টেকসই উন্নয়ন বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নে করণীয় পদক্ষেপ

টেকসই উন্নয়ন Sustainable Development
টেকসই উন্নয়ন কথাটি পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত একটি আধুনিক ধারণা। টেকসই উন্নয়ন ধারণা প্রথম লক্ষ্য করা গিয়েছিল ১৯৮০ সালে World Conservation Strategy তে । তবে এ ধারণাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে মূলত ১৯৮৩ সালে যখন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী Brundtland এ ধারণাটির উপর দুটি Significant report প্রকাশ করেন ।
এছাড়া আরোও ব্যাপকভাবে মানুষকে দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিওডিজেনিরো শহরে The United Nations Conference on Environment and Development (UNCED)-4 মাধ্যমে । ১০ বছর পরে গত ২০০২ সালে আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত হল UNCED-এর দ্বিতীয় ধরিত্রী সম্মেলন। এভাবেই টেকসই উন্নয়ন ধারণাটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকতা লাভ করেছে ।
বর্তমানে উন্নয়ন পরিধিতে বহুল প্রচলিত প্রত্যয় (Concept) হল টেকসই উন্নয়ন। বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনের সাথে টেকসই উন্নয়ন প্রত্যয়টি সম্পৃক্ত। সুতরাং টেকসই (Sustainable) প্রত্যয়টি সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা প্রয়োজন ।
মানুষের আর্থ-সামাজিক ও মানবীয় মৌলিক চাহিদা পূরণ করত পরিবেশগত ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য সুরক্ষা অব্যাহত রাখাকে টেকসই উন্নয়ন বলে । ড. কাজী খলীকুজ্জমান তাঁর 'টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন ঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ' প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে, মানুষের আর্থসামাজিক ও মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা এবং তা এমনভাবে করা যাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষিত হয় এবং পৃথিবীর জীবন সহায়ক প্রাকৃতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াসমূহ বিদ্যমান ও কার্যকর থাকে।
প্রচলিত ব্যবস্থায় অর্থনীতির সঙ্গে প্রাকৃতিক দ্বন্দ্ব এবং বর্তমানের সঙ্গে ভবিষ্যতের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন ধারণায় এসব সকল দ্বন্দ্বের নিরসন ও বিষয়গুলোর মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নিবিষ্ট । বর্তমান প্রজন্মকে এমনভাবে তাদের আর্থ সামাজিক প্রয়োজনসমূহ মেটাতে হবে যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মসমূহ তাদের আর্থ সামাজিক প্রয়োজন যথাযথভাবে মিটাতে পারে। একই সাথে বর্তমান প্রজন্মের সকলেই যাতে ন্যায্যভাবে সকল অগ্রগতির অংশীদার হতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে । জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (UNCED) প্রশাসক জেম্স গুসটার্ডের ব্যাখ্যানুযায়ী, টেকসই উন্নয়ন বলতে শুধু একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন বা অর্থনৈতিক অগ্রগতিকেই নির্দেশ করে না বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সুফল স্থায়ী ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বণ্টনের নিশ্চয়তা বিধান করাকে বুঝায় । টেকসই উন্নয়ন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা দীর্ঘস্থায়ীভাবে পরিবেশকে ধ্বংস করে না বরং পুনঃসংস্কার করে; যা জনগণকে দারিদ্র্যের প্রান্তসীমায় ঠেলে না দিয়ে বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে, ক্ষমতায়নে এবং জনগণের পছন্দ অনুসারে সুযোগের ক্ষেত্রে বিস্তারের সহায়তা করে। মূলত টেকসই উন্নয়ন হল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উৎপাদন স্বত্ব (Entitlement) বৃদ্ধির সাথে তাদের ক্ষমতায়ন ও সচেতায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে নিজস্ব আর্থসামাজিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করা। দরিদ্রের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সাথে মাথাপিছু আয় এবং সঞ্চয় বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক ভিত্তি গঠন এবং শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, বাসস্থান প্রভৃতি সামাজিক খাতে উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান স্থায়িত্বশীল করা হলো টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য । টেকসই উন্নয়ন বলতে মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সম্পদ মজুদ, সম্পদের মালিকানা স্বত্ত্বের অধিকারের নিশ্চয়তা এবং প্রাপ্ত সম্পদের উৎপাদনশীলতা দীর্ঘমেয়াদের ভিত্তিতে কাজে লাগানোর সুযোগকে বুঝায়। Sustainable life food secrity বা জীবিকা অর্জনের স্থায়ী নিরাপত্তাই হল টেকসই উন্নয়ন । অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিটি উপাদানের সূষম বন্টনের ভিত্তিতে মানুষ যখন জীবিকা অর্জনের