বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতের গুরুত্ব

বেসরকারি খাত উন্নয়ন Private Sector Development
Introduction
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাত অত্যন্ত ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের প্রসার করে সরকার বিনিয়োগ-বান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন, আইন ও বিধিগত সংস্কার তথা সার্বিক বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ১,৪৩২টি বেসরকারি প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রস্তাবনার পরিমাণ ছিল ৬৮,২৯১ কোটি টাকা, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৮৯৪টি প্রকল্পে মোট ৫৩,৬৯৭ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নে পৃথকভাবে গৃহীত প্রকল্পসমূহের বাইরে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিশেষত ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল । ভৌত অবকাঠামো খাতে বিশেষ করে মহাসড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে। যেমন- গণপরিবহণ, ফ্লাইওভার, বাস টার্মিনাল, বিমান বন্দর, এভিয়েশন, সমুদ্র বন্দর, রেলওয়ে ভৌত-অবকাঠামো এবং সেবাখাতে সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্বের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ব্যক্তিখাতে তৈরি পোষাক ও নিটওয়্যার শিল্পের অভূতপূর্ব বিকাশ শিল্পখাতকে গতিশীল করে তুলছে এবং দেশে বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে অবদান রাখছে । ফলে এখানে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়েছে। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী সরকার দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নে সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছে । সমাজের সকল স্তরে ডিজিটাল লিটারেসি বৃদ্ধির মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রয়োগ এবং ই-গভর্নেন্স, ই-কর্মাস প্রবর্তন করা হলে জ্ঞানভিত্তিক শিল্পে প্রতিভাবান তরুণদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গঠন সম্ভব হবে ।
বেসরকারি খাত Private Sector
তে যে সমস্ত খাত সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয় সেগুলোকে বেসরকারি খাত বলে । দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে মুক্ত বাজার ও বেসরকারি খাতের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ GDP এর শতকরা ১৯.৪৬ ভাগে উন্নীত হয় যা ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে GDP এর ১৩.৫৮ শতাংশ ছিল। বাজার অর্থনীতির কাঠামো জোরদার ও দক্ষ বেসরকারি খাতের বিকাশের লক্ষ্যে সরকারের সংস্কার ও উদারীকরণ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষিতে -
১। কৃষি ও কৃষির সবগুলো উপখাত (শস্য, মৎস্য, পশু ও বনজ) বেসরকারি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনাধীনে পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার শুধুমাত্র পরামর্শ প্রদান, ভর্তুকিসহ নানা প্রকার উৎসাহব্যাঞ্জক কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সুতরাং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষভাবে গ্রামের দরিদ্র, হতদরিদ্র কৃষকই প্রশংসার দাবিদার বলা হয়।
২। শিল্প ও দরিদ্র জনবহুল এ দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারের কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে লোকসানী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে ১৯৯৩ থেকে ২০১১ পর্যন্ত মোট ৭৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর শিল্পখাতে ব্যবহৃত মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্যের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রাংশের উপর আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার হ্রাসের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের বিকাশ সাধনে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ।
৩। সেবা ঃ বাংলাদেশের সেবাখাতে উল্লেখযোগ্য অংশ বেসরকারি খাতে পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে নৌ ও সড়ক পরিবহনের প্রায় ৯৫%, বেসরকারি বিমান পরিবহণ, টেলিযোগাযোগ, ব্যাংক-বীমা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ, টেলিমিডিয়া, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের অবদান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতের গুরুত্ব Importance of Private Sector to the Economic Development of Bangladesh
