অর্থশাস্ত্র কি
“অর্থশাস্ত্র” প্রসঙ্গে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের দৃষ্টিভঙ্গী আলোচনা করুন।


অর্থশাস্ত্র কি
অর্থশাস্ত্র কাকে বলা যাবে সেটা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা কখনও একমত হতে পারেননি। তবে এর
আলোচনা ও বিশ্লেষণের এলাকার অনেকগুলো দিক সম্পর্কে অনেকেই একমত।
এ্যাডাম স্মীথ বলেছিলেন, “অর্থশাস্ত্র হলো সম্পদ নিয়ে আলোচনার বিজ্ঞান।” জন স্টুয়ার্ট মিল মনে
করেন, “অর্থশাস্ত্র সম্পদের স্বরূপ এবং তার উৎপাদন ও বিতরণের নিয়মাবলী আলোচনা করে।”
১৮২০ সালের ৯ অক্টোবর ম্যালথাসের কাছে লেখা এক চিঠিতে রিকার্ডো যা বলেছিলেন তা অর্থশাস্ত্রের
সংজ্ঞা দাঁড় করানোর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বলা দরকার যে, তাঁদের সময়ে অর্থাৎ ক্ল্যাসিকাল
অর্থনীতিবিদদের সময়ে, বর্তমান সময়ে যাকে বলা হয় অর্থশাস্ত্র বা ঊপড়হড়সরপং তাকে বলা হতো
রাজনৈতিক অর্থনীতি বা চড়ষরঃরপধষ ঊপড়হড়সু। তিনি বলেছিলেন, “আপনাদের মতে রাজনৈতিক
অর্থনীতি হল সম্পদের প্রকৃতি এবং কারণ অনুসন্ধানÑ আমি মনে করি একে বলা উচিত বিভিন্ন
শ্রেণীর মধ্যে যে বিধি উৎপাদনের বিভাজন নির্ধারণ করে তাকে অনুসন্ধান করা। পরিমাণ দিয়েই কোন
বিধি দাঁড় করানো যায় না, কিন্তু অনুপাত থেকে মোটামুটি সঠিক একটি বিধি দাঁড় করানো যায়। দিনে
দিনে আমি আরও বেশি বেশি করে বুঝতে পারছি যে, আগের অনুসন্ধানটি অর্থহীন ও বিভ্রান্তিকর এবং
পরেরটিই কেবলমাত্র বিজ্ঞানের কাছে গ্রহণযোগ্য।”১
অর্থাৎ রিকার্ডোর এই বক্তব্য অনুযায়ী অর্থশাস্ত্রের
মূল কাজ হল অর্থনীতির ভেতরের সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক ও
তার সুবাদে সম্পদ বিতরণের বিধি অনুসন্ধান।
আলফ্রেড মার্শাল বলেন, “অর্থশাস্ত্র একদিকে যেমন সম্পদের বিজ্ঞান তেমনি অন্যদিকে এটি আরও
গুরুত্বের সঙ্গে মানুষ অধ্যয়নের বিজ্ঞান। এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা
করে।” লায়নেল রবিন্স সংজ্ঞা দাঁড় করিয়েছেন এভাবে, “অর্থশাস্ত্র হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যেটি
লক্ষ্য এবং বিকল্প ব্যবহারের সীমিত উপায়ের সম্পর্ক হিসেবে মানুষের কার্যকলাপ আলোচনা করে।”


“চড়ষরঃরপধষ ঊপড়হড়সু ুড়ঁ ঃযরহশ রং ধহ বহয়ঁরৎু রহঃড় ঃযব হধঃঁৎব ধহফ পধঁংবং ড়ভ বিধষঃয- ও ঃযরহশ রঃ ংযড়ঁষফ নব পধষষবফ ধহ বহয়ঁরৎু রহঃড় ঃযব
ষধংি যিরপয ফবঃবৎসরহব ঃযব ফরারংরড়হ ড়ভ ঃযব ঢ়ৎড়ফঁপব ড়ভ রহফঁংঃৎু ধসড়হমংঃ ঃযব পষধংংবং যিড় পড়হপঁৎ রহ রঃং ভড়ৎসধঃরড়হ. ঘড় ষধি পধহ নব ষধরফ
ফড়হি ৎবংঢ়বপঃরহম য়ঁধহঃরঃু, নঁঃ ধ ঃড়ষবৎধনষু পড়ৎৎবপঃ ড়হব পধহ নব ষধরফ ফড়হি ৎবংঢ়বপঃরহম ঢ়ৎড়ঢ়ড়ৎঃরড়হং. ঊাবৎুফধু ও ধস সড়ৎব ংধঃরংভরবফ ঃযধঃ
ঃযব ভড়ৎসবৎ বহয়ঁরৎু রং াধরহ ধহফ ফবষঁংরাব, ধহফ ঃযব ষধঃঃবৎ ড়হষু ঃযব ঃৎঁব ড়নলবপঃং ড়ভ ঃযব ংপরবহপব.” কবুহবং, এবহবৎধষ ঞযবড়ৎু, চ-৪
পাঠ - ১
রিকার্ডোর বক্তব্য অনুযায়ী
অর্থশাস্ত্রের মূল কাজ হল
অর্থনীতির ভেতরের, সমাজের
বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যকার
পারস্পরিক সম্পর্ক ও তার
সুবাদে সম্পদ বিতরণের বিধি

স্যামুয়েলসন বলেন, “অর্থশাস্ত্র হচ্ছে এমন একটি অধ্যয়নশাস্ত্র যেটি ব্যক্তি ও সমাজ কিভাবে অর্থের
ব্যবহার করে কিংবা না করে, উৎপাদনশীল সম্পদ যার বিকল্প ব্যবহার সম্ভব তাকে ব্যবহার করে
বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে এবং তা বর্তমান অথবা ভবিষ্যতে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যে
বিতরণ করে তার পর্যালোচনা করে।”
বস্তুত: অর্থশাস্ত্র মানুষের অর্থনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করে। আর এই অর্থনৈতিক
কার্যকলাপকে প্রধানত: চারটি ভাগে ভাগ করা যায়: উৎপাদন, ভোগ, বিতরণ ও বিনিময়। অর্থশাস্ত্র তা
যে পর্যায়েই হোক এই চারটি কাজকেই অধ্যয়নের মূল বিষয় হিসেবে নির্ধারণ করে। তবে এই অধ্যয়ন
যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকে তার দ্বারা প্রভাবিত হয়।
অর্থশাস্ত্র কিভাবে বিকশিত হয়েছে
মানুষ যখন থেকে উৎপাদন শুরু করেছে তখন থেকেই তার অর্থনীতি বিষয়ক চিন্তার শুরু। কি
উৎপাদন করতে হবে, কিভাবে উৎপাদন করতে হবে, কার জন্য উৎপাদন করতে হবে এসব চিন্তারও
সূত্রপাত তখনই। মানুষের জীবন যাপন, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, উৎপাদন করবার উপকরণ
সবকিছুই ক্রমান¦য়ে পরিবর্তিত হয়েছে। উৎপাদনের আয়তন বেড়েছে, উৎপাদনে বৈচিত্র্য এসেছে।
উৎপাদনের লক্ষ্য এক থাকেনি। এসব ক্ষেত্রে কখনো আস্তে আস্তে, কখনো ধীরে ধীরে যে পরিবর্তন
এসেছে তার কারণে অর্থনীতি বিষয়ে চিন্তার ক্ষেত্রে ক্রমান¦য়ে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
এক সময় ছিল যখন মানুষ যৌথভাবে জীবনযাপন করতো, যা কিছুউৎপাদন বা আহরণ হতো তা
পরিমাণেও ছিল অল্প আর যতটুকুছিল তা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়াতেই তারা অভ্যস্ত ছিল।
কালক্রমে মানুষের একদিকে উৎপাদনের ক্ষমতা বাড়ে, সম্পদ বাড়ে, অন্যদিকে মানুষের মধ্যে যৌথ
জীবনযাপনের আদিপর্বও শেষ হয়, দেখা দেয় তাদের মধ্যে বিভিন্ন ভাগ। একে একে মানুষ নানারকম
অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়। উৎপাদনের ধরন কিংবা উৎপাদনের লক্ষ্যে অনেক
পরিবর্তন হয়। প্রযুক্তির বিকাশ হয়, উৎপাদনের ক্ষমতা বাড়ে। এসব কারণে অর্থনীতি বিষয়ক চিন্তাও
এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেনি। তার বিকাশ ঘটেছে, অর্থনীতি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতি বিষয়ক
চিন্তার ক্ষেত্রে অনেক বৈচিত্র্য, অনেক গভীরতা এসেছে।
