মালিকানার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক খাতসমূহকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়?

সরকারি ও বেসরকারি খাতসমূহ Public and Private Sectors
(ক) সরকারি খাত (Public Sector)
যে সকল খাত বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে সেগুলোকে বলা হয় সরকারি খাত। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাসমূহ তে শিল্প, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পরিবহণ, যাতায়াত ও সেবাখাতে উল্লেখযোগ্যভাবে সক্রিয় রয়েছে। সরকার ১৯৭২ সালের ঘোষিত জাতীয়করণ নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শিল্পকে জাতীয়করণ করে। সরকারি খাত হিসাবে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা যায়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমাগত লোকসানের প্রেক্ষাপটে ১৯৮২ সালের ঘোষিত শিল্পনীতিতে বেসরকারী পুঁজি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার লক্ষ্যে অনুকুল পরিবেশ তৈরি করা হয় । পরবর্তিকালে সরকার কর্তৃক বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতি গৃহীত হওয়ার দেশে বেসরকারি খাত ক্রমশ প্রসার লাভ করতে থাকে । বর্তমানে সরকারি খাতের আওতায় তথা সরকারি মালিকানায় পরিচালিত নিম্নোক্ত খাতসমূহ বিদ্যমান ।
১। শিল্পখাত (৬টি সংস্থা) ঃ বস্ত্র শিল্প, ইস্পাত শিল্প, চিনি ও খাদ্য শিল্প, রসায়ন শিল্প, বন শিল্প, পাটকল কর্পোরেশন প্রভৃতি ।
২। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানিখাত (৭টি সংস্থা) ঃ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ, ঢাকা পানি ও পয়ঃপ্রণালী কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম পানি ও পয়ঃপ্রণালী কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী পানি ও পয়ঃপ্রণালী কর্তৃপক্ষ এবং খুলনা পানি ও পয়ঃপ্রণালী কৰ্তৃপক্ষ ।
৩। পরিবহণ ও যোগাযোগখাত (৭টি সংস্থা) ঃ শিপিং, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ, সড়ক, চক্রগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর, মংলা বন্দর ডক, বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ ।
৪। বাণিজ্য খাত (৩টি সংস্থা) ঃ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, বাণিজ্য (টিসিবি) কর্পোরেশন এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ।
৫। কৃষিখাত (২টি সংস্থা) ঃ বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন ।
৬। নির্মাণ খাত (৫টি সংস্থা) ঃ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্রগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ।
৭ । সেবাখাত (১৭টি সংস্থা) : বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, চলচিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন, পর্যটন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, বাংলাদেশ রপ্তানী প্রকৃয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, রেশম বোর্ড, পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, চা বোর্ড, বাংলাদেশ রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এবং বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট । মুক্ত বাজার অর্থনীতি চালু করার লক্ষ্যে সরকার শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তামূলক খাত, বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক খাত ভিন্ন অন্যসব বেসরকারি মালিকানায় হস্তান্তরের উদ্যোগ নিচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থার নীট লোকসান ছিল 2776.৫৫ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে নীট লোকসান ধরা হয়েছে ৬৯৩৫,৯৪ কোটি টাকা ।
(খ) বেসরকারি খাত (Private Sector)
তে যে সমস্ত খাত বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয়, সেগুলোকে বেসরকারি খাত বলা হয় । দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে মুক্তবাজার ও বেসরকারি খাতের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০- ১১ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ GDP এর শতকরা ১৯.৪৬ ভাগে উন্নীত হয় যা ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে ছিল GDP-এর ১৩.৫৮ শতাংশ। বাজার অর্থনীতির কাঠামো জোরদার ও দক্ষ বেসরকারি খাতের বিকাশের লক্ষ্যে সরকারের সংস্কার ও উদারীকরণ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে । বর্তমান প্রেক্ষিতে
১। কৃষি ও কৃষির সবগুলো উপখাত (শস্য, মৎস্য, পশু ও বনজ) বেসরকারি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনাধীনে পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকার শুধুমাত্র পরামর্শ প্রদান, ভর্তুকিসহ নানা প্রকার উৎসাহব্যঞ্জক কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সুতরাং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষভাবে গ্রামের দরিদ্র, হতদরিদ্র কৃষকই প্রশংসার দাবীদার বলা যায় ।
২। শিল্প ঃ দরিদ্র ও জনবহুল এদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারের কর্মকা- অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে লোকসানী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্যে ১৯৯৩ থেকে ২০০১ পর্যন্ত মোট ৭৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারীকরণ করা হয়েছে । বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর সরকার শিল্পখাতে ব্যবহৃত মৌলিক কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্যের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রাংশের উপর আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার হ্রাসের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের বিকাশ সাধনে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ।
৩। সেবা ঃ বাংলাদেশের সেবাখাতের উল্লেখযোগ্য অংশ বেসরকারি খাতে পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে নৌ ও সড়ক পরিবহনের প্রায় ৯৫%, বেসরকারি বিমান পরিবহণ, টেলিযোগাযোগ, ব্যাংক-বীমা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ, টেলি-মিডিয়া, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের অবদান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
উৎপাদন ভিত্তিক খাত Production based Sector
উৎপাদনের ভিত্তিতে র খাতসমূহকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ (ক) কৃষি, (খ) শিল্প ও (গ) সেবা ।
(ক) কৃষি খাত (Agricultural Sector) : র প্রধান খাত হল কৃষি। * গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা তথা খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন, দারিদ্র নিরসন ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক ও টেকসই উন্নয়নে কৃষিখাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে । সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশে ক্রমবর্ধনশীল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ এবং সেই সাথে খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার ও টেকসই করার লক্ষ্যে লাগসই প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার উপর বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে কৃষিতে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলা নিম্নরূপ ।

মোট দেশজ উৎপাদন, বিনিয়োগ
১। কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ।
২। দেশের সর্বত্র মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের দোরগোড়ায় কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, ৩। কৃষিঋণ বিতরণ পদ্ধতি সহজীকরণ;
৪। কৃষি কার্যক্রমে ভর্তুকী প্রদান:
৫। কৃষি বীমার প্রচলন;
৬। কৃষিখাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি
৭। ই-কৃষি এবং গবেষণালব্ধ সমন্বিত প্রযুক্তি ব্যবহার।
কৃষিখাতের অন্যান্য উপখাত হল- ফসল, পশু সম্পদ, মৎস্য সম্পদ এবং বনজ সম্পদ। গত কয়েক বছর ধরে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এখাতে প্রতি বছর গড়ে ৪.৭ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। কৃষি শস্যের প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৫.৬ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয় এবং কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১০,১০৭:৮৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে ।*
* অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা ঃ ২০১৩-১৪* ।
