নিম্নে বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে মুদ্রাস্ফীতির ফলাফল আলোচনা করা হলো ।
১। উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব ৪ মৃদু ও সহনশীল মুদ্রাস্ফীতিতে অবাহৃত সম্পদ নিয়োগের সম্ভাবনা বাড়ে। প্রাপ্তির প্রত্যাশার উপর নির্ভর করে উৎপাদনকারী উৎপাদন বাড়ায়। ফলে পূর্ণ নিয়োগ স্তরে না পৌঁছা পর্যন্ত উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়তে থাকে। কিন্তু অতি মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে তা উৎপাদন ও নিয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে ।
(ক) দাম বৃদ্ধি ফটকা ব্যবসায়কে উৎসাহিত করায় মজুত বৃদ্ধি পায় ফলে প্রকৃত উৎপাদন বিঘ্নিত হয়। (খ) দাম বৃদ্ধির দরুন জনগণের সঞ্চয় হ্রাস ও ভোগ বৃদ্ধি পায় । ফলে পুঁজি গঠন বিঘ্নিত হয় । (গ) মুদ্রাস্ফীতির ফলে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শিল্পে অসন্তোষ সৃষ্টি হলে উৎপাদন হ্রাস পায় । (ঘ) মুদ্রাস্ফীতিতে কালোবাজারি প্রসারিত হয় বলে বিনিয়োগ ও উৎপাদন হ্রাস পায় ।
২। বন্টনের উপর প্রভাব
(ক) শ্রমিক শ্ৰেণী : মুদ্রাস্ফীতির দরুন শ্রমিক শ্রেণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ নির্দিষ্ট স্বল্প মজুরিতে তাদেরকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রি বেশি মূল্যে ক্রয় করতে হয় ।
(খ) কৃষক শ্ৰেণী ঃ মুদ্রাস্ফীতির সময় কৃষি পণ্যের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে স্বল্পকালীন সময়ে যোগান বাড়ানো সম্ভব হয় না । সেজন্য এ সময় বিশেষ করে ধনী কৃষক শ্রেণী উৎপাদিত ফসল অধিক দামে বিক্রি করে লাভবান হয় । আবার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় কারণ তাদেরকে স্বল্প আয়ে খাদ্য সামগ্রী ক্রয় করতে হিমশিম খেতে হয় ।
(গ) বিনিয়োগকারী : মুদ্রাস্ফীতির ফলে শেয়ারে অর্থ বিনিয়োগকারীরা লাভবান হয় । কারণ শেয়ার ও মূলধন সম্পদের মূল্য বাড়ে এবং কোম্পানির লাভ বেশি হওয়ায় শেয়ারের ডিভিডেন্ডের হারও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সরকারি ঋণপত্র ও অর্থ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয় । কারণ তারা যে নির্দিষ্ট হারে সুদ পায়, দাম বাড়ার দরুন সে সুদের প্রকৃতমূল্য কমে যায় ।
(ঘ) উৎপাদক শ্রেণী : দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদক শ্রেণী লাভবান হয় কারণ তাদের উৎপান ও মুনাফা বাড়ে ।
(ঙ) করদাতা ঃ মুদ্রাস্ফীতির ফলে করদাতারা লাভবান হয়। কারণ দাম বৃদ্ধির কারনে কর বাবদ প্রদেয় অর্থের মূল্য কর প্রদানকারীর নিকট কম অনুভূত হয় ।
(চ) ঋণদাতা ও ঋণগ্রহিতা ঃ মুদ্রাস্ফীতির ফলে ঋণদাতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ ফেরত পাওয়া আসল অর্থ দিয়ে পূর্বের সমান দ্রব্য ও সেবা ক্রয় করা যায় না। অপরদিকে, ঋণগ্রহিতা লাভবান হয়। কারণ ঋণগ্রহিতা ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে পণ্যের আকারে কম সম্পদ পরিশোধ করে ।
৩। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর প্রভাব ঃ মুদ্রাস্ফীতির ফলে অন্যান্য পণ্যসহ রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন খরচ ও দাম বৃদ্ধি পায়। ফলে রপ্তানি পণ্যের বৈদেশিক চাহিদা কমে রপ্তানির পরিমাণ কমে যাওয়ার
সম্ভাবনা দেখা দেয় ।
৪ । সামাজিক প্রভাব ঃ স্বল্পমাত্রার মুদ্রাস্ফীতিতে উৎপাদন ও নিয়োগ বৃদ্ধি পেয়ে সামাজিক সমৃদ্ধি দেখা দেয় । কিন্তু অতিমাত্রায় ও অব্যহত মুদ্রাস্ফীতি বিরাজ করলে ধীরে ধীরে সমাজে আয় বৈষম্য সৃষ্টি হয় এবং শ্রেণীগত বিরোধ ও অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করে। জীবনযাত্রার ব্যয় অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় মজুরি বৃদ্ধির দাবি উঠে । শ্রমিক- মালিক বিরোধ প্রকট হয় এবং সার্বিকভাবে সামাজিক অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। কালোবাজারি, দুর্নীতি, অবৈধ পথে আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলতে থাকে এবং সামগ্রিকভাবে সমাজে একটি অসুস্থ পরিবেশ বিরাজ করে ।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, স্বল্পমাত্রার মুদ্রাস্ফীতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির মাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন ও প্রকট হয়ে পড়ে। তখন উৎপাদন, বন্টন ইত্যাদির স্বাভাবিক বিন্যাসে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । সমগ্র অর্থনীতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি হয়। এজন্য সরকারকে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা পয়োজন ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত