মূলধনের সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগ,মূলধনের বৈশিষ্ট্য সমূহ ,মূলধনের শ্রেনী বিন্যাস

উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মূলধন। আমরা কোন কিছু করতে চাইলে প্রথমেই আমাদের প্রয়োজন হবে টাকা। এককথায় আমাদের মূলধন প্রয়োজন হয়। মূলধন গঠন, মূলধনের যোগান, মূলধনের গতিশীলতা নির্ভর করে মানুষের পূর্বানুমান, সঞ্চয়ের অভ্যাস এবং দক্ষতার ওপর। কোন দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখতে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
মূলপাঠমূলধন
অর্থনীতিতে মূলধন বলতে মানুষের শ্রমের দ্বারা উৎপাদিত সম্পদের সেই অংশকেই বোঝায় যা পুনরায় উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়। মি বয়ার্কের মতে , “ মূলধন হল উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদান।” অধ্যাপক জে এফ.সিল বলেন,“ মুলধন হল ভবিষ্যৎ সম্পদ উৎপাদনের জন্য অতীত শ্রমের সংগৃহীত উপাদন” । আধুনিক কালে মূলধনের আওতা ও পরিধি ব্যাপক হয়েছে। উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত মানুষের বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী আয়ের ঐ অংশ মূলধন বলে বিবেচিত হয় যা অধিক উৎপাদনের জন্য পুনরায় উৎপাদন কাজে নিযুক্ত হয়।
মূলধনের বৈশিষ্ট্য
১) উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদান: মানুষের শ্রম ও সম্পদের যুক্ত প্রচেষ্টায় মূলধনের সৃষ্টি যা মানুষ অধিক উৎপাদন কাজে নিয়োগ করে। ২) মূলধন উৎপাদনশীল: মূলধনের সাহায্যে উৎপাদন বৃদ্ধি করা য়ায়। মূলধন ছাড়া অধিক উৎপাদন অসম্ভব। অধিক উৎপাদনের জন্য অধিক মূলধনের প্রয়োজন হয়। মূলধন নিয়োগের উপর কোন দ্রব্যের উৎপাদনের পরিমাণ নির্ভর করে।
৩) নিস্ক্রিয় উপাদান: উৎপাদন ক্ষেত্রে মূলধন নিস্ক্রিয় উপাদন হিসেবে স্বীকৃত। শ্রমিকের সাহায্য ছাড়া মূলধন কোন কিছু উৎপাদন করতে পারে না । যেমন- যন্ত্রপাতি নিজে কিছু করতে পারে না। যদি এর সাথে শ্রমিক যুক্ত হয় তবেই উৎপাদন সম্ভব।
৪) গতিশীল: উৎপাদনের উপাদানগুলোর মধ্যে মূলধন সবচেয়ে গতিশীল। কারণ মূলধন বিভিন্ন খাতে ব্যবহারযোগ্য এবং তা দেশের অভ্যন্তরে কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহজে হস্তান্তরযোগ্য।
৫) মূলধন সমজাতীয় নয়: সব মূলধন সমগুনসম্পন্ন নয়। মূলধন হল স্বতন্ত্র μিয়াসম্পন্ন বিবিধ বস্তুর একটি জটিল সমষ্টি। এর প্রতিটি এককের উৎপাদনশীলতা তথা গুনগত মানের পার্থক্য রয়েছে।
৬) মূলধন অস্থায়ী: মূলধন ক্ষণস্থায়ী উপাদান। সময়ের সাথে সাথে মূলধনের পরিমাণে পরির্বতন আসতে পারে। সময়ের ব্যবধানে বিনিয়োগ বৃদ্ধি বা হ্রাস পেলে মূলধনের পরিমাণ পরিবর্তন হয়।
৭) মূলধনের উৎপাদন ধরন: মূলধন প্রাকৃতিক সম্পদ নয়। মানুষ তার শ্রমের দ্বারা প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে মূলধন সৃষ্টি করে বলে তার জন্য খরচ করতে হয়। তাই মূলধনের উৎপাদন খরচ আছে।