এখানে আরেকটি কথা বলা দরকার যে, মানুষের ইতিহাসে অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থা যেমন একটি
নয় বহু; তেমনি অর্থনীতি বিষয়ক তত্ত¡ বা অর্থশাস্ত্রও একটি নয়, বহু। আজকে আমরা যে অর্থনীতির
(বপড়হড়সু) মধ্যে বসবাস করি তাকে অনেক সময় এরকমভাবে বলা হয় যেন মানুষ চিরকাল এই
রকম একটি ব্যবস্থাতেই বসবাস করছে। আজকে আমরা যে অর্থশাস্ত্রকে (বপড়হড়সরপং) সবচাইতে
শক্তিশালী বা প্রভাবশালী হিসেবে দেখি সেটাকে অনেক সময় ভুলক্রমে এরকম মনে করা হয় যেন
অর্থনীতির এটাই একমাত্র ব্যাখ্যা, কিংবা অর্থশাস্ত্রের যেন একধরনের ব্যাখ্যাই বরাবর ছিল। কিন্তু তা
ঠিক নয়।
আমরা আগেই বলেছি যখন থেকে মানুষ উৎপাদন করছে তখন থেকেই তার কি উৎপাদন করা
দরকার, কিভাবে উৎপাদন করা দরকার, কিভাবে তার বিতরণ হবে, কে কি ভোগ করবে, মালিকানা
কি হবে ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করছে। এই চিন্তা থেকেই জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, নানা সূত্রাবলী।
এগুলোই অর্থনৈতিক তত্ত¡। তবে এসব চিন্তা এবং তত্ত¡ আগে ছিল অসংগঠিত ও বিচ্ছিন্ন।
এসব বিষয়ে গোছানো এবং লিখিত গ্রন্থ হিসেবে প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ হল: কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র।
এটি লিখিত হয়, প্রাচীন ভারতে, এখন থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। মৌর্য সাম্রাজ্যের
চন্দ্রগুপ্তের সময়ে। এর বাংলা অনুবাদ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৪ সালে কলকাতায়।২
অর্থনীতি
বিকাশের মাত্রার কারণেই সেসময় অর্থনীতি বিষয়ক আলোচনায় বিশেষায়ন মাত্রা ছিল কম। অন্য
অনেক বিষয়ও এখানে অর্থশাস্ত্রের আলোচনারই অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপরও বহুদিন পর্যাপ্ত জ্ঞানচর্চার
মধ্যে আমরা এই একই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করি। দীর্ঘ সময় ধরে জ্ঞানচর্চায় আরেকটি বৈশিষ্ট্যও বিশেষভাবে


অনুবাদ করেন ডক্টর রাধাগোবিন্দ বসাক
আমরা যে অর্থশাস্ত্রকে
সবচাইতে শক্তিশালী বা
প্রভাবশালী হিসেবে দেখি
সেটাকে অনেক সময়
ভুলক্রমে এরকম মনে করা
হয় যেন অর্থনীতির এটাই
একমাত্র ব্যাখ্যা, কিংবা
অর্থশাস্ত্রের যেন
একধরনের ব্যাখ্যাই
বরাবর ছিল। কিন্তু তা ঠিক
নয়।

উল্লেখযোগ্য, সেটি হল ধর্মের কাঠামোর মধ্যেই জ্ঞানচর্চা। কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র বা তৎকালীন গ্রীসে
জ্ঞানচর্চা অবশ্য ধর্মীয় কোন কাঠামোর মধ্যে হয়নি। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার বিভিন্ন কেন্দ্র স্থাপন,
সিদ্ধান্ত প্রণয়ন, নীতি নির্ধারণ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা ধর্মের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করি।
