গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য লাঘবে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা

গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য লাঘবে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা Role of Grameen Bank in Employment Generation and Poverty Alleviation of the Rural Poor in Bangladesh
আর্থিক বিশেষজ্ঞ (Financial expert) H. Patrick এর শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংক হল একটি যোগান-চালিত (Supply leading) আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা গরীবদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ দান করে ।
(ক) দরিদ্র জনগণের কর্মসংস্থানে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা ঃ বাংলাদেশে গ্রামের দারিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে প্রয়োজনীয় মূলধন নেই। ফলে বেশিরভাগ বেকার, অর্ধবেকার ও ছদ্মবেশী বেকারত্বে ভূগছে । গ্রামীণ ব্যাংক এদেরকে টার্গেট গ্রুপ হিসাবে চিহ্নিত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কাজ পরিচালনা করছে বলা যায়।
১। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেক ভূমিহীন কৃষক বিভিন্ন কুটীর শিল্প এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতে পারছে। আগে এদের বেশিরভাগ অন্যের জমিতে দিনমজুর হিসাবে কাজ
করতো। অনেকে মহাজনের গদিতে কাজ করতো এবং কেউ কুলী হিসাবে নিয়োজিত ছিল। আমীণ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে আজ অনেকেই রিক্শা ও ভ্যান চালাচ্ছে। এভাবে গ্রামীণ ব্যাংক পল্লী অঞ্চলে স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলা যায় ।
২। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক হল মহিলা যাদের বেশিরভাগ গ্রামে বসবাস করে। পরিবারের আয়ের উপর এরা মূলত নির্ভরশীল ছিল। গ্রামীণ ব্যাংক এই মহিলাদেরকে বিশেষ টার্গেট গ্রুপ বিবেচনা করে এদের স্ব-কর্মসংস্থানের উপর গুরুত্ব দেয়। এ লক্ষ্যে গ্রামীণ ব্যাংক এ মহিলাদেরকে বিশেষ টার্গেট গ্রুপ বিবেচনা করে । ব্যাংকের সদস্যের মধ্যে ৯৪ শতাংশ হল মহিলা। মহিলাদের মধ্যে যারা পূর্বে স্বামী/পরিবারের আয়ের উপর নির্ভরশীল ছিল তাদের অনেকেই গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়ে নিজেকে বিভিন্ন উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করতে সক্ষম হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে । লও হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক কি পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে তার সরাসরি তথ্য না পাওয়া গেলেও সদস্যদের ঋণ পরিশোধের হার থেকে অনেকটা বুঝা যায়। সদস্যদের ঋণ পরিশোধের হার ৯৮ শতাংশ হওয়ায় বলা যায় ব্যাংকের সদস্যরা উৎপাদনশীল খাতেই ঋণের টাকা খাটায়। এ সূত্রে বলা যায় গ্রামীণ ব্যাংক সেসব মহিলা ও পুরুষদের জন্য স্ব-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে যারা আগে বেকার অথবা আধা-বেকার ছিল ।
(খ) গ্রামীণ দারিদ্র দূরীকরণে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা ঃ বাংলাদেশের উন্নয়ন নীতি ও লক্ষ্যসমূহের মধ্যে দারিদ্র বিমোচন একটি প্রধান লক্ষ্য। বর্তমানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনশীল শক্তি হিসাবে চিহ্নিত করা হয় যার বিশেষ কতিপয় দিক নিম্নরূপ ।
১। দরিদ্র জনগোষ্ঠী কোন দায় নয় বরং তারা সম্পদ ।
২। দরিদ্ররা কর্মক্ষম, তাদের দরকার পুঁজি এবং ঋণ ।
৩। পুঁজি ও ঋণ পেলে তারা দারিদ্রের দুষ্ট চক্র ভেঙ্গে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগে সক্ষম হবে এবং এই প্রক্রিয়ায় দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে পারবে ।
গ্রামীণ ব্যাংক উপরোক্ত দর্শনে বিশ্বাসী । এর প্রেক্ষিতে দারিদ্র নিরসনে ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম চালু করেছে । বর্তমানে দেশে দরিদ্রদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকারি প্রচেষ্টার সহযোগী হিসাবে ১৩৩টি বিদেশী বেসরকারি সংস্থাসহ প্রায় ৯০০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাফল্য লাভ করেছে গ্রামীণ ব্যাংক ।
(a) একটি যোগান-চালিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে গিয়ে তাদেরকে উৎপাদনশীল কাজে উৎসাহিত করে ঋণ দেয় । এতে গ্রামের দারিদ্র জনগোষ্ঠীর অনেকেই আত্মকর্মী হতে পেরেছেন এবং পারছেন।
