বাংলাদেশে দারিদ্র্যতার কারণ বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের উপায়সমূহ

দারিদ্র্য বিমোচন
"Millennium Development Goals Bangladesh Progress Report 2010" শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে 'দারিদ্র্য ও ক্ষুধা সংশ্লিষ্ট ১ নং এমডিজি অর্জনের পথে অগ্রগামী হয়েছে। ২০১৫ এর লক্ষ্যমাত্রায় দারিদ্র্য সীমা কমিয়ে ২৯.০ তে নামিয়ে আনার বিপরীতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয় ও ব্যয় জরিপ, ২০১০ এর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ৩১.৫ অর্জিত হয় যা দারিদ্র্য সীমা হ্রাস track এ অবস্থান করছে। দারিদ্র্য সংশ্লিষ্ট সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিম্নলিখিত সারণিতে দেয়া হলো ।
একনজরে দারিদ্র্য সংশ্লিষ্ট সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনের অগ্রগতি উদ্দেশ্য, লক্ষ্য এবং নির্দেশকসমূহ (সংশোধিত) ভিত্তি বৎসর ১৯৯০-৯১ লক্ষ্যমাত্রা ১৪ চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণ
দারিদ্র্য নিরসন কৌশল কাঠামো Poverty Reduction Strategy Framework
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দারিদ্র্য নিরসনের জন্য গৃহীত কৌশলসমূহ হচ্ছে,
১। দরিদ্র অঞ্চলে উপার্জনক্ষম লোকের কাজের সুযোগ সৃষ্টি;
২। কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং অকৃষি খাতে কর্মসৃজন;
৩। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা পানি সরবরাহ ও পুষ্টি খাতে সরকারি ব্যয়ে আঞ্চলিক বৈষম্যের বিষয়টির ওপর অধিক গুরুত্বারোপ আরোপ করা;
৪। খাস জমি বিতরণ, সার, বীজ, সেচ, বিদ্যুৎ এবং গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদান সহায়ক বিষয়সমূহে দরিদ্রদের অগ্রাধিকার নিশ্চিতকরণ;
৫। দরিদ্রদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়নের ব্যবস্থা করা ;
৬। শহরবাসী দরিদ্রদের জন্য নাগরিক সুবিধা প্রদান করা ।
সংশোধিত দ্বিতীয় নিরসন কৌশলপত্রের (দিন বদলের পদক্ষেপ ২০০৯-১১) দারিদ্র্য নিরসন কৌশল কাঠামোর কৌশলগত ব্লকগুলো হচ্ছে,
১ । দরিদ্রবান্ধব প্রবৃদ্ধির জন্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি, ২। দরিদ্রবান্ধব প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ৩ । দরিদ্রবান্ধব প্রবৃদ্ধি জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ,
৪ । অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা এবং
বাংলাদেশে দারিদ্র্যতার কারণ
Causes of Poverty in Bangladesh

একজন মানুষ কেন সমাজের দরিদ্র শ্রেণীভূক্ত হয়? কেনইবা আরেকজন মানুষ ধনী শ্রেণীভূক্ত হয় বা অন্তঃত দরিদ্র হয় না? কিভাবে একজন দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্য সীমার আয়ের উপরে উঠে যেতে পারে এবং কিভাবে একজন মানুষ দারিদ্র্য সীমার উপর থেকে দারিদ্র্য সীমার নিচের দিকে নেমে যায়? এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর জানা না থাকলে আমরা দারিদ্র্যের প্রকৃত কারণ জানতে পারবো না । এই ঘটনাগুলোর পিছনে নানা ধরনের কারণ কাজ করছে এবং হয়তো এক এক দরিদ্র মানুষের ইতিহাস একেক রকম হবে। তারপরেও বাংলাদেশে দারিদ্র্যতার জন্য প্রধানত যে কারণগুলো দায়ী সেগুলো নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল ।
১। ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ ঃ প্রায় ২০০ বৎসরের বৃটিশ শাসন ও শোষণ এবং পশ্চিম পাকিস্তানীদের বৈষম্যমূলক আচরণ আমাদের চরম দারিদ্র্যতার জন্য দায়ী। কেননা ঔপনিবেশিক শাসনামলে এদেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে ও দারিদ্র্যতা দূরীকরণে তেমন কিছুই করা হয়নি ।
২। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র : বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কম বলে সঞ্চয়ের হার কম। আবার সঞ্চয় কম বলে মূলধন গঠনের হার কম। মূলধন গঠন কম বলে বিনিয়োগের হার কম। বিনিয়োগ কম বলে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন কম । কাজেই স্বল্প আয়, স্বল্প সঞ্চয়, স্বল্প মূলধন ও স্বল্প বিনিয়োগের ফলে বাংলাদেশ দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আটকা পড়ে আছে বিধায় দারিদ্র্যতা না কমে বরং বেড়ে যাচ্ছে ।