বাংলাদেশে মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত । বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । স্বাধীনতা লাভের পর পর অর্থনীতিতে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশীয় শিল্প ও পাকিস্তানীদের পরিত্যক্ত শিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। বাংলাদেশের তৎকালীন অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা ছিল সীমিত । ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে দেশের সকল পাট ও বস্ত্রকল জাতীয়করণ করা হয়। আধুনিক শিল্প কারখানার ৮৫% সরকারি খাতের আওতায় চলে আসে । ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে ঘোষিত প্রথম শিল্প নীতিতে বেসরকারি পুঁজি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা মাত্র ২৫ লক্ষ টাকা স্থির করা হয়। এ কারণে তখন বেসরকারি খাতে শিল্প উদ্যোগ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। কিন্তু কিছু কালের মধ্যেই সরকারি খাতের শিল্প-কারখানা, ব্যাংক, বীমা, বৈদেশিক বাণিজ্য সবক্ষেত্রে অব্যবস্থা ও অদক্ষতা সৃষ্টি হয়। সরকারি খাত যার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় ।
সরকার বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর লোকসান হতে থাকে । এ লোকসান পূরণের জন্য সরকারকে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় । ১৯৭৪ সালের জুলাই মাসে বেসরকারি খাতে পুঁজি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ৩ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। ১৯৭৫ সালে ডিসেম্বর মাসে বেসরকারি খাতে পুঁজি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা আরও বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করা হয় । ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঘোষিত শিল্প নীতিতে বেসরকারি খাতে পুঁজি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা একবার তুলে নেওয়া হয়। ১৯৮২ সালের শিল্প নীতিতে বেসরকারি খাতের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। সরকারি খাতে কেবল ৬টি মৌলিক ও ভারী শিল্প রেখে ৪০টিরও বেশি শিল্পকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন পরিত্যক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে পুঁজি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৮৭-৮৮ সাল নাগাদ ৩৭টি পাটকল, ২৫টি বস্ত্রকল স্বাধীনতা-পূর্ব সাবেক বাংলাদেশি মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ৫০০টি পরিত্যক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ৭টি মৌলিক ও বৃহৎ শিল্প ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ।
১৯৯১ সালের শিল্পনীতিতে বেসরকারি খাতে শিল্পায়নের উপর বেশি জোর দেওয়া হয় । উক্ত শিল্পনীতিতে সরকারি ভূমিকাকে নিয়ন্ত্রণমূলক না রেখে পৃষ্ঠপোষকতামূলক বলে ঘোষণা করা হয় । ব্যক্তি মালিকানায় শিল্প প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করার জন্য ব্যবস্থা গৃহীত হয়। শিল্পখাতের উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে অনুমোদিত শিল্পনীতি, ১৯৯৯ বাস্তবায়ন শুরু হয় । জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কযুক্ত শিল্প যেমন-
(i) টাকশাল ও কারেন্সী নোট মুদ্রণ
(ii) অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা যন্ত্রপাতি
(iii) পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন
(iv) সংরক্ষিত বনাঞ্চল বনায়ন ও যান্ত্রিক আহরণ
এগুলো ছাড়া অন্যান্য শিল্প দেশি ও বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় । এ শিল্পনীতির আওতায় রাষ্ট্রীয় মালিকানার কতিপয় শিল্প ব্যক্তি মালিকানায় তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির সাথে মিল রেখে বাংলাদেশে মুক্ত বাজার অর্থনীতি প্রচলনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই অর্থনীতিতে সরকারি হস্তক্ষেপ ন্যূনতম রেখে সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত হয় । গুটি কয়েক মৌলিক ও ভারী শিল্পকে সরকারি খাতে রেখে বিভিন্ন শিল্প, ব্যাংক, বীমা, বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে হলে সবক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়াতে হবে। মুনাফা লাভের আশায় উদ্যোক্তারা শিল্প স্থাপন করবে, নতুন কলাকৌশল উদ্ভাবনের মাধ্যমে নতুন দ্রব্য উৎপাদন করবে । উদ্যোক্তাদের মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটবে এবং উৎপাদন বাড়বে ।
