অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাজস্ব নীতির ভূমিকা

অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাজস্ব নীতির ভূমিকা Role of Fiscal Policy in Economic Development
অর্থনৈতিক উন্নয়নই হলো অনুন্নত দেশসমূহের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এ উদ্দেশ্যে এ সমস্ত দেশের অব্যবহৃত প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের পূর্ণ ব্যবহার একান্ত আবশ্যক। সুতরাং দেশের অনিয়োজিত প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের দ্বারা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করাই অনুন্নত দেশের রাজস্ব নীতির প্রধান লক্ষ্য। নিম্ন বাংলাদেশের মত উন্নয়শীল দেশে রাজস্ব নীতির ভূমিকা ব্যাখ্যা করা হলো ।
১। মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি ঃ অনুন্নতদেশের রাজস্ব নীতি এমনভাবে হওয়া উচিত যাতে জনগণের সঞ্চয় ক্ষমতা ও মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি পায় । এ উদ্দেশ্যে সরকার এমনভাবে করনীতি অনুসরণ করে যাতে জনগণের ভোগব্যয় হ্রাস পায় এবং সঞ্চয়ে উৎসাহিত হয়। তাই অনুন্নত দেশে আয়করের চেয়ে বেশি পরিমাণে ব্যয় কর ধার্য্য করা উচিত । কারণ ব্যয়কর বাড়লে জনগণের ভোগ প্রবণতা হ্রাস পায় এবং সঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । এভাবে সরকার কর ব্যবস্থার মাধ্যমে সঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করে মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি করে ।
২। সম্পদের কাম্য ব্যবহার ঃ অনুন্নত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। সরকার রাজস্ব নীতির সাহায্যে প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে অনুৎপাদনশীল খাত থেকে উৎপাদনশীল খাতে নিয়োগ করতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় খাতে সম্পদের নিয়োগ কমিয়ে আনার জন্য সে সকল খাতে কর বৃদ্ধি করা উচিত। পক্ষান্তরে, প্রয়োজনীয় খাতে সম্পদের বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য এ সকল খাতের কর হ্রাস এমনকি প্রয়োজনবোধে ভর্তুকীর ব্যবস্থা করা উচিত ।
৩। পূর্ণ কর্মসংস্থান স্তর অর্জন : অনুন্নত দেশের সরকারের আয়- ব্যয় নীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে বেকারত্ব দূরকরে পূর্ণ কর্মসংস্থানের পথে অগ্রসর হওয়া। এই লক্ষ্যে জনশক্তি, মানবসম্পদ, জনসাধারণের সম্ভাব্য আয়স্তর, বেসরকারি ব্যয় ও বিনিয়োগ ইত্যাদি সম্পর্কে সরকারকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয় এবং তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহ ও ব্যয় করতে হয় । এভাবে সরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে পূর্ণ কর্মসংস্থান অর্জন করতে পারে ।
৪। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ : অনুন্নত দেশে মুদ্রাস্ফীতি একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয় । মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রনের জন্য সরকার জনসাধারণের উপর অধিক হারে কর আরোপ, নতুন নতুন করের প্রবর্তন ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। ফলে দ্রব্য ও সেবা সামগ্রীর চাহিদা কমে এবং দামস্তর কমে। তার মাধ্যমে মুদ্রস্ফীতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রিত হয়।
৫। আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো সৃষ্টি ঃ অনুন্নত দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো খুবই দূর্বল । শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ইত্যাদির উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো মজবুত না করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা যায় না। তাছাড়া অবকাঠামো খাতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ দরকার কিন্তু তা থেকে মুনাফার প্রত্যাশা খুবই কম। তাই বেসরকারি খাত আর্থ- সামাজিক অবকাঠামোর উন্নয়নে বিনিয়োগ করবে না। এজন্য আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর উন্নয়নে সরকারকে প্রচুর পরিমাণে ব্যয় করতে হয় ।
৬। আয়বৈষম্য রোধ ও সম্পদের সুষম বণ্টন : ধনী গরীবের বৈষম্য অর্থাৎ আয় বন্টনে অসমতা অনুন্নতদেশে একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য কিন্তু আয়বন্টনে বৈষম্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে কাম্য হতে পারে না । সরকারের দায়িত্ব হলো আয় বৈষম্য কমিয়ে আনা । তাই সরকার ধনীদের উপর প্রগতিশীল হারে কর বসিয়ে সংগৃহীত কর রাজস্ব গরীবদের কল্যাণে ব্যয় করলে একদিকে ধনীদের আয় কমে আসবে এবং গরীবদের আয় বাড়তে থাকবে। এভাবে ধীরে ধীরে আয়বৈষম্য দ্ররীভূত এবং সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হবে।
৭। আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করা : অনুন্নত দেশে দেখা যায় যে, একটা অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট উন্নত এবং অন্য অঞ্চল অপেক্ষাকৃত অনুন্নত, কিন্তু সুষম উন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা সম্ভব নয় । তাই অনুন্নত দেশের সরকার অনগ্রসর অঞ্চলের জন্য বিশেষ বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়ে এগিয়ে নিতে পারে । যার মাধ্যমে দেশের সকল অঞ্চলে সুষম উন্নয়ন প্রতিষ্ঠিত হবে ।
৮। সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি : অনুন্নত দেশের জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো অত্যন্ত দূর্বল। বিশেষ করে প্রচুর লোক বেকার, দুঃস্ত, অসহায়, বিংবা, পঙ্গু এবং বয়স্ক । এদের উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের ভাতার যেমন- বয়স্ক ভাতা, এতিম ও দুঃস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা, বেকার ভাতা ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে পারে। তাহলে এ সকল অসহায় মানুষ ও সামাজিক নিরাপত্তা বোধ করবে; অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না ।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, অনুন্নত দেশসমূহে আভ্যন্তরীণ সঞ্চয় বৃদ্ধি ও মূলধন গঠন, মূল্যস্তরের অস্বাভাবিক উঠানামা রোধ, আয় ও সম্পদের সুসম বণ্টন ও আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করাই রাজস্ব নীতির মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]