আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব
Importance of International Trade in the Economy of Bangladesh
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে সেই দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমাণের উপর । তাই যে কোন দেশের অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। তে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব অপরিসীম । নিম্নে তে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব দেখানো হলো ।
১। সম্পদের কাম্য 'ব্যবহার ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কারণে প্রত্যেক দেশ তাদের তুলনামূলক ব্যয় সুবিধা নীতির ভিত্তিতে দ্রব্য উৎপাদন করে। ফলে প্রত্যেক দেশ তাদের সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুবই প্রয়োজন ।
২। উৎপাদন খরচ কম ঃ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে যে দেশ যেই দ্রব্য উৎপাদনে তুলনামূলক বেশি সুবিধা ভোগ করে, সেই দ্রব্য উৎপাদন করে। ফলে দ্রব্যের উৎপাদন খরচ কম হয় ।
৩। উদ্বৃত্ত পণ্য রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে আয় বাড়ানো যায়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত পণ্য থেকে যে রপ্তানি আয় হয় তা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। নিম্নে বাংলাদেশে উদ্বৃত্ত পণ্য রপ্তানি করে যে আয় হয় তা একটি টেবিলে
দেখানো হলো ।
৪ । উৎপাদন সর্বোচ্চশরণ : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে উৎপাদন সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায় ।
৫। অনুৎপাদিত দ্রব্য ভোগের সুবিধা : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে কোন দেশ কোন বিশেষ দ্রব্যের উৎপাদন না করতে পারলেও তা অন্য দেশ থেকে আমদানি করে ভোগ করতে পারে ।
৬। নির্ভরশীলতা হ্রাস : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে দরিদ্র দেশগুলো আস্তে আস্তে লাভবান হয়ে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারে । এর ফলে বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পায় ।
৭। প্রদর্শনমূলক প্রভাব ঃ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে প্রদর্শনমূলক প্রভাব (Demonstration effect) দ্বারা একটি আর্থ-সামাজিক অবস্থায় উন্নতি সাধিত হয় ।
৮ । মূলধনী দ্রব্য আমদানি ঃ বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশগুলো মূলধনী দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে না । ফলে এরূপ দ্রব্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে কম খরচে অন্য দেশ থেকে আমদানি করে থাকে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৯। শিল্প উন্নয়ন ঃ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের ফলে দেশে অগ্রগতি ও পশ্চাৎমুখী যোগসূত্র প্রভাব (Forward and backward effect) সৃষ্টি হয়, যা সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে ।
১০। একচেটিয়া বাজার রোধ ঃ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে প্রত্যেক দ্রব্যের বাজার সম্প্রসারণ
ঘটে । এর ফলে একচেটিয়া কারবারের সৃষ্টি হতে পারে ।
বাংলাদেশের বহিঃখাত
১১। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা : প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কোন দেশের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর উৎপাদন ব্যহত হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অন্য দেশ হতে আমদানি করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ
মোকাবেলা করা যায় ।
১২। শিল্পের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে একটি দেশ বিশেষ দ্রব্য প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করে । ফলে ঐ দ্রব্য উৎপাদনে বিশেষ দক্ষতা লাভ করে। এতে শিল্পের উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি পায় ।
১৩। আন্তর্জাতিক সম্প্রীতি : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পায় । ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্ৰতি বৃদ্ধি পায় ।
১৪। প্রতিষ্ঠানসমূহের বাহ্যিক ব্যয় সংকোচন : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেরত দেশগুলোর শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্প্রসারিত হয়ে থাকে । ফলে ঐ সব শিল্প প্রতিষ্টানের বাহ্যিক ব্যয় হ্রাস পায় ।
১৫। সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধি ঃ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে সামাজিক কল্যাণ বৃদ্ধি পায় ।
১৬। দেশীয় বাজার সম্প্রসারণ : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে বিশ্বব্যাপী দেশীয় বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হয় । এর ফলে উৎপাদনকারীদের উৎপাদন ক্ষমতা এবং মুনাফা উভয়ই বৃদ্ধি পায় ।
১৭। দ্রব্যের দাম কম ঃ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে যে দেশ যে দ্রব্য উৎপাদনে বেশি সুবিধা ভোগ করে, সেই দেশ সেই দ্রব্য উৎপাদন করে । ফলে দ্রব্যের দাম হ্রাস পায় ।
১৮। খাদ্য ঘাটতি পূরণ ঃ বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ খাদ্য ঘাটতিকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে তা পূরণ করা হয় । উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, 'বাংলাদেশের মত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে জনশক্তির মান উন্নয়ন, শিল্পের বিকাশ সাধন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ইত্যাদি সম্ভব । তাই বাংলাদেশসহ এ ধরনের দেশে উন্নয়নের কৌশল বৈদেশিক ঋণ নির্ভর না হয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য নির্ভর হওয়া উচিত ।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পরিবর্তনের গতিধারা
Trends of Changes in International Trade of Bangladesh
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রকৃতিগত ও কাঠামোগত অনেক পরিবর্তন হয়েছে । বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিবর্তনের ধারা নিয়ে আলোচনা করা হলো ।
১। রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ ঃ অতীতে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য শুধু পাট, চা, চামড়া প্রভৃতি কয়েকটি কৃষিপণ্য নিয়ে গঠিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে তৈরি পোশাকের অবদান বৃদ্ধি পেয়েছে, সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের মাছ, হিমায়িত চিংড়ি, টাটকা ফল, শাকসবজি প্রভৃতি অপ্রচলিত পণ্য সংযোজিত হয়েছে । আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২। অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি : বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ে অপ্রচলিত পণ্যের পরিমাণ পূর্বাপেক্ষা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে অপ্রচলিত পণ্য, যেমন- তৈরি পোশাক, হস্ত শিল্প, পান-সুপারি, শাক-সবজি ফলমূল ইত্যাদির পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে ।
৩। মূলধনী দ্রব্যের আমদানি : বর্তমান বিলাসজাত ভোগ্যপণ্যের আমদানি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে । শিল্পে স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য মূলধনী দ্রব্যের আমদানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে ।
৪। শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি ঃ স্বাধীনতার পর মোট রপ্তানিতে শিল্পজাত দ্রব্যের পরিমাণ ছিল। খুবই সামান্য। আস্তেআস্তে রপ্তানি বাণিজ্যে শিল্পজাত দ্রব্যের পরিমাণ বাড়তে থাকে । স্বাধীনতার পর পর রপ্তানি দ্রব্যের ৮০ ভাগই ছিল কাঁচাপাট ও কৃষিজাত দ্রব্য । বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৯০ ভাগই শিল্পজাত পণ্য। ৫। বিলাসজাত দ্রব্যের আমদানি হ্রাস : সাম্প্রতিকালে সরকার বিলাসজাত দ্রব্যের আমদানি
নিরৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে এসব দ্রব্যের আমাদনির উপর উচ্চ হারে কম আরোপ করছে ।
৬। সার্কভূক্ত দেশের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি ঃ সার্ক গঠনের পর সার্কভুক্ত দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে ।
৭। বেসরকারি খাতে বাণিজ্য বৃদ্ধি ঃ স্বাধীনতার পরপর আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের অধিকাংশ সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্যে সরকারি খাতের ভূমিকা আস্তে আস্তে হ্রাস পাচ্ছে ।
৮। জনশক্তি রপ্তানি ঃ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ।
৯। রপ্তানি নীতির পরিবর্তন ঃ আগে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের সুষ্ঠু কোন পরিকল্পনা ছিল না । বর্তমানে সুষ্ঠ বাণিজ্য রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি আমদানি-রপ্তানি নীতি (১৯৯৭-২০০২) কার্যকর করা হয়েছে ।
১০। বাণিজ্য বিকেন্দ্রীকরণ ঃ স্বাধীনতার পর পর আমাদের বাণিজ্য ছিল কেবল সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সাথে । বর্তমানে বিশ্বের সকল দেশের সাথেই আমাদের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সুসম্পর্ক রয়েছে।
১১। ওয়েজ আনারস স্কীম ঃ ১৯৭৪-৭৫ সালে এ স্কীম চালু হয়। প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের অর্জিত অর্থ দ্বারা এ স্কিমের আওতায় পণ্য সামগ্রী আমদানি করতে পারে ।
১২। ডলার এলাকার সাথে বাণিজ্য : পূর্বে পাউন্ড ষ্টার্লিং এলাকার সাথে বাণিজ্য অধিক হতো। বর্তমানে এ এলাকার পাশাপাশি ডলার এলাকার সাথে বাণিজ্যের পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।.
১৩। বাণিজ্যিক ভারসাম্য : বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্যের প্রতিকূলতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । নিম্নে একটি টেবিলের মাধ্যমে বিষয়টি দেখানো হলো ।
১৪ । একচেটিয়া প্রভাব হ্রাস : স্বাধীনতার পরপর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানির জন্য মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ছোট বড় সকলেই আমদানি- রপ্তানি বাণিজ্যের সুযোগ পাচ্ছে ।
1
১৫। নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থা : স্বাধীনতার পর আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল বিদেশী পরিবহণ নির্ভর । বর্তমানে আস্তে আস্তে বৈদেশিক বাণিজ্যে বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে । উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায়, সাম্প্রতিকালে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের গতি প্রকৃতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে । ভবিষ্যতে বৈদেশিক বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতিতে এমনভাবে পরিবর্তন আনতে হবে যাতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি দূর করা সম্ভব হয় এবং লেনদেন ভারসাম্যের উন্নতি হয় ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত