সঞ্চয়
Saving
মানুষ তার আয়ের যে অংশ বর্তমান ভোগের জন্য ব্যয় না করে ভবিষ্যতের জন্য জমা রাখে তাকে সঞ্চ বলে । যেমন- কোন ব্যক্তির মাসিক বেতন ১২,০০০ টাকা এবং মাসিক ব্যয় ৯,০০০ টাকা হলে তার মাসিক সয় হলো (১২,০০০-৯,০০০) = ৩,০০০ টাকা। সঞ্চয়কে নিম্নোক্ত সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়,
S=Y-C যেখানে, S = সঞ্চয়, Y = জাতীয় আয়, C = ভোগ ব্যয় ।
যদি আয় ও ভোগব্যয় পরস্পর সমান হয় অর্থাৎ Y = C হয় তবে সঞ্চয় হবে শূণ্য ( S = O), যদি ভোগব্যয় (C) থেকে আয় (Y) বেশি হয় অর্থাৎ, Y> C হয় তবে সঞ্চয় হবে ধনাত্মক (S > O) । আর যদি ভোগব্যয় (C) থেকে আয় (Y) কম হয় অর্থাৎ Y < C হয় তবে সঞ্চয় হবে ঋনাত্মক। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, কোন সমাজের সঞ্চয় মূলত দু'টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যথাঃ আয় এবং মানুষের ভোগ প্রবণতা। এই দুটি বিষয় ছাড়াও পারিবারিক দায়িত্ব বোধ, দূরদৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা, শিশু মৃত্যুহার, সুদের হার, বিনিয়োগের সুযোগ সুবিধা প্রভৃতি বিষয়গুলোও সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে । তবে অন্যান্য সকল বিষয় অপরিবর্তিত থাকলে কোন সমাজের সঞ্চয় মূলত আয়ের উপর নির্ভর করে। আয়স্তর বাড়লে সঞ্চয় বাড়ে, আয়স্তর কমলে সঞ্চয় কমে । অর্থাৎ আয়স্তরের সাথে সঞ্চয়ের সম্পর্ক ধনাত্মক বা সরাসরি ।
সামষ্টিক অর্থনীতিতে সঞ্চয় বলতে সামগ্রিক সঞ্চয়কে বুঝানো হয়। আয়ের উপর সামগ্রিক সঞ্চয়ের নির্ভরশীলতার সম্পর্ককে বলা হয় সঞ্চয় অপেক্ষক । সঞ্চয় অপেক্ষককে নিম্নোক্তভাবে প্রকাশ করা যায়,
S = f (Y)
ds
এখানে, S = সঞ্চয় এবং
Y = আয় ।
এবং = আয়ের পরিবর্তনের ফলে সঞ্চয়ের পরিবর্তনের হার = প্রান্তিক সঞ্চয় প্রবণতা = MPS
dy
বিনিয়োগ
Investment
সাধারণ অর্থে বিনিয়োগ বলতে জমি, অট্টালিকা বা পূর্বে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির শেয়ার এসব ক্রয়ের জন্য বিনিয়োজিত অর্থকে বুঝানো হয় । কিন্তু অর্থনীতিতে শুধু অর্থ খাটানোকে বিনিয়োগ বলে না । কারণ এরকম আর্থিক ব্যয় দ্বারা উৎপাদন বাড়ে না। এখানে সম্পদ একজনের নিকট থেকে অন্যজনের নিকট হস্তান্তর হয় মাত্র । নতুন সাজ সরঞ্জাম অর্থাৎ যন্ত্রপাতি ক্রয়, নির্মাণ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যয়, বাড়তি মজুত ক্রয় তাদেরকে বিনিয়োগ বলে । অর্থাৎ মূলধন দ্রব্যের মজুদ বৃদ্ধিকে বিনিয়োগ বলে ।
কেইন্স এর মতে, “আগে থেকেই আছে এমন শিল্পকারখানা, সরঞ্জাম ও বস্তু সামগ্রির সাথে নতুন কিছু যুক্ত হওয়াকে প্রকৃত বিনিয়োগ বলে।” অর্থাৎ পূর্বে স্থাপিত প্রকৃত মূলধন সামগ্রির সাথে সংযোজিত ব্যয়ের পরিমাণকে বিনিয়োগ বলে। শুধুমাত্র বস্তুগত মূলধন গঠনকে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ হিসাবে ধরা হয়। মূলধনের স্টক বা মজুদ ভান্ডার থেকে বেরিয়ে আসে বিনিয়োগ প্রবাহ ।
বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন হলেও তার সাথে আরও কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে। যথাঃ
১। নতুন মূলধন সামগ্রির মজুত বৃদ্ধি
২। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং
৩ । উৎপাদন বৃদ্ধি ।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূলধন সামগ্রি উৎপাদন ক্ষেত্রে নিয়োজিত হয়ে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, তাকে বিনিয়োগ বলা হয় ।
সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে সম্পর্ক
