রাজস্ব নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য Aims and Objectives of Fiscal Policy

রাজস্ব নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য Aims and Objectives of Fiscal Policy
সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সরকার রাজস্বনীতি গ্রহণ করে। নিয়ে রাজস্ব নীতির প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা করা হলো ।
১। পূর্ণ কর্মসংস্থান স্তর অর্জন করা ঃ সরকারের রাজস্ব নীতির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো পূৰ্ণ কর্মসংস্থান স্তর অর্জন করা । প্রতিটি দেশের সরকার তার আয়- ব্যয়নীতি এমনভাবে প্রণয়ন করতে চেষ্টা করে যেন পূর্ণ কর্মসংস্থান অর্জন করা যায় এবং সেই পূর্ণ কর্মসংস্থান স্তর ধরে রাখা যায় ।
২। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন : সময়ের পরিবর্তনে অর্থনীতিতে কখনও মুদ্রাস্ফীতি আবার কখনও মন্দাবস্থা দেখা দেয়- তথা বাণিজ্য চক্রের উদ্ভব ঘটে । বাণিজ্য চক্রজনিত উঠানামা রোধ করে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা রাজস্ব নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য ।
৩। মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ঃ মূল্যস্তরের দ্রুত হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলে সমাজে নানা রকম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় । এজন্য সরকার রাজস্ব নীতির মাধ্যমে মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চেষ্টা করেন ।
৪। সম্পদের সুষম বণ্টন : সমাজের আয় বণ্টনের বৈষম্য তথা ধনী-গরীবের ব্যবধার কমানো সরকারের দায়িত্ব । এই উদ্দেশ্যে সরকার ধনীদের উপর প্রগতিশীল হারে কর বসিয়ে গরীবদের কল্যাণে তা ব্যয় করতে পারে । তাহলে ধনী ও গরীবের আয় ব্যবধান কমে আসবে এবং অর্থনীতিকে সুষম বন্টনের দিয়ে নিয়ে যাবে ।
৫। সম্পদের কাম্য ব্যবহার ঃ সরকারের রাজস্ব নীতির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো সমাজের সকল সম্পদের (মানব সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ, খনিজ সম্পদ, শক্তি সম্পদ ইত্যাদি) যথাযথ দক্ষতাপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা। সরকার রাজস্ব নীতির মাধ্যমে উৎপাদনের উপকরণগুলোকে অনুৎপাদনশীল খাত থেকে উৎপাদনশীল খাতে নিয়োগের জন্য উৎসাহ প্রদান করতে পারে ।
৬। সামাজিক নিরাপত্তা ঃ সরকার রাজস্ব নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি যেমন- বেকারভাতা, দুঃস্ত মহিলা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্কভাতা ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে ।
৭। অর্থনৈতিক উন্নয়ন : রাজস্ব নীতির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা । অনুন্নত দেশসমূহে প্রচুর অব্যবহৃত প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। এসব অব্যবহৃত প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব ।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় রাজস্ব নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই তবে সকল উদ্দেশ্য সমান গুরুত্ব বহণ করে । উপরোক্ত উদ্দেশ্যসমূহ পূরণ করা সম্ভব হলে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব
রাজস্ব নীতির হাতিয়ার Instruments of Fiscal Policy
সরকার যে সকল নীতি, উপকরণ; পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে তার আয়-ব্যয় নীতি পরিচালনা করে তাকে বলা হয় রাজস্ব নীতির হাতিয়ার । নিমে রাজস্ব নীতির প্রধান প্রধান হাতিয়ারসমূহ আলোচনা করা হলো ।
১। সরকারি ব্যয় (Public expenditure) : সরকার সাধারণভাবে ও উন্নয়নের প্রয়োজনে নানা ধরনের পণ্য সামগ্রী বিপুল পরিমাণে ক্রয় করে থাকে । তাছাড়া বয়স্ক ভাতা, বেকার ভাতা, পেনশন, সরকারি ঋণের সুদ ইত্যাদি হস্তান্তরমূলক ব্যয় করতে হয় । তাছাড়া আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি ও যুব উন্নয়নের জন্য সরকারকে প্রতি বছর বাজেটের একটা বিশাল অর্থ ব্যয় করতে হয়। সরকারের এসব ব্যয় দেশের উৎপাদন, আয় ও কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করে । এছাড়া বাণিজ্য চক্র রোধে তথা মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রসংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সরকারের এ সকল ব্যয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
২। কর রাজস্ব (Tax revenue) : রাজস্ব নীতির অন্যতম হাতিয়ার হলো কর । সরকারের রাজস্ব আয়ের বৃহৎ অংশ আসে কর থেকে। সরকারের কর নীতি জনসাধারণের ভোগ, সঞ্চয়, উৎপাদন, আয়, নিয়োগ ও সম্পদ বণ্টনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে । অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য করে সরকার কখনও জনগণের উপর কর হার বাড়ায় আবার কখনও কর হার কমায় ।
৩। সরকারি ঋণ (Public debt) : অনেক সময় সরকার তার প্রয়োজনে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কিংবা বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। সরকার যদি আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করে তাহলে অর্থনীতিতে আয়, নিয়োগ, উৎপাদন ও দামস্তরের উপর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে । আর যদি সরকার বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করে তাহলে দেশের মূলধনের যোগান বৃদ্ধি তথা উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থায়নে সহায়ক হয় । এর ফলে অর্থনীতিতে উৎপাদন, আয়, নিয়োগ ও দামস্তরের উপর অনুকূল প্রভাব পড়ে ।
৪। ভর্তুকী (Subsidy) : রাজস্ব নীতির আরেকটি হাতিয়ার হলো ভর্তুকী । উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকী প্রদান করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পারে এবং প্রয়োজনের সময় এ ধরনের ভর্তুকী প্রত্যাহার করতে পারেন ।
৫। বাধ্যতামূলক সঞ্চয় (Forced saving) : বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ও অনেক সময় রাজস্ব নীতির হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে । সরকার প্রয়োজন মনে করলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পুরো বেতন অর্থের মাধ্যমে না দিয়ে আংশিক ঋণপত্রের মাধ্যমে দিতে পারেন । অথবা বাধ্যতামূলকভাবে বেতনের একাংশ কল্যাণ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে রাখতে পারেন। যার ফলে অর্থনীতিতে উৎপাদন, আয় ও নিয়োগের উপর প্রভাব পড়বে ।
৬। নতুন কর (New tax) : সরকার অনেক সময় দেশের বিশেষ প্রয়োজনে নতুন কর প্রবর্তন করতে পারে । এরূপ কর থেকে সংগৃহীত অর্থ দেশের জনগণের উপর প্রভাব বিস্তার করে ।
৭। হস্তান্তর ব্যয় (Transfer payment) : সরকার হস্তান্তর ব্যয়ের মাধ্যমে রাজস্ব কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন। দেশে কল্যাণমূলক যেমন- স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য ইত্যাদির উন্নয়নের জন্য ব্যয় করে থাকে। তবে মুদ্রাস্ফীতির সময় এ ধরনের ব্যয় সংকোচনমূলক এবং মুদ্রাসংকোচনের সময় সম্প্রসারণমূলক হয়ে থাকে ।
উপরোক্ত ব্যবস্থাগুলো বা হাতিয়ারগুলোর মাধ্যমেই সাধারণত একটি দেশের সরকার তার রাজস্ব নীতির বাস্তবায়ন করে থাকে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]