বাংলাদেশ উন্নত, অনুন্নত না উন্নয়নশীল দেশ ? Is Bangladesh a Developed, Underdeveloped or Developing Country?

বাংলাদেশ একটি উন্নত, অনুন্নত না উন্নয়নশীল দেশ তা র কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রেক্ষিতে বিচার করা প্রয়োজন। তাই নিয়ে র প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা
হলো।
১। কৃষিখাতের প্রাধান্য : বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। বাংলাদেশের মোট শ্রম শক্তির প্রায় ৪৭.৫% কৃষি শ্রমিক । ২০১২-১৩ অর্থবছরের জিডিপি'তে কৃষিখাতের অবদান ছিল ১৬.৭৮ শতাংশ, ২০১৩- ১৪ অর্থবছরে এ খাতের অবদান দাড়িয়েছে ১৬.৩৩ শতাংশ। সুতরাং কৃষির উপর অত্যাধিক নির্ভরশীল ।
২। অনুন্নত কৃষি ব্যবস্থা ঃ বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও কৃষকদের নিরক্ষরতা, প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষাবাদ, কৃষি উপকরণের অভাব প্রভৃতি কারণে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধির হার খুব কম । নিম্নের তালিকায় তা দেখানো হলো ।
২০০০-০১ অর্থবছর পর্যন্ত উপাত্তসমূহ ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরের এবং পরবর্তী অর্থবছরসমূহ ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ভিত্তিমূল্যে নিরূপিত । মূলধনের অপর্যাপ্ততা, দক্ষ উদ্যোক্তা ও দক্ষ শ্রমিকের অভাব ইত্যাদি কারণেবাংলাদেশের শিল্পখাত খুবই অনুন্নত ফলে জাতীয় আয়ে শিল্প খাতের অবদান খুবই কম। তবে ধীর গতিতে এ অবদান বাড়ছে । নিমের তালিকায় তা লক্ষ্যণীয় ।
২০০০-০১ অর্থবছর পর্যন্ত উপাত্তসমূহ ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরের এবং
পরবর্তী অর্থবছরসমূহ ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ভিত্তিমূল্যে নিরূপিত ।
৪ । অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো ঃ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো তেমন উন্নত নয় । অনুন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত জ্বালানী ও বিদ্যুৎ শক্তি, শিক্ষার হার নিম্ন, স্বাস্থ্য সুবিধা অপ্রতুল, এ সমস্ত কারণেঅর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন- স্বাধীনতা উত্তরকালে যেখানে মাত্র ৪ হাজার কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্ক ছিল সেখানে ফেব্রুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত সওজ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ২১,২৭২ কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট ৩১,৩৫৫ মিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার নীট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৭.২১% বেশি ।
৫। কারিগরি জ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাব : কারিগরি জ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে যা উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি বিরাট প্রতিবন্ধক ।
৬। স্বল্প মাথাপিছু আয় ও নিম্ন জীবনযাত্রার মান : র একটি গুরুতপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মাথাপিছু আয় কম এবং জীবনযাত্রার মান নিম্ন। উন্নত দেশের তুলনায় তা খুবই কম। তবে মাথাপিছু আয় ধীর গতিতে হলেও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সেই সাথে জীবনযাত্রার মানও উন্নত হচ্ছে। নিম্নের তালিকায় তা লক্ষ্যণীয়। -
৭। মূলধনের স্বল্পতা ঃ বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় কম বলে সঞ্চয় ক্ষমতা কম । ফলে মূলধন গঠনের হারও বেশ কম। তবে তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তালিকায় বিভিন্ন বছরে দেশের GDP এর মধ্যে সঞ্চয়ের অনুপাত দেখানো হলো । <
৮। শিক্ষার হার কম : বাংলাদেশে শিক্ষার হার অত্যন্ত কম। এখনও দেশে অনেক লোক অশিক্ষিত, অজ্ঞ ও নিরক্ষর রয়েছে। ২০০২ সালের হিসাব অনুযায়ী বয়স্ক শিক্ষার হার (১৫+) হলো শতকরা ৬২.৬৬ ভাগ মাত্র । উন্নত দেশে এ হার প্রায় ১০০ শত ভাগ ।
৯। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঃ র অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এ দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অব্যাহত চাপ বিদ্যমান। ২০০৫ সালে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৩.৭০ কোটি যা ২০১১-১২ (সাময়িক প্রাক্কলন) এ হয় ১৫.১৬ কোটি। ২০০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী এ দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৪% এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯৬৪ জন ।
১০। বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা : বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক কার্যাবলী মূলত বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। উন্নয়ন বাজেটের ৫০% বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর। তবে বর্তমানে এ নির্ভরশীলতা হ্রাস পাচ্ছে ।
১১। খাদ্য সমস্যা ঃ বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও কৃষি ব্যবস্থার অনুন্নতি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এদেশে প্রতি বছর খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে বিদেশ থেকে প্রতি বছর খাদ্য আমদানি করতে হয় । তবে খাদ্য শস্য উৎপাদন ব্যবস্থায় বিগত কয়েক বছর ধরে একটি ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে । নিমের তালিকায় বিভিন্ন বৎসরের খাদ্যশস্য উৎপাদন ও আমদানির পরিমাণ দেখানো হলো । । ১২। বেকার সমস্যা ঃ বাংলাদেশে বেকার সমস্যা অত্যন্ত প্রকট । এদেশে মোট শ্রমশক্তির ৩০% বেকার এবং ২৫% প্রচ্ছন্ন বেকার। সরকারি হিসাব অনুযায়ী শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ১ কোটির উর্ধ্বে ।
১৩। মুদ্রাস্ফীতি ঃ বাংলাদেশে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি একটি বড় সমস্যা। বিশ্বব্যাপী জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি, খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস, বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মন্দা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশেও বর্তমানে মূল্যস্তর বাড়ছে এবং মুদ্রাস্ফীতি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির হার ১০- ১১% ।
১৪। প্রতিকূল বৈদেশিক বাণিজ্য : এ দেশে কাঁচামাল রপ্তানী, শিল্পজাত পণ্য আমদানি, উদ্যোক্তার অভাব, নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন, আমদানি বিকল্প শিল্প গড়ে না উঠা প্রভৃতি কারণে বাণিজ্য ঘাটতি লেগেই রয়েছে । ।
উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কে কোনভাবেই উন্নত অর্থনীতি বলা যায় না । অপরদিকে অনুন্নত দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রায় সব বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান। এজন্য সাধারণভাবে বাংলাদেশকে অনুন্নত দেশ বলে মনে হয়। তবে অনুন্নত দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশের প্রধান পার্থক্য “অর্থনৈতিক স্থবিরতা” তা বাংলাদেশে অবর্তমান। বরং উন্নয়নশীল দেশের প্রধান লক্ষন অর্থনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতা বাংলাদেশে লক্ষ্যণীয়। এ গতিশীলতা সৃষ্টির প্রধান কারণ হচ্ছে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারের বৃদ্ধি । যেমন ১ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪% যা পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.২১% । ফলে এ দেশে একটি উন্নয়নের ধাপ সৃষ্টি হয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যার পরিমাণ হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ৪.২১% এ নেমে এসেছে। বয়স্ক শিক্ষার হার ৫০% থেকে বেড়ে ৬৮% এ উন্নীত হয়েছে। কৃষিখাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। মোট জিডিপিতে শিল্পসহ অন্যান্য অ-কৃষিখাতের অবদানও বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় দেশের অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন এসেছে এবং অর্থনৈতিতে গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে । সুতরাং বাংলাদেশকে নিঃসন্দেহে একটি উন্নয়নশীল দেশ বলাই যুক্তি সংগত।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]