ব্যাংক কাকে বলে? ব্যাংকিং খাত/ব্যাংক ব্যবস্থা What is bank?

আর্থিক বাজার ব্যবস্থাপনা Financial Market Management
বাংলাদেশের আর্থিক বাজার মূলত ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজার নিয়ে গঠিত । ডিসেম্বর ২০১৪ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ৫৬টি তফসিলি ব্যাংক রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ৫টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক, ৩৯টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৯টি বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক । ২৯টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দু'টি প্রতিষ্ঠান- ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স কর্পোরেশন (এইচবিএফসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) আর্থিক বাজারে কাজ করছে ।
ব্যাংক কাকে বলে? What is bank?
ইংরেজি শব্দ ‘Bank' অনেকের মতে জার্মান শব্দ ‘Banck' থেকে উদ্ভূত । আবার অনেকে মনে করেন, এটি ইতালীয় শব্দ ‘Banco’ থেকে উৎপত্তি লাভ করে । খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দে চীনে বিশ্বের প্রথম ব্যাংক Shansi Bank এবং ১১৫৭ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে বিশ্বের প্রথম সরকারি ব্যাংক ‘ব্যাংক অভ ভেনিস' স্থাপন করা হয় । সংজ্ঞাগত দিক থেকে ‘ব্যাংক' অর্থ এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থ আমানত হিসাবে জমা রাখে এবং জমাকৃত অর্থ অলসভাবে ফেলে না রেখে বরং ব্যবসায়-বাণিজ্য, উৎপাদন বা ভোগের নিমিত্তে ঋণদান করে থাকে । সংগৃহীত আমানতী অর্থের উপর আমানতকারীকে অপেক্ষাকৃত কম সুদ প্রদান করে, কিন্তু ঋণগ্রহণকারীর উপর চড়া সুদ আরোপ করে। প্রাপ্ত সুদের উদ্বৃত্ত অংশই ব্যাংকের মুনাফা সৃষ্টি করে । যেমন- সঞ্চয়কারীকে তার অর্থ জমা রাখার জন্য সুদ দেয় ৬% হারে এবং ঋণগ্রহণকারীকে ঋণের জন্য সুদ আরোপ করে ১৪% হারে । ফলে ১৪% - ৬% = ৮% মুনাফা হিসাবে ব্যাংক পেয়ে থাকে । বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ ব্যাংক এর সংজ্ঞা দান করেছেন । যেমন- স্যার জন প্যাগেট এর মতে, "ব্যাংক এরূপ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবে অর্থ
জমা রাখে, চেক জমা করে এবং চেকের মাধ্যমে আমানতকারীর হিসাব হতে অর্থ প্রদান করে।”
অধ্যাপক কেয়ার্নক্রসের মতে, “ব্যাংক হলো আর্থিক মধ্যস্থতাকারী ধার ও ঋণের কারবারি ।" অর্থনীতিবিদ ক্রাউথার বলেন, "ব্যাংক তার নিজের ও অন্য লোকের ঋণের ব্যবসায় করে ।"
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ সেয়ার্সের মতে, "ব্যাংক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার ঋণ অন্যান্য লোকের ঋণ পরিশোধের জন্য গৃহীত হয় ।"
১৯৩৬ সালে ভারতীয় কোম্পানি আইনে বলা হয়েছে, “ব্যাংক এরূপ একটি প্রতিষ্ঠান যা সাধারণত জনসাধারণের নিকট হতে চলতি হিসাবের মাধ্যমে টাকা আমানত রাখে এবং জনসাধারণকে প্রয়োজনমতো চেক মারফত টাকা উঠাবার সুযোগ প্রদান করে।”
সুতরাং বলা যায় যে, ব্যাংক হলো এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা স্বল্প সুদের হারে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থ জমা রাখে ও উচ্চ সুদের হারে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীকে ঋণ প্রদান করে মুনাফা অর্জন করার পাশাপাশি বিনিময়ের বিভিন্ন মাধ্যম সৃষ্টি করে- বিনিময় বিল বাট্টা করে, অর্থ একস্থান হতে অন্যস্থান বা প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করে ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কার্যাদি পরিচালনা করে ।
ব্যাংকিং খাত/ব্যাংক ব্যবস্থা Banking Sector / Banking System.