Relationship between Saving and Investment
একটি দেশের জন্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগ উভয়ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ । সঞ্চয় ও বিনিয়োগের মধ্যে নিগূড় সম্পর্ক রয়েছে । সম্পর্কগুলো নিম্নে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল ।
১। সঞ্চয়ের মাধ্যমে মূলধন গঠিত হয় এবং মূলধন গঠন বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করে । এক কথায় সঞ্চয় বেশি হলে বিনিয়োগও বেশি হয় ৷
২ । সুদের হারের সাথে সঞ্চয়ের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ বা ঋণাত্মক অর্থাৎ সুদের হার বাড়লে সঞ্চয় বাড়ে। কিন্তু সুদের হারের সাথে বিনিয়োগের সম্পর্ক বিপরীত, তাই সুদের হার বাড়লে বিনিয়োগ কমে । এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, সঞ্চয়ের সাথে বিনিয়োগের সম্পর্ক বিপরীত ।
৩ । বিনিয়োগ সঞ্চয়ের উপর নির্ভর করে । কিন্তু সঞ্চয় বিনিয়োগের উপর নির্ভর করে না ৷
৪ । একটি দেশের অর্থনীতিতে সামগ্রীক ভারসাম্য অর্জিত হয় যদি সঞ্চয় ও বিনিয়োগের সমতা
অর্জিত হয় ।
৫ । বর্তমান সময়ের সঞ্চয় ভবিষ্যৎ বিনিয়োগে রূপান্তরিত হয় ।
উপরিউক্ত সম্পর্কগুলোর ভিত্তিতে বলা যায়, একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগ উভয়কে সমানভাবে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে ।
জিডিপি'র শতকরা হারে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ
Saving and Investment as Percent of GDP
২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশজ সঞ্চয় ও জাতীয় সঞ্চয় ছিল যথাক্রমে জিডিপি'র ২২.০৪ শতাংশ ও ৩০.৫৩ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশজ সঞ্চয় ও জাতীয় সঞ্চয়ের হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে জিডিপি'র ২২.০ শতাংশ ও ২৯.২৩ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশজ সঞ্চয় ও জাতীয় সঞ্চয়ের হার প্রাক্কলন করা হয়েছে যথাক্রমে জিডিপি'র ২২.৩০ শতাংশ ও ২৯.০১ শতাংশ। ভোগব্যয় সামান্য হ্রাস পাওয়ায় ও দেশজ সঞ্চয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতীয় সঞ্চয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিদ্যুৎ অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যয় বৃদ্ধি ইত্যাদির কারণে সরকারি ও বেসরকারি উভয় বিনিয়োগই বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে জিডিপি'র ২৮.৬৯ শতাংশে, গত অর্থবছরে যা ছিল জিডিপি'র ২৮.৩৯ শতাংশ। এরমধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপি'র ২১.৭৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২১.৩৯ শতাংশে এবং সরকারি বিনিয়োগ জিডিপি'র ৬.৬৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭.৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে ।
বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবকাঠামোগত অপ্রতুল্যতা (Infrastructure deficit) দূরীকরণের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে Road map বাস্তবায়ন, জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নতুন কূপ খনন, এলএনজি আমদানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও পিপিপি'র আওতায় অবকাঠামো খাতে যে ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নের ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা করা যায় ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত