স্বাধীনতার পর হতে এ পর্যন্ত বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য নানা আইন-কানুন তৈরি করা, বৈরি আইন, বিধি বদলানো, বাণিজ্য টিম পাঠানো, বাণিজ্য মেলার আয়োজন ও অংশগ্রহণ, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বিদেশ সফর, পররাষ্ট্র নীতি হিসাবে Economic Diplomacy গ্রহণ ইত্যাদি কোন কিছুই ইপ্সিত ফল লাভে তেমন কাজে আসেনি। বাংলাদেশে বিনিয়োগে যে বন্ধ্যাত্ব ছিল সেই বন্ধ্যাত্বই রয়ে গেছে । ভিয়েতনামের মত কমিউনিষ্ট দেশ, কম্বোডিয়ার মত যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ, মায়ানমারের মত সামরিক জান্তার দেশ বিদেশী বিনিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে নিজেদের এতদিনকার বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়ে ফেলতে সমর্থ হয়েছে। পারল না কেবল বাংলাদেশ । এক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সমস্যা বা অসুবিধাগুলো চিহ্নিত করা যায় ।
১। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য : বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, শিল্প ও বাণিজ্য প্রক্রিয়ায় অহেতুক বিধি-নিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ থাকায় বিনিয়োগ উৎসাহিত হতে পারেছ না। শিল্প- বাণিজ্য প্রক্রিয়ায় বিরাজমান এ সব অহেতুক বিধি-নিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ না করলে বাংলাদেশে কোন দিনই বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে না ।
২। অনুন্নত অবকাঠামো ঃ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, বাংলাদেশে তার পর্যাপ্ত অভাব ও ঘাটতি রয়েছে। রেল ও সড়ক ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত নয়। সবচেয়ে করুণ বিদ্যুৎ সরবরাহজনিত অবস্থাটি। কল-কারখানায় গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি সময়মত এবং চাহিদামত পাওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই, নেই ঠিকমত টেলিফোন ব্যবহারের ভরসা। বাংলাদেশের কোন সরকারই এ যাবত এ অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা উন্নয়নের সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি ও ব্যবস্থা নিতে পারেননি এ অবস্থায় বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ভরসা পায় না ।
৩। যথাযথ ব্যাংকিং সুবিধার অভাব ও সফল শিল্পায়নের অন্যতম মৌলিক শর্ত হচ্ছে যথাযথ ব্যাংকিং সহায়তা। বাংলাদেশে বাস্তব অর্থে ফাইন্যান্স মিটিস্ট্রি ব্যাংক চালায়। কি সরকারি, কি বেসরকারি, কোন ব্যাংকেরই যথাযথ দায়িত্ব ও অধিকারের ভিত্তির উপর প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। ব্যাংকগুলো ফাইন্যান্স মিনিস্ট্রি, খেলাপি ঋণ ও দলীয় দৌরাত্ম্যের কাছে অনেক সময়ই জিম্মি। ব্যাংকিং সার্ভিস বাড়ছে না । বাড়ছে রাজনৈতিক সুবিধাবাদ ও দুর্নীতি। ব্যাংক ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ স্বায়ত্বশাসন না দিলে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষিত হবে না ।
৪। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি : বাইরের পুঁজি না আসার এবং অভ্যন্তরীণ পুঁজির স্বাভাবিক নিয়মে বিকশিত না হয়ে উঠার আর একটি গুরুতর কারণ দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে থাকা । একটা কথা দুনিয়ার সর্বত্র প্রচলিত আছে, সেটা হল অর্থনীতির সুষ্ঠু পরিচালনা নির্ভর করে বহুলাংশে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃংখলা ভাল থাকার উপর । বাংলাদেশে দোকানে, পাড়ায় পাড়ায়, কল- কারখানায়, দালান কোঠা নির্মাণে চাঁদা দাবি করা একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বহুক্ষেত্রে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসকে আনুকূল্য দেয় থানা পুলিশ স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ইঙ্গিতে ।
৫। দূর্বল কর কাঠামো ও কর প্রশাসনের অব্যবস্থা ঃ বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট না হওয়ার কয়েকটি কারণের মধ্যে উল্লেখ করা যায় বিরাজমান কর কাঠামো ও কর প্রশাসনের অব্যবস্থা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এদের নির্যাতন ও দুর্নীতির কথা । বহু উন্নয়শীল দেশে বিদেশী পুঁজি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে কর কাঠামো ঢেলে সাজানো হয়েছে, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স হ্রাস করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এসব ক্ষেত্রে ।
৬। শ্রমিক নেতৃত্বের বাড়াবাড়ি ও দুর্নীতি : বাংলাদেশে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা করার নামে এক শ্রেণীর শ্রমিক নেতৃত্বের বাড়াবাড়ি ও দুর্নীতিকেও বাংলাদেশে বিদেশী পুঁজি না আসার অন্যতম কারণ হিসেবে অভিহিত করা যায় ।
৭। ভূমির স্বল্পতা : বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় সমস্যা জমি । যে কোন বড় শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হলে ২০ হতে ২৫ একর জমির প্রয়োজন হয় । নির্ভেজাল জমি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে । দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত দাইও কোম্পানি বেসরকারিভাবে জমি নিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার মাটি ভরাটের কাজ করে তাদের মিল উদ্বোধন করতে যাওয়ার দিন বন বিভাগ এ জমিকে তাদের জমি বলে দাবি করে । অথচ ৬ মাস ধরে কাজ করার সময় বন বিভাগ কিছু বলেনি। এ অবস্থায় দাইও কোম্পানী ভীষণভাবে বিরক্ত হয়। সরকারিভাবে তাদের এখন সাভার ইপিজেড-এ জমি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসে তারা যে হয়রানির শিকার হয়েছে তা অন্যান্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে ।
৮। অপর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণ ও দেশীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন ব্যাংক ঋণ । বড় কোন প্রকল্প গ্রহণ করতে গেলে বিভিন্ন ব্যাংক কনসোর্টিয়াম গঠন করে। গত ৬ মাসে বেশ কিছু শিল্প উদ্যোক্তা এ ধরনের শিল্প স্থাপনের জন্য আবেদন করে প্রস্তাব দিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাছাড়া ১০ কোটি, ১৫ কোটি টাকার শিল্প ইউনিট স্থাপনের প্রকল্প ব্যাংকে দাখিল করে ঘাট ঘাটে ঘুরতে ঘুরতে হয়রানি হচ্ছে শিল্প উদ্যোক্তারা ।
৯। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ঃ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরেকটা বড় সমস্যা। দেশে আজো গণতন্ত্র আক্ষরিক অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি । হরতাল, ধর্মঘট লেগেই আছে । মূল অর্থনৈতিক নীতির প্রশ্নে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ঐক্য থাকা প্রয়োজন ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত