বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অর্থসংস্থানের গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অর্থসংস্থানের গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা Importance/Necessity of Financing for Economic Development in Bangladesh
মূলধন হল পুনরুৎপাদনযোগ্য উপকরণ । সময়ের অগ্রগতির সাথে মূলধনের পরিমাণ যেটুকু বৃদ্ধি পায়, তাকে মূলধন গঠন বলে । রাগনার নার্কসের মতে, মূলধন গঠনের অর্থ হল সমাজ তার বর্তমান কর্ম প্রচেষ্টার সবটুকু বর্তমান ভোগ ও চাহিদা পূরণে ব্যয় না করে তার একাংশ মূলধন দ্রব্য উৎপাদনে নিয়োগ করে । মূলধন দ্রব্য হল যন্ত্রপাতি, কলকব্জা, মেশিন ইত্যাদি । সুতরাং মূলধন গঠন হল উন্নয়নের মূল উৎস ।
১। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ঃ অধ্যাপক A. Lewis এর মতে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল সমস্যা হল দেশের জাতীয় আয়ের ৪ অথবা ৫ শতাংশ সঞ্চয় ও বিনিয়োগ কি প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি করে তা জাতীয় আয়ের ১২ থেকে ১৫ শতাংশে রূপান্তর করা যায় । যে দেশে মাথাপিছু অধিক মূলধন নিয়োগ করা হয় সেখানে মাথাপিছু আয় বেশি হয় । উন্নত দেশের মূলধন গঠনের হার বেশি। অনুন্নত দেশের অনুন্নতির সবচেয়ে বড় কারণ হল প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করার মত এদের পর্যাপ্ত মূলধন নাই । যদি মূলধন বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় তবে মোট উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং মূলধনের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে মোট উৎপাদন বাড়লে যেটুকু অর্থনৈতিক কল্যাণ বৃদ্ধি পায় শ্রমিক সংখ্যা বৃদ্ধি করে তা হবে না ।
২। নিয়োগ বৃদ্ধি : মূলধন গঠনের ফলে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। অনুন্নত দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য মূলধন গঠন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন । মূলধনী খাতে বিনিয়োগ শুধু উৎপাদন বৃদ্ধি করে না, কর্মসংস্থানও বাড়ায় ।
৩। কৃৎ-কৌশলের উন্নয়ন : মূলধন গঠনের ফলে কৃৎ-কৌশলের উন্নতি ঘটে। কৃৎ-কৌশলের উন্নতির ফলে বিশেষীকরণ ঘটে এবং বৃহদায়তন উৎপাদনের জন্য ব্যয় সংকোচন সুবিধা পাওয়া যায় ।
৪। প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার বৃদ্ধি ও মূলধন গঠনের সাহায্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মাথাপিছু ব্যয় বৃদ্ধি করা যায়। মূলধন গঠন করে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার বৃদ্ধি করা সম্ভব। ফলে শিল্পায়ন দ্রুত হয় এবং বাজার সম্প্রসারিত হয়। এসব কিছু অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন ।
৫। দারিদ্রের দুষ্টচক্র দূর করা ও মূলধনের চাহিদা ও যোগান দ্বারা মূলধন গঠনের হার নির্ধারিত হয়। অনুন্নত দেশে আয় কম বলে সঞ্চয় ক্ষমতা কম। সঞ্চয় কম হওয়ায় মূলধন কম হবে। মূলধন কা হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা কম হয়। এর ফলে আয় কম হয়। ফলে সঞ্চয়ের ক্ষমতাও কম হয়। এভাবে মূলধনের অভাব দারিদ্রের দুষ্টচক্র সৃষ্টি করে। আবার, চাহিদার দিক থেকে, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কম বলে বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। এজন্য মূলধন গঠনে আগ্রহের অভাব দেখা যায়। মূলধন কম বলে উৎপাদন ক্ষমতা এবং আয় কম হয়। আয় কম হওয়ায় ক্রয় ক্রমতা কম হয়। ফলে অধ্যাপক রাগনার নার্কস বলেন, অনুন্নত দেশে দারিদ্রের যে দুষ্টচক্র দেখা যায়, মূলধন গঠনের মাধ্যমে তা দূর করতে হবে ।
৬। বৈদেশিক বাণিজ্যের অভারসাম্যের সমাধান : অনুন্নত দেশে বাণিজ্য ভারসাম্যের সমস্যা দেখা যায় । কারণ এরা প্রধানত কাঁচামাল ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে এবং শিল্পজাত পণ্য আমদানি করে । দেশে মূলধন গঠন করে বাণিজ্য ভারসাম্যের সমস্যা সমাধান করা যায়। আমদানি বিকল্পন শিল্প গড়ে তুলে শিল্পজাত দ্রব্যের আমদানি কমানো যায়। আবার ভোগ্যপণ্য ও মূলধন দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করে রপ্তানির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যায়। কৃষিজাত পণ্যের সাথে শিল্পজাত পণ্যও রপ্তানি করা যায় । এভাবে মূলধন গঠন বাণিজ্য ভারসাম্য সমস্যার সমাধান করে ৷
বৈদেশিক ঋণের ভার লাঘব : দ্রুত মূলধন গঠিত হলে বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজন লাঘব হয় । বস্তুত মূলধন গঠন দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে বৈদেশিক ঋণের ভার লাঘব করে । মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি পেলে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় । মূলধন গঠন জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে যার দরুণ জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় । এভাবে জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার মূলধন গঠনের হারের উপর নির্ভর করে । সুতরাং দেখা যায় অনুন্নত দেশের বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধান মূলধন গঠনের মধ্যে নিহিত থাকে ।
৮ । আমদানি বিকল্পন ও রপ্তানিচালিত কৌশল ঃ দেশের অভ্যন্তরে মূলধন গঠন করতে পারলে অনুন্নত দেশের পক্ষে সঠিক আমদানি বিকল্পন এবং রপ্তানিচালিত উন্নয়ন কৌশল অনুসরণ করা সম্ভব । কারণ মূলধন গঠন করতে পারলে অনুন্নত দেশের পক্ষে দেশের অভ্যন্তরে কাঁচামাল, শ্রম এবং অবকাঠামোর সুষম সংমিশ্রণের সাহায্যে বিকল্প চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা কম ব্যয়ে উৎপাদন করা সম্ভব। এদের মধ্যে কিছু দ্রব্য আমদানি বিকল্প এবং অপরাপর দ্রব্য রপ্তানীযোগ্য হতে পারে । অর্থাৎ মূলধন গঠন করে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে কোন অনুন্নত দেশকে প্রতিকূল বাণিজ্য শর্তে কাঁচামাল এবং আধা-চূড়ান্ত দ্রব্য (Semi finished goods) বিদেশে বিক্রয় করতে হবে না ।
৯। দ্রব্য ব্যবধান দূর করা : মুদ্রাস্ফীতির সময় দ্রব্য ব্যবধানের উদ্ভব হয়। অর্থাৎ চলতি মূল্যে দ্রব্যের যোগান এর চাহিদা অপেক্ষা কম হয়। মূলধন গঠন করে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্রব্য ও সেবার এরূপ ব্যবধান দূর করা সম্ভব ।
১০। পুনরুৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ঃ অধ্যাপক A. K. Cairncross তাঁর, “The Place of Captial in Economic Progress” নামক এক নিবন্ধে যুক্তি দেন, মূলধন গঠন দেশের উৎপাদন কাঠামোর সম্প্রসারণ এবং বহুধাকরণে সহায়তা করে । বেশী মূলধন তাই পুনরুৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক বলা যায় ।
১১। মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধে সহায়ক : মূলধন গঠন অনুন্নত দেশে মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা রোধে সহায়ক হতে পারে। মূলধন গঠন এসব দেশে কৃষি এবং শিল্পজাত ভোগ্যদ্রব্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে। তাই মূলধন গঠনের হার অব্যাহত রাখতে হলে এসব দেশে দীর্ঘমেয়াদে দ্রব্যসামগ্রীর যোগান বৃদ্ধি করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব । এতে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
১২। সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন ৪ দ্রুত মূলধন গঠন দেশের রাস্তাঘাট নির্মাণসহ যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখতে পারে। এ অবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক বলা যায় । ১৩। বাজার সম্প্রসারণে সহায়ক ও মূলধন গঠন দ্রব্য এবং উপকরণের বাজার সম্প্রসারণে সহায়তা করতে পারে। কারণ মূলধন গঠন পারস্পরিকভাবে নির্ভরশীল বিভিন্ন শিল্পের প্রতিষ্ঠা এবং সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে ।
১৪। সঞ্চয় বৃদ্ধিতে সহায়ক : রাগনার নার্কস তাঁর “Problems to Captial Formation in under Developed Countries" বইতে যুক্তি দেন, অনুন্নত দেশের উন্নয়নের জন্য কমপক্ষে জাতীয় আয়ের ১২% থেকে ১৫% সঞ্চয় করা দরকার। মূলধন গঠন জাতীয় আয় দ্রুত বৃদ্ধি করে এরূপ সঞ্চয় বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]