বাংলাদেশের বিশেষ ঋণদান প্রতিষ্ঠানসমূহ/বিশেষায়িত ব্যাংক

বাংলাদেশের বিশেষ ঋণদান প্রতিষ্ঠানসমূহ/বিশেষায়িত ব্যাংক Specialized Credit Institutions of Bangladesh/Specialized Bank
বিশেষ উদ্দেশ্যে যখন কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয় এবং সেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত সংগ্ৰহ ও ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা থাকে, তখন সেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বিশেষায়িত ব্যাংক বলে । বিশেষায়িত ব্যাংককে অনেক সময় উন্নয়ন ব্যাংকও বলা হয়। উন্নয়ন ব্যংক সাধারণত মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ প্রদান করে । বিশেষায়িত বা উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ, শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ, শিল্পের আধুনিকীকরন, ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সম্ভব হয় । বাংলাদেশে বিশেষায়িত ব্যাংক হিসাবে উল্লেখযোগ্য-
(১) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
(২) বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক
(৩) গ্রামীণ ব্যাংক
তে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না । কৃষি, শিল্প ও গ্রাম উন্নয়নে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংক্ষিপ্ত ভূমিকা নিম্নে উল্লেখ করা হলো ।
(১) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক
'১৯৫২ সনে কৃষি উন্নয়ন ফাইন্যান্স কর্পোরেশন এবং ১৯৫৭ সনে কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় । সেই দুটি প্রতিষ্ঠানকে একত্রিত করে ১৯৬১ সনে গঠিত হয় কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক । ১৯৭২ সনে স্বাধীন বাংলাদেশে পুর্বতন কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব ও সম্পদ সমন্বয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক গঠিত হয় । আজ বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই কৃষি ব্যাংকের শাখা আছে। কৃষি ব্যাংক তার কর্যাবলী সম্পাদনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অবদান রাখছে ।
(ক) কৃষি ব্যাংক কৃষকদের মধ্যে স্বল্প মেয়াদী, মধ্যম মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান করে। শ্রমিকের মজুরি প্রদান, ফসল কাটা, যন্ত্রপাতি ক্রয়, উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক, সেচের জন্য কুপ খনন, ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন এসব ক্ষেত্রে কৃষি ব্যাংক ঋণ প্রদান করে ।
(খ) ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে কৃষি ব্যাংক ঋণ দেয় । অলস মৌসুমে জনগণ কুটির শিল্পে নিয়োজিত হয়ে কিছু উপার্জন করতে পারে ।
(গ) দেশের মৎস্য উন্নয়নে কৃষি ব্যাংক ঋণ দেয় । পুকুর খনন, সংস্কার ও মৎস্য চাষ প্রকল্পে এই 'ব্যাংক সহায়তা প্রদান করে ।
(ঘ) দেশের বনায়ন ও উদ্যান উন্নয়নে এই ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা রাখে ।
(ঙ) শস্য ঋণ প্রদান, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদেরকে ঋণদান, প্রকল্প ঋণ দান, এসবের মাধ্যমে কৃষি ব্যাংক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ভূমিকা রাখে । এছাড়াও সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাজ হিসাবে-
(i) আমানত গ্রহণ (ii) বাণিজ্যিক ঋণ প্রদান (iii) বিনিময় বিল ক্রয় ও বাট্টাকরণ এসব সম্পাদন করে থাকে । কৃষি ব্যাংক শুধুমাত্র কৃষি ক্ষেত্রে নয়, কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখে ।
(২) বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক
১৯৭২ সনে শিল্প ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় । পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন ব্যাংক এবং ইকুয়িটি পারটিসিপেশন ফান্ড নামক দুটি প্রতিষ্ঠানকে একত্র করে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক গঠিত হয়। বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরে এই ব্যাংকের শাখা অফিস রয়েছে । বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নে এই ব্যাংকের ভূমিকা পরিলক্ষিত হয় । যেমন-
(ক) দেশে নতুন শিল্প স্থাপন ও বিদ্যমান শিল্পগুলোকে আধুনিক করার জন্যে এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় । (খ) শিল্প ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন ও সম্প্রসারন ক্ষেত্রে এই ব্যাংক ভূমিকা রাখে ।
(গ) নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এই ব্যাংক ভূমিকা পালন করে ।
(ঘ) স্বল্প মেয়াদী চলতি ঋণসহ দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান এই ব্যাংকের একটি প্রধান কাজ ।
(ঙ) শিল্প সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করে এই ব্যাংক উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেয় ।
(চ) বিনিময় বিল ক্রয় বিক্রয় ও বাট্টাকরনের ক্ষেত্রে এই ব্যাংক ভূমিকা রাখে ।
(ছ) অনুন্নত এলাকায় শিল্প প্রসারের ক্ষেত্রে এই ব্যাংক অবদান রাখে ।
(জ) প্রকল্প প্রনয়ন করে বেসরকারী উদ্যোক্তা কর্তৃক বিনিয়োগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই ব্যাংক ভূমিকা রাখে । এছাড়াও বাণিজ্যিক ব্যাংকের যাবতীয় কাজ শিল্প ব্যাংক সমাধান করে থাকে। যেমন- পাট শিল্প ও পাট সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্প,বস্ত্র শিল্প, কাগজ শিল্প, মুদ্রণ, চিনি, চামড়া, বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস, সার, রবার, রাসায়নিক, খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা, পরিবহণ সরঞ্জাম, হোটেল নির্মাণ, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প- এ রকম বহু
শিল্পে শিল্প ব্যাংক তার ঋণদান কার্যক্রমকে প্রসারিত করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
(৩) গ্রামীণ ব্যাংক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং গ্রমীণ ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীণ ব্যাংকের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৬ সনের ডিসেম্বর মাসে সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী জোবরা নামক গ্রামে তিনি "গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প ১” নামে একটি গবেষণা প্রকল্প চালু করেন ।
তিন বছর পর ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় টাঙ্গাইল জেলায় এ প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ক্রমাগত সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৮৩ সালে সরকার কর্তৃক 'গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ' জারি করার মাধ্যমে এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশেষ অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ।
মূলধন গঠন ও পরিচালনা
গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদিত ও পরিশেধিত মূলধনের পরিমাণ যথাক্রমে ৫০ কোটি টাকা এবং ২৬.৫০ কোটি টাকা। ব্যাংকের ৮৮% শেয়ারের মালিক ঋণগ্রহীতা ও সদস্যগণ এবং অবশিষ্ট ১২% শেয়ারের মালিক সরকার ।
১৩ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালকমন্ডলী দ্বারা পরিচালিত গ্রামীণ ব্যাংক । ১ জন সভাপতি, ১ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সরকার কর্তৃক মনোনীত দু'জন সদস্য এবং বাকি ৯ জন সদস্য ভূমিহীন শেয়ার মালিকদের মধ্যে থেকে নির্বচিত সদস্য নিয়ে গঠিত পরিচালনা পর্ষদ ।
উদ্দেশ্য
১। দেশের ভূমিহীন কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ও জামানতবিহীন ঋণ প্রদান ।
২। দরিদ্র পুরুষ ও মহিলাদের নিকট ব্যাংকিং সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করা ।
৩। গ্রামের সুদখোর ব্যবসায়ী, মহাজনদের হাত থেকে দরিদ্র জনসাধারণকে রক্ষার জন্য তুলনামূলকভাবে কম সুদে ঋণ প্রদান করা ।
৪ । “স্বল্প আয় —— স্বল্প সঞ্চয় — স্বল্প নিয়োগ — স্বল্প আয়” নামক দুষ্টচক্রকে বিনিয়োগের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক উন্নতি করা ।
৫ । গ্রামীণ বিশাল বেকার ও অদক্ষ জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন খাতে ঋণদানের মাধ্যমে স্ব-কর্মসংস্থানে নিয়োজিত করা ।
৬। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের দুর্বল অংশগুলোকে যথাযথভাবে সাহায্য করে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা।
(৪) অন্যান্য বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নে শিল্প ব্যাংক ছাড়াও বাংলাদেশ পুজি বিনিয়োগ সংস্থা ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭৬ সনে বাংলাদেশ পুজি বিনিয়োগ সংস্থা এবং ১৯৭২ সনে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ দুটি সংস্থা বিশেষ ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ ক্ষেত্র সম্প্রসারন, মূলধন বাজার উন্নয়ন, শিল্প উন্নয়নে সহায়তা প্রদান, কারিগরী সহযোগীতা প্রদানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ দুটি সংস্থার প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়।
বাংলাদেশ গৃহ নির্মাণ ঋণদান সংস্থা আবাসিক গৃহ নির্মাণে ঋণ প্রদান করে। এই ঋণদানের মাধ্যমে আবাসিক সমস্যা সমাধান হয় এবং পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে বাংলাদেশ কমাস এন্ড ইনভেষ্টমেন্ট লিমিটেড ১৯৮৬ সালে স্থাপিত হয়। এর প্রধান কার্যালয় ঢাকা এবং শাখা অফিস চট্টগ্রামে অবস্থিত। ১৯৮৫ সনে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট লিজিং কোম্পানী অব বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কোম্পানী দেশী ও বিদেশীদের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]