সেজন্য অর্থনীতি বিষয়ক জ্ঞানচর্চার একটি বড় অংশ আমরা পাই ধর্মগ্রন্থের মধ্যে। এছাড়া
রাজদরবারের নির্দেশ-হুকুমনামা, নীতিমালা, রাজ-পন্ডিতদের মতামত ইত্যাদিও দীর্ঘসময় অর্থশাস্ত্রের
ভিত্তি ছিল।
বর্তমান অর্থশাস্ত্রের বিকাশ ধারা
শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইউরোপে যে অর্থনৈতিক এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রের
পরিবর্তনগুলো আসে তাতে অন্যান্য জ্ঞান শাখার পাশাপাশি অর্থশাস্ত্র চর্চাও ধর্ম ও রাজদরবারের বাইরে
চলে আসে। মার্কেন্টাইলিস্ট এবং ফিজিওক্র্যাটদের ধারণাগুলোর বিশ্লেষণ এবং বিকাশ সাধন করে
সুসংগঠিতভাবে নতুন পর্যায়ে অর্থশাস্ত্র চর্চার সূচনা করেন এ্যাডাম স্মীথ (অফধস ঝসরঃয, ১৭২৩-৯০)।
তাঁর প্রধান গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৭৭৬ সালে, নাম : অহ ঊহয়ঁরৎু রহঃড় ঃযব ঘধঃঁৎব ধহফ ঈধঁংবং ড়ভ
ঃযব ডবধষঃয ড়ভ ঘধঃরড়হং। এরপর অর্থশাস্ত্রের ইতিহাসে যাঁর অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা
হয় তিনি হলেন ডেভিড রিকার্ডো (উধারফ জরপধৎফড়, ১৭৭২-১৮২৩)। কাছাকাছি সময়ের উল্লেখযোগ্য
অন্যান্য অর্থনীতিবিদদের মধ্যে আছেন : ম্যালথাস (ঞযড়সধং জড়নবৎঃ গধষঃযঁং, ১৭৬৬-১৮৩৪), জন
স্টুয়ার্ট মিল (ঔড়যহ ঝঃঁধৎঃ গরষষ, ১৮০৬-৭৩)। এঁদের সবার অবস্থানে অনেক পার্থক্য থাকলেও তাঁদের
পদ্ধতিগত অনেক মিলও আছে। সেজন্য তাঁদের মতবাদকে সম্মিলিতভাবে বলা হয় ক্ল্যাসিকাল ধারা
(ঈষধংংরপধষ ঝপযড়ড়ষ)।
শিল্প বিপ্লবোত্তর পুঁজিবাদী অর্থনীতি বিকশিত হতে থাকলে অর্থনীতি বিশ্লেষণের পদ্ধতি প্রকরণে নতুন
নতুন উপাদানের চাহিদা তৈরি হয়, যুক্তও হতে থাকে। ১৮৭০-এর দশকে প্রান্তিকতাবাদী বলে
পরিচিতরা বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নতুন অনেক বিষয় নিয়ে আসেন। এগুলোর সমন¦য়, বিকাশ ও তাকে
সুসংহতভাবে উপস্থাপন করেন আলফ্রেড মার্শাল (অষভৎবফ গধৎংযধষষ, ১৮৪২-১৯২৪)। তাঁর সবচাইতে
গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৮৯০ সালে, চৎরহপরঢ়ষবং ড়ভ ঊপড়হড়সরপং (১৮৯০)। মতাদর্শিকভাবে
ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে অভিন্ন অবস্থান থাকলেও বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নতুন উল্লেখযোগ্য
পরিবর্তনের সূচনা করেন তিনি এবং তাঁর কাছাকাছি সময়ের প্রান্তিক অর্থনীতিবিদরা। তাঁকে প্রান্তিক
অর্থনীতিবিদসহ তাঁর এই ধারাকে আখ্যায়িত করা হয় নয়া ক্ল্যাসিকাল (ঘবড়-পষধংংরপধষ ঝপযড়ড়ষ) ধারা
হিসেবে। আলফ্রেড মার্শালের মাধ্যমেই বিশেষভাবে ব্যষ্টিক অর্থশাস্ত্রের (গরপৎড় ঊপড়হড়সরপং) সূচনা
হয়। বর্তমানে এই নয়া ক্ল্যাসিকাল অর্থশাস্ত্রই মূলধারা হিসেবে বিবেচিত হয়।
ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদদের ধারাবাহিকতায় শুরু করেও অর্থশাস্ত্রে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র একটি ধারার সূচনা
করেন কার্ল মার্কস (কধৎষ গধৎী, ১৮১৮-১৮৮৩)। তাঁর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের প্রথম খন্ড প্রকাশিত
হয় ১৮৬৭ সালে, উধং ঈধঢ়রঃধষ। অন্য ধারার অর্থনীতিবিদরা যেখানে পুঁজিবাদকে একটি স্থায়ী ব্যবস্থা
হিসেবে বিবেচনা করেন সেখানে মার্কস একে দেখেছেন আগের ব্যবস্থাগুলোর মতোই পরিবর্তনশীল
একটি ব্যবস্থা হিসেবে। যদিও পুঁজিবাদের গভীর গতিশীল বিশ্লেষণই মার্কসের অর্থনীতি বিষয়ক
কাজের মূল দিক কিন্তু তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে পুঁজিবাদ-উত্তর উন্নততর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে
তাঁর বিশ্লেষণী ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
বিশ শতকে পুঁজিবাদী অর্থনীতির ক্ল্যাসিকাল ও নয়া ক্ল্যাসিকাল বিশ্লেষণ কাঠামো বড় ধরনের প্রশ্নের
সম্মুখীন হয় ২০ দশকের শেষে। সে সময় ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়
মহামন্দা দেখা যায়। মহামন্দা ব্যাপক আকার ধারণ করতে থাকলে ক্ল্যাসিকাল ও নয়া ক্ল্যাসিকাল
ধারার বিশ্লেষণের ভিত্তিÑ বাজারের স্বয়ংক্রিয়তা, অদৃশ্য হস্ত এবং অবাধ অর্থনীতির যাবতীয় ধারণা
এই সমস্যার সমাধানে অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হয়। দেখা যায়, শুধুবাজার নিজে নিজে পুঁজিবাদী অর্থনীতির
সংকট দূর করতে পারে না, সেখানে আরও কিছুবহিঃস্থ উদ্যোগের প্রয়োজন। রাষ্ট্রের ভ‚মিকা এখানে
শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে
ইউরোপে যে
অর্থনৈতিক এবং সেই
সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকরাজনৈতিক ক্ষেত্রের
পরিবর্তনগুলো আসে
তাতে অন্যান্য জ্ঞান
শাখার পাশাপাশি
অর্থশাস্ত্র চর্চাও ধর্ম ও
রাজদরবারের বাইরে
চলে আসে।

বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেইনসের (ঔড়যহ গধুহধৎফ কবুহবং, ১৮৮৩-১৯৪৬) তত্ত¡ তখন এই বিষয়ের
উপরই গুরুত্ব দেয় এবং অর্থশাস্ত্রে নতুন একটি ধারার সূচনা করে। তাঁর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ
প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে, ঞযব এবহবৎধষ ঞযবড়ৎু ড়ভ ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ, ওহঃবৎবংঃ ধহফ গড়হবু।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে অর্থশাস্ত্রের আরও অনেক বিকাশ হয়। অর্থশাস্ত্রের মধ্যে বহু শাখা প্রশাখার
উদ্ভব হয়। তবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, এর সবগুলোই আগে বর্ণিত কোন না কোন ধারার সঙ্গে
সম্পর্কিত। প্রধান ধারাগুলোর কেন্দ্রীয় বক্তব্যের সারসংক্ষেপ নিচে দেয়া হলো। এখানে আমরা যদি
