বাংলাদেশের আর্থিক খাত ,আর্থিক খাতের সমস্যা
Problems of Financial Sector in Bangladesh

বাংলাদেশের আর্থিক খাত Financial Sector of Bangladesh
অর্থ ও ঋণ লেনদেন করে এমন সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিবর্গের সমষ্টিকে বলা হয় একটি দেশের আর্থিকথাত । একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থিক খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উন্নত আর্থিক খাত যেমন সহায়ক ভূমিকা পালন করে তেমনি আবার অনুন্নত আর্থিক খাত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত করে। বাংলাদেশের আর্থিক খাতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক, অপ্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং গ্রামীণ ঋণের বাজার রয়েছে। এ আর্থিক খাতের উপর বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, সেবা, নির্মাণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য নির্ভরশীল
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের কাঠামো ঃ বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামো মূলত তিন ধরনের । যথাঃ
(ক) প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক ব্যবস্থা
(খ) অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং
(গ) গ্রামীণ ঋণের বাজার
নিম্নে এ তিন ধরনের আর্থিক কাঠামো সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরা হল ।
(ক) প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক ব্যবস্থা ঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে সরকারী ও বেসরকারি খাতে দেশীয় ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক ব্যবস্থা গঠিত । নিম্নে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হল ।
১। বাংলাদেশ ব্যাংক ঃ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম বাংলাদেশ ব্যাংক । স্বাধীনতা লাভের পরপরই ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে (আদেশ নং-১২৭) বাংলাদেশে অবস্থিত সাবেক ‘স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান' এর সকল সম্পদ ও দায়-দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত হয় । ১ জন গভর্ণর, ২ জন ডেপুটি গভর্ণর এবং ৮ জন পরিচালক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ গঠিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর পদাধিকার বলে এ বোর্ডের সভাপতি । তিনি সরকার কর্তৃক তিন বছরের জন্য মনোনীত হয়ে থাকেন ।
২। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ঃ যেসব ব্যাংকের সংগঠক, নিয়ন্ত্রক, পরিচালক ও মালিক সরকার সেগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে । ১৯৭২ সালে এক আদেশ বলে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী ব্যাংক ছাড়া সকল দেশীয় বাণিজ্যিক ব্যাংককে রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। সে সময় ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থাকলেও বর্তমানে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। সেগুলো হল সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক ।.
৩। দেশীয় বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক ঃ ১৯৮৩ সালে বেসরকারি খাতে ঋণদান কার্যক্রম জোরদার এবং ব্যাংকিং খাতে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করার জন্য বেসরকারিভাবে সর্বপ্রথম ৬টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হয়। এরপর ১৯৮৪ সালে পূবালী ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংককে বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ২০১২ সালে নতুন করে আরও ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমতি দেওয়া হয় ।
৪। বিদেশি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ঃ স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে বেশ কিছু বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংক কাজ করে। এগুলো হল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক লিঃ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, সিটি ব্যাংক এনএ, দি হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) লি., কমর্শিয়াল ব্যাংক অব সিলোন লি., ব্যাংক আল ফালাহ লি. ইত্যাদি ।
৫। বিশেষায়িত ব্যাংক ঃ কৃষি, শিল্প, গৃহ নির্মাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উন্নয়ন করার জন্য বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান কাজ করে- এগুলোকে বলা হয় বিশেষায়িত ব্যাংক। এ সকল বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ সরকার এবং বিদেশী সংস্থা থেকে তহবিল পেয়ে থাকে । বর্তমানে বাংলাদেশের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক, বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বন্ধকী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক লি. ইত্যাদি ।
৬। ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশ ব্যাংক, দেশীয় ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ছাড়া বাংলাদেশে আরও পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেগুলো হল আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লি., গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ।
(খ) অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান
১। অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামোতে ব্যাংক নয় কিন্তু আর্থিক কার্যক্রম ও ঋণের কারবার করে থাকে- এগুলোকে বলা হয় অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান । যেমন- আইডিএলসি, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ, আইপিডিসি, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লি., বণিক বাংলাদেশ লি., মাইডাস ফাইন্যান্স লি. ইত্যাদি । এগুলো প্রধানত বিনিয়োগ কার্যক্রমে সহায়তা করে ।