(b) বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের নিচু জীবনযাত্রার মান এবং স্বল্প মাথাপিছু আয়ের প্রধান কারণ পুঁজির অভাব । প্রয়োজনীয় পুঁজি পেলে এসব লোক নিজেরাই আয় বাড়াতে সক্ষম । গ্রামীণ ব্যাংক সহজ শর্তে প্রচুর ঋণ প্রদান করে এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
(c) গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রামাঞ্চলে ভূমিহীনদের শ্রেণী উত্তরণে সহায়তা করছে বলা যায়। আয় বাড়ায় অনেক গরীব পরিবার রেডিও, টু-ইন-ওয়ান এবং এমনকি টেলিভিশনসহ অপরাপর স্থায়ী ভোগ্যদ্রব্য ক্রয়েও সক্ষম হচ্ছে। এতে তাদের জীবনযাত্রার মান বাড়ছে বলা যায় ।
(d) গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেক ভূমিহীন পুরুষ এবং মহিলা কূটীর শিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় নিয়োজিত থেকে পূর্বের চেয়ে বেশি আয় উপার্জনে সক্ষম হচ্ছে। মহিলারা হাস-মুরগী ও গবাদি পশু পালন এবং অপরাপর কাজকর্মে নিয়োজিত থেকে পরিবারের আয় বাড়াতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে বলা যায়। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের মধ্যে ৬১ শতাংশ নমনীয় দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে- যেখানে অন্যান্য লোকজনের মধ্যে এ হার শতকরা ৮০ ভাগ। আবার ব্যাংকের সদস্যদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ চরম দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে- যেখানে অন্যান্য লোকজনের মধ্যে এ হার ৭৮% । এসব তথ্য থেকে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, দারিদ্র দূরীকরণে গ্রামীণ ব্যাংক অনেক দূর সফল হয়েছে ।
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যর্থতা Failures of Grameen Bank
গ্রামীণ ব্যাংক অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি ব্যর্থ হয়েছে । কিছু জরীপ থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের কিছু ব্যর্থতা বেরিয়ে এসেছে ।
১ । কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা জ্ঞাত অথবা অজ্ঞাতে হোক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে ব্যাংক ঋণ দিয়েছে সেক্ষেত্রে ব্যবহার না করে ঋণগ্রহীতারা অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে । পূর্বে অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা না থাকা সত্ত্বেও কিছু লোক নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসার জন্য ঋণ নিয়ে অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে ।
২ । কিছু ভূমিহীন কৃষক ঋণ নিয়ে উৎপাদন কাজে ব্যবহার না করে ভোগের জন্য ব্যবহার করেছে। ফলে কিছু ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতাদেরকে ভিটেমাটি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য করা হয়েছে ।
৩। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে স্বল্প পরিমাণ ঋণ নিয়ে কিছু ঋণগ্রহীতা তীব্র প্রতিযোগিতা হেতু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে টিকে থাকতে পারে নাই । তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসায়ে লোকসান দিতে বাধ্য হয়েছে । টাঙ্গাইলে এক জরীপ থেকে দেখা যায় স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের ৬০% ঋণের অর্থ ব্যবসায়ে খাটাতে পারেনি ।
৪ । কিছু ক্ষেত্রে ঋণের উৎপাদনশীল ব্যবহার না করতে পারায় দরিদ্র বা ভূমিহীন কৃষক ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয় । এক্ষেত্রে ব্যাংকের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মানসিক এবং এমনকি দৈহিক নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত বিরল নয় ।
তবে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যর্থতার চেয়ে সাফল্যের পাল্লাই ভারী-একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বাংলাদেশের গ্রামঞ্চলে যে শোষণ বহুদিন থেকে বিরাজমান তার নিরসন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার । গ্রামীণ ব্যাংক এ লক্ষ্যে কাজ করছে এবং আশা করা যায় এক্ষেত্রে ব্যাংক যথেষ্ট ভূমিকা অর্জনে অক্ষম হবে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]