বাংলাদেশের বর্তমান দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি Present Commodity Price Scenario of Bangladesh

মূল্য, মজুরি ও কর্মসংস্থান Prices, Wages and Employment
Introduction
মূল্য, মজুরি ও কর্মসংস্থান এ তিনটি চলক যে কোন অর্থনীতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক । ভোক্তা মূল্য সূচক দ্বারা মূল্যস্তরকে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে । ভোক্তা মূল্যসূচক অনুসারে ২০১৩-১৪ অর্থবৎসরে জাতীয় পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি হার ৭.৩৫ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরে ছিল ৬.৭৮ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মার্চ ২০১৫, মাস পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬.৪৬ শতাংশ । মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন রাখাসহ মুদ্রানীতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সর্বশেষে ২০১০ সালে বিবিএস কর্তৃক পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী ১৫ বছর বয়সের উর্ধ্বে অর্থনৈতিকভাবে কমক্ষম শ্রমশক্তির সংখ্যা ৫.৬৭ কোটি, তন্মধ্যে ৫.৪১ কোটি শ্রমশক্তি (পুরুষ ৩.৭৯ কোটি এবং মহিলা ১.৬২ কোটি) বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। মোট শ্রমশক্তিতে কৃষিজীবির অংশ পূর্বের তুলনায় কমলেও এখনও সর্বাধিক শ্রমশক্তি কৃষিখাতে নিয়োজিত (৪৭.৫০ শতাংশ)। বাংলাদেশের মজুরি হার সূচক অনুসারে নামিক (Nominal) ও প্রকৃত (Real) মজুরি হার সূচক উভয়ই ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে । বাংলাদেশের শ্রমশক্তির এক বিরাট অংশ বিদেশে কর্মরত। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ৪.০৯ লক্ষ লোক কর্মসংস্থান নিয়ে বিদেশে গমন করেছে । ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রথম নয় মাসে ৩.২৬ লক্ষ শ্রমশক্তি বিদেশে গেছে । ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ১৪,২২৮.৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে । বিদেশে কর্মরত মোট শ্রমিকের ৭০ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত। সাম্প্রতিক এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের শ্রম বাজারের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানী বৃদ্ধি ও নির্বিঘ্ন রাখারা উদেশ্যে বোয়েসেলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেজন্য সরকার বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে নতুন শ্রম বাজারের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে । রেমিট্যান্স প্রবাহকে নির্বিঘ্ন রাখার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন, মোবাইল সার্ভিসের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা, সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রদান কারীকে CIP মর্যাদা প্রদানের মত যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে ।
দ্রব্যমূল্য Price of Commodity
সাধারণত ভোক্তা একটি দ্রব্য বা সেবা ক্রয় করার জন্য যে মূল্য প্রদান করে, তাকে বলা হয় দ্রব্যমূল্য । তবে এখানে দ্রব্যমূল্য বলতে শুধুমাত্র একটি কিংবা দুটি দ্রব্যের মূল্যকে বোঝায় না। বরং সমাজের বা দেশের সাধারণ জনগণ নিত্য যে সকল দ্রব্য ও সেবাকর্ম ব্যবহার করে সেগুলোর গড় মূল্যস্তরকে বলা হয় দ্রব্যমূল্য । এ দ্রব্যমূল্যের সাথে মানুষের জীবনযাত্রার মান, মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। আর বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে দ্রব্যমূল্য ধারণাটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এ দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে। তাই দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকলে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ, নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায় । সেজন্য বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে দ্রব্যমূল্যের মত স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে ।
বাংলাদেশের বর্তমান দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি Present Commodity Price Scenario of Bangladesh
বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত বিশেষ হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি । মূল্য বৃদ্ধির এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল দেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই। ব্রিটিশ শাসন আমলে আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য একটি নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় ও সহনীয় পর্যায়ে ছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত বিভক্ত হবার পর এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই ছিল । ১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হলেও অর্থনৈতিক বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী আমাদের জীবনে অতর্কিত হানা দেয়। জনজীবন অতীষ্ট হয়ে উঠে । এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমাদের এ অবস্থান । বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঘোড়া জনগণকে হতাশার রাজ্যে নিয়ে গেছে ।
মূল্য বৃদ্ধির এ হার আশংকাজনক পর্যায়ে উপনীত হওয়ার তা 'টক অব দ্যা কান্ট্রিতে' পরিণত হয়েছে । মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এ পাঁচটি মৌলিক প্রয়োজনের সবগুলোর মূল্যই ঊর্ধ্বমুখী । তবে খাদ্যদ্রব্য যেমন- চাল; ডান, সয়াবিন তেল, লবন, মরিচ, পেয়াজ, রসুন, চিনি, মাছ, ডিম, কাঁচা তরিতরকারি ও শাকসব্জি ইত্যাদি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও প্রত্যেকটির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে বিপর্যয় ডেকে নিয়ে এসেছে। মানুষের দৈনিক ক্যালরী গ্রহণ ও পুষ্টি গ্রহণ কমেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে কয়েকবছর পর আরও বেশি পরিমাণে মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে নেমে যাবে এবং পুরো জাতির মধ্যে চরম পুষ্টিহীনতা বিরাজ করবে। কারণ দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতিতে বহু মানুষ অর্ধাহারে, অনাহারে দিনাতিপাত করছে ।
শুধু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যই নয়, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পরিবহন ভাড়া, ঔষধের দাম, বাড়ী ভাড়া, স্কুল- কলেজের বেতন, জামা-কাপড়ের দাম সবই উর্ধ্বমুখী। পত্রিকা, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে সাধারণ জনগণ প্রতিদিনই দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধির ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে । সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মানব বন্ধন ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তারা দাবী জানাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির লাগামহীন ঘোড়া টেনে ধরার জন্য । সরকারও প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। তবুও আশার রাজ্যে জনগণের বিশ্বাস যে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং তাদের কষ্ট লাঘব হবে । আমরাও তাই কামনা করছি।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]