বাংলাদেশের বেসরকারি উদ্যোক্তারা শ্রমনিবিড় ও স্বল্প পুঁজি নির্ভর শিল্প গড়ে তুলতে আগ্রহী থাকে । বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে কিছু আধুনিক শিল্প পরিচালিত হয়। যেমন- বস্ত্র, ভোজ্যতেল, প্রসাধনী সামগ্রী, জুতা, রং, এলুমিনিয়াম প্রভৃতি। শিল্পোন্নয়নে বেসরকারি উদ্যোগ যত বাড়বে, ততই দেশে আধুনিক শিল্পের প্রসার ঘটবে । বেসরকারি উদ্যোগের সম্প্রসারণ ঘটলে জাতীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, আর সেই সাথে অর্জিত হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। শিল্প কারখানা ছাড়া ও দেশের পরিবহণ ও যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এসব ক্ষেত্রে বেসরকারি উদোগের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। বেসরকারি উদ্যোগে সড়ক ও জলপথে বাংলাদেশে যাতায়াত ব্যবস্থা পূর্বের তুলনায় উন্নত ও সম্প্রসারিত হয়েছে, বাণিজ্যও সম্প্রসারিত হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, আধুনিক ও উন্নত মানের হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। রেলওয়ে ক্রমবর্ধমান লোকসানকে কাটিয়ে উঠতে পরীক্ষামূলকভাবে কতিপয় রেলওয়ে কার্যক্রমকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তাতেও সুফল লক্ষ্য করা যায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হয়েছে ।
বেসরকারি পর্যায়ে দেশী ও বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বা ইপিজেড (EPZ) এলাকায় শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়েও ইপিজেড (EPZ) তৈরি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে । বেসরকারি খাতকে সর্বাত্মক উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান করাই হল সরকারের নতুন শিল্পনীতির লক্ষ্য। বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের প্রায় ৮০ ভাগ অবদান রাখে বেসরকারি খাত । দেশের মোট কর্মসংস্থানের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ বেসরকারি খাতে । কাজেই দেশে গরিষ্ঠ জনসাধারণ জীবিকার জন্য বেসরকারি খাতের উপর নির্ভরশীল।
আলোচনা থেকে বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতের ভূমিকা যথেষ্ট । এই গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা খাতে ব্যয় বরাদ্দ ক্রমবর্ধমান । বাংলাদেশের ৩য় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বেসরকারি খাতে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয় ১৩,৫০০ কোটি টাকা । চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬,৫০০ কোটি টাকা, যা পূর্বের প্রায় দ্বিগুণ। পঞ্চম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৯৭- ২০০২) বেসরকারি খাতের অবদান ধরা হয়েছে ৫৬% যার পরিমাণ ১,১০,০৫৮ কোটি টাকা। এভাবে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বেসরকারি খাতে ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে । বলা যায় যে, সরকার বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করার জন্য যেসব সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে সেগুলো গ্রহণ করে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করা যায় ।
বেসরকারি বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি Developing a Private Investment Friendly Environment
বেসরকারি বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি লক্ষ্যে সরকার বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশন গঠন এবং পুঁজি বাজার উন্নয়নে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো স্থাপন করেছে । ব্যক্তিখাতে তৈরি পোষাক ও নিটওয়্যার শিল্পের বিকাশ শিল্পখাতকে গতিশীল করে তুলেছে এবং দেশে বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে অবদান রাখছে। বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের প্রসারকল্পে সরকার বিনিয়োগ-বান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন, আইন ও বিধিগত সংস্কার তথা সার্বিক বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে ।
বিনিয়োগ পরিবেশ
বিশ্বব্যাংক ও IFC (International Finance Corporation) প্রকাশিত Doing business 2014 শীৰ্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী Ease of Doing Business : Global Rank এ বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৫টি দেশের মধ্যে ১৩০তম । তবে বিনিয়োগারীদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ২২তম । তাছাড়া ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৬তম এবং ব্যবসা শুরু ও কর প্রদানের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৭৪তম ও ১০০তম স্থানে রয়েছে । নিম্নের লেখচিত্র-এ ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ বিবেচনায় বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের অবস্থান তুলে ধরা হলো ।
শিল্প নীতি সংস্কার Industrial Reforms