স্থায়ী নিরাপত্তা লাভের সুযোগ পায় তখনই টেবসই উন্নয়ন সম্ভব হয়। টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হল প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদ । যেমন- ভূমি, ভূমির উর্বরতা, পানি, পরিবেশ প্রভৃতি উপাদানগুলো দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়। এসব উপাদানের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা দেশের জনগণের জীবিকা অর্জনের স্থায়ী নিরাপত্তা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত । বিশেষজ্ঞগণ টেকসই উন্নয়নের সূচক হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদের পর্যাপ্ততা, মাথাপিছু আয়, পুষ্টিমান, স্বাস্থ্যমান, আয়ের সুযোগ বণ্টন এবং জনগণের মৌলিক স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নে করণীয় পদক্ষেপ A Measure Taken to Sustainable Development in Bangladesh
বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নে কতগুলো বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় ।
১। আর্থসামাজিক অগ্রগতি ও সাম্য ঃ বাংলাদেশকে টেকসই অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে হবে অর্থাৎ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত অবস্থার যথাযথ মূল্যায়নভিত্তিক রচিত সমন্বিত নীতি কাঠামোর আওতায় টেকসই উন্নয়নের পথ নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় একদিকে জোর দিতে হবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর অর্থাৎ বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, বিরাজমান বাস্তবতার আলোকে উৎপাদন প্যার্টান, উৎপাদন ও বিতরণে দক্ষতা, অপচয় ও দুর্নীতি রোধ ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সাথে সামাজিক উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে অর্থাৎ দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমিয়ে আনা, অংশীদারিত্ব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা, সাধারণ মানুষের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্যসেবার ওপর যথাযথ গুরুত্ব দেয়া এবং যাতে সকল মানুষ সকল রকমের সেবা ন্যায্যভাবে পেতে পারে তার ওপর জোর দিতে হবে। এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে যথাযথ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে । আর এই প্রক্রিয়ার আওতায় সাধারণ মানুষের কর্মদক্ষতা ও সুযোগ সুবিধা এমনভাবে বর্ধিত করতে হবে যাতে তারা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় নিজেরা যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেন ।
২। জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা ঃ বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সংকট অদূর ভবিষ্যতে দ্রুত ঘনীভূত হবে বলে দেখা যায় । কাজেই এক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে কালক্ষেপনের সুযোগ বাংলাদেশের সামনে নেই ।
(ক) জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা ক্ষমতা যে সকল বিষয়ের উপর নির্ভরশীল সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বাস্তবতার যথাযথ মূল্যায়ন, প্রয়োজনীয় তথ্যের প্রাপ্তি, অর্থনৈতিক সঙ্গতি, মানব দক্ষতা, প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির প্রাপ্যতা, যথাযথ আইনি ব্যবস্থা, সামাজিক সাংস্কৃতির গ্রহণযোগ্যতা এবং যারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তাদের সময়ের বিবেচনা অর্থাৎ শুধু স্বল্পমেয়াদে নয়, দীর্ঘমেয়াদে চিন্তাভাবনা তাদের মধ্যে থাকতে হবে । এ সকল বিষয় বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশে খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা খুবই নিচু পর্যায়ের।
(খ) জলবায়ু পরিবর্তন উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার ব্যবস্থা গ্রহণ একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি একটি প্রক্রিয়া । এই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি; বিদ্যমান অবস্থার যথাযথ মূল্যায়ন এবং সেই ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়ার আওতায় নীতি নির্ধারণ, কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং যে কর্মকাণ্ড হাতে নেয়া হয় সময়ে সময়ে তার পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করতে হবে যাতে প্রয়োজনে ভুল পথ পরিহার করে সঠিক পথে প্রত্যাবর্তন সম্ভব হয় ।
(গ) অতি দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে না পারলে আর্থসামাজিক উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিসমূহ মোকাবেলায় এবং প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্বিন্যাস অগ্রগগতি ঘটবে না । ফলে বাংলাদেশ বর্তমানে যে নানান ঝুঁকির সম্মুখীন তা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আরও বৃদ্ধি পাবে । গভীর সংকটের এই পদধ্বনি আমাদের আমলে নিতেই হবে আর উত্তরণের লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । অন্যথায় যে কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছে তা দেশের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে ।
(ঘ) প্রাকৃতিক সুযোগ ঘন ঘন হতে পারে। তাই একটি বড় আকারের দুর্যোগ মোকাবেলা তহবিল গঠন করা যেতে পারে । পরবর্তীতে এটি বাড়ানো যেতে পারে। এতে সরকার, দেশের সম্পদশালী মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সহায়তাদানকারীরা অর্থ প্রদান করতে পারেন। এ ধরনের একটি তহবিল থাকলে দেশি বিদেশি অনুদানের মুখাপেক্ষী না থেকে দুর্যোগ ঘটার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম দ্রুত শরু করা যাবে। উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁট করার প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে একবার এই তহবিল থেকে যে অর্থ ব্যবহার করা হবে তা যত দ্রুত সম্ভব পূরণ করে নিতে হবে।
৩। পরিবেশ সংরক্ষণে বনাঞ্চল এবং শহর-গ্রাম সর্বত্র বৃক্ষরোপণ অভিযান অব্যাহত রাখা বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য পরিবেশগত কিছু বিষয় করণীয় আছে। এর মধ্যে,
(ক) বড় শহরগুলোর জনসমুদ্র রক্ষার্থে উন্নয়ন কৌশল ও নগরায়ন বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। এতে করে শহরের কেন্দ্রে লোকের ভীড় কমবে। জনসংখ্যার চাপ রোধ করা হলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর চাপ কমবে ।
(খ) সাধারণত গ্রাম এলাকার চেয়ে শহর এলাকায় তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হয়। গ্রামের তুলনায় শহরে গাছপালা ও সবুজ বনায়ন অনেক কম। সবুজ বনায়ন তাপমাত্রা রোধক একটি ব্যবস্থাপত্র । কাজেই শহরের সর্বত্র সবুজ গাছ লাগানো ও সবুজ বনায়নের সুযোগ শতভাগ কাজে লাগাতে হবে ।
(গ) যানবাহন ব্যবহার হ্রাস, তেল-গ্যাস কম পোড়ানো এবং শহরের বসত-বাড়িতে এসি ব্যবহার হ্রাস পাবে । কারণ আবহাওয়া ঠাণ্ডা হলে এসি ব্যবহার কমবে, এর ফলে জলবায়ু ও আবহাওয়া স্বাভাবিকের দিকে এগিয়ে আসবে ।
(ঘ) যানবাহন হ্রাস ও গ্যাস ব্যবহার রোধকরণ জরুরি এজন্য যে, যানবাহন দ্বারা তেল-গ্যাস পোড়ানোর দ্বারা আবহাওয়া ও উষ্ণতা তপ্ত হয় । এই তপ্ততা পরিবেশ দূষণের কারণ ।
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি Progress of Bangladesh to Attain Millennium Development Goals (MDGs)
জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের (MGDs) অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণ (লক্ষ্য-৭নং)। উন্নয়নের পদ্ধতি/কৌশলকে দেশের নীতিমালা ও কার্যক্রমসমূহের সঙ্গে সমন্বিতকরণ এবং এর মাধ্যমে পরিবেশগত সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস (লক্ষ্য-৭ক) এবং জীব বৈচিত্রের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস এ লক্ষ্যের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় । জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (UNDP) এর Milleninium development goals bangladesh progress report 2011"" শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭ নং এমডিজি এর আওতায় নিরাপদ সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণ সংশ্লিষ্ট সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিম্মলিখিত সারণিতে দেয়া হল । "

টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ Sustainable Development and Environment
টেকসই উন্নয়নের ফলে পরিবেশের বা পরিবেশই টেকসই উন্নয়নকে ধরে রাখতে হবে । অর্থাৎ টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে এটি মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক । একটি ব্যতীত অন্যটি টিকে থাকার চিন্তা করা যায় না । আবার অন্যভাবে বলা যায় টেকসই উন্নয়ন কোন একক বক্তব্য নয় বরং টেকসই উন্নয়নের ভিতরেই সুরক্ষিত সুন্দর পরিবেশ রয়েছে । কাজেই পরিবেশই টেকসই উন্নয়ন বিরাজমান রাখতে সহায়ক । ফলে এদের সম্পর্ক সমন্বিত ভারসাম্য পরিস্থিতি। এরপরও আলাদা ধারণা থেকেও এদের সম্পর্কের বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যায় ।
‘উন্নয়ন' ধারণা থেকে টেকসই উন্নয়ন ধারণার উৎপত্তি । তাই উন্নয়ন সম্পর্কে আলোচনা প্রয়োজন । অর্থনীতি ও সামাজিক-অর্থনৈতিক যে কোন বিষয়ে উন্নয়ন কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় । উন্নয়ন বলতে সাধারণভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই বুঝায় । উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ভোগে ব্যবহৃত হওয়ার পর অধিক উদ্বৃত্ত থেকে যায় যা পুনঃউৎপাদনে ব্যবহৃত হয়ে উন্নয়ন গতিকে তরান্বিত করে। উন্নয়নের ফলে সমাজ কাঠামো এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান আরোও নতুন মাত্রা গ্রহণ করে এবং আধুনিক উন্নয়নের রূপ ধারণ করে । মানুষ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে আর্থ-সামাজিক ও মানবীয় মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য পরিবেশগত ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য সুরক্ষা প্রায় নিশ্চিত করতে চায় । তখনই টেকসই অর্থনীতি প্রয়োজন হয় । আর এই ভারসাম্য পরিস্থিতি অব্যাহত রাখতে পারলে তাকেই টেকসই উন্নয়ন বলে ।
