বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রপ্তানি দ্রব্য Major Export Commodities of Bangladesh

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের তালিকায় রয়েছে কাঁচামাল ও কৃষিজাত দ্রব্য। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের গতি প্রকৃতিতে অনেকটা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে । বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রপ্তানি দ্রব্যকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (ক) প্রচলিত রপ্তানি দ্রব্য (Traditional Export Goods), (খ) অপ্রচলিত রপ্তানি দ্রব্যসমূহ (Non-Traditional Export Goods) । (ক) প্রচলিত রপ্তানি দ্রব্য (Traditional Export Goods) : বাংলাদেশ যেসব দ্রব্য চিরাচরিতভাবে অনেকদিন যাবত বিশ্ববাজারে রপ্তানি করে আসছে, সেগুলোকে প্রচলিত রপ্তানি দ্রব্য বলা হয়। যেমন- কাঁচা পাট, চা, চামড়া ইত্যাদি। প্রচলিত রপ্তানি দ্রব্যসমূহ নিম্নরূপ ।
১। কাঁচা পাট ঃ বাংলাদেশের রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে অতি প্রাচীন ও পরিচিত দ্রব্য কাঁচা পাট । পৃথিবীর মোট উৎপাদনের প্রায় ৭৫% ভাগ পাট বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। প্রতি বছর প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ একর জমিতে পাট উৎপন্ন হয়। যদিও কাঁচা পাটের রপ্তানি আগের তুলনায় কমে গেছে, তবুও মোট রপ্তানির প্রায় শতকরা ২ থেকে ২.৫ ভাগ আসে কাঁচা পাট থেকে । ২০১৩-২০১৪ সালে কাঁচা পাট থেকে আয় হয়েছে ১২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত এ খাতে আয় হয়েছে ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
২। পাটজাত পণ্য ঃ বাংলাদেশের প্রচলিত রপ্তানি পণ্যের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হলো পাটজাত পণ্য। বাংলাদেশের পাট কলগুলো থেকে উৎপাদিত পাটজাত দ্রব্যসামগ্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেমন- যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, জার্মানী, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয় । পাটজাত পণ্য থেকে মোট রপ্তানি আয়ের শতকরা ৫ থেকে ৮ ভাগ আসে। ২০১৩-১৪ সালে পাটজাত পণ্য থেকে ৬৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত এ খাতে আয় হয়েছে ৪৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
৩। চা ঃ বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য কৃষি পণ্যের মধ্যে চা দ্বিতীয় । দেশের মোট ১৫৮টি চা বাগানে প্রায় ৪৭৬৫০ হেক্টর জমিতে চা চাষ করা হয়। বছরে গড়ে প্রায় ৪৭ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয় । দেশের চাহিদা মিটিয়ে গড়ে ৩০-৩৫ মিলিয়ন কেজি চা বিদেশে রপ্তানি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, পাকিস্তান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মিশর প্রভৃতি দেশ বাংলাদেশের চা-এর প্রধান ক্রেতা। ২০১৩-১৪ সালে চা রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
৪ । চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য ঃ চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানিযোগ্য দ্রব্য। বাংলাদেশের গরু মহিষ, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি পশুর চামড়া অত্যন্ত উন্নতমানের । তাই বিদেশে এর চাহিদা ব্যাপক । ভারত, রাশিয়া, ব্রিটেন, জাপান, ইতালি, পোল্যান্ড, প্রভৃতি দেশে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে । বাংলাদেশে ২০১৪-১৫ সালে ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য থেকে আয় হয় ৭৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
৫। কাগজ, নিউজপ্রিন্ট ও কাগজজাত দ্রব্য ঃ বাংলাদেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য রপ্তানি পণ্য হলো কাগজ, নিউজপ্রিন্ট ও কাগজজাত দ্রব্য। আমাদের দেশের কাগজ ভারত, পাকিস্তান, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, ইরান, মায়ানমার প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয় । বাংলাদেশ এ খাত থেকে প্রতি বছর ৩-৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে ।
৬। ন্যাপথা, ফার্নেস অয়েল ও বিটুমিন : বাংলাদেশ বর্তমানে ন্যাপথা, ফার্নেস অয়েল ও বিটুমিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রপ্তানি করে। সিঙ্গাপুরে অবস্থিত সেল ইস্টার্ন পেট্রোলিয়াম লিঃ কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ইস্টার্ন রিফাইনারী লিঃ অপরিশোধিত খনিজ তৈল ও পেট্রোলিয়াম শোধন করে । ফলে শোধনাগারে প্রাপ্ত উপজাত দ্রব্য হিসেবে ন্যাপথা ও ফানের্স অয়েল উপাদিত হয়। প্রতি বছর এ ন্যাপথা, ফার্নেস অয়েল বিদেশে রপ্তানি করা হয় । এছাড়া দেশে তৈরি বিটুমিনও রপ্তানি করা হয় । ২০১৩-১৪ সালে এ খাতে আয় হয় ১৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
(খ) অপ্রচলিত রপ্তানি দ্রব্য সামগ্রী : কিছুদিন আগেও যেসব দ্রব্যসামগ্রী বিদেশে রপ্তানি হতো না, কিন্তু সাম্প্রতিককালে রপ্তানি করা হয়, তাকে অপ্রচলিত দ্রব্য বলা হয় । বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৯০-৯৫ ভাগ আসে অপ্রচলিত দ্রব্যসামগ্রী থেকে । নিম্নে বাংলাদেশের কয়েকটি অপ্রচলিত দ্রব্যের বিবরণ দেওয়া হলো ।
১। তৈরি পোশাক : বাংলাদেশের অপ্রচলিত রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে তৈরি পোশাক সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, যেমন- ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক থেকে । ২০১২-১৩ সালে তৈরি পোশাক থেকে আয় হয়েছে ১১,০৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৪০.৮ শতাংশ। ২০১৩-১৪ সালে এ খাতে ১২,৪৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয় । ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত এ খাতে আয় হয়েছে ৮,৪১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
২। হিমায়িত খাদ্য : বাংলাদেশে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ অপ্রচলিত রপ্তানিযোগ্য দ্রব্য হলো হিমায়িত খাদ্য । প্রতি বছর বাংলাদেশ হিমায়িত চিংড়ি, ব্যাঙের পা, শুটকি প্রভৃতি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে । বাংলাদেশের এসব খাদ্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ইতালি, ভারত, হল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে রপ্তানি করা হয় । ২০১৩-১৪ সালে এ খাতে ৬৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয় ।
৩। শাক-সবজি ও ফলমূল : সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল, পান, সুপারি, মসলা প্রভৃতি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে । ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে এসব দ্রব্য রপ্তানি করা হয় । এখাতে প্রতি বছর ৮০-৯০ কোটি টাকা আয় হয় ।
৪। হস্তশিল্পজাত দ্রব্য : বিশ্ব বাজারে আমাদের হস্তশিল্পের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। হস্তশিল্পজাত দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে হাতে তৈরি কার্পেট, অলংকার ও বিভিন্ন ধরনের মাটির পাত্র। মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর ও


ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমাদের এ হস্তশিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদা ব্যাপক। প্রতি বছর এ খাতে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। ২০১২-১৩ সালে এ খাতে আয় হয়েছিল ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০১৩-১৪ সালেও এ খাতে আয় হয়েছে ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
৫। সার ও রাসায়নিক দ্রব্য ঃ বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পার রাসায়নিক দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি হয়। ২০১৩-১৪ সালে এ খাতে আয় হয় ৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৬। নিট ওয়্যার (Knitwear) ৪ তৈরি পোশাকের একটি বিভাগ নিটওয়্যার। নিটওয়্যারের আওতায় রয়েছে পুরুষ ও ছেলেদের নিট শার্ট ( Knit Shirt), টি শার্ট, সোয়েটার, কার্ডিগেনস ইত্যাদি । প্রতি বছর নিটওয়্যার থেকে আয় হয় মোট রপ্তানির প্রায় ৩৫-৪০ ভাগ। ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ সালে নিটওয়্যার থেকে আয় হয়েছে যথাক্রমে ১০৪৭৬ ও ১২০৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৭। জুতা ঃ বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বাণিজ্যে রপ্তানিযোগ্য দ্রব্যের মধ্যে জুতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্য । প্রতি বছর এ দ্রব্য থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় হয়। ২০১২-১৩ ও ২০৩১-১৪ সালে এ খাত হতে আয় হয় যথাক্রমে ৪১৯ ও ৫৫০ মিলিয়ন ডলার ।
৮। সিরামিক দ্রব্য সামগ্রী ঃ প্রতি বছর বাংলাদেশ সিরামিক দ্রব্য সামগ্রী রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ সালে এ খাতে আয় হয় যথাক্রমে ৩৮ ও ৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
৯। ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্য : বর্তমানে অপ্রচলিত দ্রব্যের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্য রপ্তানি একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় । প্রতি বছর এসব দ্রব্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ সালে এসব দ্রব্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে যথাক্রমে ৩৬৮ ও ৩৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ।
১০। অন্যান্য ঃ উপরিউক্ত দ্রব্য ছাড়াও বাংলাদেশ কিছু অপ্রচলিত দ্রব্য, যেমন- দিয়াশলাই, গুড়, রেয়ন, ব্যাটারি, পার্টেক্স, বই, সাময়িকী ইত্যাদি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।. ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ সালে এ খাতে আয় হয় যথাক্রমে ৬৩৯ ও ৭৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার । নিয়ে গত কয়েক বছরের রপ্তানির পরিমাণ দেখানো হলো ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]