মিশ্র অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে

৪. দাম ব্যবস্থা: এ অর্থব্যবস্থায় বাজার অর্থনীতির দাম ব্যবস্থাকে অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ এখানে দ্রব্য বা সেবার দাম
স্বয়ংμিয়ভাবে চাহিদা ও যোগানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। তবে সরকার রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে দাম ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে
পারে।
৫. ব্যক্তি স্বাধীনতা: মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষিত হয়। এখানে ব্যক্তি কি পরিমাণ ভোগ করবে এবং উৎপাদক
কি দ্রব্য উৎপাদন করবে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্র খুব বেশি হস্তক্ষেপ করে না। তবে সমাজের স্বার্থে কোন কোন সময় ভোগ বা
বিপণনের ক্ষেত্রে সরকার বিধি-নিষেধ আরোপ করে।
৬. বণ্টন ব্যবস্থা: যেহেতু এ অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিমালিকানা বিদ্যমান, সেহেতু জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টন এখানে নিশ্চিত করা
কঠিন।
মিশ্র অর্থব্যবস্থায় মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান
মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সরকারি ও ব্যক্তিগত খাত পাশাপাশি অবস্থান করে। তাই এখানে উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন ও ভোগের
ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার পাশাপাশি সরকারি নিয়ন্ত্রণও বজায় থাকে। অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ব্যক্তিগত ও সরকারি
খাতের ভূমিকা নির্দিষ্ট করা হয়। যেমন- গুরুত্বপূর্ণ খাতসমূহ সরকারি নিয়ন্ত্রণে রেখে অন্যান্য খাতসমূহকে উদার
বেসরকারিকরণ করা হয়। এ অর্থব্যবস্থায় কি উৎপাদন হবে এবং কিভাবে উৎপাদন হবে এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও
বাস্তবায়নে সরকারি ও ব্যক্তিগত খাত উভয়ের ভ‚মিকা বিদ্যমান। সম্পদের মালিকানা ও ভোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা
থাকলেও সম্পদ ও আয় বণ্টনের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণও বজায় থাকে। এখানে স্বয়ংμিয় দামব্যবস্থা ও সরকারি নির্দেশে
দামব্যবস্থা পরিচালিত হয়।
ইসলামী অর্থব্যবস্থা (ওংষধসরপ ঊপড়হড়সরপ ঝুংঃবস)
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইহা মানব জীবন ও সমাজের প্রতিটি ধাপে প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান ও পথ নির্দেশনা
প্রদান করে। ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শরীয়াহ এর আলোকে প্রতিষ্ঠিত। শরীয়াহ এর মূল ভিত্তি হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহ।
যে অর্থব্যবস্থায় আল্লাহর বিধান অনুযায়ী অর্থনৈতিক কার্যাবলী পরিচালিত হয় এবং কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে অর্থনৈতিক
সমস্যার সমাধান করা হয় তাকে ইসলামী অর্থব্যবস্থা বলে। এ ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়
মানুষ জাতি ও সমাজের কল্যাণ সাধনে সীমিত সম্পদের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করা হয়।
ইসলামী অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য (ঋবধঃঁৎবং ড়ভ ওংষধসরপ ঊপড়হড়সরপ ঝুংঃবস)
১. সম্পদের মালিকানা: ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূলকথা হচ্ছে, “আকাশ ও জমিনে যা কিছু আছে তার মালিক হচ্ছেন
একমাত্র আল্লাহ। মানুষ কেবল আল্লাহর নির্দেশে তার প্রতিনিধি হিসেবে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং হেফাজত
করবে।
২. হালাল ও হারামের বিধান: এ অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, ভোগ ও বিনিময়ের ক্ষেত্রে হালাল ও হারাম বিষয়ের উপর অধিক
গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইসলামী বিধান অনুযায়ী হালাল পথে উপার্জন করতে হবে এবং হারাম পথে উপার্জন বর্জন
করতে হবে।
৩. সম্পদের বণ্টন: ইসলামী অর্থনীতিতে বণ্টন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে ধনীদের নিকট থেকে অর্থ
আদায় করে তা দরিদ্র জনগণের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বণ্টনের উদ্দেশ্যে যে সকল হাতিয়ার ব্যবহৃত হয়
তার মধ্যে রয়েছে যাকাত, ওশর, সাদকাহ, খারাজ ইত্যাদি।
৪. সামাজিক নিরাপত্তা: সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ ধরনের
অর্থনীতিতে সুদ, ঘুষ, জুয়া, মদ, কালোবাজারী ইত্যাদি অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এখানে দরিদ্র
জনগোষ্ঠীকে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের
ক্ষেত্রেও প্রত্যেককে সমান সুযোগ দেয়া হয়। এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় সরকার কর্তৃক সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা
বজায় রাখা হয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, “তারা প্রকৃত কল্যাণকর কাজ করল, যারা
আল্লাহ, পরকাল, কিতাব, ফেরেশতা ও নবীদের প্রতি ঈমান আনল এবং তাদের ধন সম্পদ আল্লাহর ভালবাসায়
নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, নিঃস্ব, পথিক, দরিদ্র ও μীতদাস মুক্তির জন্য দান করল।” [২:১৭৭]