টেকসই উন্নয়ন হল উন্নয়নের এমন একটি প্রক্রিয়া যা পরিবেশের উপর কোন হুমকি নেই এবং ক্ষতিকর প্রভাব ন্যূনতম । মোট কথা, টেকসই উন্নয়ন বলতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর কোনরূপ Significant cost আরোপ না করেই বর্তমান প্রজন্মের জীবনযাত্রার মান বাড়িয়ে দেয়াকে বুঝায়। Significant cost বাড়ানোর অর্থ হল পরিবেশের অবনতি ঘটানো। প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতিসাধন ও অপব্যবহার এবং যেসব সম্পদসমূহ Renewable নয় সেগুলো নিঃশেষ করে ফেলা। আমরা যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সকল প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ এখনই কাজে লাগিয়ে ফেলি বা ভোগ করি তবে ভবিষ্যত বংশধরের উপর এমন বিপদ চাপিয়ে দেয়া হবে যা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই এ ধরনের উন্নয়নকে টেকসই উন্নয়ন বলা যায় না
টেকসই উন্নয়ন আলোচনায় দুটি Paradigm কাজ করে ।
(ক) একটি Paradigm হল টেকসই উন্নয়ন বুঝতে হলে উত্তর এবং দক্ষিণের দেশগুলোকে আলাদাভাবে দেখতে হবে। এর কারণ হিসেবে বলা যায় উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে কাঠামোগত অসমতা বিদ্যমান। উন্নত বিশ্বে উন্নত কারিগরি উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেয়া হয় এবং পাশাপাশি পরিবেশের সৌন্দর্য রক্ষার জন্যও কাজ করা হয়। অর্থাৎ তারা অর্থনীতির পাশাপাশি পরিবেশকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। উন্নয়নশীল বিশ্ব প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। এর ফলে বনভূমির উপর চাপ সৃষ্টি করছে । এতে করে পরিবেশ সৌন্দর্য হারাচ্ছে। ফলে পরিবেশের বিপর্যয় ত্বরান্বিত হচ্ছে। পরিবেশ আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ছে ।
(খ) দ্বিতীয় Paradigm হল টেকসই উন্নয়ন বুঝতে হলে Ends and means এর দুটোই বুঝতে হবে । পরিবেশগত বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করতে হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কিভাবে হয় সেটাও বুঝতে হবে । যেহেতু প্রকৃতি ও মানব প্রগতি একে অন্যের সাথে যুক্ত তাই প্রযুক্তিতে এমনভাবে উন্নয়ন ঘটাতে হবে যাতে পরিবেশের উপর কোন ঋণাত্মক প্রভাব না পড়ে। এ Paradigm উন্নত দেশের জন্য প্রযোজ্য ।
বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের করণীয় Steps Should be Taken by Bangladesh on World Climate Change
বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম । জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন হবে ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার । যার মধ্যে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদে প্রয়োজন হবে ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রয়োজন হবে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। এই অর্থ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলো পর্যায়ক্রমে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেছে। কিন্তু শুধু দাতা সংস্থা ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে না । সেজন্য নিজেদেরও কিছু করণীয় আছে । জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশের ভবিষ্যত করণীয় নিম্নে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো ।
১। উপকূলীয় অঞ্চলসহ সারা দেশে ব্যাপক বনায়ন করতে হবে ।
২। যানবাহন, শিল্পকারখানা, ইটভাটা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে বিষাক্ত কালা ধোঁয়া নির্গত হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।
৩ । উন্নত দেশগুলোর শিল্প ও গবেষণাগারের বর্জ আমদানি নিষিদ্ধ করতে হবে ।
৪। সিএফসি ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।
৫। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও ব্যবস্থা পর করতে হবে ।
৬। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও কারিগরি সহায়তার জন্য উন্নত দেশ ও দাতা সংস্থাগুলোর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
৭। কাঠ বা জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৮। পরিবেশ দূষিত হয় এমন কর্মকান্ড থেকে জনগণকে বিরত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে।
৯। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত তথ্য
সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সাধারণ জনগণকে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দিতে হবে ।
১১ । জলবায়ুর পরিবর্তন ও এর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য গণমাধ্যমের সাহায্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]