বাংলাদেশ ব্যাংকিং খাতে চার ধরনের (রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, স্থানীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক) তফসিলি ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ৫৬টি তফশিলি ব্যাংক ৯,০৪০টি শাখার মাধ্যমে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। মোট ব্যাংক শাখার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ৩,৬১৮টি, স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ৩,৯১৭টি, বিদেশি ব্যাংকের শাখা ৭০টি এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের শাখা ১,৪৩৫টি। এছাড়াও তফসিলিভুক্ত নয় এমন ১টি জাতীয় সমবায় ব্যাংক, ১টি আনসার ভিডিপি ব্যাংক, ১টি কর্মসংস্থান ব্যাংক ও ১টি গ্রামীণ ব্যাংক, ১টি জুবিলী ব্যাংক ও ১টি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক রয়েছে। ডিসেম্বর ২০১৪ শেষে ব্যাংকের ধরন অনুযায়ী বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার কাঠামো এবং মোট আমানত ও সম্পদের শতকরা অংশ যথাক্রমে নিম্নের সারণিতে সন্নিবেশিত হলো ।
মূলধন পর্যাপ্ততা, সম্পদের গুণগত মান, আয়-ব্যয় অনুপাত প্রভৃতির আলোকে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও ব্যাংক শাখার বিস্তারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো সাধারণ মানুষের কাছে অধিকতর ব্যাংকিং সেবার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকসমূহের মোট ৫,১৫০টি শাখা গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত । ডিসেম্বর, ২০১৪ শেষের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে, গ্রামাঞ্চলে বিদেশি ব্যাংকগুলোর কোন শাখা নেই এবং স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট শাখার মাত্র ৩৯.৭৫ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত । পক্ষান্তরে, মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক এর মোট শাখার ৬৩.৩৫ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংক এর মোট শাখার ৯০.৬৬ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত ।
আর্থিক খাত একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে দেশের আর্থিক খাতে অধিকতর দক্ষতা, স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা আনয়নের জন্য চলমান সংস্কার কার্যক্রম ২০১১-১২ অর্থবছরেও অব্যাহত থাকে। ফলে, আর্থিক খাতের সূচকসমূহে সন্তোষজনক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়। ডিসেম্বর, ২০১০ এর তুলনার ডিসেম্বর, ২০১১ এ ব্যাংকসমূহের অলস তারল্য বৃদ্ধি পেলেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণের ফলে এ সময়ে ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫.০৭ শতাংশ। ২০১০ সালে ব্যাংকসমূহের অলস তারল্যের পরিমাণ ছিল ৪.৭৪ শতাংশ, যা ২০১১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৫২ শতাংশ । ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে ব্যাংকসমূহের মুনাফা ও উপার্জনশীলতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম রীতির সাথে সংগতি রেখে ব্যাংকসমূহকে অধিকতর ঝুঁকি-সংবেদনশীল এবং ব্যাংকিং খাতকে অধিকতর অভিঘাত (Shocks) মোকাবেলায় সক্ষম ও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিসেম্বর, ২০০৮ এ ব্যাসেল-২ এর আলোকে মূলধন পর্যাপ্ততা সংক্রান্ত সংশোধিত মূলধন রূপরেখা জারী করে । জানুয়ারি, ২০১০ হতে ব্যাংকিং খাতে Regulatory requirement হিসেবে মূলধন রূপরেখার বাস্তবায়ন শুরু হয় । উল্লেখ্য, ব্যাংকসমূহের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় মূলধন নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাসেল-২ এর আওতায় ঋণ ঝুঁকি (Credit risk) এর পাশাপাশি বাজার ঝুঁকি (Market risk) এ পরিচালন ঝুঁকি (Operational risk). অন্তর্ভূক্ত করে তদারকিমূলক পুননিরীক্ষণ প্রক্রিয়ার (Supervisory review process) মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর পর্যাপ্ত মূলধন নিশ্চিতকরণসহ মার্কেট ডিসক্লোজার এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট মূলধন কাঠামো সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উন্মোচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া, তফসিলি ব্যাংকগুলোর জন্য নির্ধারিত মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১ জানুয়ারি ২০১০ থেকে ৩০ জুন ২০১০ তারিখ পর্যন্ত ন্যূনতম ৮ শতাংশ, ১ জুলাই ২০১০ থেকে ৩০ জুন ২০১১ পর্যন্ত ন্যূনতম ৯ শতাংশ এবং ১ জুলাই ২০১১ থেকে পরবর্তী সময়ের জন্য ন্যূনতম ১০ শতাংশ নির্ধারণ নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাসেল-২ অনুযায়ী তফসিলি ব্যাংকসমূহের ডিসেম্বর ২০১১ ভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততার হার দাঁড়ায় ১১.৩৫ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর ২০১১ ভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততার হারের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]