৮) সঞ্চয় থেকে মূলধনের সৃষ্টি: সঞ্চয় মূলত করা হয় মূলধন গঠনের জন্য। মূলধন গঠন করতে হলে বর্তমানে আয়ের একটা অংশ ভোগের কাজে না লাগিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে হয়। অর্থাৎ সঞ্চয় যখন বিনিয়োগ করা হয় তখন মূলধন গঠিত হয়।
৯) মূলধন ভবিষ্যৎ আয়ের উৎস: মূলধন উৎপাদন কাজে নিয়োজিত হয়ে দ্রব্য ও সেবার উৎপাদন বাড়ায়। ফলে আয় বৃদ্ধি পায়। তাই মূলধন ভবিষ্যৎ আয়ের উৎস।
১০) অতীত উৎপাদনের ফসল: মূলধন অতীত উৎপাদনের ফসল কেননা অতীত উৎপাদন যদি অধিকতর উৎপাদনের জন্য পুনরায় বিনিয়োগ করা হয় তখন তা মূলধন হিসেবে বিবেচিত হয়। মূলধনের শ্রেনীবিভাগ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূলধন কে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। নিম্নে এসব শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করা হল - স্থায়িত্বের ভিত্তিতে : ১) স্থায়ী মূলধন : যে সব মূলধন দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকে এবং বার বার ব্যবহারের পরেও যার কোন পরিবর্তন হয় না তাকে স্থায়ী মূলধন বলে। যেমন- যন্ত্রপাতি, দালানকোঠা ইত্যাদি। স্থায়ী মূলধন একবার ব্যবহারে নিশেষ হয়ে যায় না। তবে স্থায়ী মূলধনের অবচয় ঘটে।
২) চলতি মূলধন : যে সব মূলধন মাত্র একবার উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হয় তাকে চলতি মুলধন বলে।যেমনপাট, কাঠ,তুলা, কয়লা ইত্যাদি চলতি মূলধনের অন্তর্গত। কেননা এগুলো একবার ব্যবহারের পর তার কোন অস্তিত্ব থাকে না। নিচে ছকের মাধ্যমে স্থায়ী মূলধন ও চলতি মূলধনের পার্থক্য দেখানো হলোÑ ছক ১৪.১.১: স্থায়ী মূলধন ও চলতি মূলধনের পার্থক্য স্থায়ী মূলধন চলতি মূলধন ১) স্থায়ী সম্পত্তির সাহায্যে স্থায়ী মূলধন প্রকাশ করা হয়। ১) চলতি সম্পত্তির সাহায্যে চলতি মূলধন প্রকাশ করা হয়। ২) ব্যবহারের শুরু লগ্ন থেকে স্থায়ী মূলধনের প্রয়োজন হয়। ২) গঠনের পর ব্যবহারিক কার্যμম চালু করতে চলতি মূলধন এর প্রয়োজন হয়। ৩) স্থায়ী মূলধন নগদ আকারে রাখা যায় না। ৩) চলতি মূলধন নগদ আকারেও থাকে। ৪) স্থায়ী মূলধন সহজে পরিবর্তন যোগ্য নয়। এটি অনমনীয়। ৪) চলতি মূলধন সহজে পরিবর্তনযোগ্য। এটি সাধারণত নমনীয়। ৫) দীর্ঘ মেয়াদী উৎস থেকে স্থায়ী মূলধন সংগ্রহ করা হয় ৫) স্বল্পমেয়াদী উৎস থেকে চলতি মূলধন সংগ্রহ করা হয়। ৬) প্রতিষ্ঠানের আয় বৃদ্ধির সাথে স্থায়ী মূলধন বৃদ্ধি করতে হয়। ৬) প্রাতিষ্ঠানিক আয় বৃদ্ধির জন্য চলতি মূলধণ বৃদ্ধির প্রয়োজন হয় না। ৭) ব্যবসায়ে দীর্ঘ সময় ধরে এ স্থায়ী মূলধনের অবস্থান লক্ষ্য করা য়ায়। ৭) ব্যবসায়ে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত চলতি মূলধনের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। মালিকানা ভিত্তিতে  জাতীয় মূলধন ঃ যে মূলধন রাষ্ঠ্রীয় মালিকানায় থাকে তাকে জাতীয় মূলধন বলে। যেমন- ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান, রেলওয়ে, বিমান ইত্যাদি জাতীয় মূলধনের অন্তর্গত।  