সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনা সরকারী ঋণের অর্থনৈতিক প্রভাবসমূহ

সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনা Public Debt Management
সরকার সাধারণত কর ও অন্যান্য স্বাভাবিক উৎস হতে প্রাপ্ত আয় দ্বারা ব্যয় নির্বাহ করে থাকে । কিন্তু অনেক সময় স্বাভাবিক উৎস হতে প্রাপ্ত আয় সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত হয় না। তাই সরকার ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হয় । সরকার কর্তৃক গৃহীত এই ঋণকে সরকারী ঋণ বলে। ব্যাপক অর্থে, সরকারী রাজস্ব বা আয় বলতে সরকারের সব ধরনের আয়কে বোঝায়। যেমন-' সরকার কোন বছর ঋণ গ্রহণ করলে তা সে বছর সরকারের আয় হিসাবে বিবেচিত হয়। এ অর্থে সরকারের গৃহীত ঋণ সরকারী আয়ের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু দীর্ঘকালীন সময়ের বিবেচনায় সরকারী ঋণকে সরকারের আয়ের পর্যায়ভূক্ত করা যায় না। কারণ, কর, ফি ইত্যাদি বাবদ সরকারকে ফেরৎ দিতে হয় না । কিন্তু ঋণ বাবদ সরকার যে অর্থ গ্রহণ করে তা শর্ত মোতাবেক ঋণদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দিতে হয়। কাজেই দীর্ঘকালীন সময়ের বিবেচনায় ঋণ সরকারী আয় হিসাবে ধরা যায় না। তবে গ্রহণকালীন বছরে এটি সরকারের আয় হিসাবে বিবেচনা করা যায় । সরকার দেশ ও বিদেশ উভয় ক্ষেত্র থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। সাধারণত সিকিউরিটি বিক্রয় ও চুক্তির মাধ্যমে সরকারী ঋণ গ্রহণ করা হয় । এই ঋণ সরকারী আয়ের একটা বড় উৎস। তবে প্রয়োজনের তুলনায় ঋণের পরিমাণ যেন খুব বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত ।
উৎপাদনমুখী গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ঘাটতি হ্রাস, জন দুর্ভোগ লাঘবের জন্য অত্যাবশ্যক সেবা সরবরাহ, আঞ্চলিক বৈষম্য লাঘব করে ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পূরণ, অপ্রত্যাশিত জরুরি ব্যয় মোকাবেলা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যয় নির্বাহ ইত্যাদি কারণে সরকার কর্তৃক বর্ধিত ব্যয়ের ফলে সৃষ্ট বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকার ঋণ গ্রহণ করে। সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক এই উভয় উৎস থেকে ঋণ
সরকারী ঋণের অর্থনৈতিক প্রভাবসমূহ The Economic Consequences of Government Debt
সরকারী ঋণ অর্থনীতির উপর বিভিন্ন প্রভাব বিস্তার করে। এ প্রভাব ঋণের উৎস, পরিমাণ, উদ্দেশ্য; সুদের হার প্রভৃতি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। ঋণের সামগ্রীক প্রভাব দুটো দৃষ্টিতে দেখা যায়। যথাঃ ব্যয় নির্বাহের পদ্ধতি হিসাবে ঋণ এবং বর্তমান ঋণের ফলাফল। এসব ফলাফল/ প্রভাব নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১। অর্থের যোগানের উপর প্রভাব : সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করলে অর্থের সরবরাহ বৃদ্ধি পায় ও মুদ্রাস্ফীতি দেখা যায়। কারণ, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ সরকারী ঋণ পত্রের বিনিময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ঋণ পত্র রিজার্ভের অংশ হিসাবে ধরে নিয়ে সেগুলোর ভিত্তিতে কাগজী মুদ্রা প্রচলন করতে পারে ।
২। ভোগের উপর প্রভাব : বাণ গ্রহণের ফলে জনসাধারণের ভোগের পরিমাণ তেমন কমে না। এর প্রধান কারণ তার অতীতের সঞ্চিত অর্থ দ্বারা সরকারী বহু ক্রয় করে। তাই বর্তমান ভোগ কমার সম্ভা থাকে না। দ্বিতীয়তঃ সরকারী বণ্ড ক্রয় করার ফলে তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি পায়। ফলে তারা ভোগদ্রব্য ক্রয়ের জন্য অধিক ব্যয় করতে পারে। তবে যুদ্ধের মত জরুরী অবস্থার সময়ে সরকার বাধ্যতামূলকভাবে খাণ গ্রহণ করলে ব্যক্তিগত ভোগব্যয় কমে যেতে পারে ।
৩। বিনিয়োগের উপর প্রভাব ঃ সরকার কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের অতিরিক্ত রিজার্ভ থেকে ঋণ গ্রহণ করলে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অনটন হয় না। কারণ তারা বণ্ডের ভিত্তিতে মুদ্রা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় যতি অতিরিক্ত রিজার্ভ না থাকে তাহলে বিনিয়োগের পরিমাণ হ্রাস পেতে পারে। আবার, জনগণের নিকট থেকে যদি ঋণ গ্রহণ করা হয় তবে বিনিয়োগের পরিমাণ হ্রাসের সম্ভাবনা বেশি। কারণ, জনগণ সরকারী বও ও সিকিউরিটি ক্রয় করলে তাদের বিনিয়োগযোগ্য অর্থ কমে যায়। এতে বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। তবে সরকারের দৃঢ় ইচ্ছার ফলে বাজারে সুদের হার কম হলে মূলধনের ব্যয় কম হয় এবং বিনিয়োগ বাড়ে ।
৪। তারল্য ঃ সরকারী ঋণ বন্ড মালিকদের শুধু ব্যক্তিগত সম্পদই বৃদ্ধি করে না বরং তাদের হাতে তরল সম্পদ দিয়ে তাদেরকে দ্রুত ব্যয় বাড়াতে সাহায্য করে । বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহও বন্ড বিক্রি করে যে কোন সময় রিজার্ভের পরিমাণ বাড়াতে পারে এবং এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতি এড়িয়ে যেতে পারে । ৫। আয় বন্টনের উপর প্রভাব ঃ সরকারী ঋণ আয় বণ্টনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে । ঋণ গ্রহণ করা মানেই সুদ প্রদান করা। সুদের অর্থ সংগ্রহ করতে যেয়ে সরকারকে ধনী-দরিদ্র সবার উপর কর ধার্য করতে হয় । করের এই অর্থ সুদ হিসাবে কিন্তু ধনীদের হাতে যায়। কারণ ধনীরাই সাধারণত বণ্ড ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারকে ঋণ দিয়ে থাকে। এভাবে সমাজের আয় বন্টনের বৈষম্য সৃষ্টি হয়। তবে সরকার যদি প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে দরিদ্রদের কল্যাণে তা ব্যয় করে তবে আয় বন্টনে বৈষম্য হ্রাস পায় । D.C. Miller দেখিয়েছেন যে, আমেরিকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন আয়ের লোকেরা কর হিসাবে যা দেয় তার চেয়ে সুদ হিসাবে বেশি পায় । কিন্তু মধ্যবর্তী আয়ের লোকেরা যা পায় তার চেয়ে কর হিসাবে বেশি দিয়ে থাকে ।
৬। নিয়োগের উপর প্রভাব : সরকার ঋণের অর্থ কিভাবে ব্যয় করে তার উপর উৎপাদনের উপাদান সমূহের নিয়োগ নির্ভর করে। সরকার ঋণের অর্থ যদি উন্নয়নমূলক কাজে বিনিয়োগ করে তাবে উপাদানগুলো ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে যেভাবে ব্যবহৃত হতে পারত তার চেয়ে আরও ভালভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু তা না করে সরকার ঋণের অর্থ যদি যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ব্যয় করে তবে সম্পদের অপচয় হয় । এভাবে দেখা যায় যে, সরকারী ঋণের ব্যবহার উপাদানসমূহের নিয়োগের উপর বেশ সুদূরপ্রসারী ফল সৃষ্টি করে ।
৭ । মূল্যস্তরের উপর প্রভাব ঃ মূল্যস্তরের উপর সরকারী ঋণের ফল দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে - (ক) অর্থ সরবরাহ এবং (খ) অর্থনৈতিক কার্যকলাপ । সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করলে অর্থের যোগান ও মূল্যস্তর বৃদ্ধি পায় । আবার ব্যক্তি ও অন্যান্য অ-ব্যাংক উৎস থেকে ঋণ নিলে অর্থের যোগান এবং মূল্যস্তর হ্রাস পায়। অবশ্য সরকারী ঋণ সুষ্ঠুভাবে ব্যবহারের ফলে যদি আয়, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় তবে মূল্যস্তর বৃদ্ধি নাও পেতে পারে। Keynes এর মতে, যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পদ অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মূল্যস্তর বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু পূর্ণ কর্মসংস্থান স্তরে উপনীত হবার পরেও যদি ঋণ নেওয়া হয় ও ব্যয় করা হয় তবে মূল্যস্তর বৃদ্ধি পায়।
উপসংহারে বলা যায় যে, সামগ্রীক ঋণের পরিমাণ যদি অতিরিক্ত না হয় তবে এর ফলাফল খুব খারাপ হয় না । আধুনিককালে প্রায় সকল দেশেই সরকারী ঋণের পরিমাণ বেশ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জাতীয় জীবনে বহু সুদূরপ্রসারী ফল সৃষ্টি করেছে। সমাসের মতে, ঋণ কিভাবে নেয়া হয়, কিভাবে ব্যয় করা হয় ও কিভাবে পরিচালনা করা হয় তার উপর ঋণের ফল নির্ভর করে। তবে তুলনামূলকভাবে বলা যায় যে, আভ্যন্তরীণ ঋণের ফলের চেয়ে বৈদেশিক ঋণের ফল অধিক সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্যপূর্ণ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]