উন্নত, অনুন্নত ও উন্নয়শীল দেশ বলতে কি বোঝ? What is developed, underdeveloped and developing country?

পৃথিবীর সকল দেশ সমান হারে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করতে পারে না । উন্নয়ন স্তরের ভিত্তিতে কোন দেশকে উন্নত, কোন দেশকে অনুন্নত এবং কোন দেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় ।
উন্নত দেশ Developed Country
যে সব দেশ নিজস্ব সম্পদ ও উপকরণের পর্যাপ্ত ব্যবহার ও অভাব পূরণের পূর্ণ সহজলভ্যতা দেশীয়ভাবে মিটানোর ক্ষমতা সম্পন্ন, তাদেরকে বলা হয় উন্নত দেশ। উন্নত দেশগুলোতে উৎপাদিত দ্রব্যের দেশীয় বাজার সৃষ্টি, পর্যাপ্ত সহজলভ্যতা এবং উদ্বৃত্ত পণ্য রপ্তানির পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে । উন্নত দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে জাতীয় আয়, মাথাপিছু আয় এবং জীবনযাত্রার মানও যথেষ্ট বাড়ে। এসব দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতির তুলনায় অনেক বেশি এবং জনগণের জীবনযাত্রার মানও অনেক উন্নত । জন্ম ও মৃত্যুর হার অনেক কম এবং জীবনযাত্রা অনেক গতিশীল । এসব দেশে ব্যবসা- বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষি, সবক্ষেত্রেই সাফল্যজনক অগ্রগতি দেখা যায়। কারিগরী ও প্রযুক্তি জ্ঞানের আশ্বর্যজনক অগ্রগতির ফলে মানবিক ও প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বাধিক সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশকে উন্নত দেশ বলা হয় । উন্নত দেশের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ ।
১। অধিক মাথাপিছু আয় ঃ উন্নত দেশগুলোর মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ অনেক বেশী। যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সুজারল্যান্ড, জার্মানি প্রভৃতি উন্নত দেশের মাথাপিছু আয় ৩০,০০০ ডলারের বেশী ।
২। পর্যাপ্ত মূলধন ঃ মাথাপিছু আয় বেশী হওয়ায় উন্নত দেশে সঞ্চয়, মূলধন ও বিনিয়োগের পরিমাণও অনেক বেশী ।
৩ । উন্নত জীবনযাত্রা ঃ উন্নত দেশে উৎপাদন ও আয় বেশী বলে জনগণের জীবনযাত্রার মানও খুব উন্নত । তারা সামাজিক নিরাপত্তাসহ সকল ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে ।
৪ । শিল্পের ব্যাপক প্রসার : আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে উন্নত দেশগুলোতে বৃহদায়তন ও মূলধনী দ্রব্যের শিল্প গড়ে উঠেছে ।
৫। স্বল্প কৃষি নির্ভরশীলতা ঃ উন্নত দেশগুলো কৃষির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে শিল্পপণ্য উৎপাদনে অগ্রগামী হয়েছে ।
৬। প্রাকৃতিক সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার : উন্নত দেশগুলোতে দক্ষ জনশক্তি ও পর্যাপ্ত মূলধনের কারণে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার হয় ৷
৭। উন্নত কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞান : উন্নত দেশগুলোতে বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে জীবনের সকল ক্ষেত্রে উন্নত কারিগরি ও প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ সম্ভব হয়েছে ।
৮। উন্নত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো ঃ উন্নত দেশে পরিবহণ ও যোগাযোগ, বিদ্যুত ও গ্যাস, পানি ও সেচ ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ইত্যাদি অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো খুবই উন্নত ।
৯। দক্ষ জনশক্তি : উন্নত দেশগুলোতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যাপক প্রসারের কারণে দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠেছে ।
১০ । আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অনুকূল ভারসাম্য ঃ উন্নত অর্থনীতিগুলো মূলধনী ও শিল্পজাত পণ্য রপ্তানি করে ও কাঁচামাল আমদানি করে । ফলে বাণিজ্য শর্ত ও বাণিজ্যিক ভারসাম্য সর্বদাই তাদের অনুকূলে থাকে ।
১১। শিক্ষা ও গষেণার প্রসার : উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষা ও গবেষণার প্রসারের ফলে জনগণের কর্মদক্ষতা বেশী । ফলে উৎপাদন ও আয় বেশী ।
