বাংলাদেশের মুদ্রা ও আর্থিক খাতের বর্তমান অবস্থা কিরূপ?

রাজস্ব খাত Fiscal Sector
রাজস্ব আহরণ (Revenue collection )
২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১,৫৬,৬৭১ কোটি টাকা (জিডিপির ১১.৬ শতাংশ)। যার মধ্যে এনবিআর কর রাজস্ব ১,২৫০০ কোটি টাকা, এনবিআর বহির্ভূত কর রাজস্ব ৫,১৭৮ কোটি টাকা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব ২৬,৪৯৩ কোটি টাকা । লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রথম নয় মাসে (মার্চ ২০১৪ পর্যন্ত) আহরিত হয়েছে এনবিআর কর রাজস্ব ৭৯,২৫১.২৫ কোটি টাকা, এনবিআর বহির্ভূত কর রাজস্ব ৩,১৩২ কোটি টাকা এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব ১৮,১৪৫ কোটি টাকা। সার্বিকভাবে প্রথম নয় মাসে মোট রাজস্ব আহরিত হয়েছে ৯৮,৫৩২ কোটি টাকা ।
২০১০-১১ অর্থবছরের মার্চ মাস পর্যন্ত এনবিআর কর রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৭.২৮ শতাংশ, পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৮.৩ শতাংশ। এ সময়ে (মার্চ ২০১১ পর্যন্ত) খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে- আমদানি শুল্ক ২৩.২৬ শতাংশ, আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ১৬.৮৪ শতাংশ, আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ২৫.৮৪ শতাংশ, স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ৩০.১৬ শতাংশ, স্থানীয় পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ২৯.৫২ শতাংশ এবং আয়কর ৩৪.৫৫ শতাংশ। আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে আমদানি শুল্কখাতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, করের আওতা বৃদ্ধি ও কর প্রদানে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারণা কার্যক্রম যেমন- করমেলা, রোড শো ইত্যাদি আয়োজনের ফলে আয়কর খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জুলাই-মার্চ, ২০১১ পর্যন্ত এনবিআর-বহির্ভূত কর রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি ১৮.৩৯ শতাংশ এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৮৫ শতাংশ ।
সরকারি ব্যয় (Government expenditure)
২০১৩-১৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ২,১৬,১১৫ কোটি টাকা (জিডিপি'র ১৬.০ শতাংশ), যার মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ১,৩৪,৭৮৫ কোটি টাকা (জিডিপি'র ১০.০ শতাংশ) এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যয় ৬০,০০০ কোটি টাকা (জিডিপি'র ৪.৪ শতাংশ)। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যয় বিশেষ করে এডিপিতে বরাদ্দকৃত বৈদেশিক সহায়তার ব্যয় সন্তোষজনক না হওয়ায় সংশোধিত এডিপি'তে বৈদেশিক সহায়তার প্রাক্কলন হ্রাস করে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬০,০০০ কোটি টাকা । অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী জ্বালানী তেল ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষি উপকরণ, খাদ্যপণ্য এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে । সাময়িক হিসাব অনুযায়ী মার্চ ২০১৪ পর্যন্ত প্রথম নয় মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ১,১৫,১৮০ কোটি টাকা, যার মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ৮৫,৪৭৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ব্যয় ২৪,৭৩৫ কোটি টাকা ।
বাজেট ভারসাম্য ও অর্থায়ন (Budget equilibrium and financing)
২০১৩-১৪ অর্থবছরে মূল বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫৫,০৩২ কোট টাকা যা জিডিপি'র ৪.১ শতাংশ। অপরদিকে, সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫৯,৪৪৪ কোটি টাকা (জিডিপি'র ৪.৪ শতাংশ)। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস থেকে ১৮,৫৬৯ কোটি টাকা (জিডিপি'র ১.৪ শতাংশ) এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৪১,০৩২ কোটি টাকা (জিডিপি'র ৩.০ শতাংশ) সংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ।