একটি দেশের শিল্পোন্নয়নের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতিমালাকে শিল্প নীতি বলে । অন্যভাবে বলা যায়, শিল্পখাতের উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত অর্থনৈতিক কর্মসূচিকে শিল্প নীতি বলে । পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ সরকারও শিল্পখাতের উন্নয়নের জন্য স্বাধীনতার পর থেকে চেষ্টা করে আসছে এবং শিল্প নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে আসছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৭৩ সালে শিল্প নীতি গ্রহণ করা হয় । তারপর বিভিন্ন সময়ে শিল্প নীতিতে পরিবর্তন ও সংস্কার করে নতুন নতুন শিল্প নীতি ঘোষণা করা হয়েছে।
সর্বশেষ বাংলাদেশ সরকার রূপকল্প ২০২১ কে সামনে রেখে শিল্পায়ন তথা শিল্পখাতকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসাবে বিবেচনায় রেখে দেশের শিল্পায়নের গতিকে বেগবান করতে যুগোপযোগী শিল্পনীতি ২০১০ ঘোষণা করেছে। এ শিল্পনীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের ব্যাপক বিকাশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তথ্য প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ ।
শিল্প নীতি-২০১০ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য (Aims and objectives of industrial policy – 2010) শিল্প নীতি-২০১০ যে সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশকে সামনে রেখে প্রণীত হয় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হল ।
১। শিল্পায়ন প্রক্রিয়া আরও গতিশীল ও বেগবান করা;
২। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি করা;
৩। সমৃদ্ধ ও আধুনিক শিল্পখাত গড়ে তোলার মাধ্যমে বেকারত্ব, ক্ষুধা ও দারিদ্র পীড়িত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত কমিয়ে আনা ;
৪। শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানী বৃদ্ধিকরণ;
৫। বেসরকারীকরণ নীতি চালু রাখা এবং বেসরকারী খাতের উন্নয়ন সাধন;
৬। পরিবেশ বান্ধব সবধরনের শিল্পের বিকাশ;
৭। নারীদের শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার মূলধারায় নিয়ে আসা;
৮। শিল্পখাতে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা ও বেকারত্ব কমানো; ৯। মানব সম্পদের উন্নয়ন সাধন;
১০। জাতীয় সম্পদ ও উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার:
১১। আমদানি বিকল্প শিল্পায়নকে প্রাধান্য;
১২। সমন্বিত ও ব্যাপক ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা তথ্য পদ্ধতি (MIS) চালু করা;
১৩। জাতীয় আয়ে শিল্পখাতের অবদান বাড়ানো ;
১৪। শিল্পখাতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও উৎসাহিত করা;
১৫। সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় শিল্পখাত প্রতিষ্ঠিত করা যা জাতীয় উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে ।
লক্ষ্যমাত্রা (Targets)
শিল্প নীতি-২০১০ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নে যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলো ।
১ । জাতীয় আয়ে শিল্পখাতের অবদান ২৮% থেকে বাড়িয়ে ৪০% অর্জন করা।
২। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচী গ্রহণের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদশকে একটি মধ্য আয়ের শিল্প সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা ।
৩। এমডিজি (Millennium Development Goals, MDGs) অর্জনে ২০১৭ সালের মধ্যে বেকারত্ব, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য পীড়িত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে ৪০% থেকে ২৯%-এ আনা ।
৪ । শিল্পখাতে শ্রমশক্তি নিয়োগের পরিমাণ ১৬% থেকে বাড়িয়ে ২৫% এ উন্নীত কর ।
৫ । অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮% এবং ২০১৭ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০% হারে অর্জন করা এবং ২০২১ সাল পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই হার অব্যাহত রাখা ।
৬। সর্বোপরি প্রত্যেক পরিবার থেকে কমপক্ষে একজনকে চাকুরি প্রদানের ব্যবস্থা করা ।
সরকার কর্তৃক গৃহীত সংস্কার কর্মসূচি (Reforms taken by government )
শিল্প নীতি-২০১০ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকার নিম্নোক্ত সংস্কার কর্মসূচী বা পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করেছে।
১। শ্রমঘন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই)-কে মূল্য সংযোজন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনাময় ও অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
২। শিল্পখাতে সরাসরি বেসরকারি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য বিনিয়োগের শর্তাদি শিথিল করে নতুন সুযোগ সুবিধার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ।