১২। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ঃ কম্পিউটার প্রযুক্তি ও শিক্ষা বিস্তারের কারণে উন্নত দেশগুলোতে স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো বিদ্যমান । আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতি নেই বললেই চলে ।

অনুন্নত দেশ Underdeveloped Country

যেসব দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বা উপকরণ আছে অথচ সেই সম্পদ ব্যবহার করে এখনও তেমন কোন অগ্রগতি সাধিত হয় নাই তবে অতি সম্প্রতি উন্নয়নের সম্ভাব্যতা বিকশিত হয়েছে তাকে অনুন্নত দেশ বলে। অর্থাৎ সম্পদের প্রাপ্যতা আছে, সম্পদের কার্যকর ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং সম্প্রতি উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে এরূপ অর্থনীতিকে বলা হয় অনুন্নত দেশ। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোন হতে অনুন্নত দেশের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। বলে।”
কলিন ক্লার্কের মতে “যে দেশের অর্থনীতিতে প্রাথমিক পেশার প্রাধান্য রয়েছে তাকে অনুন্নত দেশ গল, এ. স্যামুয়েলসন এর মতে, “অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আয় বৃদ্ধির সমূহ সম্ভবনা থাকা সত্ত্বেও যে সকল দেশের মাথাপিছু বর্তমান আয় উন্নত দেশগুলোর তুলনায় কম তাদেরকে অনুন্নত দেশ বলা যায় ।" সাধারণভাবে অনুন্নত অর্থনীতি বা দেশ বলতে সেসব দেশকে বোঝায় যেসব দেশের অধিবাসীদের মাথাপিছু আয় কম এবং জীবনযাত্রার মান খুবই নীচু । অনুন্নত দেশের অর্থনীতিতে খুব একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। এসব অর্থনীতি কৃষির উপর অত্যধিক নির্ভরশীল হয়। উৎপাদন ক্ষেত্রে আধুনিক কলাকৌশল ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার সম্বন্ধে জনগণ অজ্ঞ থাকে। মালি, ইথিওপিয়া, মৌরিতানিয়া প্রভৃতি কয়েকটি দেশকে অনুন্নত অর্থনীতি বা দেশের পর্যায়ভুক্ত করা যায়।
অনুন্নত দেশে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ পরিলক্ষিত হয় ।
১। কৃষির উপর নির্ভরশীলতা ঃ অনুন্নত দেশগুলো কৃষি প্রধান হওয়ায় অধিকাংশ জনগণের প্রধান উপজীবিকা কৃষি এবং তারা গ্রামেই বাস করে ।
২। মূলধনের অভাব : অনুন্নত দেশের জনগণের আয় কম হওয়ায় সঞ্চয়ও কম। ফলে পুঁজির অভাবে তারা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করতে পারে না ।
৩। অনুন্নত শিল্প : মূলধন ও প্রযুক্তির অভাবে অনুন্নত দেশগুলো শিল্পে অগ্রসর হতে পারে না । ফলে বৃহৎ ও ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠা করা যায় না ।
৪। নিম্ন মাথাপিছু আয় ঃ অনুন্নত দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল নিম্ন মাথাপিছু আয় । জনগণ কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় মান্ধাতার আমলের কৃষি ব্যবস্থার কারণে উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম । এজন্য আয় কম ও সঞ্চয় কম । ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় না ।
৫। নিম্ন জীবনযাত্রার মান ঃ অনুন্নত দেশের জনগণ দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করার কারণে তারা জীবনধারনের জন্য ন্যূনতম মৌলিক চাহিদাটুকুও পূরণ করতে পারে না । মাথাপিছু আয় কম বলে তাদের জীবনযাত্রার মানও খুব নিচু ।
৬। অনুন্নত উৎপাদন ব্যবস্থা : শ্রমিকদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব, স্বল্প মূলধন, অনুন্নত সেচ ব্যবস্থা ও অনুন্নত বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে চাষাবাদ করার কারণে উৎপাদনের পরিমাণ খুবই কম । যারফলে অর্থনীতি অনুন্নত থেকে যায় ।
৭। প্রাকৃতিক সম্পদের স্বল্প ব্যবহার : মূলধন ও কারিগরী জ্ঞানের অভাবে অনুন্নত দেশের জনগণ প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহার করতে পারে না। ফলে স্বল্প প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের কারণে অর্থনীতি অনুন্নত থাকে ।
৮। প্রযুক্তি ও কারিগরী জ্ঞানের অভাব ঃ কারিগরী শিক্ষা ও লাগসই প্রযুক্তির অভাবে দক্ষ শ্রমিক ও বিশেষজ্ঞের অভাব অনুন্নত দেশে প্রকট ।
৯। বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা ঃ আমদানির চেয়ে রপ্তানির পরিমাণ কম বলে অনুন্নত দেশেগুলো বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে ।
১০। নিরক্ষরতা ঃ অনুন্নত দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ খুবই কম হওয়ায় জনগণ শিক্ষার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়, ফলে নিরক্ষরতার হার বৃদ্ধি পায় ।
১১। দক্ষ উদ্যোক্তার অভাব ৪ পুঁজি বিনিয়োগের ঝুঁকি বহন করার মত উদ্যোক্তার সংখ্যা অনুন্নত দেশে একেবারেই কম থাকে। ফলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বৃহৎ শিল্প গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়ে ।
১২। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র : অনুন্নত দেশগুলো দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আবদ্ধ। অর্থাৎ অনুন্নত অর্থনীতি বলে আয় কম, ফলে সঞ্চয় কম, এতে বিনিয়োগ কম, ফলে নিয়োগ কম, যারফলে পুনরায় আয় কম, এভাবে চক্রাকারে আবর্তিত হয়। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র অনুন্নত অর্থনীতি বা দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্যতম বাধা হিসাবে কাজ করে ।
১৩। শহর ও গ্রামীণ জীবনমানের বৈষম্য ঃ অনুন্নত দেশে গ্রামীণ ও শহরের জীবনযাত্রায় ব্যাপক ব্যবধান বিরাজ করে । শহরাঞ্চলে আধুনিক ও সচ্ছল জীবনযাত্রা নির্বাহ করা গেলেও গ্রামাঞ্চলে তা সম্ভব হয়ে উঠে না ।
১৪। বেকারত্ব ঃ শিল্পে অনগ্রসরতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ কম থাকায় অনুন্নত দেশে বেকার সমস্যা প্রকট আকার ধারন করে ।
১৫। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ঃ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতি অনুন্নত দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে বহুলাংশে ব্যাহত করে ।
১৬। অনুন্নত অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো : অনুন্নত দেশে পরিবহণ ও যোগাযোগ, বিদ্যুত ও গ্যাস, পানি ও সেচ ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা খুবই কম ।
পরিশেষে বলা যায়, অনুন্নত দেশগুলোতে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে যা দূর করতে না পারলে এসব অনুন্নত দেশগুলোর উন্নয়ন সম্ভব হবে না ।

উন্নয়নশীল দেশ Developing Country

উন্নয়নশীল অর্থনীতি বা দেশ বলতে সেসব দেশকে বোঝায় যেসব দেশে কিছুটা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং এখনও অর্থনৈতিক উন্নয়নের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এসব দেশ উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পদের সম্ভাব্য সদ্ব্যবহার করে ক্রমশ উন্নতির দিকে ধাবিত হয় । সুতরাং উন্নয়নশীল দেশ বলতে একটি গতিশীল অবস্থাকে বোঝায় । ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ প্রভৃতি উন্নয়নশীল দেশের অন্তর্ভূক্ত। উন্নয়নশীল দেশের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে দেওয়া হলো ।
১। মূলধনের স্বল্পতা ঃ উন্নয়নশীল দেশের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল মূলধনের স্বল্পতা । জনগণের আয় কম বলে সঞ্চয় কম এবং এরফলে মূলধন গঠনও কম । এজন্য বিনিয়োগের পরিমাণও কম ।
২। কৃষির উপর অধিক নির্ভরশীলতা ও উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রধানত কৃষি নির্ভর। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষাবাদ করা হয় না বলে উৎপাদনও কম ।
৩। স্বল্প মাথাপিছু আয় ৪ মাথাপিছু আয় স্বল্প হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশের জনগণ দারিদ্র্যভাবে
জজীৱত। তারা সঞ্চয়ে উৎসাহ পায় না ।
৪। অধিক ধন বৈষম্য ও উন্নয়নশীল দেশে একদিকে লক্ষ লক্ষ লোক অনাহারে ও অর্ধাহারে দিন যাপন করে। অপরদিকে, কিছু ধনী ব্যক্তি চরম ভোগ বিলাসের মধ্যে বসবাস করে। জাতীয় আয়ের অসম বণ্টনের কারণে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান প্রকট।
৫। সম্পদের অপূর্ণ ব্যবহার ও উন্নয়নশীল দেশে যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার হয় না বলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি মন্থর হয়।
৬। বেকার ও উন্নয়নশীল দেশগুলো জনবহুল বিধায় কর্মসংস্থানের অভাবে প্রচুর মানুষ বেকার থাকে। ৭। রপ্তানি বাণিজ্য ঃ উন্নয়নশীল দেশগুলো সাধারণত কৃষিজাত দ্রব্য ও কাঁচামাল রপ্তানি করে থাকে । এতে পণ্য দ্রব্যের প্রকৃত মূল্য পাওয়া যায় না ।
৮। অনুন্নত শিল্প ঃ উন্নয়নশীল দেশ শিল্প ক্ষেত্রেও তেমন উন্নত নয় । কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় শিল্প ক্ষেত্রে দক্ষ ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন শ্রমিক পাওয়া দুষ্কর। এরফলে শিল্প উৎপাদন তেমন বৃদ্ধি পায় না ।
৯ । শিল্পজাত দ্রব্য আমদানি : উন্নয়নশীল দেশগুলো বিদেশে উৎপাদিত শিল্পজাত দ্রব্য চড়া মূল্যে আমদানি করে থাকে । এতে এসব অর্থনীতি তীব্র বাণিজ্য ঘাটতির সম্মুখীন হয় ।
১০ নিচু জীবনযাত্রার মান ঃ উন্নয়নশীল দেশের জনগণের আয় কম বলে জীবনযাত্রার মানও নিচু । তারা বিলাসবহুল দ্রব্য বা ভোগ্যপণ্য চাহিদা অনুযায়ী ভোগ করতে পারে না ।
১১। নিরক্ষরতা ঃ উন্নয়নশীল দেশে নিরক্ষরতা ব্যাপক। অশিক্ষা হতে জন্ম নেয় কুসংস্কার, সংকীর্ণতা । আধুনিক লাগসই প্রযুক্তির অভাবে অধিক উৎপাদন সম্ভব হয় না ।
১২। দারিদ্র্যতা ঃ দারিদ্র্যতা প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশের একটি মূল সমস্যা। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের অসামর্থ্যই এ অবস্থার কারণ ।
১৩। শিক্ষার প্রসার ঃ উন্নয়নশীল দেশে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে অনেক নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে । এতে জনগণের নিকট শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে ।
১৪ । মূলধন গঠন ঃ উন্নয়নশীল দেশে মূলধন গঠনের হার কম । তবে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সঞ্চয় ও মূলধন গঠন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
১৫ । পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ঃ উন্নয়নশীল দেশে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, পানি, বিদ্যুত, গ্যাস ও টেলিফোন ইত্যাদি অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে । ফলে উন্নয়নও শুরু হয়েছে ।
১৬। ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ ঃ উন্নয়নশীল দেশগুলো দীর্ঘ সময় ধরে ঔপনিবেশিক শাসন
ও শোষণের অধীনে ছিল । ফলে এসব অর্থনীেিত উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি ।
.১৭ । রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্বলতা ঃ উন্নয়নশীল দেশে এখনও পর্যন্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে উঠেনি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এসব দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ব্যাহত করে। তবে কম্পিউটার প্রযুক্তি ও শিক্ষা বিস্তারের কারণে এ সমস্যাও ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে ।
পরিশেষে বলা যায়, উন্নয়নশীল দেশ উন্নত দেশের সমপর্যায়ের না হলেও এখানে শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সকল খাতে উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে।

স্বল্প উন্নত দেশ তি Least Developed Country

যেসব দেশ কিছুটা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করতে পেরেছে এবং অনুন্নত দেশের তুলনায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারছে না তাদেরকে স্বল্প উন্নত দেশ বলে । স্বল্প উন্নত দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান ও মাথাপিছু আয় উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় কম তবে অনুন্নত দেশের তুলনায় একটু বেশী। অন্যকথায় বলা যায়, উন্নয়নশীল দেশের জনগণের তুলনায় যে সব দেশের জনগণের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ভোগ ও কল্যাণের পরিমাণ কম তাদেরকে স্বল্প উন্নত দেশ বলে। এ সকল অর্থনীতি দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র হতে বেরিয়ে আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কিছুটা অগ্রসর হয়েছে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নয়নের পথে রয়েছে কিন্তু উন্নত দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। মোটকথা, যে সব দেশে কিছুটা অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটিয়ে উন্নয়নের দিকে ধাবিত হয়েছে তাদের স্বল্প উন্নত দেশ বলে । আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়ার অনেক দেশকে এরূপ স্বল্প উন্নত দেশের কাতারে পর্যায়ভূক্ত করা যায়। জাতিসংঘের বিশ্লেষণে বাংলাদেশকেও স্বল্প উন্নত দেশ হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে ।
স্বল্প উন্নত দেশে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ পরিলক্ষিত হয় ।
১। পুঁজির স্বল্পতা ঃ স্বল্প উন্নত দেশে উন্নয়ন উপযোগী পর্যাপ্ত পুঁজির অভাব রয়েছে। এসব দেশে আয় ও সঞ্চয় কম বলে পুঁজি গঠনের হারও কম । এতে বিনিয়োগের পরিমাণও কম হয়।
২। স্বল্প মাথাপিছু আয় : মাথাপিছু আয় স্বল্প হওয়ায় স্বল্প উন্নত দেশের জনগণ দারিদ্র্যভারে জর্জরিত। তারা সঞ্চয়ে উৎসাহ পায় না ।
৩। নিম্ন জীবনযাত্রার মান ঃ স্বল্প উন্নত দেশের জনগণের আয় কম বলে জীবনযাত্রার মানও নিচু । তারা বিলাসবহুল দ্রব্য বা ভোগ্যপণ্য চাহিদা অনুযায়ী ভোগ করতে পারে না ।
৪ । কৃষি নির্ভর অর্থনীতি ঃ স্বল্প উন্নত দেশগুলো সাধারণত কৃষির উপর নির্ভরশীল হয়। কিন্তু কৃষিখাতে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির ব্যবহার অনুপস্থিত । ফলে উন্নত দেশের তুলনায় কৃষির উৎপাদনশীলতা কম হয় ।
৫ । অনুন্নত শিল্প ঃ স্বল্প উন্নত দেশ শিল্প ক্ষেত্রেও তেমন উন্নত নয় । কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় শিল্প ক্ষেত্রে দক্ষ ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন শ্রমিক পাওয়া দুষ্কর। এরফলে শিল্প উৎপাদন তেমন বৃদ্ধি পায় না ।
৬। সম্পদের অপূর্ণ ব্যবহার ঃ স্বল্প উন্নত দেশে যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ থাকলেও আবিষ্কার করতে না পারা বা অজানার কারণে এসব সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার হয় না বলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি থমকে দাঁড়ায় । ফলে অর্থনীতির উন্নয়ন ব্যাহত হয় ।
৭। ছদ্মবেশী বেকারত্ব ঃ স্বল্প উন্নত দেশের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ছদ্মবেশী বেকারের অস্তিত্ব। প্রান্তিক উৎপাদন শূন্য অথচ উৎপাদনে নিযুক্ত আছে এরূপ ব্যক্তিকে ছদ্মবেশী বেকার বলে ।
৮। অসম বণ্টন ঃ স্বল্প উন্নত দেশসমূহে জাতীয় আয়ের অসম বণ্টন দেখা যায় । ফলে ধনী আরও ধনী হবার সুযোগ পায় এবং গরীব আরও গরীবে পরিণত হয় ।
৯। কাঁচামাল রপ্তানি ঃ স্বল্প উন্নত দেশগুলো সাধারণত কৃষিজাত দ্রব্য ও কাঁচামাল রপ্তানি করে থাকে। এতে পণ্য দ্রব্যের প্রকৃত মূল্য পাওয়া যায় না ।
১০। শিল্পজাত দ্রব্য আমদানি ঃ স্বল্প উন্নত দেশগুলো বিদেশে উৎপাদিত শিল্পজাত দ্রব্য চড়া মূল্যে আমদানি করে থাকে । এতে এসব অর্থনীতি তীব্র বাণিজ্য ঘাটতির সম্মুখীন হয়।
১১। ধন বৈষম্য ও স্বল্প উন্নত দেশে একদিকে লক্ষ লক্ষ লোক অনাহারে ও অর্ধাহারে দিন যাপন করে । অন্যদিকে, কিছু ধনী ব্যক্তি চরম ভোগ বিলাসের মধ্যে বসবাস করে ।
১২। দুর্বল অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো ঃ স্বল্প উন্নত দেশে পরিবহণ ও যোগাযোগ, বিদ্যুত ও গ্যাস, পানি ও সেচ ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা কম ।
১৩। বেকারত্ব ঃ স্বল্প উন্নত দেশের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল বেকার সমস্যার তীব্রতা। দেশের গ্রামাঞ্চলে মৌসুমী বেকার, ছদ্মবেশী বেকার এবং শহরাঞ্চলে দৃশ্যমান বেকারত্ব ভয়াবহ আকার ধারন করে । ১৪ । ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ ঃ স্বল্প উন্নত দেশগুলো দীর্ঘ সময় ধরে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের অধীনে ছিল । ফলে এসব দেশে উন্নয়নের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি ।
১৫। দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব ঃ দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামো, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা স্বল্প উন্নত দেশের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য । সুশাসনের অভাবে দেশগুলোতে দুর্নীতির মাত্রা অধিক ।
১৬। শিক্ষার প্রসার ঃ স্বল্প উন্নত দেশে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে অনেক নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে । এতে জনগণের নিকট শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে ।
১৭। মূলধন গঠন ঃ স্বল্প উন্নত দেশে মূলধন গঠনের হার কম । তবে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সঞ্চয় ও মূলধন গঠন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১৮ । রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা : আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা স্বল্প উন্নত দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ব্যাহত করে । তবে কম্পিউটার প্রযুক্তি ও শিক্ষা বিস্তারের কারণে এ সমস্যাও ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে ।
পরিশেষে বলা যায়, স্বল্প উন্নত দেশগুলোতে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিরাজ করে বিধায় উন্নয়নের পথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যারফলে এসব অর্থনীতির কিছুটা উন্নয়ন সাধিত হয়েছে ও উন্নয়ন ধীর গতিতে হচ্ছে।
পশ্চাৎপদ দেশ Backward Country
যেসব অর্থনীতিতে বা দেশে উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও উপকরণ নেই, উন্নয়নের পরিবেশ নেই, উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি তাদেরকে বলা হয় পশ্চাৎপদ দেশ । পশ্চাৎপদ দেশকে অনেকটা স্থবির অবস্থার সাথে তুলনা করা যায়। অর্থাৎ এসব অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন মোটেই সাধিত হয়নি । পশ্চাৎপদ অর্থনীতিতে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ পরিলক্ষিত হয়।
১। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দেয় দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ধারণাটি সর্বপ্রথম অধ্যাপক Ragner Nurkse ১৯৫২ সালে উপস্থাপন করেন ।
তিনি কায়রোতে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন 'A country is poor, because it is poor. ' অর্থাৎ দারিদ্র্যতাই দারিদ্র্যের কারণ । Nurkse এর বক্তব্যটা এমন, একটি দেশ দরিদ্র বলে আয় কম
সঞ্চয় কম
→ বিনিয়োগ কম
নিয়োগ কম → আয় কম, এভাবে চক্রাকারে আবর্তিত হয়। এই দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র পশ্চাৎপদ অর্থনীতি বা দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্যতম বাধা হিসাব কাজ করে।
২। কৃষির নিম্ন উৎপাদনশীলতা ও পশ্চাৎপদ অর্থনীতি বা দেশের কৃষির উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম থাকে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি দ্রব্য উৎপাদন করে। সনাতনী উৎপাদন ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকে। নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের পথে অনেক সমস্যা জড়িত থাকে। সেচ সার-বীজ প্রযুক্তি এবং যন্ত্রনির্ভর উৎপাদন এখানে হয় না । কাজেই উৎপাদনশীলতা কম থাকে যা কম আয় সৃষ্টি করে ।
৩। অপর্যাপ্ত পুঁজি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান মূলধন। সাধারণত মূলধন বা পুঁজি বলতে ঘরবাড়ী-যন্ত্রপাতি, ফ্যাক্টরী ইত্যাদি এবং দ্রব্যের মজুত ভান্ডারকে বোঝায়। পুঁজি বা মূলধনের স্বল্পতাই কোন দেশের দরিদ্র অবস্থার অন্যতম প্রধান কারণ। পশ্চাৎপদ অর্থনীতিতে মাথাপিছু পুঁজির পরিমাণ খুবই কম । এছাড়া পশ্চাৎপদ অর্থনীতিতে পুঁজি গঠনের হারও কম। অথচ জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে । কিন্তু আশানুরূপ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে না ।
