বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অর্থসংস্থানের উৎসসমূহ

অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অর্থসংস্থান Financing for Economic Development
উন্নয়ন পরিকল্পনার সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত হল পরিকল্পনার অর্থসংস্থান। উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পাশাপাশি তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সমাবেশের ব্যবস্থা করতে হয় । এজন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। বস্তুত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় তা সরকারের স্বাভাবিক রাজস্ব কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থ যোগান দেয়ার জন্য সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থ যোগানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। রাজস্ব বাজেটে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি, অতিরিক্ত কর আরোপ, বেসরকারি সঞ্চয় বৃদ্ধি, ঘাটতি ব্যয়নীতি ইত্যাদি পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে পরিকল্পনায় অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়া উন্নয়নশীল দেশে অভ্যন্তরীণ সম্পদের স্বল্পতার কারণে বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য গ্রহণের মাধ্যমেও উন্নয়ন পরিকল্পনায় অর্থসংস্থান করা হয় ।
সংক্ষেপে বলা যায়, উন্নয়ন পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সরকার যেসব পদ্ধতি ও কৌশল অনুসরণের মাধ্যমে অর্থ যোগানের ব্যবস্থা করে তাকে ‘উন্নয়ন পরিকল্পনায় অর্থসংস্থান' (Financing in Development Planning) বলা হয় ।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অর্থসংস্থানের উৎসসমূহ Sources of Financing for Economic Development of Bangladesh উন্নয়ন পরিকল্পনার বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় । সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থসংগ্রহের ব্যবস্থা করে থাকে। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থায়নের উৎসগুলোকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা যায় ।
১। অভ্যন্তরীণ উৎস (Internal or Domestic Sources)
২। বৈদেশিক উৎস (External Sources)
। অভ্যন্তরীণ উৎস (Domestic Sources)
(ক) রাজস্ব উদ্বৃত্ত (Revenue Surplus) : উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থ সংস্থানের অন্যতম প্ৰদান উৎস হল রাজস্ব উদ্বৃত্ত । অনেক সময় রাজস্ব খাতে সরকারের ব্যয় অপেক্ষা আয় বেশি হয় । একে রাজস্ব উদ্বৃত্ত বলা হয়। রাজস্ব খাতে এ উদ্বৃত্ত সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আয় করা হয় । যেমন- বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটে রাজস্ব খাতে যে উদ্বৃত্ত থাকে তা উন্নয়ন বাজেটের অর্থায়নে ব্যয় করা হয় ।
(খ) অতিরিক্ত কর ধার্য (Additional Taxation) : সরকার অনেক সময় অতিরিক্ত কর ধার্য করে পরিকল্পনার অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করে। বর্তমান করের হার বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত কর ধার্যের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের সাহায্যে উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যয় নির্বাহ করা হয়। বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত কর ধার্য করা হয়।
(গ) বেসরকারি সঞ্চয় (Private Saving) : উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থসংস্থানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল কোরকারি সঞ্চয়। ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জনসাধরণের যেসব হ্যাক্তিগত সঞ্চয় জমা থাকে তা একত্রিত করে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যয় নির্বাহ করা হয়। আমাদের দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনার বেসরকারি খাতে অর্থসংস্থানের প্রধান উৎস হল বেসরকারি বা ব্যক্তিগত সঞ্চয় ।
(ঘ) নীট মূলধন আয় (Net Capital Receipts ) : অনেক সময় দেশের অভ্যন্তরে জনসাধারণের নিকট বঙ ও অন্যান্য ঋণপত্র বিক্রয় করে এবং রাষ্ট্রায়ত্ব ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের সঞ্চয় ও সংরক্ষিত তহবিল হতে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যয় নির্বাহ করা হয়। যেমন- বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থায়নে এ ধরনের নীট মূলধন ব্যয় একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ।
(ঙ) ঘাটতি ব্যয় (Deficit Financing) : উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অর্থসংস্থানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল ঘাটতি ব্যয় । আমাদের মত অনুন্নত দেশে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা সরকারের পক্ষে কেবলমাত্র স্বাভাবিক উৎস হতে সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না । এজন্য সরকার অনেক সময় অতিরিক্ত নোট ছাপিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যয় নির্বাহ করে। এভাবে ঘাটতি ব্যয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থসংস্থান করা হয়। তবে অতিরিক্ত ঘাটতি ব্যয় যাতে দেশে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য ঘাটতি ব্যয় যথাসম্ভব সীমিত পর্যায়ে রাখা উচিত ।
২। বৈদেশিক উৎস (External Sources) : উন্নয়নশীল দেশসমূহে উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থসংস্থানের জন্য প্রধানত বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হয় । অভ্যন্তরীণ সম্পদের স্বল্পতার কারণে উন্নয়নশীল দেশসমূহের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বৈদেশিক উৎসের উপর নির্ভর করতে হয় । বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার সিংহভাগ অর্থই বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অর্থায়নের শতকরা ৭৭ ভাগই বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়। বাংলাদেশের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মোট ব্যয় বরাদ্দের শতকরা ৪৪ ভাগ বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের মাধ্যমে এবং শতকরা ৫৬ ভাগ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়।
সুতরাং বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থায়নের সিংগভাগই বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যের মাধ্যমে সংগৃহীত হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]