৩। চালু রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পখাতের অতিরিক্ত জনবল হ্রাসসহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাসকরণের মাধ্যমে লোকসংখ্যা কমানো ।
৪। কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে আরও উৎসাহিতকরণের জন্য এ খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কীম চালু করা হয়েছে ।
৫। বন্ধ সকল শিল্প কারখানা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।
৬ । নারী উদ্যোক্তাদেরকে বিশেষ কোটা সুবিধা প্রদান করে ইপিজেড'গুলোতে বিনিয়োগে সম্পৃত্ত করার উদ্যোগ । ৭। শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে এমইসি'র ক্ষমতা ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে ।
৮। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (Public Private Partnership, PPP) মাধ্যমে শিল্প
কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ।
৯। কেন্দ্রীয় ডিপোজিটরি সিস্টেমকে শক্তিশালী করা এবং বন্ডমার্কেটের উন্নয়ন সাধনসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ছাড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
১০ । শিল্পখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য নতুন করে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংস্থায়ন ও শ্রেণীকরণ করা হয়েছে । ১১। বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে গঠিত তহবিলের ১৫% অনধিক ১০% সুদের হারে নারী
উদ্যোক্তাদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে ।
১২। বার্ষিক ৫ লক্ষ ৭৭ হাজার ৫ শত মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি.ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনের সকল উদ্যোগ শিল্পনীতি-২০১০- এ রাখা হয়েছে । এই তিনটি সার কারখানা হল,
(i) শাহজালাল ফার্টিনাইজার প্রকল্প,
(ii) নর্থ-ওয়েস্ট ফার্টিলাইজার প্রকল্প এবং
(iii) শাহবাজপুর ইউরিয়া সারকারখানা প্রকল্প
১৩। শিল্পায়নে সরকারি খাতের উপর নিভরশীলতা কমিয়ে ব্যক্তিখাতকে উৎসাহিত করার জন্য আইনি জটিলতা, প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা দূর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপনের জন্য বিধি বিধান সহজ করা হয়েছে ।
১৪ । শ্রমিকেরা যাতে ন্যায্য মজুরি পায় ও তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে ।
১৫ । শিল্পায়নের সাথে জড়িত সকল সংস্থা ও দপ্তরে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর কম্পিউটারাইজড ওয়ান- স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে ।
ইতিবাচক দিকসমূহ (Positive Features)
১। শিল্প নীতি-২০১০ এ রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অ-লাভজনক শিল্প কারখানাকে বেসরকারি খাতে ঢালাওভাবে ছেড়ে না দিয়ে লাভজনকভাবে পরিচালনা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ।
২। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে শর্তসমূহ শিথিল করে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা শিল্প নীতিতে সন্নিবেশিত হয়েছে।
৩। দেশব্যাপী ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প (এসএমই) প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা ও কৌশলগত সহায়তা প্রদানের জন্য একটি পৃথক এসএমই নীতিমালা প্রনয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ।
৪। রাষ্ট্রায়ত্ত রুগ্ন ও বন্ধ শিল্পকারখানা পুনরায় চালু করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে । ইতিমধ্যে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
৫। ইপিজেড'সমূহে নারী উদ্যোক্তাদের কোটা সংরক্ষণসহ এসএমই তহবিলের ১৫% অর্থ অনধিক ১০% সুদের হারে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সংরক্ষণ করাসহ নারী উদ্যোক্তাদের সকল স্বার্থ সংরক্ষণ করার মাধ্যমে শিল্পায়নে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যা প্রশংসার দাবী রাখে ।
৬। শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেয়ার বাজারের আধুনিকায়ন ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।
৭। দারিদ্র্য বিমোচন ও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রত্যেক পরিবারের অন্তত একজনকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শ্রমঘন শিল্পের পরিকল্পিত ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নকে শিল্পায়নের চালিকা শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
৮। শিল্পকারখানা দক্ষ ও লাভজনকভাবে পরিচালনা করার জন্য তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তির (আইসিটি) ব্যবহারকে অধিক গুরুত্ব ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে যা বর্তমান শিল্প নীতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক। কেননা আইসিটি এর ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন, কষ্ট ইফেকটিভ এবং নির্ভূলভাবে অতি দ্রুত গ্রাহক সার্ভিস প্রদান করা সম্ভব হবে।