২। স্টক এক্সচেঞ্জ ঃ বর্তমানে বাংলাদেশে ২টি স্টক এক্সচেঞ্জ রয়েছে। যথাঃ (১) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSC) এবং (২) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSC) । ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সর্বমোট ২৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত হয় যার মধ্যে ১২ জন সদস্য সরকার কর্তৃক মনোনিত। অপরদিকে, ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ একটি লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ সর্বমোট ১৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত হয় যার মধ্যে ৬জন সরকার কর্তৃক মনোনিত হয় । ১৯৯৩ সালে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠন করা হয় যার কাজ হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে নিয়ন্ত্রণ করা ।
৩। বীমা কোম্পানীসমূহ : বাংলাদেশে সর্বমোট ৬২টি বীমা কোম্পানী কর্মরত । তার মধ্যে সরকারী খাতে দুটি বীমা কোম্পানী কাজ করে। যথাঃ (i) সাধারণ বীমা করপোরেশন এবং (ii) জীবন বীমা করপোরেশন । এছাড়া বাকী ৬০টি বীমা বেসরকারি মালিকানায় ও পরিচালনায় কর্মরত।
(গ) গ্রামীণ অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের বাজার ঃ বাংলাদেশের গ্রামীণ ঋণ বাজারের সিংহভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। এ অপ্রতিষ্ঠানিক উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রাম্য মহাজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশি, ব্যবসায়ী, দোকানদার ইত্যাদি । গ্রামীণ এসব অপ্রাতিষ্ঠানিক ও অসংগঠিত ঋণের বাজার থেকে বেশীরভাগ ঋণ কৃষকেরাই গ্রহণ করে । যদিও অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের বাজারে সুদের হার অনেক বেশি ।
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সমস্যা Problems of Financial Sector in Bangladesh
বাংলাদেশের আর্থিক খাতে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল ।
(ক) বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থার সমস্যা ঃ বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাংক ব্যবসায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক কাজ করছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং কাঠামোতে যে সকল সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো নিম্নরূপ ।
১। সরকারি হস্তক্ষেপ : রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশের মোট ব্যাংকিং ব্যবসার প্রায় অর্ধেকের বেশি পরিচালনা করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি ও খবরদারি ছাড়াও সরকারের অনেক আদেশ বা হস্তক্ষেপ মেনে নিতে হয় । তাছাড়া সরকার নিজেও ইচ্ছামত ঋণ গ্রহণ করে যার ফলে সরকারী দলের সমর্থক ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে সময়মত পরিশোধ করে না ।
২। শহরকেন্দ্রিক ব্যাংক ব্যবস্থা ঃ বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শহরকেন্দ্রিক শাখা থাকলেও গ্রামাঞ্চলে তেমন কোন শাখা নেই। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর শাখাতো গ্রামাঞ্চলে একেবারেই নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা গ্রামাঞ্চলে থাকলেও বছরের পর বছর লোকসান দেবার কারণে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের বেশিরভাগ গ্রামাঞ্চলের মানুষ ব্যাংকিং লেনদেনের বাইরে থেকে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়গুলোও ব্যাংকিং চ্যানেলে আনা সম্ভব হচ্ছে না । এটা বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার অনেক বড় দূর্বলতা ।
৩ । উচ্চ সুদের হার ঃ বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রকৃত সুদের হার উচ্চ । বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদের হার বেশি। তাই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না ।
৪। ট্রেড ইউনিয়নের প্রভাব : বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন অনেক শক্তিশালী। এ ট্রেড ইউনিয়ন ব্যাংকের স্বার্থে নয় বরং নিজেদের স্বার্থে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য ও বদলী ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোতে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যার ফলে ব্যাংকগুলোর ওপর সাধারণ জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলে । এটাও বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার অন্যতম ত্রুটি ।
৫। ব্যাংকগুলোতে সেবার মান নিম্ন : রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সেবার মান খুবই নিম্ন । অনেক সময় গ্রাহক সেবার পরিবর্তে হয়রানির স্বীকার হয়। তাই দিনদিন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আকর্ষণ কমে যাচ্ছে, গ্রাহকরা রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে হয়রানির কারণে যেতে চায় না ।
৬। দক্ষ কর্মচারীর অভাব ঃ ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারি । কিন্তু বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অভাবে দক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী গড়ে উঠেনি । তাই দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারির অভাবে আমাদের ব্যাংকিং ব্যবসা ব্যাহত হচ্ছে।
৭। প্রতিযোগিতার অভাব ঃ বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের জন্য যে পরিমাণ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন তার তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা অনেক কম । তাই ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়নি। বরং ব্যাংকগুলো আমানতকারিদের ইচ্ছামত কম সুদ প্রদান করে এবং ঋণের জন্য অনেক বেশি সুদ আদায় করে । যা ব্যাংকিং আইনের পরিপন্থী ।
