বাংলাদেশের স্বল্প মাথাপিছু আয়ের কারণ Causes of Low per Capita Income of Bangladesh

মাথাপিছু আয় Per Capita Income
কোনো একটি দেশের মোট জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যা পাওয়া যায়, তাকে বলা হয় মাথাপিছু আয় । একই নিয়মে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয়কে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়। মাথাপিছু আয়কে নিম্নোক্ত সূত্রের সাহায্যে প্রকাশ করা যায় ।
Y PCI = P
যেখানে, PCI = মাথাপিছু আয়, Y = মোট জাতীয় আয়, P = মোট জনসংখ্যা ।
মাথাপিছু জাতীয় আয়ের বিভিন্ন ধারণা রয়েছে। যেমন-
১। মাথাপিছু দেশজ উৎপাদন ঃ কোন নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক বছরে) মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) কে ঐ সময়ের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু GDP পাওয়া যায় ।
২। মাথাপিছু জাতীয় উৎপাদন ঃ কোন নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক বছরে) মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP) কে ঐ সময়ের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু GNP পাওয়া যায় ।
৩। মাথাপিছু নীট জাতীয় উৎপাদন ঃ কোন নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক বছরে) নীট জাতীয় উৎপাদন (NNP) কে ঐ সময়েরর মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু NNP পাওয়া যায়।
৪। চলতি মূল্যে মাথাপিছু GDP : চলতি মূল্যে হিসাবকৃত GDP কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে চলতি মূল্যে মাথাপিছু GDP পাওয়া যায় ।
৫। স্থির মূল্যে মাথাপিছু GNP : স্থির মূল্যে হিসাবকৃত GNP কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে স্থির মূল্যে মাথাপিছু GNP পাওয়া যায় ।
জাতীয় আয় স্থির থেকে যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় তবে মাথাপিছু আয় কমে। আবার যদি জনসংখ্যা স্থির থেকে জাতীয় আয় বাড়ে তবে, মাথাপিছু আয় বাড়ে। যদি জাতীয় আয় ও জনসংখ্যা সমান হারে বাড়ে তবে মাথাপিছু আয় স্থির থাকে। যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে জাতীয় আয় বেশি হারে বৃদ্ধি পায় তবে মাথাপিছু আয় বাড়বে ।
উপরের সারণিতে প্রদত্ত উপাত্ত হতে লক্ষ্যণীয় যে, বাংলাদেশের মাথাপিছু GDP ও GNP বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে । ২০১২-১৩ অর্থবছরে সর্বপ্রথম আমাদের মাথাপিছু GNP ১,০৫৪ মার্কিন ডলার অতিক্রম করে যা ২০১৪-১৫ সালে ১,৩১৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে যদিও বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু GNP খুবই সামান্য । এমনকি সার্কভূক্ত বেশ কয়েকটি দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু GNP এখনও কম । এর অর্থ হলো বাংলাদেশের যে হারে/গতিতে মাথাপিছু GNP বাড়ার কথা ছিল তা বাংলাদেশ করতে পারেনি। অর্থাৎ বাংলাদেশ তার অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারেনি। কিন্তু সাকর্ভূক্ত অন্যান্য দেশ তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বহুদূর এগিয়ে গেছে ।
বাংলাদেশের স্বল্প মাথাপিছু আয়ের কারণ Causes of Low per Capita Income of Bangladesh
মাথাপিছু আয় বলতে কোন দেশের জন প্রতি বার্ষিক আয়কে বোঝায়। কোন নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন বা আয়কে (GNI) ঐ বছরের মধ্য সময়ের মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করা হলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়। বাংলাদেশের জনগণের স্বল্প মাথাপিছু আয় ও নিম্ন জীবনযাত্রার মানের কারণসমূহ নিম্নরূপ ।
১। ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণ : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত এ ভূখ- ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের অধীনে ছিল বিধায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়নি। তাই বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান নিম্ন ।
২। কৃষির নিম্ন উৎপাদন : বাংলাদেশে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ অপেক্ষা কৃষিতে একর প্রতি কম উৎপাদন হয় । যেমন- জাপানে একর প্রতি ধান উৎপাদন গড়ে ২১.৬৫ কুইন্টাল, যুক্তরাষ্ট্রে ১৭.৫৫ কুইন্টাল এবং বাংলাদেশে ৫.৬০ কুইন্টাল। স্বল্প উৎপাদনের কারণে কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের জনগণের আয় স্বল্প । তাই কৃষির আধুনিকায়ন প্রয়োজন।
৩। শিক্ষার অভাব ঃ উন্নয়নের জন্য প্রধান সহায়ক শক্তি হল শিক্ষা। পৃথিবীর বহু উন্নত দেশে যেমন নরওয়ে, জাপান, ডেনমার্ক, সিঙ্গাপুর-এ শিক্ষার হার ১০০%। অন্যদিকে ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী এ হার বাংলাদেশে ৫৬.৭% এ উন্নীত হয়, এর মধ্যে মৌলিক শিক্ষার হার এখনো ৩০% এর নিচে। অতএব উন্নয়নের গতি বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা বিস্তার অপরিহার্য ।
৪। শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসরতা ঃ গত শতাব্দীর ৭০ এর দশকে কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা প্রায় সমপর্যায়ের ছিল। কিন্তু গত তিন দশকে উক্ত দেশগুলোতে শিল্প ক্ষেত্রে যে হারে উন্নয়ন সাধন হয়েছে, সেরূপ উন্নয়ন সাধন বাংলাদেশে হয়নি। ঔপনিবেশিক শোষণ অনেকাংশে এর জন্য দায়ী। ফলে এ দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় কম ।
৫। প্রাকৃতিক সম্পদের অপূর্ণ ব্যবহার ঃ মূলধন, দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তি বিদ্যার অভাবের কারণে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার সম্ভব হয়নি, যার ফলে মাথাপিছু আয় স্বল্প ।
৬। বেকার সমস্যা : দেশের বেকার সমস্যার তীব্রতা রয়েছে। জনগণের মাথাপিছু আয় স্বল্প এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি ।
৭। জনসংখ্যার চাপ ঃ এদেশের সীমিত ভূখ-ে জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রীর উৎপাদন ও অবকাঠামো সম্প্রসারিত হয়নি । ফলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়নি। এখনো দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৬% ।
৮। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ঃ বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবমুখী কোন পরিকল্পনা অতীতে হয়নি। অনেক সময় সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে পূর্ববর্তী সরকারের নেয়া পরিকল্পনাগুলোকে বাতিল করা হয়। এতে সম্পদের অপচয় ও উন্নয়নের গতি ব্যাহত হয়। এর ফলেও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়নি ।
৯ । মূলধনের অপর্যাপ্ততা ঃ দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব রয়েছে। আর্থিক মূলধন ও দক্ষ মানবীয় মূলধন কোনটিই পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই । তাই মাথাপিছু আয় স্বল্প ।
১০। কারিগরি জ্ঞানের অভাব ঃ এদেশে কারিগরি জ্ঞান সমৃদ্ধ কুশলি শ্রমিকের দারুন স্বল্পতা রয়েছে । আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বর্তমান শতাব্দীতে এটিও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়গুলোর মধ্যে অন্যতম ।
১১ । দক্ষ উদ্যোক্তার অভাব : বাংলাদেশে দক্ষ উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে ওঠেনি, তাই আমাদের আয় স্বল্প ।
১২। প্রাকৃতিক বিপর্যয় : বার বার বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। এতে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি বাধা প্রাপ্ত হয় ।
১৩। খনিজ সম্পদের স্বল্পতা : যদিও সাম্প্রতিক কিছু খনিজ সম্পদ আবিষ্কৃত হচ্ছে তবুও তা প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প। এ সম্পদে যে দেশ সমৃদ্দ তাদের মাথাপিছু আয় অধিক ।
১৪। মুদ্রাস্ফীতি : স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে তীব্র মুদ্রাস্ফীতি বিরাজ করার কারণে দ্রব্যমূল্য ক্রমশ বাড়ছে। জনগণের প্রকৃত মাথাপিছু আয় হ্রাস পাচ্ছে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মুদ্রাস্ফীতির হার এপ্রিল, ২০১৩-১৪ পর্যন্ত ৭.৩৮ শতাংশে পৌঁছে ।
১৫। বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি : বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি থাকার দরুন আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে আয় বৃদ্ধির উপায় হ্রাস পাচ্ছে।
১৬। দেশীয় পরিকল্পনাকারীকে অবহেলা : বাংলাদেশে উন্নয়ন কর্মসূচির বেশির ভাগ বৈদেশিক পরিকল্পনাকারীকে দিয়ে প্রণয়ন করা হয়। এরূপ প্রকল্প বাস্তবতার সাথে প্রায় পূর্ণ নয় বিধায় জাতীয়
সম্পদের অপচয় হয় ।
১৭। দুর্নীতিযুক্ত প্রশাসন ব্যবস্থা : প্রশাসন ব্যবস্থা যদি ঘুষ-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে, তবে দেশের উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়। বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থা দুর্নীতিতে প্রায় নিমজ্জিত। তাই উন্নয়ন কর্মকা- এখানে মসৃণভাবে সমাপ্ত হয় না ।
১৮। সম্পদের অসম বন্টন ও বাংলাদেশে এখনো সম্পদের বৃহত্তর অংশ মুষ্টিমেয় লোকের হাতে কেন্দ্রিভূত । তাই দেশের অধিকাংশ জনগণের মাথাপিছু আয় কম ।
১৯। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থতি ঃ দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে উন্নয়ন কর্মকা-, বিনিয়োগ, উৎপাদন প্রভৃতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রায়ই অশান্ত থাকে ।
8
২০। অনুন্নত আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো ঃ বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো- রাস্তাঘাট, সেতু, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানি সরবরাহ প্রভৃতি ব্যবস্থা অনুন্নত। তাই উন্নয়নের গতি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে । ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় স্বল্প ।
উপরিউক্ত কারণসমূহ বাংলাদেশের জনগণের স্বল্প মাথাপিছু আয় ও নিম্ন জীবনযাত্রার মানের জন্য বিশেষভাবে দায়ী ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]