অর্থশাস্ত্রের বিশ্লেষণের বিষয়াবলীকে ১. সম্পদের উৎস, ২. বিশ্লেষণের এলাকা, ৩. আয় বিতরণ এবং
৪. অর্থনীতির গতি এই চারটি ভাগে ভাগ করি তাহলে প্রধান চারটি ধারার পার্থক্যগুলো বোঝা
আমাদের জন্য সহজ হয়।
ছক ১ : অর্থশাস্ত্রের বিভিন্ন ধারার কেন্দ্রীয় বক্তব্য- সারসংক্ষেপ
ক্ল্যাসিকাল অর্থশাস্ত্র মার্কসীয় অর্থশাস্ত্র নিও ক্ল্যাসিকাল অর্থশাস্ত্র কেইনসীয়
সম্পদের উৎস শ্রম জীবিত ও মৃত শ্রম উপযোগ চাহিদা ও
যোগান
বিশ্লেষণের
এলাকা
জাতীয় সামগ্রিক একক সামষ্টিক
আয় বিতরণ সমাজের তিনটি
শ্রেণী-ভ‚স্বামী,
পুঁজিপতি ও
শ্রমিকদের মধ্যে
খাজনা, মুনাফা
এবং মজুরী
হিসেবে
মালিকানা ব্যবস্থার সঙ্গে
সম্পর্কিতভাবে, শ্রেণী
ভারসাম্য অনুযায়ী
প্রান্তিক
উৎপাদনশীলতা
অনুযায়ী
কর্মসংস্থান
অনুযায়ী
অর্থনীতির
গতিমুখ
একটি পর্যায়ের
পর স্থবিরতা
পুঁজিবাদের ভেতরেই
উন্নততর ব্যবস্থার শর্ত
তৈরি, যার বাস্তবায়ন
মানুষের সামষ্টিক
উদ্যোগের উপর
নির্ভরশীল।
একটানা সুসমনি¦ত
বিকাশ
দীর্ঘমেয়াে
দ সবাই
মৃত

চিত্র ১.১ : অর্থশাস্ত্রের প্রধান ধারাসমূহ
শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইউরোপে যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলো আসে
তাতে অন্যান্য জ্ঞান শাখার পাশাপাশি অর্থশাস্ত্র চর্চা ধর্ম ও রাজদরবারের বাইরে চলে আসে। সেই
সময়কাল থেকে অর্থশাস্ত্রের যে বিকাশ হয় আমরা তার প্রধান চারটি ধারার সন্ধান পাই। সেগুলো
হল: ক্ল্যাসিকাল অর্থশাস্ত্র, মার্কসীয় অর্থশাস্ত্র, নিওক্ল্যাসিকাল অর্থশাস্ত্র ও কেইনসীয় অর্থশাস্ত্র।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ১.১
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. কৌর্টিলীয় অর্থশাস্ত্র কোন্ সময়ের রচনা?
ক. উনিশ শতকে খ. এই বছরে
গ. প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ঘ. মহাযুদ্ধের সময়
২. ক্ল্যাসিকাল অর্থশাস্ত্রে সম্পদের উৎস হচ্ছে:
ক. শ্রম খ. উপযোগ
গ. জীবিত ও মৃত শ্রম ঘ. চাহিদা ও যোগান
৩. আলফ্রেড মার্শাল যে ধারার অর্থনীতিবিদ-
ক. ক্ল্যাসিকাল খ. নিওক্ল্যাসিকাল
গ. মার্কসীয় ঘ. কেইনসীয়
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্রের মূল বিষয় কি?
২. অর্থশাস্ত্রের বিভিন্ন ধারায় কেন্দ্রীয় বক্তব্য কি?

রচনামূলক প্রশ্ন
১. “অর্থশাস্ত্র” প্রসঙ্গে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের দৃষ্টিভঙ্গী আলোচনা করুন।
২. ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের আগে বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থশাস্ত্র বিষয়ক চর্চার ধরন কেমন ছিল?
৩. ইউরোপে অর্থশাস্ত্রের বিকাশে কাদের ভ‚মিকা গুরুত্বপূর্ণ? সে সম্পর্কে একটি কালানুক্রমিক
পর্যালোচনা লিখুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]