৫. শ্রমের মর্যাদা: ইসলামী অর্থব্যবস্থায় শ্রমিক শোষণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, “শ্রমিকের গায়ের
ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার মজুরি পরিশোধ কর।”
৬. দাম ব্যবস্থা: এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় সরকার বা অন্য কোন একক পক্ষ দাম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
বাজারে অসংখ্য μেতা বিμেতার চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক μিয়া প্রতিμিয়ার মাধ্যমে স্বয়ংμিয়ভাবে দাম নির্ধারিত হয়।
ইসলামী অর্থব্যবস্থায় মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান
আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি ইসলামী অর্থব্যবস্থায় সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী
পরিচালিত হয়। এখানে ভোক্তা তার পছন্দ অনুযায়ী যেকোন দ্রব্য ইচ্ছামত ভোগ করতে পারে না। আবার উৎপাদন ও তার
ইচ্ছা ও সামর্থ্য অনুযায়ী দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে না। উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত বিধি
অনুসরণ করে চলতে হয়। এক্ষেত্রে হালাল-হারামের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়। ইসলামী অর্থব্যবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা যায় না। এখানে উৎপাদনকারী বা বিμেতা শোষণমুক্ত দামে দ্রব্য বিμি করবে যাতে তার ন্যায্য মুনাফা
অর্জনের পাশাপাশি ভোক্তা ঐ দ্রব্য μয় করে তার উপযোগ সর্বোচ্চ করতে পারে। এভাবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিও অর্জন
করা যায়। এ অর্থব্যবস্থায় উৎপাদিত দ্রব্যের উদ্বৃত্ত অংশ যাকাত ও সাদকাহ এর মাধ্যমে বণ্টন করে সামাজিক কল্যাণ ও
বৈষম্য দূর করা যায়।
সারসংক্ষেপ
 অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি সমাজ উৎপাদন, সম্পদের বন্টন ও বিনিময় এবং
দ্রব্য ও সেবার ভোগ এসবের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান প্রμিয়ার উপর ভিত্তি করে
পৃথিবীতে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
 যে অর্থব্যবস্থায় প্রতিটি ব্যক্তি বা ফার্ম উৎপাদন, বন্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে, তাকে ধনতান্ত্রিক
বা বাজার অর্থব্যবস্থা বলে।
 সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ঠিক বিপরীত। এ অর্থব্যবস্থায় দ্রব্যের দাম নির্ধারণে স্বয়ংμিয়
বাজার ব্যবস্থার কোনও ভূমিকা থাকে না এবং উৎপাদিত দ্রব্য ভোগ ও বন্টনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।
 মিশ্র অর্থব্যবস্থায় সরকারি ও ব্যক্তিগত খাত পাশাপাশি অবস্থান করে। তাই এখানে উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন ও
ভোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার পাশাপাশি সরকারি নিয়ন্ত্রণও বজায় থাকে।  ইসলামী অর্থব্যবস্থায় সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। কোন অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না?
(ক) ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা (খ) ইসলামী অর্থব্যবস্থা
(গ) সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা (ঘ) মিশ্র অর্থব্যবস্থা
২। মিতু একটি দেশে ভ্রমণ করতে গিয়ে দেখল সেখানে রাষ্ট্রীয় মালিকানার কোন প্রতিষ্ঠান নেই। ঐ দেশটিতে কোন ধরনের অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান?
(ক) ধনতান্ত্রিক (খ) সমাজতান্ত্রিক (গ) মিশ্র (ঘ) ইসলামী
৩। ইসলামী অর্থব্যবস্থায় সকল সম্পদের মালিক-
(ক) রাষ্ট্র (খ) সমাজ (গ) ব্যক্তি (ঘ) আল্লাহ
৪। স্বয়ংμিয় দাম ব্যবস্থা যে অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য, তা হচ্ছের. সমাজতান্ত্রিক
রর. মিশ্র
ররর. ধনতান্ত্রিক
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) রর ও ররর (গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
৫। মিশ্র অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হচ্ছের. সরকারি নিয়ন্ত্রণ
রর. স্বয়ংμিয় দাম ব্যবস্থা
ররর. ব্যক্তিগত স্বাধীনতা
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) রর ও ররর (গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর
নিচের উদ্দীপকটি পড়–ন এবং ৬ ও ৭ নং প্রশ্নের উত্তর দিন।
একটি দেশের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকা জরিপ করে দেখা গেল সেসব এলাকার জনগণ সবাই একসাথে ফসল উৎপাদন
করে। সেই উৎপাদিত ফসল সবার মাঝে প্রয়োজন অনুযায়ী বণ্টিত হয়।
৬. দেশটিতে কোন ধরনের অর্থব্যবস্থা বিদ্যমান?
(ক) সমাজতান্ত্রিক (খ) ধনতান্ত্রিক (গ) মিশ্র (ঘ) ইসলামী
৭. এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় ভোক্তা ও তাঁর ইচ্ছামত কোন দ্রব্য ভোগ করতে পারে না এবং উৎপাদনও করতে পারে না
কারণর. এ অর্থ ব্যবস্থায় উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যক্তি মালিকানাধীন
রর. কি পরিমাণ উৎপাদিত হবে এবং বণ্টন হবে তা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
ররর. সকল সম্পদ রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নিয়ন্ত্রিত
নিচের কোনটি সঠিক?
(ক) র ও রর (খ) রর ও ররর (গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]