বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থিক নীতির ভূমিকা

বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থিক নীতির ভূমিকা Role of Monetary Policy in Economic Development of Developing Countries like Bangladesh
অর্থনৈতিক উন্নয়ন হল একটি প্রক্রিয়াগত বিষয় যার মাধ্যমে একটি দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়ে, জীবনযাত্রার মান বাড়ে এবং অর্থনৈতিক কল্যাণ অর্জিত হয় । পরিকল্পনার ভিত্তিতে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও উৎপাদনশীল খাতে মূলধন বিনিয়োগের দ্বারা নিয়োগ ও প্রকৃত উৎপাদন বাড়ে। নিম্নে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আর্থিক নীতির ভূমিকা আলোচনা করা হল ।
১। আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আর্থিক নীতির ভূমিকা ঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক নির্দেশনা হল জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি । এক্ষেত্রে আর্থিক নীতি ভূমিকা পালন করে । সামগ্রিক চাহিদা বাড়লে এবং তার সংগে সংগতি রেখে অর্থের যোগান বাড়ানো হলে জাতীয় আয় বাড়ে । তা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করে ।
২। প্রকৃত GNP এর সঙ্গে অর্থের যোগানের সংগতি বিধান ঃ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দেয়া অর্থ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব । তবে প্রকৃত GNP বৃদ্ধির সংগে অর্থ যোগানের হার সংগতিপূর্ণ হওয়া বাঞ্চনীয় । অর্থ সৃষ্টির একটি নিরাপদ সীমা কর্তৃপক্ষকে মেনে চলতে হয়, যাতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি জনগণের সহনীয়তার মধ্যে থাকে । অর্থ সৃষ্টির মাধ্যমে মৃদু মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে তা উন্নয়নের প্রতিবন্ধক নয়, বরং সহায়ক । মৃদু মুদ্রাস্ফীতি বিনিয়োগকারীদের প্রান্তিক প্রত্যাশা বাড়িয়ে তুলে । ফলে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় ।
৩। সঞ্চয়ের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণের আর্থিক সম্পদ সৃষ্টি ও তার বিনিয়োগের সুযোগ থাকা প্রয়োজন । তার জন্য চাই পর্যাপ্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। উন্নয়নশীল দেশে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে তাকে মূলধন হিসাবে যোগান দেয়া আবশ্যক । উপযুক্ত আর্থিক নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ বাজারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে। অর্থবাজারের অন্তর্গত প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সঞ্চয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
৪। মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা রক্ষা ঃ অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রত্রিয়াকে মসৃণ পথে এগিয়ে নেয়া তখনই সম্ভব যখন মূল্যস্তর মোটামুটি স্থিতিশীল থাকে । এখানে মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা বলতে সেই অবস্থা বুঝানো হয়, যেখানে অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি থাকবে না, তেমনি মুদ্রা সংকোচনও থাকবে না । অর্থাৎ মূল্যস্তরের ওঠানামা অর্থনীতিকে যেন বিপর্যস্ত না করে, সেদিকে অর্থ কৃর্তপক্ষকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মূল্যস্তর স্থিতিশীল থাকলে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রেও স্থিতিশীলতা থাকে। সেই অনুকূল পরিবেশ উন্নয়নের সহায়ক হয় ।
৫। কাম্য ঋণ নীতি অবলম্বন : আর্থিক নীতির অন্যতম অংশ হল ঋণ নীতি। উন্নয়নের লক্ষ্যে অনুৎপাদনশীল খাত থেকে উৎপাদনশীল খাতে সম্পদ স্থানান্তর করতে হয়। এমতাবস্থায় ব্যাংক কর্তৃক ঋণ সরবরাহ বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। উৎপাদনশীল খাতে ঋণের সরবরাহ বাড়িয়ে এবং অনুৎপাদনশীল খাতে তা কমিয়ে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে কাম্য পথে পরিচালনা করা যায় ।
8
৬। বৈদেশিক বিনিময়ের স্থিতিশীলতা ঃ বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা দ্বারা উন্নয়ন প্রক্রিয়া সফল হয়। আর্থিক নীতির অনুষঙ্গ হিসাবে বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা নীতি পরিচালিত হয় । অর্থ কর্তৃপক্ষ দেশীয় মুদ্রামানকে ভিত্তি হিসাবে ধরে বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে। এমতাবস্থায় বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক মূলধন অর্থনীতির সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করে ।
আলোচনা থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আর্থিক নীতি প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে । তাই উন্নয়নে আর্থিক নীতির ভূমিকা যথেষ্ট । তাছাড়া, উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সংগে অর্থের যোগানের সংগতি বিধান করে, সঞ্চয়কে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় এনে, মূল্যস্তর স্থিতিশীল রেখে, কাম্য ঋণ নীতি অবলম্বন করে এবং বিনিময়ের স্থিতিশীলতা বজায় রেখে উন্নয়ন ক্ষেত্রে আর্থিক নীতি অবদান রাখে ।
বাংলাদেশের আর্থিক নীতি Monetary Policy of Bangladesh
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। তাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থিক নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । আভ্যন্তরীণ দ্রব্যমূল্যের অস্থিতিশীলতা এবং উপযুক্ত বৈদেশিক বিনিময় হার নীতির অভাব বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা। বেকারত্ব দূর করার জন্য সুলভ আর্থিক নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন । কারণ, সুলভ আর্থিক নীতির অধীনে অর্থের যোগান বাড়ালে সুদের হার কমবে, বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে, উৎপাদন ও আয় বাড়বে, ভোগ বাড়বে, সামগ্রীক চাহিদা বাড়বে - গুণক প্রক্রিয়ায় সাহায্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে । অন্যদিকে, সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি । মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশে সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক আর্থিক, নীতি গ্রহণ করেছে । ঋণের সুদের হার বাড়ানোর ফলে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবাহ কমেছে । তাছাড়া বিশাল বাজেট ঘাটতি দূর করার জন্য সরকার আভ্যন্তরীণ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে । ফলে সমাজে নগদ অর্থের প্রবাহ কমেছে। এতে করে অর্থনীতির উপর সার্বিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে নির্মাণ খাত, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি ইত্যাদি খাতে ঋণাত্মক · প্রভাব পড়েছে । কাজেই বাংলাদেশে অর্থের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করে আর্থিক নীতি গৃহীত হওয়া উচিৎ । এমনভাবে অর্থের যোগান বাড়াতে হবে, যাতে দেশের উৎপাদন, আয়, নিয়োগ ও মূল্যস্ত রের উপর কোন বিরূপ প্রভাব না পড়ে। অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি কিংবা মুদ্রাসংকোচন (মন্দা) কোনটাই কাম্য নয় । তাই অর্থের যোগান যাতে নিরাপদ সীমা অতিক্রম না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। সুতরাং বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে- সেভাবেই বাংলাদেশে আর্থিক নীতি প্রণয়ন করা উচিৎ ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]