ব্যক্তিগত মূলধন: যে মূলধন কোন ব্যক্তি বিশেষের মালিকানার থাকে তবে তাকে ব্যক্তিগত মূলধন বলে। যেমনবাড়িঘর, শেয়ার ইত্যাদি ব্যক্তিগত মূলধনের অর্ন্তগত। ব্যবহারের ভিত্তিতে  নিমজ্জমান মূলধন : যে মূলধন একটি বিশেষ ধরনের উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হয়, তাকে নিমজ্জমান মূলধন বলা হয়। যেমন- রেলইঞ্জিন, লোহা গালার চুল্লি ইত্যাদি মূলধনের অন্তর্গত।  ভাসমান মূলধন: যে মূলধন বিভিন্ন উৎপাদন কাজে একটি শিল্প থেকে অন্য শিল্পে স্থানান্তর করা যায় তাকে ভাসমান মূলধন বলা হয়। যেমন- কয়লা, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ভাসমান মূলধনের অন্তর্গত। ভোগের ভিত্তিতে ভোগের ভিত্তিতে মূলধনকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। যথা ১) ভোগ্য মূলধন ২) উৎপাদক মূলধন ভোগ্য মূলধন : যে মূলধন উৎপাদন চলাকালে উৎপাদন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের ভরনপোষন ও জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য ব্যবহার করা হয়, তাকে ভোগ্য মূলধন বলা হয়। যেমন- শ্রমিকের খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থান ইত্যাদি ভোগ মূলধনের অন্তর্গত। উৎপাদক মূলধন : যে সব মূলধন উৎপাদনে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে তাকে উৎপাদক মূলধন বলে। যেমন-যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, কল কারখানা ইত্যাদি।
 মানুষের শ্রমের দ্বারা উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রীর যে অংশ সরাসরি ভোগে নিয়োজিত না হয়ে উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয় তাকে মূলধন বলে।  মূলধনকে স্থায়িত্ব, মালিকানা, ব্যবহার ও ভোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। পাঠোত্তর মূল্যায়ন-১৪.১ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ১। উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদান কোনটি ? (ক) মূলধন (খ) শ্রম (গ) সংগঠন (ঘ) ভূমি ২। দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি কোন ধরনের মূলধন ? (ক) স্থায়ী (খ) চলতি (গ) জাতীয় (ঘ) কোনটি নয় ৩। দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা পাওয়া যায় যে মূলধন থেকে তা হলো (ক) স্থায়ী মূলধন (খ) চলতি (গ) অস্থায়ী (ঘ) সরকারি ৪। মূলধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে কারণ র. মূলধন ভবিষ্যৎ আয়ের উৎস রর. সময়ের সাশ্রয় করে ররর. মূলধন উৎপাদনশীল নিচের কোনটি সঠিক? (ক) র ও রর (খ) র ও ররর (গ) রর ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর ৫। রংপুর ও কুড়িগ্রামে প্রচুর পাট উৎপাদন হয়। পাটের বীজ কোন ধরনের মূলধন? (ক) চলতি (খ) স্থায়ী (গ) আবদ্ধ (ঘ) সম্পত্তিগত

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]