎসকদের ফী নির্ধারণ করে দিতে পারে। ডাক্তারের ফ্রী ও ঔষধের মূল্য কমিয়ে না আনলে স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের নাগালের আরও বাইরে চলে যাবে ।
৯। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান : স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা অপরিহার্য । এ ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে তৎপর হতে হবে। খাবার-দাবার, কাপড়-চোপড়, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য যাবতীয় বিষয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
১০। নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ঃ চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে থেকে প্রশিক্ষক এনে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা যায়। আবার আমাদের চিকিৎসক কিংবা নার্সদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো যায় ।
১১। প্রতিষেধক কার্যক্রম জোরদার করা ও সংক্রামক ব্যধি ও অন্যান্য মহামারি রোগ প্রতিরোধকল্পে ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে প্রতিষেধক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে ।
১২ । দক্ষ নার্স ও টেকনিশিয়ান তৈরি ঃ চিকিৎসকের সংখ্যা ও হাসপাতলের সংখ্যা বাড়ালেই স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হবে না । সেজন্য আনুপাতিকভাবে দক্ষ টেকনিশিয়ান ও নার্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আরও নার্সিং ইনস্টিটিউট ও টেকনিশিয়ান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে নার্স ও টেকনিশিয়ানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়। নার্সদের প্রশিক্ষণ এর ব্যবস্থা করে রোগীর প্রতি সেবার মান ও মানসিকতা বাড়াতে হবে ।
১৩। উপযুক্ত স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন ঃ বাংলাদেশের জনগণের উপযোগী একটি গণমুখী কার্যকর স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন করতে হবে। সেই স্বাস্থ্য নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি আধুনিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে
১৪। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা প্রতিরোধ : ডাক্তার, নার্স, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঔষধ প্রশাসন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্যখাতের সার্বিক অব্যবস্থাপনাকে শৃংখলায় আনার জন্য নিয়মিত মনিটরিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, স্বাস্থ্যখাতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান করার জন্য উপরে উল্লেখিত পদক্ষেপসমূহের যথার্থ বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]