বাংলাদেশ সরকারের আয়ের উৎস
Sources of Revenue of Bangladesh Government

সরকারী আয় Government Receipts
জাতীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে যে আয় সংগ্রহ করে তাকে সরকারি আয় বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, সরকার তার যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য মোট যে অর্থের সংস্থান করে তাকে সরকারী আয় বলে । বাংলাদেশের সরকারি আয় তথা রাজস্ব নীতির মূল লক্ষ্য হল টেকসই মাত্রার (Sustainable level) বাজেট ঘাটতির পাশাপাশি সরকারি ব্যয়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও তা সুষ্ঠুখাতে ব্যবহার এবং অধিক পরিমাণে রাজস্ব সংগ্রহের মাধ্যমে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং দারিদ্র বিমোচন । সরকার যেসব উৎস থেকে আয় সংগ্রহ করে তাকে প্রধানত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় । যথাঃ (ক) কর-রাজস্ব (Tax revenue) এবং (খ) কর-বহির্ভূত রাজস্ব (Non-tax revenue)।
কর রাজস্ব বাবদ সংগৃহীত অর্থই সরকারি আয়ের প্রধান উৎস। কর রাজস্ব প্রধানত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ এ দু'ধরনের করের সমন্বয়ে গঠিত। এবং এ খাত থেকে সরকারের মোট আয়ের সিংহভাগ (৮০% এর বেশী) সংগৃহীত হয় । অবশিষ্ট রাজস্ব সংগৃহীত হয় কর-বহির্ভূত বিভিন্ন খাতের আদায় (ফি, মাসুল ইত্যাদি) থেকে। বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের স্তর/পরিস্থিতি তুলনামূলক অবস্থান নির্ণয়ে রাজস্ব সংগ্রহের হার একটি অন্যতম স্বীকৃত নির্ণায়ক রুপে পরিগনিত হয় । যে দেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালী সেখানকার রাজস্ব সংগ্রহের হারও তত বেশী । আমাদের দেশে মোট রাজস্ব-দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) অনুপাত ২০০৫-০৬ অর্থবছরের ৯.৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১১.১৬ শতাংশে দাঁড়ায় । ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ হার আরো বৃদ্ধি পেয়ে ১৪.০৮ শতাংশে দাঁড়াবে মর্মে প্রাক্কলন করা হয়েছে । রাজস্ব আদায়ের এ ধারা থেকে দেখা যাচ্ছে য়ে, ররাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু বৃদ্ধির হার স্বল্প এবং গতি ধীর। বিগত কয়েকটি অর্থবছরের কর ও কর-বহির্ভূত রাজস্ব এবং রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত নিম্নের সারণীতে দেখানো হল । ।
বাংলাদেশ সরকারের আয়ের উৎস Sources of Revenue of Bangladesh Government
বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে রাজস্ব আদায় করে । সরকারি আয়ের উৎসকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা যায় । যথাঃ
(ক) কর হতে আয় বা কর রাজস্ব ।
(খ) কর বহির্ভূত আয় বা অ-কর রাজস্ব ।
(ক) কর হতে আয় বা কর রাজস্ব (Tax Revenue ) : সরকারের নিকট হতে প্রত্যক্ষ কোন সুযোগ-সুবিধা বা সেবা ও দ্রব্যসামগ্রী প্রত্যাশা না করে ধার্যকৃত যে অর্থ বাধ্যতামূলকভাবে জনসাধারন সরকারকে প্রদান করে থাকে, তাকে কর বলা হয় । করদাতা করের বিনিময়ে সরকারের নিকট সরাসরি কোন সুবিধা দাবি করতে পারে না। সরকার দেশের কল্যাণার্থে কর আরোপ করে। করের পরিবর্তে সরকার করদাতাকে কোন নির্দিষ্ট সুবিধা পৃথকভাবে দিতে পারে না। সরকার দু প্রকারের কর আদায় করে । যেমন- প্রত্যক্ষ কর ও পরোক্ষ কর ।
১। প্রত্যক্ষ কর ঃ যে করের আপাত ভার ও চুড়ান্ত ভার কর দাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হয়, তাকে প্রত্যক্ষ কর বলে । যেমন- আয়কর, দানকর, সম্পদকর, উত্তরাধিকার কর ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করের উদাহরন । উন্নত দেশের সরকারি আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো প্রত্যক্ষ কর। ঐসব দেশের জনগন প্রত্যক্ষ কর প্রদানকে নাগরিক অধিকার মনে করে এবং এতে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ।
