দারিদ্র্যতার সংজ্ঞা দাও , দারিদ্র্য পরিমাপের পদ্ধতিগুলো ব্যাখ্যা কর।

দারিদ্র্য বিমোচন Poverty Alleviation ভূমিকা Introduction
ঘনবসতিপূর্ণ ও সীমিত সম্পদের এ দেশে ২০০৫ সালে চরম দারিদ্রের হার (মাথা-গণনা পদ্ধতিতে) ছিল শতকরা ৪০.৪ (বাংলাদেশ খানা আয় ও ব্যয় জরিপ HIES-2005 অনুযায়ী) যা ২০১০-এ নেমে দাঁড়িয়েছে ৩১.৫ শতাংশে (HIES - 2010 এর প্রাথমিক হিসাব মতে)। অপরদিকে, Human Development Report 2011 এর তথ্যমতে, Multi-dimensional Poverty Index (MPI) এ বাংলাদেশের মান ছিল ০.২৯২ । পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০১৩ ও ২০২১ সালের মধ্যে এ দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অতি দরিদ্রদের জন্য টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা, অন্ততঃ ২০১৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন, দীর্ঘমেয়াদী রূপকল্প হিসাবে বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১ এবং ২০১১-১৫ মেয়াদের জন্য ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন-এর বিষয়ে সরকারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দারিদ্র্য নিরসন কার্যক্রমসমূহের ব্যয় বাবদ মোট বরাদ্দ হয়েছে ৮৬,৮৯১ কোটি টাকা ।.২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ৩০,৭৫১.১১ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে যা মোট বাজেটের ১২.২৮ শতাংশ এবং জিডিপি'র ২.৩০ শতাংশ । এর আওতায় বয়স্কভাতা, স্বামী পরিত্যাক্তা, দুঃস্থ মহিলাদের ভাতা, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীসহ বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে। এছাড়াও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে আশ্রয় প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, ঘরে ফেরা, মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ, ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে 'দারিদ্র্য ও ক্ষুধা' সংশ্লিষ্ট ১নং এমডিজি অর্জনের পথে অগ্রগামী আছে। দারিদ্র্য বিমোচনে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), বিভিন্ন ব্যাংক এবং NGO সংশ্লিষ্ট রয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও দুটো বিশেষায়িত ব্যাংকের ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ হয়েছে ২৪,৯১৯ কোটি টাকা এবং আদায়ের পরিমাণ ২৪,৫২৬ কোটি টাকা । বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভূত ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১,০৯,১৪৯.৭২ কোটি টাকা ও ঋণ আদায়ের পরিমাণ ৯৮,০৯১.৪০ কোটি টাকা। দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি টেকসই করাসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়নে অর্থ বিভাগসহ মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাসমূহের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে ।
দরিদ্র এর সংজ্ঞা Definition of Poor
সমাজে যেসব মানুষ ন্যূনতম বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত থাকে অর্থাৎ যারা মানুষ হয়েও মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয় (ইচ্ছাকৃতভাবে সন্যাসী বা বৈরাগী জীবনযাপনকারী ব্যক্তিদের দরিদ্র বলা যাবে না) তাদেরকে বলা হয় দরিদ্র। অন্যভাবে বলা যায়, সমাজে বসবাসকারী যেসব মানুষ জীবনধারণের প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না ও সাধারণ জীবনযাপন করতে ব্যর্থ হয় তাদেরকে বলা হয় দরিদ্র।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. অমর্ত্য সেন এর মতে, "শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সেবার ব্যয় যারা মিটাতে পারে না তারাই দরিদ্র।
সামাজিকভাবে দরিদ্র মানুষের কোন অবস্থান নেই এবং দেশের জন্য কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণেও এদের কোন ক্ষমতা নেই । খাদ্য থেকে দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণের দিক থেকে দরিদ্র দুই প্রকার। যথাঃ
(ক) চরম দরিদ্র (Extreme Poor) : যেসব মানুষ দৈনিক ১৮০৫ কিলো ক্যালোরির নিচে খাদ্য গ্রহণ করে তাদেরকে চরম দরিদ্র বলে। সমাজের খুব বেশি বঞ্চিতদের আমরা 'চরম দরিদ্র' বলতে পারি।
(খ) আপেক্ষিক দরিদ্র ( Moderate Poor) : যারা দৈনিক খাদ্য থেকে ২১২২ কিলো ক্যালোরি গ্রহণ করতে পারে না তাদেরকে বলা হয় আপেক্ষিক দরিদ্র । অপেক্ষাকৃত কম বঞ্চিতদের আমরা বলতে পারি “আপেক্ষিক দরিদ্র”।
দারিদ্র্যতার সংজ্ঞা Definition of Poverty .
‘দারিদ্র্য/দারিদ্র্যতা' হচ্ছে মানুষের এক বিশেষ মাত্রার বঞ্চনামূলক অবস্থা। যে পরিবেশে বা অবস্থায় মানুষ ন্যূনতম জীবনধারনের উপযোগি প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ সংগ্রহ করতে পারে না তাকে বলা হয় দারিদ্র্য বা দারিদ্র্যতা । অর্থাৎ দারিদ্র্য এমন এক অবস্থা যেখানে মানুষ তার মৌলিক প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে না।
বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের মতানুসারে, “দারিদ্র্যতা বলতে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক বঞ্চনাকে বুঝায় যার কারণে মানুষ ন্যুনতম জীবনযাপনের স্তর বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের মালিকানা থেকে বঞ্চিত হয়।”
দারিদ্র্যের সংজ্ঞা প্রধানত দুই ধরনের। যথাঃ (ক) একমাত্রিক এবং (খ) বহুমাত্রিক ।
'একমাত্রিক দারিদ্র্য : একমাত্রিক সংজ্ঞানুসারে দরিদ্র লোককে চিহ্নিত করা হয় বঞ্চনার বিশেষ একটি মাপকাঠি বা স্তরকে ব্যবহার করে। যেমন- আয় দারিদ্র্য অর্থাৎ সমাজে যাদের আয় দারিদ্র্য আয় রেখার নিচে তাদেরকে আয়ের দিক থেকে দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। অনুরূপভাবে, পুষ্টি দারিদ্র্য, শিক্ষা দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য দারিদ্র্য, রাজনৈতিক অধিকারের বঞ্চনাভিত্তিক দারিদ্র্য ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ন্যূনতম বঞ্চনা নির্ণয় সাপেক্ষে বিভিন্ন ধরনের একমাত্রিক দারিদ্র্য অবস্থাকে চিহ্নিত করা সম্ভব ।
বহুমাত্রিক দারিদ্র্য ও বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সাধারণত অনেকগুলো একমাত্রিক দারিদ্র্যের সম্মিলিত সহাবস্থানের সূচক । অর্থাৎ কেউ যদি একই সঙ্গে আয়, পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গৃহ, রাজনৈতিক অধিকার ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে ন্যূনতম নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম পায়, তাহলে তাকে সর্বদিক থেকে বঞ্চিত বা বহুমাত্রিক দারিদ্র্য বলা যেতে পারে ।
দারিদ্র্য পরিমাপ পদ্ধতি Measuring Method of Poverty
দারিদ্র্য পরিমাপের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে । নিম্নে দারিদ্র্য পরিমাপের বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচনা করা হল ।
(ক) একমাত্রিক দারিদ্র্য পরিমাপ পদ্ধতি ঃ একমাত্রিক দারিদ্র্য পরিমাপের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে “পুষ্টি দারিদ্র্য” বা “আয় দারিদ্র্য” পরিমাপ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতেই বর্তমানে বিভিন্ন দেশের দারিদ্র্যের হার পরিমাপ করা হয়ে থাকে ।
বাংলাদেশের গড় আবহাওয়া, মানুষের উচ্চতা, দৈনিক শক্তিক্ষয়, কর্মক্ষমতা ইত্যাদি বিচার করে শরীরবিদরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, এদেশে একজন মানুষ গড়পরতা প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ন্যূনতম বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন গড়ে ২১২২ কিলোক্যালরি দরকার। মোটামুটি এই পরিমাণ ক্যালরি আহরণের জন্য কম দামী অথচ ক্যালরিবহুল যেসব খাদ্য দরকার (যেমন- মাছ/মাংস নয় ডাল, সরুচাল নয়, মোটা চাল ইত্যাদি) তার একটি তালিকা প্রথমে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা তৈরি করেন। এই ন্যূনতম খাদ্য তালিকাকে "দারিদ্র্য খাদ্য সমষ্টি” বলা হয়। এদের বাজার দামের যোগফলের সমষ্টিকে “দারিদ্র্য আয়" বলে অভিহিত করা হয় । এই আয়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একটি বাজার অর্থনীতিতে (যেখানে বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্য হিসেবে কিনে ভোগ করতে হয়) কারো এই ন্যূন্যতম আয় না থাকলে তার পক্ষে ন্যূনতম জীবনধারণ সম্ভব নয় বা “শ্রমশক্তির পুনরুৎপাদন" সম্ভব নয় । এরপর এই ন্যূন্যতম আয় বঞ্চিত লোকদেরকে "দারিদ্র্য" হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের মাথা-গণনা করে মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করে শতাংশ বের করা হয়। এই শতাংশকেই সে দেশের “মাথা গণনা ভিত্তিক দারিদ্র্যের হার” বলা হয়। যে দেশে এই হার যত বেশি সে দেশের দারিদ্র্য অবস্থা তত খারাপ বলে বিবেচিত হয় ।
(খ) বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পরিমাপ পদ্ধতি ঃ পুষ্টিবিদরা অনেক সময় দৈহিক গঠনের ভিত্তিতে দারিদ্র্য নির্ণয় করেন। সাধারণত তাদের কাছে বিভিন্ন উচ্চতার সঙ্গে বিভিন্ন ওজনের যে গড় তালিকা রয়েছে সেটি ব্যবহার করে তারা দরিদ্র লোককে চিহ্নিত করেন। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে উচ্চতার তুলনায় ওজন কম হলে, তাদের পুষ্টি ঘাটতি সহজেই অণুমেয়। এ ধরনের বাহ্যিক দৈহিক বৈশিষ্ট্যভিত্তিক দারিদ্র্য পরিমাপকে ইংরেজিতে “Anthropometric Measure of Poverty” বলা হয়।
অনেক সময় খাদ্য তালিকায় “প্রোটিনের” ঘাটতি বা মোট যে খাদ্য খাওয়া হচ্ছে তার পুষ্টিমূল্য (ক্যালরি হিসাবে মাপা হয়) হিসাব করেও পুষ্টিবিদরা দারিদ্র মাপতে চেষ্টা করেন ।
পুষ্টি অবস্থার প্রত্যক্ষ অনুসন্ধান ছাড়া বস্ত্র, ভোগ মাত্রা, স্বাস্থ্য ও পয়ঃপ্রণালীর অবস্থা, নিরাপদ পানীয় জলের সুযোগ, চিকিৎসা সুযোগ, শিক্ষা সুযোগ, নিরাপত্তা মাত্রা, সম্পত্তির মাত্রা, গৃহায়ন অবস্থা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনুসন্ধান ও কোন না কোন ধরনের পরিমাপ সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা সাধারণত আয় মাত্রার দিক থেকে দরিদ্র, তারা অন্যান্য মাত্রার নিরিখেও দরিদ্র হয়ে থাকেন।
(গ) আপেক্ষিক দারিদ্র্য বা মানব দারিদ্র্য পরিমাপ পদ্ধতি ঃ এক ব্যক্তি অপেক্ষা অপর ব্যক্তি গরিব হলে কিংবা এক পরিবার থেকে অপর পরিবার অপেক্ষাকৃত কম পণ্য ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলে তাকে অপেক্ষিক দারিদ্র্য বলে। প্রত্যেক জনগোষ্ঠী নিজ দেশের স্থান-কাল-পাত্র, গড় আয়, গড় সম্পদ, গড় প্রাচুর্য ইত্যাদিকে বিবেচনা করে সামাজিকভাবে নিজেরাই সিদ্ধান্তে আসেন যে কারা সমাজের মধ্যে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র এবং কারা অপেক্ষাকৃত ধনী। বস্তুতঃ দরিদ্রদের চিহ্নিত না করে ধনীদের চিহ্নিত করা অসম্ভব । সমাজে আয় ও সম্পদ বন্টনে বৈষম্য বা অসমতা থাকলে আপেক্ষিক দারিদ্র্যতা দেখা দেয়। আয় বৈষম্য ও অসমতার কারণে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির তুলনায়, এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলের মানুষের তুলনায়, এক দেশের মানুষ অন্য দেশের মানুষের তুলনায় এবং উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের মানুষ উন্নত দেশের তুলনায় আপেক্ষিকভাবে বেশি দরিদ্র হয়ে থাকে। এ ধরনের দারিদ্র্যতাকে “আপেক্ষিক দারিদ্র্যতা” বা "মানব দারিদ্র্যতা" বলা হয় ।
মৌসুমী দারিদ্র্য Seasonal Poverty
সমাজের মানুষের যে অংশ বৎসরের কোন নির্দিষ্ট মৌসুমে বা ঋতুতে মানবেতর জীবনযাপন করে, তাকে বলা হয় মৌসুমী দারিদ্র্য। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ কৃষি নির্ভর এবং কৃষির অবস্থা মৌসুম ভেদে উঠানামা করে । সাধারণত বাংলাদেশে আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বন্যা হয় এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষিক্ষেত্রে অভাব-অনটন কর্মসুযোগের ঘাটতি ইত্যাদি লেগেই থাকে । পল্লী অঞ্চলের লোক এই মৌসুমটিকে তাই “মরা কার্তিক” নামে অভিহিত করে থাকেন। পক্ষান্তরে, এপ্রিল-জুন মাসগুলোতে বোরো ফসল কাটা হয় এবং গ্রামাঞ্চলে মানুষের হাতে আয় ও কাজ থাকে । এই সময়কে গ্রামের মানুষ কোথাও কোথাও “নবান্ন” হিসেবে অভিহিত করে থাকে ।
স্বভাবত দেশের দারিদ্র্য অবস্থা বিশেষত পল্লী অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার নির্ভর করবে ঠিক কোন্ সময়ে জরিপ চালানো হচ্ছে তার উপর। “মরা -কার্তিক” জরিপ চালানো হলে আমরা যে দারিদ্র্যের হার পাবো তা স্বভাবতই একটু অতিরিক্ত উচ্চমাত্রার হবে । পক্ষান্তরে, নবান্নের সময় পরিমিত দারিদ্র্যের হার একটু অতিরিক্ত নিম্নমাত্রার হবে । ১৯৮৮-৮৯ সালে বেশ কয়েকটি গ্রামে জরিপ চালিয়ে বি.আই.ডি.এস গবেষকরা দেখেছেন যে, বাংলাদেশে “মৌসুমী দারিদ্র্যের" ব্যবধান হচ্ছে,
অক্টোবর-ডিসেম্বর = মরা কার্তিক = ৫১.১ শতাংশ, এপ্রিল-জুন = নবান্ন = ৩৩ শতাংশ ।
‘দরিদ্র' সম্পর্কে দরিদ্রদের অভিমত Opinions of the poor people about 'Poverty'
২০০০ সালের জন্য বিশ্বব্যাংকের World Development Report এর বিষয়বস্তু নির্ধারিত হয় "দারিদ্র্য”। এই রিপোর্টের জন্য তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার প্রধান দায়িত্ব অর্পিত হয় অধ্যাপক Roby Kanubur এর উপর। তিনি প্রথমেই স্থির করেন যে, “দরিদ্র" ধারণাটি দরিদ্ররা কিভাবে মূল্যায়ন করেন সে বিষয়ে সর্বপ্রথম বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধান চালানো হবে। এর ফলে ১৯৯০ দশকে পৃথিবীর ৬০টি দেশ থেকে ৬০ হাজার দরিদ্র নারী-পুরুষের নিজস্ব দারিদ্র্য বিষয়ক অভিমত সংগ্রহ করা হয়। এই সংকলিত বিপুল তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক ওয়েব সাইটে বর্তমানে যে নতুন Page খোলা হয়েছে তার শিরোনাম হচ্ছে “www.world.org/poverty/voice/overview"। আমরা উক্ত ওয়েব সাইট থেকে “দরিদ্র” সম্পর্কে যে প্রধান প্রধান চিন্তা দরিদ্রদের নিজস্ব সাধারণ চিন্তা হিসেবে বেরিয়ে এসেছে তা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল।
১। দারিদ্র্য শুধু আয়ের স্বল্পতা নয় । এটা বহুমাত্রিক প্রত্যয় । আত্মিক শান্তি, সুস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, চিত্তা ও কাজের স্বাধীনতা ছাড়া ব্যক্তি সম্পূর্ণ দরিদ্র মুক্ত হতে পারে না। খাদ্যের অভাব, বস্ত্রের অভাব, কাজের অভাব, থাকার জায়গার অভাব, অর্থের অভাব এগুলোর সম্মিলিত নাম হচ্ছে "দারিদ্র্য” ।
২। নারীদের উপর নির্যাতন, বিশেষ ভাবে দরিদ্র নারীদের উপর গৃহের ভেতরে এবং সামাজিক পরিমন্ডলে উভয় ক্ষেত্রেই নির্যাতন ও বৈষম্য বিদ্যমান ।
৩। এন.জি.ও দের সেবাকে দরিদ্ররা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন কিন্তু তারা এও উল্লেখ করেছেন যে, অনেক এন.জি.ও-ই বর্তমানে জনগণের কাছে কোন জবাবদিহি করে না।
৪ । সারা বিশ্বে গত কয়েক দশক ধরে সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের ভেতরে এবং বাইরে এই ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাস মোকাবেলার ক্ষমতা দরিদ্রদের নেই । দরিদ্ররা মনে করেন অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির ক্রমবর্ধমান সুফল ও সুযোগগুলো তাদেরকে সর্বদাই পাশ কাটিয়ে চলে যায় ।
৫। দরিদ্ররা চান যেন সরকার এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাছে আরো বেশি জবাবদিহি করেন । এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতি একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে দরিদ্ররা চিহ্নিত করেছেন ।
৬। দরিদ্ররা মূলত আত্মীয়-স্বজন এবং ঘনিষ্ট বন্ধু-বান্ধবের সাহায্য নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করেন । এখানেও অনেক জায়গায়ই তাদের শেষ ভরসাস্থল স্থানীয় ধর্মীয় পবিত্র মানুষ ।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের মাত্রা Degree of Poverty in Bangladesh
স্বাধীনতা অর্জনের পর ৪৪ বছর ধরে সরকার এদেশের দারিদ্রের হার হ্রাস তথা দারিদ্র্য ক্লিষ্ট মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এদেশে ২০১৪ সালে চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থিত জনসংখ্যার হার ২৪.৪৭ শতাংশ । এ সফলতা সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত দেশের সকল ধরনের নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন কৌশলের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন । দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে এদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির গুরুত্বপূর্ণ নিদের্শক । UNDP কর্তৃক প্রকাশিত Human Development Report 2011 অনুযায়ী আয় দারিদ্র্যের দিক থেকে ২০১১ সালে এদেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ ছিল দরিদ্র। অপরদিকে, Human Development Report 2014 অনুযায়ী বিশ্বের ১৮৭টি দেশের মধ্যে মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২তম । উক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ নিম্ন মানব উন্নয়ন সূচকের (HDI) তালিকাভুক্ত ১০৬টি দেশের মধ্যে Multi- Dimensional Poverty Index (MPI) এ বাংলাদেশের মান ছিল ২০১১ সালে ০.২৩৭ যা ২০০৭ এ ছিল ০.২৯২ (নিম্ন মানের HDI), যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল (নিম্ন মানের HDI), পাকিস্তান (নিম্ন মানের HDI), ভারত (মধ্যম মানের HDI) ও শ্রীলংকার (মধ্যম মানের HDI) মান ছিল যথাক্রমে ০.২১৭, 0.268, 0.283 ও ০,০২১ ।
পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ৬টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং একটি দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার অন্যতম লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্য বিমোচন। এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসমূহের ফলে বাংলাদেশ আয় ও মানব দারিদ্র্য দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। অন্তত ২০১৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের ব্যাপারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্য অর্জনের ধারাবাহিকতায় সরকার কর্তৃক দ্বিতীয় দারিদ্র্য নিরসন কৌশল পত্রের সময়োপযোগী সংশোধন (জাতীয় দারিদ্র্যা নিরসন কৌশলপত্র-২, ২০০৯ - ১১ দিন বদলের পদক্ষেপ) করা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী রূপকল্প হিসাবে 'বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২১)' শীর্ষক পরিকল্পনা দলিল প্রণয়ন করা হয়। এ রূপকল্প রূপায়নের লক্ষ্যে ২০১১-১৫ নেয়াদের জন্য ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও ২০১১ এর জুন থেকে শুরু হয়। এ দীর্ঘমেয়াদী রূপকল্প ও মধ্যমেয়াদী কার্যক্রম হিসেবে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন তথা দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসকারী জনগণের সংখ্যা ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। উল্লেখ্য, দারিদ্র্য নিরসনসহ আরো কতিপয় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বেশ সাফল্য লাভ করেছে।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের মাত্রার পরিমাপ Measurement of the Incidence of Poverty in Bangladesh
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম খানা ব্যয় জরিপ (Household Expenditure Survey - HES) ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে পরিচালিত হয় এবং পরবর্তীকালে আরো কয়েকটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ চালনা করা হয় ২০১০ সালে। ১৯৯০-৯১ পর্যন্ত পরিচালিত খানা ব্যয় জরিপে দেশের দারিদ্র্য পরিমাপের জন্য খাদ্য শক্তি গ্রহণ (Food Energy Intake-FEI) এবং প্রত্যক্ষ ক্যালরী গ্রহণ (Direct Calory Intake-DCI) পদ্ধতি অনুসরণ করা হত । দারিদ্র্য পরিমাপে জনপ্রতি প্রতিদিন ২১২২ কিলো ক্যালরির নিচে খাদ্য গ্রহণকে অনপেক্ষ দারিদ্র্য (Absoute Poverty) এবং ১৮০৫ কিলো ক্যালরির নিচে খাদ্য গ্রহণকে চরম দারিদ্র্য (Hard Core Poverty) হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রথমবারের মতো ১৯৯৫-৯৬ সালে পরিচালিত খানা জরিপে মৌলিক চাহিদা ব্যয় (Cost of Basic Needs - CBN) পদ্ধতি ব্যবহার হয়। অনুরূপভাবে ২০০০, ২০০৫ ও ২০১০ সালের জরিপে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় । এ পদ্ধতিতে দারিদ্র্য পরিমাপে খাদ্য বর্হিভূত (Non Food) ভোগ্যপণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিবিএস কর্তৃক সর্বশেষ পরিচালিত খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১০ এর তথ্য মূলত এ অধ্যায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে ।
দারিদ্র্যের গতিধারা Trends of Poverty
২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে (উচ্চ দারিদ্র্য রেখা দ্বারা পরিমাপকৃত) আয় দারিদ্র্যের হার ৪৮.৯ শতাংশ থেকে ৪০.০ শতাংশে নেমে আসে। এ হ্রাসের যৌগিক হার বার্ষিক ৩.৯ শতাংশ। তবে দারিদ্র্যের হার শহর এলাকায় অধিক হ্রাস পেয়েছে (বার্ষিক ৪.২ শতাংশ হারে) । অপরদিকে ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ ২০১০ সালে খানার মাথাপিছু মাসিক নামিক যোগব্যয় জাতীয় পর্যায়ে ১১,০০০ টাকা অনুমিত হলেও পরী এলাকায় তা ৯,৪৩৬ টাকা এবং শহরাঞ্চলে তা ১৫,২৭৬ টাকা নির্ধারণ করা । উল্লেখ্য, ২०० জাতীয় পর্যায়ে, পল্লী অঞ্চলে এবং শহরাঞ্চলে তা যথাক্রমে ৫,৯৬৪ টাকা, ৫,১৩৫ টাকা এবং ১৫, ২१७ ছিল । মাসিক গড় ভোগব্যয়া ২০১০ সালে ২০০৫ সালের তুলনায় ৮৪.৫ শতাংশ এবং ২০০০ সালের প ৩১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতীয় পর্যায়ে পরিবারভিত্তিক আয় বন্টন এবং গিনি অনুপাত
২০০৫ এবং ২০০১০ সালে পরিচালিত জরিপে পরিবার ভিত্তিক আয় বন্টনের শতকরা হার এবং গিনি অনুপাত সারণিতে উপস্থাপন করা হল।
সারণিতে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ডিসাইল-২ ও ডিসাইল-১০ ভুক্ত পরিবারগুলোর জাতীয় পর্যায়ে আয় ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১০ সালে হ্রাস পেয়েছে। ডিসাইল-১, ৩ ও ৪ স্থির রয়েছে। অন্যদিকে ডিসাইল-৫ - ডিসাইল-৯ ভুক্ত পরিবারগুলোর আয় ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১০ সালে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ পরিবারের আয় ২০১০ ও ২০০৫ সালে প্রায় স্থির রয়েছে (২০১০ সালে ০.৭৮ ও ২০০৫ সালে ০.৭৭ শতাংশ)। অবশ্য একই সময়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের আয়ও (২৬.৯৩ শতাংশ থেকে ২৪.৬১ শতাংশে) হ্রাস পেয়েছে। সর্বোপরি গিনি অনুপাত ২০০৫ সালের তুলনায় ২০১০ সালে হ্রাস পেয়েছে যা সমাজের বৈষম্য হ্রাসের ইঙ্গিত বহন করে।
১৩.১০ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে অগ্রগতি
Attainment of Millennium Development Goals (MDGs)
জাতিসংঘ ঘোষিত Millennium Development Goals (MDGs) এর লক্ষ্যসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে - ক্ষুধা ও চরম দারিদ্র ২০১৫ সালের মধ্যে কমিয়ে আনা। UNDP ও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক যৌথভাবে

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]