মুদ্রা ও আর্থিক খাত

Monetary and Financial Sector বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি বিশেষ করে বিকাশমান ও উন্নয়নশীল দেশসমূহে মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি করে । ফলে অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন ভাল হওয়া সত্ত্বেও দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়তে থাকে । এ প্রেক্ষিতে মূল্যস্ফীতির চাপ হ্রাসের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে চলতি অর্থবছরে রেপো ও রিভার্স রেগো হার তিন দফায় ১৭৫ বেসিস পয়েন্টস বৃদ্ধি করে যথাক্রমে ৬.২৫ শতাংশ ও ৪.২৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করে। একইসাথে ১৫ ডিসেম্বর, ২০১০ থেকে CRR এবং SLR উভয়ই ৫০ বেসিস পয়েন্টস বৃদ্ধি করে যথাক্রমে ৬ শতাংশ ও ১৯ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়। এ সময় কতিপয় ব্যাংক ঋণ-আমানত অনুপাতের সীমা অতিক্রম করায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় সংশোধনী এবং প্রতিরোধমূলক তদারকি ব্যবস্থা চালু করা সহ জনু, ২০১০ থেকে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য অনুমোদিত সর্বোচ্চ সীমা (Ceiling) পরিপালনে নজরদারিও জোরদার করে। তবে অভ্যন্তরীণ ঋণ চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ডিসেম্ব, ২০১০ থেকে ব্যাংকগুলো কিছুটা তারল্য ঝুঁকিতে পড়ে । মুদ্রাবাজারের বর্ধিত চাহিদার প্রেক্ষিতে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সহায়তা দিয়ে আসছে । বর্তমানে মুদ্রাবাজারে তারল্য প্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে । মার্চ ২০১১ মাসের শেষে ব্যাংক ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্য (Excess liquidity) দাঁড়িয়েছে ২৭,০৮৭ কোটি টাকা ।
ব্যাপক মুদ্রা (এম) ঃ ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে ২২.৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, পূর্ববর্তী ২০০৮-০৯ অর্থবছর শেষে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৯.১৭ শতাংশ । বছর ভিত্তিতে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস শেষে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি পায় ২১.৬৬ শতাংশ, পূর্ববর্তী অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস শেষে এ বৃদ্ধির হার ছিল ২১.৯০ শতাংশ । এ সময়ে জনসাধারণের হাতে থাকা কারেন্সী নোট ও মুদ্রা (ব্যাংক বহির্ভূত মুদ্রা) ফেব্রুয়ারি ২০১০ এ ১৬.০৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৪.৮ শতাংশে । একই সময়ের ব্যবধানে তলবী আমানতের প্রবৃদ্ধি ৩৩.৬৯ শতাংশ থেকে ৩১.৭৮ শতাংশে এবং মেয়াদি আমানতের প্রবৃদ্ধি ২১.৪৫ শতাংশ থেকে ১৯.৮১ শতাংশে দাঁড়ায়। অর্থাৎ সাম্প্রতিক সময়ে জনসাধারণের হাতে থাকা কারেন্সী নোট ও মুদ্রা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে। ব্যাপক মুদ্রার স্থিতি ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে (জুন'১০ শেষে) ছিল ৩,৬৩,০৩১ কোটি টাকা । যা ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস শেষে দাঁড়িয়েছে ৪,০৬,৭৮৫ কোটি টাকা ।
অভ্যন্তরীণ ঋণ (Internal credit) : বার্ষিক ভিত্তিতে ২০০৯-১০ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭.৮৯ শতাংশ। পূর্ববর্তী অর্থবছরে এ বৃদ্ধির হার ছিল ১৬.০৩ শতাংশ। এ সময়ে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় বেসরকারিখাতে ঋণপ্রবাহ পূর্ববর্তী ২০০৮-০৯ অর্থবছরের ১৪.৬২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৪.২৭ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে সরকারি খাতে নীট ঋণ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৬.৫২ শতাংশ হ্রাস পায়। ২০১০-১১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস শেষে বছরভিত্তিতে ব্যাংক ব্যবস্থায় মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ ২৬.৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, পূর্ববর্তী অর্থবছরের একইমাস শেষে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৩.৩৩ শতাংশ। এসময়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি পূর্ববর্তী বছরের একই মাস শেষে ১৯.৫২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৮.৩৪ শতাংশে দাঁড়ায়, যা মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। বৈদেশিক বাণিজ্যে অর্থায়নঃ কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে ঋণ এবং মেয়াদি শিল্প ঋণসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেসরকারিখাতে ঋণের প্রবৃদ্ধিতে জোরালো অবদান রাখে ।
রিজার্ভ মুদ্রা (Reserve currency) ঃ বার্ষিক ভিত্তিতে ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ মুদ্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৬.০৩ শতাংশ, পূর্ববর্তী অর্থবছরে এ বৃদ্ধির হার ছিল ৩৫.৪৫ শতাংশ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি ৪২.৫২ শতাংশ হলেও নীট অভ্যন্তরীণ সম্পদ হ্রাস পায় ২৬.১৩ শতাংশ । রেমিট্যান্স প্রবাহের উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে নীট বৈদেশিক সম্পদের এ প্রবৃদ্ধি ঘটে। অন্যদিকে সন্তোষজনক রাজস্ব আয় ও সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের অর্থায়ন বৃদ্ধির ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সরকারের নীট ঋণ গ্রহণ ঋণাত্মক হয়। ২০১০-১১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস শেষে রিজার্ভ মুদ্রার প্রবৃদ্ধি পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই মাসের প্রবৃদ্ধি ২৪.৭ শতাংশের তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০.৭৭ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের শ্লথগতির ফলে নীট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস শেষে ৮৪.৩১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১০-১১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস শেষে ১.৬৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ব্যাপক মুদ্রা গুণক জুন ২০০৯ শেষে ৪.২৭ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে জুন ২০১০ শেষে ৪.৫১ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১০-১১ অর্থবছর ফেব্রুয়ারি মাস শেষে ব্যাপক মুদ্রার গুণক দাঁড়ায় ৪.৬১ ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]