মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাজস্ব নীতির গুরুত্ব Importance of Fiscal Policy to Control Inflation

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাজস্ব নীতির গুরুত্ব Importance of Fiscal Policy to Control Inflation
ক্রমাগত দামস্তর বৃদ্ধির প্রবণতাকে বলা হয় মুদ্রস্ফীতি । মুদ্রাস্ফীতি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করে; তাই মুদ্রাস্ফীতি অর্থনৈতিক ভাবে কাম্য নয় । এজন্য মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার । মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকার সংকোচনমূলক রাজস্ব নীতি গ্রহণ করবে। এর মাধ্যমে সামগ্রিক চাহিদা কমবে, দামস্তর কমবে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হবে। সরকার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নিম্নোক্ত দু'ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে । যথাঃ
(ক) সরকার ব্যয় (উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন) কমাতে পারে এবং (খ) কর হার বৃদ্ধি করতে পারে । যদি সরকার ব্যয় কমায় (AG <0) তাহলে অর্থনীতিতে আয় প্রবাহ কমে। এর ফলে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে, পণ্য ও সেবার ভোগ কমে, বিনিয়োগ কমে এবং সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পায় যার ফলে দামস্তর কমে আসে । এর ফলে চূড়ান্তভাবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার যদি সরকার কর হার বৃদ্ধি (AT > 0 করে তাহলে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে এবং সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পায়। যার ফলে দামস্তর কমে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হয়। নিম্নের চিত্রে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাজস্ব নীতির কার্যকারীতা ব্যাখ্যা করা হলো ।
চিত্রের OX অক্ষে আয়স্তর এবং OY অক্ষে সুদের হার ধরা হয়েছে। IS ও LM রেখা প্রাথমিকভাবে A বিন্দুতে ছেদ করে যেখানে ভারসাম্য আয়স্তর OY, এবং সুদের হার 10 । ধরা যাক্ Yo আয়ন্তরে মুদ্রাস্ফীতি রয়েছে। এখন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যদি সরকার ব্যয় কমায় কিংবা কর হার বৃদ্ধি করে অর্থাৎ সংকোচনমূলক রাজস্ব নীতি গ্রহণ করে তাহলে সামগ্রিক চাহিদা কমে এবং IS রেখা নীচের দিকে স্থান পরিবর্তন করে IS ́ হবে। নতুন ভারসাম্য হবে B বিন্দুতে। যেখানে সুদের হার ro থেকে কমে 11 এবং আয়স্তর Yo থেকে কমে Yi হবে। আয়স্তর কমলে সামগ্রিক চাহিদা কমবে, দামস্তর কমবে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হবে । এভাবে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বিরাজ করলে যদি সরকার ব্যয় হ্রাস কিংবা কর হার বৃদ্ধির মাধ্যম সংকোচনমূলক রাজস্ব নীতি গ্রহণ করে তাহলে আয়স্তর কমিয়ে দামস্তর কমানো এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত করা সম্ভব ।
বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে রাজস্ব নীতির সীমবদ্ধতা • Limitations of Fiscal Policy in the Developing Country like Bangladesh বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর দূর্বলতা, সামাজিক বিন্যাস ও প্রশাসনিক দূর্বলতা এবং সুশাসনের অভাবে রাজস্ব নীতির কার্যকারীতার যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নিম্নে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে রাজস্ব নীতির কতিপয় সীমাবদ্ধতা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো ।
১। অনুৎপাদনশীল খাতে, সরকারী ব্যয় : রাজনৈতিক কারণে সরকারকে অনেক সময় অনুৎপাদনশীল খাতে প্রচুর ব্যয় করতে হয় । প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই ব্যয়ের কারণে রাজস্ব নীতির প্রয়োগে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হয় না ।
২। প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা : বাংলাদেশে সরকারীভাবে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনেক সময় লেগে যায় তাই রাজস্ব নীতির কার্যকারীতা যথেষ্ট সীমাবদ্ধ ।
৩। হস্তান্তর ব্যয় ও ভর্তুকী কর্মসূচি সফল হয় না : বাংলাদেশের দরিদ্র জনসাধারণের জন্য সরকারকে পেনশন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে হস্তান্তর ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। উৎপাদন ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া হয় কিন্তু তার মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের প্রচেষ্টা ব্যাহত হয় ।
৪। ঘাটতি অর্থসংস্থানের উপর নির্ভরশীলতা ঃ বাংলাদেশ সরকারকে ঘাটতি অর্থসংস্থানের উপর নির্ভর করতে হয় । অনেক সময় নতুন নোট ছাপিয়ে সরকার ব্যয় নির্বাহের চেষ্টা করে । এমতাবস্থায় মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় ।
৫। পূর্ত কর্মসূচি দূর্বল ঃ বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি অনেক দূর্বল। প্রচুর বেকারত্ব বিদ্যমান। এই বিশাল বেকারত্ব দূর করার জন্য সরকারীভাবে যে পূর্ত কর্মসূচী গ্রহণ করা দরকার তা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না। সরকার যে পূর্ত কর্মসূচী গ্রহণ করে তার দ্বারা মৌসুমী বেকারত্ব হয়তো দূর করা সম্ভব কিন্তু সার্বিক বেকারত্ব দূর করা সম্ভব নয় ।
৬। সংগৃহীত করের পরিমাণ স্বল্প ঃ বাংলাদেশে সরকারের সংগৃহীত কর রাজস্বের পরিমাণ অনের কম । উন্নয়ন ব্যয় পরিচালনা করার জন্য এটা যথেষ্ট নয় । তাই রাজস্ব নীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না
৭। প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব ঃ বাংলাদেশে প্রচুর প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব রয়েছে । তাই সরকারী ব্যয় বাড়ালে ঋণর প্রক্রিয়ায় যেভাবে আয় ও নিয়োগ বাড়ার কথা সেই পরিমাণে বাড়ে না । গুণক প্রক্রিয়া কার্যকর হবার পথে প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব একটি বড় অন্তরায় হিসাবে কাজ করে ।
সুতরাং সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, বাংলাদেশে রাজস্ব নীতির কার্যকারীতা যথেষ্ট সীমিত। তা সত্ত্বেও সম্পদের কাম্য বণ্টন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন ইত্যাদি উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার রাজস্ব নীতি গ্রহণ করে থাকে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]