বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য ও বর্তমান গতিধারা

বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য ও বর্তমান গতিধারা Characteristics and Present Trend of Export in Bangladesh
বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ভিত অত মজবুত নয়। বাংলাদেশে রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বটেই এমনটি সার্কভূক্ত দেশসমূহের (নেপাল, ভূটান ও মালদ্বীপ ছাড়া) চেয়েও পিছিয়ে আছে । তবে বিগত বছরগুলোতে বিশেষ করে ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন ধীরে ধীরে কৃষি পণ্য রপ্তানিকারক দেশ থেকে শিল্পজাত পণ্য রপ্তানিকারক দেশে পরিনত হচ্ছে। নিমে বাংলাদেশে রপ্তানি বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য এবং বর্তমান গতিধারা আলোচনা করা হল ।
১। রপ্তানি পণ্যের স্বল্পতা ঃ বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা খুবই কম। হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য ছাড়া তেমন কোন পণ্য বাংলাদেশ রপ্তানি করে না । বাংলাদেশ যে সকল পণ্য রপ্তানি করে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তৈরি পোশাক, হোসিয়ারি, পাট, পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত চিংড়ী, চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য ইত্যাদি। তবে এ সকল প্রচলিত রপ্তানী পণ্যের বাইরে শাকসবজি, পান, সুপারি, ফুল, ফুটিং শিল্পজাত পণ্য ইত্যাদি অপ্রচলিত পণ্যও বাংলাদেশ রপ্তানী করে।
২। আমদানি নির্ভর রপ্তানি : বাংলাদেশ তৈরি পোশাকসহ অধিকাংশ শিল্পজাত রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে বিদেশের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির উপর নির্ভর করতে হয়। আবার কৃষি উৎপাদনে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক, উন্নত বীজ, সেচযন্ত্র, প্রভৃতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য আমদানি নির্ভর ।
৩। গার্মেন্টস শিল্পের প্রাধান্য : বাংলাদেশ যা কিছু শিল্পজাত পণ্য রপ্তানি করে তার সিংহভাগই হল তৈরি পোশাক । মোট শিল্পজাত রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৭০% হল তৈরি পোশাক ।
৪। সংকীর্ণ রপ্তানি বাজার : বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বাজার খুবই সংকীর্ণ। হাতে গোনা কয়েকটি দেশে মাত্র বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি করা হয় । তাছাড়া বিদেশী ক্রেতার পছন্দ অনুসারে বাংলাদেশ খুব বেশি মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করতে পারে না । ইংল্যাণ্ড, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব ছাড়া বিশ্বের অপরাপর দেশে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা খুব একটা নেই ।
৫। জনশক্তি রপ্তানি : বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে জনশক্তি রপ্তানি । ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বহুদেশে বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি করে । প্রায় ৭০ থেকে
৮০ লক্ষ নাগরিক বিদেশে নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে কর্মরত রয়েছে। যারা বিগত অর্থবছরগুলোতে ৭-৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করে প্রতি বছর দেশে পাঠিয়েছে।
৬। শিল্পজাত পণ্যের তুলনায় কৃষিজাত পণ্য অধিক রপ্তানি ঃ বাংলাদেশ প্রতি বৎসর শিল্পজাত পণ্যের তুলনায় কৃষিজাত পণ্য অধিক রপ্তানি করে । বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ । তাই আমাদের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় কৃষিজাত পণ্যের সংখ্যা বেশি । বাংলাদেশ শিল্পে অনগ্রসর বলে আমাদের শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ কম'। তবে ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর উদার শিল্পনীতি গ্রহণ ও বেসরকারীকরণের ফলে শিল্পজাত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে রপ্তানি আয়ও অনেক গুণ বেড়েছে । রপ্তানি পণ্যের তালিকায় নতুন নতুন শিল্পজাত পণ্য যুক্ত হচ্ছে । এর মধ্যে ঔষধ, সিরামিক, টয়লেট সামগ্রী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