৩। প্রাকৃতিক সম্পদের অপূর্ণ ব্যবহার ঃ বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর না হলেও যথেষ্ট সমৃদ্ধ । কিন্তু প্রয়োজনীয় মূলধন, দক্ষতা ও পরিকল্পনার অভাবে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রাকৃতিক সম্পদের অপূর্ণ ব্যবহার তথা অদক্ষ ব্যবহার আমাদের দারিদ্র্যতার অন্যতম কারণ ।
৪ । বেকারত্ব ঃ এ দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার একটা বড় অংশ বেকার । কৃষি ও শিল্পখাত অনগ্রসর বলে সেখানে বিনিয়োগ কম এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত । কৃষিতে নিয়োজিত অধিকাংশ মানুষ আবার ছদ্ম বেকার । শহর ও নগরাঞ্চলে বেকার মানুষের মিছিল। গ্রাম ও শহর এলাকার ব্যাপক বেকারত্ব বিশাল জনগোষ্ঠীকে দরিদ্র করে রেখেছে।
৫। অনগ্রসর কৃষি ঃ বাংলাদেশের মানুষের প্রধান পেশা হল কৃষি। কিন্তু নানা কারণে আমাদের কৃষিতে উৎপাদনশীলতা কম । উৎপাদনশীলতা কম বলে মাথাপিছু আয় কম এবং জীবনযাত্রার মান নিম্ন । তার ওপর ফসল নষ্ট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে যুগ যুগ ধরে এদেশের কৃষকেরা দরিদ্রই রয়ে গেছে ।
৬। অনগ্রসর শিল্প ও বাংলাদেশের শিল্প অনুন্নত। দীর্ঘদিনের ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ, সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের অভাবে এদেশ শিল্পক্ষেত্রে এখনও কাম্য সফলতা অর্জন করতে পারেনি। আর একারণেই মাথাপিছু আয় কম, জীবনযাত্রার মানও নিম । শিল্পক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে উৎপাদন না বাড়ানোর কারণে মানুষের আয়ও বাড়ে না, দারিদ্রতাও কাটেনা ।
৭। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঃ বাংলাদেশের মানুষের দারিদ্র্যতার অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। গ্যাস, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ, ব্যাংকিং সুবিধা ইত্যাদি এখনও গ্রামাঞ্চলের সকল মানুষের কাছে পৌঁছায়নি । এমনকি শহর ও নগরাঞ্চলেও পৌঁছায়নি। অবকাঠামোগত অনুন্নতির কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ধীর। উন্নয়নের হার দ্রুত না বাড়ার কারণে দারিদ্র্যতাও কমছে না।
৮। স্বল্প মজুরি ঃ বাংলাদেশের কৃষি ও শিল্পসহ সকল খাতে নিয়োজিত শ্রমিক কর্মচারীরা খুবই কম বেতন বা মজুরি লাভ করে। প্রাপ্ত মজুরি দিয়ে কোন মতে জীবন বাঁচাতে পারলেও উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখা যায় না । এমতাবস্থায় বিপুল সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারী নিম্নমানের জীবনযাপন করতে বাধ্য হয় এবং দরিদ্র রয়েছে।
৯। আয়ের অসম বণ্টন : বাংলাদেশে আয় বণ্টনে চরম অসমতা রয়েছে। প্রায় ৮০% সম্পদের মালিক মাত্র ২০% মানুষ । পক্ষান্তরে, মাত্র ২০% সম্পদের মালিক হচ্ছে ৮০% মানুষ। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ নির্লজ্জ ভোগ বিলাসিতা করলেও অধিকাংশ মানুষ দুঃসহ নিম্নমানের জীবনযাপন করে। মূলতঃ অসম আয় বণ্টন ব্যবস্থার কারণে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে ।
১০। মুদ্রাস্ফীতি ঃ মুদ্রাস্ফীতির কারণে দ্রব্য ও সেবাকর্মের দামস্তর বেড়ে যায়। মুদ্রাস্ফীতির সময়ে সীমিত আয়ের মানুষ জীবনধারনের প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয়ের ক্ষমতা হারায়। মুদ্রাস্ফীতির কারণেই এদেশের সিংহভাগ মানুষ দারিদ্র্য ও নিম্নমানের জীবনযাপন করে থাকে । কেননা মানুষের আয়স্তর যতটুকু বাড়ে মুদ্রাস্ফীতির কারণে দামস্তর তার চেয়ে বেশি বাড়ে । ফলে দরিদ্র মানুষগুলো দরিদ্রই থেকে যায় ।
১১ । দুর্নীতি ঃ কুশাসন-অপশাসন, দুর্নীতি তথা সুশাসনের অভাব বাংলাদেশের দারিদ্র্যতার অন্যতম কারণ । ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পরস্পর ৫ বার বিশ্বের এক নম্বর দুর্নীতিপরায়ণ দেশ হবার অগৌরব লাভ করেছে। যা বাংলাদেশকে একটি লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। এছাড়াও বাংলাদেশে দারিদ্র্যতার জন্য নিম্নোক্ত কারণগুলোকেও দায়ী করা যায় ।
১। জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিকাশ না হওয়া,
২ । অশিক্ষা;
৩। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগে অক্ষতা বা অনীহা;
৪ । অসম ও বিকৃত বাজার ব্যবস্থা;
৫। পরিবেশ দুষণ ও তার ক্ষয়;
৬। ভূমিহীনতা;
৭। ন্যূনতম ২১২২ কিলো ক্যালরির কম গ্রহণ;
৮। সামাজিক ন্যায়বিচার পাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত;
৯। চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং অপুষ্টিতে আক্রান্ত ।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের উপায়সমূহ Means for Poverty Alleviation in Bangladesh
দারিদ্র্য সবসময় সমাজে ছিল এবং নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতেও থাকবে। সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহের আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ধরে নেয়া যায়, দারিদ্র্য থাকবে এ সমাজে। কিন্তু তাই বলে নৈরাশ্যবাদীদের কাতারে শামিল হওয়াতো চলবে না। উদ্যোগ কিংবা প্রয়াস গ্রহণ করতে হবে অন্তত পুরোপরি দূর না হলেও যাতে দারিদ্র্যতা হ্রাস পায়। বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা যায়।
১। মানব সম্পদ উন্নয়ন ও মানব সম্পদ সকল উন্নয়নের মূলসূত্র। সুতরাং প্রথমেই মানব সম্পদ সৃষ্টিতে উদ্যোগী হতে হবে। আর মানব সম্পদ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন বৃত্তিমূলক, ব্যবহারিক ও কারিগরি শিক্ষা । এই লক্ষ্যে প্রতি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে কাজ ও কাজের সঙ্গে অর্থ উপার্জনের সমন্বয় বিধান করতে হবে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কাজ ও উপার্জনের সমন্ব বিধানের মধ্যেই গণশিক্ষা ও গ্রামীণ উন্নয়নের রহস্য নিহিত রয়েছে।
২। গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ঃ গ্রামীণ অবকাঠামো তৈরিতে সরকারি বিনিয়োগ এবং দারিদ্র্য বিমোচনের বিশেষ কার্যক্রম যেমন- কাবিখা, বিপন্ন জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন কর্মসূচি, পল্লী রেশনিং ব্যবস্থা প্রভৃতি পদক্ষেপ হাতে নেওয়া যায়। এছাড়া সড়ক নির্মাণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, সেচ ও ঋণ সুবিধা ছাড়াও কাজের বিনিময়ে খাদ্য সাহায্য, প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, দূর্বল জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে খয়রাতি সাহায্য ইত্যাদিতে সরাসরি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন। এতে প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে সাম্যও বজায় থাকে ।
৩। পল্লী উন্নয়ন ঃ দারিদ্র্য বিমোচনের প্রথম শর্ত গ্রামীণ তথা পল্লী উন্নয়ন। আর পল্লী উন্নয়ন তথা গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে বর্ধিত হারে সম্পদ সৃষ্টি করা। অর্থাৎ ক্রমবর্ধিষ্ণু হারে উদ্বৃত্ত সম্পদ তৈরিই উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের চাবিকাঠি, উদ্বৃত্ত সম্পদ সৃষ্টি করতে হলে গ্রামের প্রতিটি মানুষ প্রতি ইঞ্চি জমি, প্রতি ফোঁটা পানি, প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদির সর্বোচ্চ ব্যবহার এনে দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে ।
৪ । রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি দেশের ভাগ্য পরিবর্তন হতে পারে না, যদি না দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উপযোগী রাজনৈতিক নেতৃত্ব না থাকে । তাই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিষ্ণুতা সৃষ্টি করে গণ উদ্যোগ ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে হবে । তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রয়োজন ।
৫। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ঃ দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দারিদ্র্যতা দূর করা সম্ভব । বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে দুর্নীতি প্রকট আকার ধারন করেছে। দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বাড়বে এবং দারিদ্র্য কমে আসবে ।
৬। বেসরকারি বিনিয়োগ : গ্রামীণ অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের এগিয়ে আসা প্রয়োজন । সরকারের পাশাপাশি অর্থনীতিতে ক্রমে শক্তিশালী হয়ে ওঠা বেসরকারি খাতের দায়িত্ব আছে । কৃষিখাতে সরকারী ব্যাংক ঋণ প্রদান করলেও বেসরকারি ব্যাংক ও বিদেশী ব্যাংক কোনটাই এ খাতে ঋণ দিচ্ছে না । তাই কৃষিখাতে ব্যাপকভাবে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন । বিনিয়োগ বাড়লে উৎপাদন বাড়বে । সম্পূর্ণ শ্রমনির্ভর মানুষের কাজের ব্যবস্থা হবে। যারা গরিব তারা নিজের পায়ে ভর করে জীবিকা নির্বাহের একটি সুযোগ লাভ করবে । তাই গ্রামীণ দারিদ্র্য কমানোর জন্য কৃষি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির বিভিন্ন অংশে বেসরকারি বিনিয়োগ অপরিহার্য ।
৭। শিক্ষার উন্নয়ন ও শিক্ষা এবং অতি অবশ্যই মানসম্মত সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে দক্ষ শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। শিক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা অনেকাংশেই সম্ভব।
৮। শিল্প উন্নয়ন : শিল্পখাতের বিকাশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নত উৎপাদন কৌশল, দক্ষ জনশক্তি ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে অনগ্রসর শিল্পখাতের বিকাশ ঘটানো সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারের উদার শিল্প নীতি দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
৯। সুষ্ঠু নীতিমালা ও সার্বিক উন্নয়ন কৌশল প্রণয়ন ঃ দারিদ্র্য বিমোচনের সংগ্রাম একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নীতিমালা এবং সার্বিক উন্নয়ন কৌশল। দারিদ্র্য নিরসনের জন্য উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধি অজনই একমাত্র উৎস নয়। অর্জিত প্রবৃদ্ধির সুষম বন্টন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সৃষ্ট অনিয়ম, বিশৃংখলা ও অদক্ষতার সংস্কার করে সম্পদের অপব্যবহার রোধ করে অতিরিক্ত সম্পদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাতে হবে। গ্রামীণ সামাজ কাঠামোর অনাবশ্যক বিধি-নিষেধের অবলুপ্তি ঘটিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রকৃত চালিকা শক্তি জনশক্তিতে মানবসম্পদের রূপান্তরের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ করা অতি জরুরী ।
১০। কুটির শিল্পের প্রসার ঃ গ্রাম ও শহরাঞ্চলে কুটির শিল্পের প্রসারে আরও মনযোগী হতে হবে । কুটির শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান (বিশেষ করে আমাঞ্চলে) সৃষ্টি করে দারিদ্র্যের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব।
১১। ভূমি সংস্কার ও ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে সরকারের খাস জমি এবং বিত্তশালীদের কাছ থেকে উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া হলে গ্রামীণ দারিদ্র্য কমে আসবে ।
১২। কৃষি উন্নয়ন ঃ বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে কৃষি উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। জাতীয় আয়ের সিংহভাগই আসে কৃষিখাত থেকে। উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষিখাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারলে কৃষিখাত থেকে দারিদ্র্য কমিয়ে আনা সম্ভব ।
১৩। উপযুক্ত মজুরি / বেতন প্রদান : শ্রমিক-কর্মচারি-কর্মকর্তাদের উপযুক্ত ও সময়োপযোগী বেতন/মজুরি প্রদান করা হলে জীবনযাত্রার মান বাড়বে। বাস্তবতার সাথে মিল রেখে উচ্চতর বেতন কাঠামো নির্ধারণ এবং বেসরকারি খাতে সর্বনিম্ন মজুরির হার বাড়ানো গেলে জীবনযাত্রার মান আপনা থেকেই বৃদ্ধি পাবে এবং দারিদ্র্যতা কমে আসবে।
১৪। জনশক্তি রপ্তানি : অশিক্ষিত ও অদক্ষ বেকার শ্রমিকদের বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য পাঠাতে পারলে অর্থাৎ জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে পারলে গ্রামীণ দারিদ্র্যতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তাই জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিদেশে আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলোকে আরও সক্রিয় করতে হবে এবং নতুন নতুন শ্রমবাজার এর সন্ধান করতে হবে।
১৫। দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভাঙ্গা : সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি করে মূলধন গঠনের মাধ্যমে বিনিয়োগ হার বাড়ানো গেলে কর্মসংস্থান বাড়বে, উৎপাদন বাড়বে, আয় বাড়বে। এভাবে বাংলাদেশে দারিদ্রের দুষ্টচক্র ভেঙ্গে দারিদ্র্যতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
উপরিউক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ ছাড়াও বাংলাদেশে দারিদ্র্যতা কমিয়ে আনার জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলোও গ্রহণ করা যেতে পারে ।
১। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা ।
২। আয় বৈষম্য ও সম্পদের অসম বন্টন কমিয়ে আনা:
৩। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ;
৪। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ;
৫। বৈদেশিক সাহায্য, অনুদান ও ঋণের কাম্য ব্যবহার;
৬। দক্ষ উদ্যোক্তা সৃষ্টি;
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দারিদ্র্য নিরসন একটি চলমান দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া। এর সাথে মানুষের দীর্ঘদিনের ধ্যান-ধারণা, আচার-অনুষ্ঠান, মন-মানসিকতা জড়িত। শিক্ষা বিস্তার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নই পারে কেবল দীর্ঘদিনের দারিদ্র্যতার অভিশাপ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে আনতে। এক সময়ে শ্রীলংকা, মালেয়শিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত যারা আমাদের চেয়ে দরিদ্র ছিল, তারা যদি দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারে তাহলে নিশ্চয়ই একদিন বাংলাদেশও দরিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের প্রকৃতি ঃ এক নজরে বাংলাদেশের দারিদ্র্য Nature of Poverty in Bangladesh
১ । বাংলাদেশের প্রায় ৬ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করছে। শহরের ৫৬ ভাগ এবং গ্রামের ৬১ ভাগ মানুষ নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য সীমায় বসবাস করছে।
২। ৮৭ ভাগ মানুষের ক্যালরি ঘাটিত রয়েছে এবং প্রায় ৭৭ শতাংশ পরিবারে আমিষের অভাব আছে। জনসংখ্যার অর্ধেক অর্থাৎ প্রায় ৭ কোটি মানুষের মাথাপিছু সর্বনিম্ন জন প্রতি দৈনিক ২১২২ কিলো ক্যালরি খাদ্য জোগাতে সমর্থ নয় ।
৩। ২ কোটি ১৭ লাখ শিশু (৯৪.৪ শতাংশ) বিভিন্ন মাত্রার অপুষ্টির স্বীকার । ৩৫ থেকে ৫০ ভাগ শিশু প্রয়োজনীয় ওজনের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মায়। প্রতিবছর ৩০-৪০ হাজার শিশু ভিটামিন 'এ'-এর অভাবে অন্ধ হয়ে যায় ।
৪। ৭০ শতাংশ শিশু ও মা রক্তস্বল্পতায় ভোগে ।
৫ । বাংলাদেশে প্রতি ৪ জন অধিবাসীর মধ্যে একজনের ভালো বাসস্থান নেই। ভূমিহীনদের শতকরা ৯৬ ভাগের থাকার জন্য কোন ঘর নেই। শহরের এক-তৃতীয়াংশ এবং গ্রামের এক-চতুর্থাংশ মানুষের কোন বাসস্থান নেই ।
বেকার ।
৬। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট কর্মক্ষম ৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ সম্পূর্ণ
৭। দেশের প্রায় ৭০ লাখ কর্মক্ষম নারী বেকার।
৮। গ্রামীণ ৫৪% মানুষ কার্যত ভূমিহীন এবং এদের ৮৬% মানুষের অবস্থান দারিদ্র্য সীমার নীচে ।
দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল বা নিরাপত্তা বেষ্টনী Poverty Alleviation Strategy or Safety Cordon
দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসকারী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বাড়িয়ে তাদেরকে দারিদ্র্য সীমার উপরে তুলে আনার জন্য যে সকল কৌশল বা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, তাকে বলা হয় দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বা কৌশল । এই কর্মসূচির আওতায় মাথাপিছু জাতীয় আয় বাড়ানোর প্রচেষ্টার পাশাপাশি নির্দিষ্ট টার্গেট গ্রুপের (যেমন- কামার, কুমার, জেলে, তাঁতী, ভূমিহীন, বস্তিবাসী, অসহায় নারী, হত দরিদ্র প্রভৃতি) মানুষের আয় বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কৌশল বা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই কর্মসূচির অধীনে দরিদ্র মানুষের আয় বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা, বস্ত্র নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও শিক্ষা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য করা হয়। এর মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষেরা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারে। অর্থাৎ এই সব কর্মসূচি সমাজের অনিরাপদ ও অসহায় মানুষদের নিরাপত্তা বিধান করে। তাই দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসুচি-কে আবার সামাজিক নিরাপত্তা জাল বা নিরাপত্তা বেষ্টনী বলাও হয়ে থাকে।
দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলের প্রকারভেদ Classification of Poverty Alleviation Strategy
দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশলকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
(ক) প্রত্যক্ষ কৌশল ( Direct Strategy ) : যে সকল কৌশল বা কর্মসূচির মাধ্যমে সরাসরি দরিদ্র শ্রেণীর মানুষকে টার্গেট করে নেওয়া হয়, সেগুলোকে বলা হয় দারিদ্র্য বিমোচনের প্রত্যক্ষ কৌশল। এই কৌশলের অধীনে সরাসরি দরিদ্র মানুষের আয় বাড়ানোর জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের প্রত্যক্ষ কৌশলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল নিম্নরূপ ।
১। দুঃস্থ মহিলা ভাতা কর্মসূচি;
২। বয়স্ক ভাতা
৩। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা);
৪। টেষ্ট রিলিফ;
৫। গৃহায়ন তহবিল;
৬। আশ্রয়ন প্রকল্প;
৭। আত্ম কর্মসংস্থানের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান ও ঋণ প্রদান ইত্যাদি ।
(খ) পরোক্ষ কৌশল ( Indirect Strategy ) : দরিদ্র মানুষদের সরাসরি টার্গেট না করে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য যে কর্মসূচি বা কৌশল গ্রহণ করা হয়, তাকে বলা হয় পরোক্ষ কৌশল। এই কৌশলের মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা গেলে জাতীয় উৎপাদন বাড়ে, জাতীয় আয় বাড়ে, মাথাপিছু আয় বাড়ে, ফলে দরিদ্র মানুষের দারিদ্র্যের মাত্রা কমে আসে। দারিদ্র্য বিমোচনের পরোক্ষ কৌশলের অধীনে বাংলাদেশে যে সকল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নরূপ।
১। মানব সম্পদের উন্নয়ন;
২। পল্লী উন্নয়নে অধিক হারে গরীব ও বিত্তহীন মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ;
৩। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, গ্যাস, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসহ সার্বিক অবকাঠামোর উন্নয়ন;
1
৪। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সঠিক বাস্তবায়ন ।
৫ । স্থানীয় সরকার কাঠামো জোরদার স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ।
উপরিউক্ত পরোক্ষ কর্মসূচিগুলো গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে এবং তার মাধ্যমে জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়বে: দারিদ্র্য কমে আসবে, এভাবে পরোক্ষ কৌশলের মাধ্যমে দারিদ্র্য
বিমোচন করা সম্ভব ।
বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রত্যক্ষ না পরোক্ষ কোন ধরনের কৌশল দারিদ্র্য বিমোচনে বেশি কার্যকারী? এর উত্তরে বলা যায়- বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের প্রত্যক্ষ কৌশল এর আত্ততা খুবই সীমিত 1 তাই সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে লক্ষ্যে পরোক্ষ কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচন করা বেশি সহজ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]