মজুরি Wage,মজুরির প্রকারভেদ বাংলাদেশে স্বল্প মজুরির কারণ

মজুরি Wage
সাধারণ অর্থে শ্রমিকের পারিশ্রমিককে মজুরি বলা হয়। অর্থাৎ উৎপাদন কাজে অংশ গ্রহনের জন্য শ্রমিক যে পরিমাণ পারিশ্রমিক পায়, উহাই মজুরি। কিন্তু অর্থনীতিতে মজুরি শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। শ্রমিক তার শারীরিক ও মানসিক শ্রমের বিনিময়ে যে পারিশ্রমিক লাভ করে উহাকে অর্থনীতিতে মজুরি বলা হয়। যেমন- অধ্যাপক, ডাক্তার ও শ্রমিক নিজ নিজ পেশায় থেকে পারিশ্রমিক লাভ করে । এরূপ পারিশ্রমিককে বলা হয় মজুরি ।
অধ্যাপক বেনহাম এর মতে, "চুক্তির অধীনে কাজ করবার জন্য নিয়োগকর্তা শ্রমিককে যে অর্থ প্রদান করে, তাকে মজুরি বলা হয় । সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, শুধু অন্যের অধীনে কাজ করে মজুরি পাওয়া যায় । কিন্তু বাস্তবে স্বাধীনভাবে কাজ করেও মজুরি লাভ করা যায় । কোন শ্রমিক নিজের জমিতে বা কারখানায় কাজ করে মজুরি লাভ করতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে শ্রমিক অন্যের জমিতে বা কারখানায় কাজ করলে যে আর গেত, উহাই হবে তার মুনাফা। সুতরাং শ্রমিক স্বাধীনভাবে বা অন্যের অধীনে কাজ করে মজুরি লাভ করতে পারে ।
মজুরির প্রকারভেদ Types of Wage
মজুরিকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা যায় । যথা ঃ
(ক) আর্থিক মজুরি এবং
(খ) প্রকৃত মজুরি ।
নিম্নে ইহাদের আলোচনা করা হলো ।
(ক) আর্থিক মজুরি ঃ শ্রমিক তার কাজের বিনিময়ে যে অর্থ লাভ করে তাকে আর্থিক মজুরি বলা হয় । যেমন- একজন শ্রমিক কোন কারখানায় কাজ করে মাসিক ৩০০০ টাকা পায় । এই ৩০০০ টাকাই হলো তার আর্থিক মজুরি । অর্থ হলো আর্থিক মজুরির মাপকাঠি ।
(খ) প্রকৃত মজুরি ঃ আর্থিক মজুরি দ্বারা শ্রমিক যে পরিমাণ পণ্যসামগ্রী ক্রয় ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে তাকে প্রকৃত মজুরি বলে । অর্থাৎ শ্রমিক তার কাজের বিনিময়ে যে অর্থ পায় তা দ্বারা সে যে পরিমান সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করতে পারে তাই প্রকৃত মজুরি । ধরি, একজন শ্রমিকের মাসিক আর্থিক মজুরি হলো ৩০০০ টাকা । ইহা ছাড়া সে বিনামূল্যে বাসস্থান, চিকিৎসা প্রভৃতি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে । এরূপ ক্ষেত্রে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি হবে তার আর্থিক মজুরি ৩০০০ টাকার ক্রয়ক্ষমতা এবং প্রাপ্ত সযোগ-সুবিধার সমষ্টির সমান । অর্থাৎ
প্রকৃত মজুরি = আর্থিক মজুরি + অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সুবিধা নিম্নে আর্থিক মজুরি ও প্রকৃত মজুরির মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হলো :
১। একজন শ্রমিক উৎপাদন কাজে অংশ গ্রহণের জন্য যে পরিমান অর্থ লাভ করে উহাই আর্থিক মজুরি । অপরপক্ষে, প্রকৃত মজুরি হলো শ্রমিকের আর্থিক মজুরি ও প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার সমষ্টির সমান ।
২। আর্থিক মজুরি নির্নয়ের মাপকাঠি হলো অর্থ। কিন্তু অর্থ দ্বারা ক্রীত পণ্যসামগ্রী, প্রাপ্ত সুযোগ- সুবিধা ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ভিত্তিতে প্রকৃত মজুরি পরিমাপ করা হয় ।
৩ । শ্রমিকের প্রকৃত অবস্থা তার আর্থিক মজুরি দ্বারা পরিমাপ করা যায় না । প্রকৃত মজুরি দ্বারাই তার সঠিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিচার করা যায়। Adam Smith এর মতে, “কোন শ্রমিক ধনী বা দরিদ্র, কম বা বেশী মজুরি পায় । তাহা আর্থিক মজুরির অনুপাতে নহে প্রকৃত মজুরির অনুপাতেই বিচার করা হয়।
৪। আর্থিক মজুরি দ্বারা শ্রমিকের প্রকৃত জীবনযাত্রার মান বিচার করা যায়না । তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, জীবনযাত্রার মান প্রভৃতি প্রকৃত মজুরির উপর নির্ভর করে। তাই শ্রমিকের নিকট প্রকৃত মজুরিই আকর্ষণীয়। অধ্যাপক মার্শাল যথার্থই বলেছেন, “কোন পেশার প্রতি শ্রমিকের আকর্ষণ উহার আর্থিক আয়ের উপর নির্ভর করে না, ইহা প্রকৃতপক্ষে পেশা হতে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার উপর নির্ভর করে ।"
৩.১২ বাংলাদেশে স্বল্প মজুরির কারণ Causes of Low Wage in Bangladesh
বাংলাদেশে শ্রমের চাহিদার তুলনায় শ্রমের যোগান অনেক বেশি। তাই বাংলাদেশের শ্রমিকদের মাথাপিছু দৈনিক মজুরি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ শ্রমিকদের কম মজুরি দিয়ে থাকে । আবার সরকারেরও শ্রমিকের মজুরি নিয়ে তদারকির অভাব রয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের অদক্ষতাতো রয়েছেই । নিমে বাংলাদেশে শ্রমিকদের স্বল্প মজুরির কারণগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল ।
১। শ্রমের চাহিদার তুলনায় যোগান বেশী ঃ বাংলাদেশে শ্রমিকের চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি। অনেক শ্রমিক বেকার । তাই মালিকপক্ষ কম মজুরি কিংবা নামমাত্র মজুরি দিয়ে শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে ।
২। অনুন্নত ও দরিদ্র অর্থনীতি ঃ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও বৃদ্ধির হার খুবই মন্থর। সেজন্য ইন্দোনেশিয়া, মালেয়শিয়া, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশের চাইতে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। ২০০৫ সালের জরীপ অনুসারে এখনও বাংলাদেশের প্রায় ৪০% মানুষ দরিদ্র। এ জরিপ থেকে বোঝা যায় আমাদের শ্রমিকদের মজুরি কম ।
৩। শ্রমিকদের অদক্ষতা ঃ বাংলাদেশের শ্রমিকদের স্বল্প মজুরির অন্যতম কারণ হল শ্রমিকেরা অদক্ষ এবং তাদের উৎপাদনশীলতা নিম্ন । অশিক্ষা, দারিদ্র, প্রশিক্ষণের অভাব, প্রযুক্তি ব্যবহারের অভাব ইত্যাদি কারণে আমাদের শ্রমিকরা দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। তাই তারা কম মজুরিতেই কাজ করতে বাধ্য হয় ।
৪ । অসংগঠিত শ্রম বাজার ঃ আমাদের শ্রম বাজার অসংগঠিত। বিশেষ করে মজুরি, নিয়োগ, কাজের পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে শ্রমিকদের মাঝে কোন ঐক্য এবং সংগঠিত অবস্থা নেই। আর শ্রমিকদের এ অসংগঠিত অবস্থার সুযোগ নিয়ে মালিকপক্ষ যথাসম্ভব কম মজুরি প্রদান করে ।
৫। শারীরিক দূর্বলতা ঃ বাংলাদেশের মানুষের দৈহিক গঠন অনুসারে তারা শারীরিকভাবে একুট দূর্বল । তার উপর স্বল্প মাথাপিছু আয়ের কারণে তারা প্রয়োজনমত ক্যালরী ও পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে না ৷ এজন্য তাদের কর্মদক্ষতা কম থাকে, মাথাপিছু উৎপাদন কম হয় এবং মাথাপিছু মজুরিও স্বল্প হয় ।
৬। সরকার কর্তৃক ঘোষিত নূন্যতম মজুরি কম ঃ বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকদের জন্য যে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে তা অনেক কম। সরকার ঘোষিত মজুরি কম হবার সুযোগ নিয়ে বেসরকারি মালিকেরাও শ্রমিকদের কম মজুরি দিয়ে থাকে ।
৭। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব ঃ বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বড় দুটি খাত ‘কৃষি' ও ‘শিল্প' এখনও অনুন্নত । তাই কৃষি ও শিল্পখাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত । এজন্য আমাদের মোট শ্রমশক্তির এক তৃতীয়াংশের অধিক বেকার । তাই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় শ্রমিকেরা স্বল্প মজুরি মেনে নিয়ে কাজ করে ।