৯। বর্তমান শিল্প নীতিতে অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রিতা, আইনী জটিলতা ও বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে শিল্পায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থাগুলোতে "ওয়ান-স্টপ সার্ভিস" চালু করার প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে যাতে শিল্পায়নে আরও গতিশীলতা আসে।
১০। দেশের জাতীয় ও প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ও পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার এর প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে।
বিনিয়োগ পরিস্থিতি Investment Scenario
বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের কার্যক্রম Activities of Bangladesh Board of Investment

বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাত অত্যন্ত ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শিল্প ও উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ড বেসরকারি বিনিয়োগের এ ধারা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের বিনিয়োগ-বান্ধব নীতিমালা, আইন ও বিধিগত সংস্কার তথা সার্বিকভাবে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নের প্রত্যয় এবং সর্বোপরি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অব্যাহত অংশগ্রহণের দ্বারা এ সম্ভাবনাকে আরো উজ্জ্বল করছে। বাংলাদেশে শিল্পখাতে বেসরকারি বিনিয়োগ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক তথ্যাবলী নিম্নোক্ত সাতটি আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হলো ।
১। বিনিয়োগ পরিবেশ;
২। প্রকৃত বিনিয়োগ (স্থানীয় ও বিদেশি);
৩ । বিনিয়োগ নিবন্ধন (স্থানীয় ও বিদেশি);
৪ । শিল্পখাতে জিডিপি;
৫। জিডিপি'র শতকরা হার হিসেবে বেসরকারি বিনিয়োগ;
৬। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি;
৭। কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা।
প্রকৃত বিনিয়োগ (স্থানীয় ও বিদেশি)
প্রকৃত প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (Actual Foreign Direct Investment - FDI) বাংলাদেশে প্রকৃত প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিসংখ্যান বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত ষান্মাসিক Enterprise Survey-র মাধ্যমে সংগৃহীত হয়ে থাকে । লেখচিত্রে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের ধারা তুলে ধরা হলো ।
সারণিতে বাংলাদেশে প্রকৃত বিদেশী বিনিয়োগ উপাদানভিত্তিক প্রবাহ দেখানো হয়। এ সারণি বিশ্লেষণে দেখা যায় যে প্রকৃত বিনিয়োগ প্রবাহের প্রধান উপাদান হলো সমমূলধন । এরপর রয়েছে যথাক্রমে পুনঃবিনিয়োগ ও আন্তঃকোম্পানি ঋণ ।
প্রকৃত স্থানীয় বিনিয়োগ
নিবন্ধিত স্থানীয় বেসরকারি বিনিয়োগ প্রস্তাবনাগুলোর প্রকৃত বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কোন আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান - “বিদ্যমান না থাকলেও বিনিয়োগ বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত নমুনা জরিপের মাধ্যমে জানা যায় যে, এসব স্থানীয়
বিনিয়োগ প্রস্তাবনার মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে অথবা বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।
যৌথ বিনিয়োগ নিবন্ধন (স্থানীয় ও বিদেশি)
বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরুর প্রাথমিক ধাপ হলো বিনিয়োগ নিবন্ধন, যা পরবর্তীতে প্রকল্প সংক্রান্ত সার্বিক সম্ভাব্যতা যাচাই সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করা হয়। ২০০১-০২ অর্থবছরে মোট ২,৯৬৪টি বেসরকারি প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রস্তাবনার পরিমাণ ছিল ১০,৫৪০ কোটি টাকা, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ২০১৫ এ দাঁড়িয়েছে ৮৯৪টি প্রকল্পে মোট ৫৩,৬৯৭ কোটি টাকা। নিম্নে বিনিয়োগ বোর্ড নিবন্ধিত প্রকল্পসমূহের বছরওয়ারি তথ্য সারণিতে তুলে ধরা হলো ।


চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব হতে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে সুরক্ষাদানকল্পে সরকার ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ টাস্কফোর্সসহ বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের উৎসাহ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ১৪.৬.২ বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) বিনিয়োগ পরিস্থিতি
Investment Scenario of the EPZ Area of Bangladesh
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে শিল্পখাতের দ্রুত বিকাশের জন্য বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ দেশে ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণসহ দেশে শিল্পখাত বিকাশে তাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ পর্যন্ত ৮টি ইপিজেডে (চট্টগ্রাম, ঢাকা, মংলা, কুমিল্লা, ঈশ্বরদী, উত্তরা (নীলফামারী), আদমজী ও কর্ণফুলী) পুঞ্জীভূত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩,৪৪৯, ৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ পর্যন্ত ইপিজেড সমূহে প্রকৃত বিনিয়োগের পরিমাণ ২১৬.১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জানুয়ারি, ২০১৪ পর্যন্ত ইপিজেড সমূহে ৪২৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনরত রয়েছে। ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ পর্যন্ত ইপিজেড সমূহে ৪,০৯,৬৬১ জন বাংলাদেশী নাগরিকের কর্মসংস্থান হয়েছে, যার প্রায় ৬৪ শতাংশ মহিলা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ পর্যন্ত ইপজেডসমূহ থেকে প্রায় ৩,৮১.৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। অপরদিকে, ইপিজেড সমূহ হতে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৪৩,৯১৯.৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ Foreign Direct Investment
উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশি। দেশীয় বিনিয়োগকারীর অভাব এখানে পরিলক্ষিত হয়। সরকারী বিনিয়োগও অপ্রতুল। বিদেশী বিনিয়োগকে বেসরকারী পর্যায়ে অনেক দেশেই বর্তমানে স্বাগত জানায়। বহুজাতিক কোম্পানি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসছে। যৌথ বিনিয়োগ অনেক সময়ই অনেক দেশে লক্ষ্য করা যায়। যেমন- ভারতে মটরগাড়ী নির্মাণে জাপান তার বিভিন্ন কোম্পানিকে ভারতের বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যৌথ বিনিয়োগে উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশ ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মত বিভিন্ন দেশে বিনিয়োকারীদেরকে বিনিয়োগ কার্যক্রমে অংশ নিতে উৎসাহ প্রদান করছে।
১৪.৮ প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ নির্ধারক
Determinants of Foreign Direct Investment
উন্নয়নশীল দেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে অংশ নেওয়ার সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে।
১। বাজার নিশ্চিতকরণ ঃ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নিজেদের উৎপন্ন পণ্যের কাঁচামালের উৎসকে নিয়ন্ত্রণ করতে আগ্রহী থাকে। তারা উল্লম্ব সমন্বয়েরও ( vertical integration) চেষ্টা করে। উন্নয়নশীল
৮। বিনিয়োগ সম্প্রসারণ ঃ ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্বাধীনতা না থাকলে শিল্পক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহ থাকে না । দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে বিনিয়োগকারিদের বিনিয়োজিত অর্থের নিরাপত্তা দিতে হবে । তারই প্রেক্ষিতে শিল্পনীতিতে, বিরাষ্ট্রীয়করণ উৎসাহিত হলে পুঁজিপতিরা বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে ।
৯। বৈদেশিক পুঁজির যোগান ঃ বেসরকারি খাতের শিল্পোন্নয়নে বিদেশী পুঁজি আকৃষ্ট হয় । বিদেশী পুঁজির সাথে উন্নত প্রযুক্তি ও নতুনতর উদ্যোগ আসে । বাংলাদেশে শিল্প বিরাষ্ট্রীয়করণের ফলে যৌথ উদ্যোগে শিল্প স্থাপনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে ।
১০। সম্পদ ব্যবহারে দক্ষতা ঃ বেসরকারি শিল্পে সম্পদ উপযুক্তভাবে ব্যবহৃত হয়। উৎপাদন • ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সামর্থ্য (Excess capacity) কম থাকে । ফলে সম্পদ দক্ষভাবে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেসরকারি শিল্পে অধিক পরিলক্ষিত হয় ।
১১। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নয়ন : আজকাল বিশ্বায়নের প্রভাবে বেসরকারিকরণ যুক্তিযুক্ত বলে মনে করা হয় । আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের চেয়ে বেসরকারি উদ্যোগকে অধিক পছন্দ করে। বিশ্বব্যাংক ও এর সুপারিশ মূলত শিল্প বেসরকারিকরণ। দাতা দেশ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলো শিল্প বেসরাকারিকরণ নীতি গ্রহণ করে ।
১২। অর্থনৈতিক কল্যাণ ঃ ভোক্তারা বেসরকারিভাবে উৎপাদিত পণ্য প্রতিযোগিতামূলক কম দামে ক্রয় করতে পারে । কিন্তু 'রাষ্ট্রীয় শিল্প তুলনামূলকভাবে একচেটিয়া হওয়ায় সেখানে যথেষ্ট দাম আদায় করার আশংকা থাকে । কাজেই, তুলনামূলকভাবে বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অধিক অর্থনৈতিক কল্যাণ অর্জিত হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]