৪। শিল্পের অনগ্রসরতা ঃ পশ্চাৎপদ দেশে মূলধনের অভাব এবং উদ্যোক্তার অভাব বিদ্যমান। এছাড়া শিল্পোন্নয়নের জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ থাকে না । ফলে শিল্পায়ন বিকশিত হয় না ।
৫। নিম্ন মাথাপিছু আয় ঃ পশ্চাৎপদ দেশর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল নিম্ন মাথাপিছু আয় । জনগণ কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় মান্ধাতার আমলের কৃষি ব্যবস্থার কারণে উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম । এজন্য আয় কম ও সঞ্চয় কম । ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় না ।
৬। প্রাকৃতিক সম্পদের অবস্থা ঃ পশ্চাৎপদ দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ কম থাকে । কোন কোন সম্পদ অব্যবহৃত থাকে, আবার কোথাও অপব্যবহার হয় । কারিগরী অবস্থা, মূলধনের অভাব এবং উদ্যোক্তার অভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ পূর্ণ ব্যবহার হয় না ।
৭ । নিম্ন জীবনযাত্রার মান ঃ পশ্চাৎপদ দেশের জনগণ দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করার কারণে তারা জীবনধারনের জন্য ন্যূনতম মৌলিক চাহিদাটুকুও পূরণ করতে পারে না। মাথাপিছু আয় কম বলে তাদের জীবনযাত্রার মানও খুব নিচু ।
৮। বেকার সমস্যা ঃ পশ্চাৎপদ অর্থনীতি বা দেশের শ্রম শক্তির এক বিরাট অংশ বেকার থাকে । মৌসুমী বেকার, অর্ধবেকার সবচেয়ে বেশী পরিলক্ষিত হয়। শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা কম থাকে । যুগোপযোগী শ্রমিকের সরবরাহ থাকে না ।
৯ । নিরক্ষরতা ঃ পশ্চাৎপদ দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ খুবই কম হওয়ায় জনগণ শিক্ষার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়, ফলে নিরক্ষরতার হার বৃদ্ধি পায় ।
১০। কারিগরী ও প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব ঃ কারিগরী শিক্ষা ও লাগসই প্রযুক্তির অভাবে দক্ষ শ্রমিক ও বিশেষজ্ঞের অভাব পশ্চাৎপদ দেশে প্রকট ।
১১। দক্ষ ও অভিজ্ঞ উদ্যোক্তার অভাব ঃ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সুম্পিটার মনে করেন উদ্যোক্তা হলো উন্নয়নের কেন্দ্র বিন্দু । কোন অর্থনীতির উন্নয়ন নির্ভর করে উদ্যোক্তার কার্যাবলীর উপর । অনুন্নত পশ্চাৎপদ অর্থনীতিতে ঝুঁকি গ্রহণকারী উদ্যোক্তা শ্রেণীর অভাব থাকে। এজন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় না ।
১২। দুর্বল অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো ও পশ্চাৎপদ দেশে পরিবহণ ও যোগাযোগ, বিদ্যুত ও গ্যাস, পানি ও সেচ ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা একেবারেই কম।
১৩। বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রতিকূল ভারসাম্য ও পশ্চাৎপদ দেশগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর নির্ভর করে। এছাড়া বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া দেশগুলো আদৌ চলতে পারে না। উন্নয়ন পরিকল্পনার বড় অংশ বৈদেশিক সাহায্য দ্বারা মেটানো হয়। এসব সাহায্য উন্নয়নে সহায়ক হয় না বরং দিনের পর দিন ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে আর অবাঞ্চিত শর্ত অর্থনীতির উপর পড়তে থাকে ।
১৪ । রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা ঃ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোন অর্থনীতি বা দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ও স্থিতিশীলতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতার উপর নির্ভর করে। কারণ রাজনৈতিক দর্শন দ্বারাই অর্থনৈতিক দর্শন নির্ধারিত হয়। আবার উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রশাসনের দক্ষতার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এই দুটি উপাদান পশ্চাৎপদ দেশে অনুকূল পরিলক্ষিত হয় না। এর ফলে এসব অর্থনীতি অনুন্নয়নের সীমায় আবদ্ধ থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, পশ্চাৎপদ দেশগুলোতে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে যা দূর করতে না পারলে পশ্চাৎপদ দেশগুলোর উন্নয়ন সম্ভব হবে না ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]