৮। আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা : বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে (সরকারি ও বেসরকারি উভয়) আমলতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ঢুকেছে। ব্যাংকগুলোতে যোগ্যতা ও দক্ষতা বিচার না করে জেষ্ঠ্যতার
ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর ফলে যারা দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারি তাদের কর্মোদ্যোম কমে যায় । এ আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের অন্যতম প্রধান দুর্বলতা ।
৯। ব্যাপক খেলাপি ঋণ : বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণ এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সেই সরকারের সমর্থক ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে সময়মত ঋণ পরিশোধ করে না। তাছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা নিজেদের ক্ষমতা অপব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ গ্রহণ করে । কিন্তু সময়মত এ সকল ঋণ পরিশোধ করে না । ফলে বাংলাদেশে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে চলেছে ।
১০। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের স্বল্পতা ঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিচারে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সীমিত । যে সকল ব্যাংক বিদ্যমান তাদের আবার অনেকেরই গ্রামাঞ্চলের শাখা নেই । বেসরকারি ব্যাংকতো শহরকেন্দ্রিক । বাংলাদেশের র‍্যাংকিং খাতের জন্য এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা ।
(খ) বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহের সমস্যা ঃ বাংলাদেশের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর সমস্যা নিম্নরূপ । ১। বাজার নীতিহীন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড : বাংলাদেশের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো মূলত প্রচলিত ব্যাংক ব্যবসা করে না । কারণ তারা জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্ৰহ না করে সরকার ও বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ঋণ হিসাবে বন্টন করে। তাই বলা যায় বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর কর্মকাণ্ড বাজার নীতিভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নয় ।
২। প্রকল্প সঠিকভাবে বাছাই করে ঋণ দেওয়া হয় না ঃ বেশির ভাগ বিশেষায়িত ব্যাংক প্রকল্প অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কিনা তা যাচাই বাছাই করে ঋণ প্রদান করে না। বরং বিশেষ করে ব্যক্তিবর্গ তাদের প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিয়ে থাকে ।
৩ । ঋণের টাকা ফেরৎ পাওয়া যায় না ঃ বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো অনেক সময় সরকারি রুগ্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ প্রদান করে থাকে । কিন্তু রুগ্ন প্রতিষ্ঠানগুলো আর ঋণের টাকা পরিশোধ করে না ।
৪ । প্রকৃত কৃষকেরা ঋণ পায় না : সরকার প্রতিবছর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে কৃষি ঋণ প্রদান করে থাকে । কিন্তু এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেওয়ার কারণে প্রকৃত কৃষকেরা ঋণ পায় না ।
(গ) বীমা কোম্পানীসমূহের সমস্যা : বাংলাদেশে বীমা কোম্পানিগুলোর সমস্যা নিমরূপ ।
১। কার্যক্রম সীমিত : বাংলাদেশের নীমা কোম্পানীগুলোর কার্যক্রম শুধুমাত্র শহর এলাকাতেই সীমাবদ্ধ। গ্রামাঞ্চলে বীমা কোম্পানীগুলোর তেমন কোন কার্যক্রম নেই ।
২। জনগণের বিশ্বাস অর্জনে ব্যর্থ ঃ বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিগুলো এখনও সাধারণ জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি । তাই জনসংখ্যা অনুপাতে বীমা ব্যবসায় বাংলাদেশে প্রসার লাভ করেনি ।
৩। পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব : উন্নত দেশে বীমা কোম্পানিগুলো মূলধন বাজারে যথাযথভাবে বিনিয়োগ করে । কিন্তু বাংলাদেশের বীমা কোম্পানিগুলো মূলধন বাজারে যথাযথভাবে বিনিয়োগ করছে না ।
(ঘ) গ্রামীণ ঋণ বাজারের সমস্যাসমূহ ঃ বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে সমস্যা সংকুল উপখাত হচ্ছে গ্রামীণ ঋণ বাজার । গ্রামীণ ঋণ বাজারের সমস্যাগুলো নিম্নরূপ ।
১। আর্থিক নীতির আওতার বাইরে ঃ গ্রামীণ অর্থনীতিতে সাধারণত কৃষকেরা গ্রাম্য মহাজন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব, দোকানদার, স্বর্ণকার প্রভৃতি অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকে ।
কিন্তু এ ঋণের উৎসগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় সরকারের আর্থিক নীতি এক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না ।
২। ঋণের সুদের হার অনেক বেশি ।
৩। সময়মত ঋণ পাওয়া যায় না ।
৪ । উপযুক্ত জামানত পাওয়া যায় না ।
৫ । ঋণের বাজার অসংগঠিত ।
(ঙ) মূলধন বাজারের সমস্যা ঃ বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অন্যান্য শাখার মত মূলধন বাজারেও অনেক সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশের মূলধন বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ আছে মাত্র । এ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ এর মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে মূলধন সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না । তদুপরি এ দুটি স্টক একচেঞ্জেরও নানা রকম সমস্যা রয়েছে । যেমন-
১। শেয়ার বাজারের অস্থিরতা ;
২ । আধুনিক প্রযুক্তির অভাব; ৩ । উন্নত অবকাঠামোর অভাব;
৪ । অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় বাংলাদেশের ব্যাংক, বীমা, গ্রামীণ ঋণ বাজার, মূলধন বাজার ইত্যাদি নিয়ে যে আর্থিক কাঠামো রয়েছে তা এখনও দূর্বল । এজন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থিক খাত যথাযথ ভূমিকা পালন করছে না । তাই বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সমস্যাগুলো সমাধান করা প্রয়োজন ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]