৭ । কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হ্রাস : এক সময় বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি আসত পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি থেকে । কিন্তু সিনথেটিক ফাইবার আবিষ্কারসহ নানাবিধ কারণে পরিবর্তিত বিশ্বে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা হ্রাস পায়। তাই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে পাট ও পাটজাত পণ্যের অবদান ক্রমশ কমে যাচ্ছে ।
৮। রপ্তানিতে কৃষি পণ্যের অবদান হ্রাস ঃ বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের অবদান ক্রমশ কমছে। এক সময় (১৯৯০ এর পূর্ব পর্যন্ত) বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় পাট, পাটজাত পণ্য, চা ইত্যাদি কৃষিজাত পণ্যের সিংহভাগ অবদান ছিল। কিন্তু ক্রমশ রপ্তানিতে আমাদের কৃষিখাতের অবদান কমতে থাকে। তবে পাটের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারলে এবং পাটজাত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করতে পারলে বাংলাদেশে রপ্তানি আয়ে কৃষিখাতের অবদান আবারও বাড়তে শুরু করবে নিঃসন্দেহে বলা যায় ।
৯ । শ্রমনিবিড় রপ্তানি পণ্য : বাংলাদেশ যেসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে তার বেশিরভাগ শ্রমনিবিড় বা শ্রমঘন পণ্য । অর্থাৎ যে সকল পণ্য উৎপাদনে শ্রম বেশি ব্যবহৃত হয় সে সকল পণ্যই বাংলাদেশ বেশি রপ্তানী করে । যেমন- পাটজাত পণ্য, চা, তৈরি পোশাক, হোসিয়ারি পণ্য ইত্যাদি উৎপাদনে শ্রম বেশি লাগে । শ্রমঘন বা শ্রমনিবিড় পণ্য রপ্তানি করে বলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের দাম সস্তা ।
১০। রপ্তানিতে শিল্পজাত পণ্যের অবদান ক্রমবৃদ্ধি : বাংলাদেশের রপ্তানিতে এক সময় শিল্পখাতের অবদান কম ছিল । কিন্তু রপ্তানি বাণিজ্যে শিল্পখাত পণ্যের অবদান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ১৯৯০ এর পর গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর উদার শিল্পনীতি গ্রহণ ও ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে শক্তিশালী শিল্পখাত গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার পরবর্তী দশকে যেখানে রপ্তানিতে শিল্পখাতের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল না সেখানে বর্তমানে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৯৫% ।
১১। অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি : বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হুল দিন দিন প্রচলিত পণ্যের রপ্তানি কমে যাচ্ছে এবং অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে যেখানে প্রচলিত পণ্যের অবদান ছিল ৩৮% সেখানে ২০০৯-১০ অর্থবৎসরে রপ্তানি আয়ে প্রচলিত পণ্যের অবদান হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৫%। অন্যদিকে রপ্তানি আয়ে ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে অপ্রচলিত পণ্যের অবদান যেখানে ৬০% ছিল তা বেড়ে ২০১০-১১ তে এসে দাঁড়ায় ৯৫% ।
১২। সমুদ্র পথে রপ্তানির প্রাধান্য ৪ বাংলাদেশের সিংহভাগ রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয় সমুদ্রপথে । গ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের ৯৫% রপ্তানি পণ্য বিদেশে যায় ।
১৩। রপ্তানি আয়ের ক্রমবৃদ্ধি ৪ বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে
১৯৯১ সাল থেকে উদার শিল্পনীতি গ্রহণ ও অবাধ বাণিজ্য নীতি গ্রহণের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য বহুলাংশে সম্প্রসারিত হয়েছে। ২০১০-১১ এর দিকে এসে রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা ও পরিমাণ যেমন বেড়েছে তেমনি রপ্তানি বাজার তথা দেশের সংখ্যাও বেড়েছে। ১৯৯০-৯১ সনে রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ১৭১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কিন্তু ২০০৯-১০ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ১৫ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। বিগত কয়েক বছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ও প্রকৃত রপ্তানি হিসাব দেয়া হল ।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ভিত এখনও দূর্বল এবং নড়বড়ে। তবে রপ্তানীর পরিমাণ ও রপ্তানি আয় ক্রমশ বাড়ছে। যদি উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো যায় তবে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য আরও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]