৮। শ্রমিক শোষণ ঃ শিল্পপতি, পুঁজিপতি শিল্প উদ্যোক্তাদের মূল উদ্দেশ্যই থাকে মুনাফার পাহাড় গড়ে তোলা । আর এ উদ্দেশ্য পূরণের হাতিয়ার হিসেবে তারা শ্রমিকদের কম মজুরি দিয়ে শ্রমিক শোষণ করে থাকে ।
৯। শিশু ও নারী শ্রমিকের আধিক্য : বাংলাদেশের বেশিরভাগ পরিবার দরিদ্র হবার কারণে সংসারের অভাব অনটন দূর করার জন্য ছেলেমেয়েদের স্কুলে না পাঠিয়ে বিভিন্ন কাজে নিয়োগ করে । অনেক


নারী শ্রমিকও কাজের সুযোগ না পেয়ে সস্তায় শ্রম বিক্রি করে। নারী ও শিশু শ্রমিকের আধিক্যের কারণে শ্রমিকদের মাথাপিছু দৈনিক মজুরি হার কম হয় ।
১০। কৃষিতে শ্রমিকের যোগান বেশি ? বাংলাদেশের কৃষিতে শ্রমের যোগান অনেক বেশি। তার কৃষিখাতে বহু শ্রমিক ছদ্ম বেকার, মৌসুমি বেকার কিংবা সাময়িক বেকার থাকে। এ অবস্থায় কৃষিখাতের শ্রমিকেরা কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হয়।
১১। ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ পদ্ধতি ঃ বাংলাদেশে শ্রমিক কর্মচারী নিয়োগের পদ্ধতি যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। কারণে অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিকের পরিবর্তে অদক্ষ শ্রমিকেরা নিয়োগ পায়। তাই অদক্ষ শ্রমিকেরা তাদের মজুরি বাড়ানোর দাবী যেমন করতে পারে না তেমনি শ্রমিকদের অদক্ষতার কারণে মোট উৎপাদন কম হয় তাই শ্রমিকদের মাথাপিছু মজুরিও স্বপ্ন হয়।
১২। শ্রমিকদের ভ্রাম্যমান চরিত্র : বাংলাদেশের কৃষিখাতে অনেক শ্রমিক মৌসুমী বেকারত্বের কারণে কাজের আশায় গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে। আবার কিছুদিন পরে তারা গ্রামে ফিরে যায় । শ্রমিকদের এ ভ্রাম্যমান চরিত্রের কারণে ভাসমান শ্রমিকদের অল্প মজুরিতে অনেক বেশি কাজ করানো যায় ।
উপরিউক্ত বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের শ্রমিকের মাথাপিছু মজুরির হার অত্যন্ত কম। আর তাই আমাদের শ্রমিকদের মাথাপিছু মজুরির হারও অত্যন্ত নিম্ন 1
নোট-২ ঃ ২০০৫-০৬ অর্থবছরের পর হতে বিবিএস শিল্প শ্রমিকের জাতীয় ভোক্তা মূল্যসূচক প্রকাশ করেনি বিধায় ২০০৬-০৭ হতে ২০০৮- ০৯ অর্থবছরসমূহের শিল্প শ্রমিকের জাতীয় ভোক্তা মূল্যসূচক তৎপূর্ববর্তী বছরসমূহের ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) ও শিল্প শ্রমিকের জাতীয় ভোক্তা মূল্যসূচকের অনুপাতের Trend analysis করে নিরূপণ করা হয়েছে এবং এ নিরূপিত শিল্প শ্রমিকের জাতীয় ভোক্তা মূল্যসূচকের ওপর ভিত্তি করে ২০০৬-০৭ হতে ২০০৮-০৯ অর্থবছরসমূহের প্রকৃত মজুরি হার সূচক নিরূপণ করা হয়েছে।]
উক্ত সারণি থেকে দেখা যায় যে, নামিক (nominal) সাধারণ মজুরি হার সূচক ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০১০-১১ অর্থবছরের সূচক পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৬.২৭ শতাংশ । খাতভিত্তিক মজুরির উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নির্মাণ খাত ব্যতীত সকল খাতের মজুরির হার সূচকের প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে । এর মধ্যে কৃষি ও মৎস্য খাতের মজুরি সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ১১.২০ শতাংশ ও ৯.০৬ শতাংশ । এ দুই খাতের তুলনায় শিল্প ও নির্মাণ খাতে মজুরি সূচক বৃদ্ধির হার কিছুটা কম । উল্লেখ্য, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে শিল্প ও নির্মাণ খাতে মজুরি সূচক বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৯.০৫ শতাংশ ও ৭.২০ শতাংশ ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]