(খ) শিল্প খাত (Industry Sector) : উন্নয়নশীল দেশে দ্রুত ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক অগ্রগতির একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত হচ্ছে শিল্পায়ন। অর্থনীতির আধুনিকায়ন ও কাঠামোগত রূপান্তর, অর্থনৈতিক ভিত্তির বৈচিত্র্যায়ন, ক্রমবর্ধমান উৎপাদশীলতা অর্জন, বাহ্যিক ব্যয় সংকোচন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, ত্বরিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জনগণের আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ইত্যাদি হচ্ছে শিল্প উন্নয়নের সর্বজন স্বীকৃত নির্ণায়ক। এজন্য শিল্পায়নকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। -
দেশজ উৎপাদনে এ খাতের অবদান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে স্থির মূল্যে দেশজ উৎপাদনে বৃহৎ খাতসমূহের মধ্যে শিল্পখাতের অবদান ছিল ১৭.৩১ শতাংশ যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ১৯.৪৫ শতাংশ । জাতীয় আয় নির্ণয়ে ১৫টি খাতের মধ্যে মাইনিং এবং কেয়ারিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, বিদ্যুৎ-গ্যাস ও পানি সরবরাহ এবং নিৰ্মাণ এ চারটি খাতের সমন্বয়ে শিল্পখাত গড়ে উঠেছে। এ খাতগুলোর মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অবদান সর্বোচ্চ। শিল্প খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৫ এর শিল্পনীতিকে পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে “জাতীয় শিল্পনীতি ২০১০" প্রণয়ন করা হয়েছে। শিল্পনীতি ২০১০ এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যাপক বিকাশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তথ্য প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ। রূপকল্প (ভিশন) - ২০২১ অনুযায়ী যে শিল্পখাত গড়ে তোলার নীতি (শিল্প নীতি) প্রণীত হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে মোট দেশজ উৎপাদনে (GDP) শিল্পখাতের অবদান (চলতি মূল্যে) ৪০ শতাংশে এবং মোট কর্মরত শ্রমশক্তির হার ১৬ শতাংশ হতে ২৫ শতাংশে উন্নীত হবে।
খনিজ ও খনন, ম্যানুফ্যাকচারিং, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ এবং নির্মাণ এ খাতগুলোর সমন্বয়ে শিল্পখাত গড়ে উঠেছে। এ সকল খাতের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অবদান সর্বোচ্চ।
(গ) সেবা খাত (Service Sector) : অর্থনৈতিক কর্ম যা অবস্তুগত ও অদৃশ্যমান এবং যা মানুষের অভাব পূরণ করে এবং যার জন্য বিনিময় মূল্য দিতে হয়, তাকে সেরা বলে । বাংলাদেশে ব্যবসায়-বাণিজ্য, পরিবহণ, ব্যাংক-বীমা, নির্মাণ, গৃহায়ণ, লোক প্রশাসন, ডাক্তার-উকিলের পরামর্শ, শিক্ষকতা, সেবিকার সেবা, শিল্পী ও গায়ক সবই সেবার 'মাওতাভূক্ত এবং প্রভৃতি ক্ষেত্রে সেবাকর্ম উৎপন্ন হয় । ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিভিন্ন সেবা খাতে দেশজ উৎপাদনে খাতওয়ারী অবদান হল নির্মাণ ৭.০৬%, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সম্পদ ১.৪৬%, পরিবহণ, সংরক্ষণ ও যোগাযোগ ১১.৫৪%, পাইকারি ও খুচরা বিপণন ১৪.০৮%, রিয়েল এস্টেট, ভাড়া ও অন্যান্য ব্যবসায় ৬.৯৫%, লোক প্রশাসন ও প্রতিরক্ষা ৩.৩৯%, আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক সেবা ৩.৩৯%, শিক্ষা ২.২৮%, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা ১.৮৬%, কমিউনিটি, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সেবা ৯.৮২% এবং হোটেল রেঁস্ত্রেরা ০.৭৫% । অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে GDP- তে সেবা খাতের মোট অবদান প্রায় ৬২.৫৪%, তাই এখাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ *
* উৎস : বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৪ ।
(i) কৃষি ঃ বাংলাদেশ গ্রাম প্রধান দেশ। কৃষি এদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির প্রধান খাত। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ লোক জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। এ খাতের অন্যান্য উপখাতসমূহ হচ্ছে শস্য উৎপাদন, মৎস্য চাষ, পশু পালন, বনায়ন প্রভৃতি । এছাড়াও পাট, গম, চা, আখ, তুলা, শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
(ii) শিল্প : গ্রামীণ শিল্প খাত বলতে প্রধানত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে বোঝানো হয় । বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (GDP) ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অবদান মোট শিল্পের অবদানের প্রায় – ভাগ । গ্রামীণ শিল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তাঁত শিল্প, বাঁশ ও বেত শিল্প, মৃৎ শিল্প, স্বর্ণ শিল্প, কাঠ শিল্প, কাঁসা ও পিতল শিল্প, বিড়ি শিল্প, লবন শিল্প, চামড়া শিল্প, সাবান শিল্প, মিষ্টি শিল্প, তেলের ঘানি, চাল ও ধান ভাঙ্গার কল প্রধান ।
(iii) পল্লী বিদ্যুৎ ও গ্যাস ঃ বিদ্যুৎ উৎপাদন শহুরে খাতে হলেও পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম চালু হওয়ায় সেচ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ইত্যাদিতে বিদ্যুতের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । এছাড়া বর্তমানে বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস গ্রামীণ জ্বালানি হিসাবেও ব্যবহার হচ্ছে ।
(iv) ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান ঃ গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকিং কার্যক্রমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে । তদুপরি, কৃষি ব্যাংক ও সমবায় ঋণ দান সমিতি কৃষি উন্নয়নে ঋণ দানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করছে।
(v) ব্যবসায়-বাণিজ্য : গ্রামাঞ্চলে কৃষিজাত পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল ক্রয়-বিক্রয় হয়। সাধারণত গ্রাম্য মহাজন ও বেপারিগণ তথা মধ্যস্বত্বভোগীরা এ ব্যবসায়-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে ।
(vi) পরিবহণ ও যোগাযোগ ঃ গ্রামীণ অর্থনীতিতে নৌ ও সড়ক পথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । বর্ষাকালে নৌ পথের গুরুত্ব অধিক ।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, যে সমস্ত খাত দেশের গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত সেগুলো গ্রামীণ খাতের অন্তর্ভূক্ত ।
(খ) শহুরে খাত (Urban Sectors )
অর্থনীতির যেসব খাত শহর কিংবা শহরতলীতে অবস্থিত সেগুলোকে শহুরে খাত বলে । নিম্নে প্রধান প্রধান শহুরে খাতগুলো আলোচনা করা হল।
(i) কৃষি ঃ কৃষি যদিও গ্রামীণ খাতের আওতাভূক্ত, তবুও শহরের আশেপাশে কৃষি সম্প্রসারণ কেন্দ্রের আওতাধীন কৃষি খামার, উদ্যান উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন কৃষি ফার্ম, গো-খামার, পোলট্রি খামার, নার্সারি প্রভৃতি উপখাত শহুরে খাতের অন্তর্ভূক্ত।
(ii) শিল্প ও বিদ্যুৎ, পরিবহণসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধার কারণে শিল্প খাত মূলত শহরকেন্দ্রিক খাত। শহরের আশেপাশে শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে।
(iii) ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের মূলধনের চাহিদা পুরণের জন্য ব্যাং ও বীমা প্রতিষ্ঠান শহরের প্রধান প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
(iv) ব্যবসায়-বাণিজ্য : ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান যেহেতু শহরকেন্দ্রিক তাই ব্যবসায়-বাণিজ্য শহরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।
(v) বিদ্যুৎ ও গ্যাস ঃ বিভিন্ন কল-কারখানায় জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহৃত হয়। এটি শহরাঞ্চলে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আবাসিক সাহায্যকারী উপাদান। এজন্য এ খাতকে শহুরে খাত হিসাবে গণ্য
করা হয়।
(vi) পরিবহণ ও যোগাযোগ ঃ পরিবহণ ও যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমসমূহের প্রধান কার্যালয় শহরাঞ্চলে অবস্থিত এবং সকল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত শহরাঞ্চলে অবস্থিত দপ্তরসমূহে নেয়া হয়। তাই এ খাতকে শহরে খাত হিসেবে ধরা হয় ।
(vii) শিক্ষা ও চিকিৎসা ঃ প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত, বিশেষায়িত শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা এবং এর আধুনিকায়নের সুফল সবই শহুরে খাতের এক উল্লেখযোগ্য অবদান ।
(viii) পেশা ও বিবিধ সেবা : সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, ব্যবসায়-বাণিজ্য শহরাঞ্চলে কেন্দ্রীভূত বিধায় চাকরি ও অন্যান্য সেবাকর্ম শহুরে খাত হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও প্রশাসন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, গৃহায়ণ ও অন্যান্য অনেক সেবাকর্ম বাংলাদেশের শহুরে খাতের অন্তর্ভূক্ত ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]