২ । পরোক্ষ কর ঃ যে করের আপাতভার বা করঘাত করারোপিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এবং করপাত বা করের চুড়ান্তভার অন্যকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বহন করতে হয়, তাকে পরোক্ষ কর বলে । বিক্রয়কর দ্রব্যকর, আমোদপ্রমোদকর, মূল্য সংযোজন কর (VAT), আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ইত্যাদি পরোক্ষ করের উদাহরন । সাধারণত বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মোট করের মধ্যে পরোক্ষ করের অনুপাত বেশি । প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ বেশি হলে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে বলে জনগণের উপর অধিক হারে পরোক্ষ করের বোঝা চাপানো হয় ।
(খ) কর বহির্ভূত আয় বা অ-কর রাজস্ব (Non - Tax Revenue )
১। ফি ৪ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বিশেষ সুযোগ সুবিধা লাভের বিনিময়ে সরকারকে যে অর্থ দেওয়া হয়, তাকে ফি বলে। যেমন- সম্পত্তি ক্রয় করলে রেজিস্ট্রি ফি, মামলা করলে কোর্ট ফি এবং রেডিও, টেলিভিশন, বন্দুক ইত্যাদি ব্যবহার করলে লাইসেন্স ফি দিতে হয় ।
২। বাণিজ্যিক আয় ও সরকার জনসাধারণের মত অনেক ধরনের বাণিজ্যিক কাজকর্ম পরিচালনা করে। যেমন- ডাক, বেতার, টেলিভিশন, বিমান, রেল, ব্যাংক, বীমা, বিক্রয় কেন্দ্র ইত্যাদি সরকারের বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার প্রচুর আয় করে ।
৩। সরকারি সম্পদ হতে আয় ৪ সরকারের অধীনে খনিজ, বনজ, জলজ, হাওর, খাস জমি ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদ ব্যবহার কিংবা বিক্রয় করে সরকার প্রচুর রাজস্ব লাভ করে ।
৪। বিশেষ কর ৪ সরকার উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে কোন স্থানের গুরুত্ব বাড়লে সে এলাকায় সম্পত্তির উপর যে কর আরোপ করা হয় তাকে বিশেষ কর বলে। সরকারি ব্যয়ে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায় কেন্দ্র, অফিস আদালত ইত্যাদি স্থাপন করার ফলে পার্শ্ববর্তী এলাকায় সম্পত্তির মূল্য অনেক গুণ বেড়ে যায় এবং মালিক অতিরিক্ত মূল্য ভোগ করে । এ অতিরিক্ত মূল্যের উপরে আরোপিত করই হলো বিশেষ কর । ৫। জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ ঃ দেশের আইন অমান্যকারী এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিনষ্টকারীদের উপর দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতসমূহ জরিমানা ও শাস্তিমূলক অর্থদণ্ড ধার্য করে। এ জরিমানা ও অর্থদপ্ত সরকারের আয়ের অন্তর্ভূক্ত ।
৬। সরকারি ঋণ ঃ অনেক সময় সরকার বিভিন্ন প্রকারের ঋণপত্র বিক্রি করে দেশের অভ্যন্তর হতে অর্থ সংগ্রহ করে । প্রয়োজনীয় অর্থ সংগৃহীত না হলে সরকার বিশ্বের অন্যান্য দেশ হতে ঋণ গ্রহণ করে। অনুন্নত দেশগুলো উন্নত দেশ হতে প্রচুর ঋণ লাভ করে । ঘাটতি বাজেটের ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ।
৭। নোট ইস্যু ঃ সরকার নোট ইস্যুর মাধ্যমে আয় করতে পারে । প্রচলিত উৎসের আয় দ্বারা রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের সংকুলান করা সম্ভব না হলে সরকার নোট ইস্যুর মাধ্যমে ব্যয় নির্বাহ করে ।
৮। ঋণের সুদ : সরকার দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে যে ঋণ প্রদান করে তার সুদ পেয়ে থাকে । ঋণ থেকে প্রাপ্ত এ ধরনের সুদও সরকারের আয়ের অন্তর্ভূক্ত ।
৯। অন্যান্য উৎস : সরকার অনেক সময় দেশী এবং বিদেশী উৎস হতে সাহায্য, দান, উপঢৌকন এবং যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রচুর অর্থ পেয়ে থাকে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]