বৈদেশিক বাণিজ্য, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য

External Sector of Bangladesh Introduction
২০০৮ ও ২০০৯ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠার আগেই ২০১০ সালের শেষ প্রান্তিক থেকে পুনরায় মন্দার আভাস পাওয়া যায়। মূলত ইউরো অঞ্চলে সার্বভৌম ঋণ সংকট ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রলম্বিত এনৈতিক মন্দার কারণে সারা বিশ্ব জুড়ে মন্দা প্রভাব বিস্তার শুরু করে। এছাড়া উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক সংকট মন্দা অবস্থা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। ২০১১ সালে বিশ্বব্যাপী এই অর্থনৈতিক অস্থিরতা তে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আমদানি ব্যয় ও রপ্তানী আয় উভয়ই কিছুটা হ্রাস পায়। বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি হয় যা ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটায়, সর্বোপরি চলতি হিসাবে চাপের সৃষ্টি করে। ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে রপ্তানি আয় এবং আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ৪.১১ শতাংশ ও ৪১.৪৭ শতাংশ এবং ৫.৪৭ শতাংশ ও ৪১.৭৯ শতাংশ । চলতি হিসাবের স্থিতি ছিল ৩৭২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ৯৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার । ২০১১ সালের ৩০ জুন তারিখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১০.৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত রপ্তানী প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ, আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৫২ শতাংশ । ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ পর্যন্ত চলতি হিসাবের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১,১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ৩০ এপ্রিল, ২০১৫ তারিখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অংক ছিল ২৪.০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । ২০১৪ সালের শুরু থেকে বাংলাদেশের বহিঃখাত পূর্বের বছরের সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হয়েছে।
বৈদেশিক বাণিজ্য Foreign Trade
একজন মানুষ যেমন তার প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে না। তেমনি কোন দেশও তার প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে না। তাই একজন অন্যজনের সাথে বা এক দেশ অন্য দেশের সাথে দ্রব্যসামগ্রী আদান প্রদান করে। এক পক্ষের সাথে অন্য পক্ষের দ্রব্যসামগ্রী বা সেবাকর্মের এরূপ আদান প্রদানকে বাণিজ্য বলে। এ বাণিজ্য যখন দেশের ভিতরে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সংঘটিত হয় তাকে আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলা হয়। আর একটি দেশ যদি চুক্তি অনুযায়ী অন্য কোন দেশের সঙ্গে দ্রব্যসামগ্রীর লেনদেন করে তাহলে তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে ।
ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, দৃষ্টিপাত, প্রাকৃতিক সম্পদের পার্থক্য প্রভৃতির কারণে বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন দ্রব্য উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা ভোগ করে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আপেক্ষিক সুবিধার কারণে বাংলাদেশ পাট ও যুক্তরাষ্ট্র গম উৎপাদন করে এবং পাট ও গম বিনিময়ের মাধ্যমে এ দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য সংঘটিত হয়। এভাবে আন্তর্জাতিক শ্রম বিভাগ ও বিশেষীকরণের মাধ্যমে দুই বা ততোধিক সার্বে রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত বাণিজ্যকে বৈদেশিক বাণিজ্য বলে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য Characteristics of Foreign Trade in Bangladesh
কোন দেশের অর্থনীতির অবস্থার উপর নির্ভর করে সেই দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য। কোন দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন, ভর, উৎপাদনের কৌশল ও অর্থনৈতিক অবস্থান ইত্যাদি ভেদে বৈদেশিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন ভিন্ন হয়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১। কৃষিজাত দ্রব্য ও কাঁচামাল রপ্তানি : বাংলাদেশের মোট রপ্তানির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হলে কৃষিজাত দ্রব্য ও কাঁচা পাট। কৃষিজাত দ্রব্যের মধ্যে, চা, চামড়া, তামাক, মাছ, সবজি ইত্যাদি প্রধান। নিম্নে কৃষিজাত দ্রব্যের রপ্তানির একটি হিসাব দেখানো হলো ।
২। শিল্পজাত দ্রব্য আমদানি ঃ বাংলাদেশ শিল্পজাত দ্রব্য যেমন- লৌহ, ইস্পাত, পেট্রোল, কয়লা, সিমেন্ট, রাসায়নিক দ্রব্য, ঔষধ পত্র ইত্যাদি আমদানি করে থাকে । নিম্নে এসব দ্রব্যের আমদানির একটি হিসাব দেখানো হল ।
৩। খাদ্য আমদানি : বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো খাদ্য শস্য আমদানি। বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে খাদ্য শস্য আমদানি করে থাকে। নিম্নে খাদ্য শস্য আমদানির একটি হিসাব দেখানো হলো।
৪। রপ্তানি বৈচিত্র ও বিস্তৃতি ও সম্প্রতিকালে রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতি ঘটেছে । বর্তমানে বাংলাদেশ শাক-সবজি, শুকনা মাছ, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, বৈদ্যুতিক তার ইত্যাদি রপ্তানি করে।
৫। জনশক্তি রপ্তানি ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো জনশক্তি রপ্তানি । বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি করে প্রতি বছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে।
৬। মূলধনী দ্রব্য আমদানি ঃ বাংলাদেশ প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মূলধন দ্রব্য আমদানি করে থাকে । নিম্নে মূলধনী দ্রব্য আমদানির একটি হিসাব দেখানো হলো ।
৭। মুসলিম দেশসমূহের সাথে বাণিজ্য ৪ বাংলাদেশের বেশিরভাগ বাণিজ্যই মুসলিম দেহসমূহের
সাথে হয়ে থাকে ।
৮। বিলাস দ্রব্যের আমদানি হ্রাস ও বর্তমানে বাংলাদেশে বিলাস দ্রব্যের আমদানি হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের আমদানির তালিকায় রয়েছে শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল, কলকারখানার যন্ত্রপাতি ইত্যাদি । ৯। অস্থিতিস্থাপক আমদানি ঃ বাংলাদেশ যেসব দ্রব্য আমদানি করে তাদের চাহিদা বেশির ভাগই অস্থিতিস্থাপক । অর্থাৎ দ্রব্যের দাম বাড়লেও চাহিদা তেমন হ্রাস পায় না ।
8
১০ । আমদানি নির্ভর বাণিজ্য ঃ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আমদানি নির্ভর । যে পরিমাণ দ্রব্য সামগ্রী রপ্তানি করা হয়, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি দ্রব্য আমদানি করা হয় ।
১১। বৈদেশিক বাণিজ্যে বিকেন্দ্রীকরণ ঃ আগের মত বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য এখন আর মুষ্টিমেয় লোকের হাতে নয় । এখন ছোট বড় সকলেই বৈদেশিক বাণিজ্যের সাথে জড়িত ।
১২। মুষ্টিমেয় দেশের সাথে বাণিজ্য : বিশ্বের প্রায় সকল দেশের সাথে বাংলাদেশের ভাল সম্পর্ক থাকলেও বৈদেশিক বাণিজ্য মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশের সাথে সীমাবদ্ধ । যেমন- বাংলাদেশের রপ্তানির বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইতালি, কানাডা ইত্যাদি দেশের সাথে সংগঠিত হয়ে থাকে । নিম্নে একটি টেবিলের মাধ্যমে বিষয়টি দেখনো হলো ।
১৩। প্রতিবেশি দেশের সাথে বাণিজ্য : বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে অধিক বাণিজ্য। ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, মায়ানমার প্রভৃতি দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য রয়েছে। যেমন- ২০১৩-১৪ অর্থবছরে শুধুমাত্র ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে ৬,০৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যদ্রব্য। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ডিসেম্বর' ২০১৪ পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানি করা হয় ২,৯১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যদ্রব্য ।
১৪ । ডলার ও স্টার্লিং এলাকার সাথে বাণিজ্য : বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ডলার ও স্টালিং এলাকার সাথে বাণিজ্য । উপরের টেবিলে লক্ষ্যণীয় যে, দেশের বেশির ভাগ বাণিজ্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার সাথে সংগঠিত হচ্ছে।
১৫। প্রতিকূল বাণিজ্যিক ভারসাম্য ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিকূল লেনদেন ভারসাম্য। নিম্নে একটি টেবিলের মাধ্যমে বিষয়টি দেখানো হলো।
১৬। স্থিতিস্থাপক দ্রব্য রপ্তানি : বাংলাদেশ যেসব দ্রব্য রপ্তানি করে, সেসব দ্রব্যের চাহিদা 'তুলনামূলকভাবে বেশি স্থিতিস্থাপক, অর্থাৎ দাম বাড়লে রপ্তানি কমে যায় ।
১৭ । রপ্তানি আয়ের স্বল্পতা ঃ বাংলাদেশ সাধারণত কাঁচামাল ও কৃষিজাত দ্রব্য রপ্তানি করে । ফলে রপ্তানি আয়ে স্বল্পতা দেখা যায় ৷
১৮। ওয়েজ আর্নারস স্কীম : ওয়েজ আর্নারস স্কীমের প্রবর্তন আমাদের দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ স্কীমের আওতায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের অর্জিত অর্থ দ্বারা দ্রব্য সামগ্রী আমদানি করতে পারে ।
১৯। সমুদ্র পথে অধিক বাণিজ্য : আমাদের দেশের বেশির ভাগ বাণিজ্যই সমুদ্র পথে হয়ে থাকে । ২০ । বিলাসজাতীয় দ্রব্যের আমদানি হ্রাস ঃ আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের বিলাসজাতীয় দ্রব্যের আমদানি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে ।
২১। সরকারি নিয়ন্ত্রণ হ্রাস ঃ স্বাধীনতার পর পর বৈদেশিক বাণিজ্যে সরকারের যে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল, তা বর্তমানে আর নেই । সরকার বৈদেশিক বাণিজ্যে এখন বেসরকারি খাতকে উৎসাহ দিচ্ছে ।
২২। বিদেশি প্রভাব ঃ আমাদের দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে এখনো বিদেশি প্রভাব রয়েছে । যেমন- বিদেশি ব্যাংক, বীমা ও জাহাজ ইত্যাদির মাধ্যমেই বেশির ভাগ বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে । বাংলাদেশে বৈদেশিক বাণিজ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য একদিকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি করতে হবে অন্যদিকে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে হবে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]