সংগঠনের ধারণা , ,উদ্যোক্তার কার্যাবলি , মূলপাঠসংগঠনের ধারণা

ভ‚মিকা
উৎপাদনের মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাদান হচ্ছে সংগঠন। কোন উৎপাদন কাজ করতে যে সকল উপাদান যেমন- ভূমি, শ্রম, মূলধন, কোনটি কতটুকু প্রয়োজন তা সংগ্রহ ও সমন্বয় করে উৎপাদন পরিকল্পনা ও বিপনণের ব্যবস্থা করে থাকে সংগঠন। এই অধ্যায়ে আমরা সংগঠন সর্ম্পকে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা লাভ করতে পারব। কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদনের উপকরণ ভূমি, শ্রম, মূলধনের আনুপাতিক সংগ্রহ, সংযোজন ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে উৎপাদন পরিচালনা ও বিপণনের ব্যবস্থা করে থাকে সংগঠন। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি উৎপাদনের অন্যান্য মৌলিক উপাদানগুলোর মাঝে সমন্বয় সাধনের কাজকে সংগঠন বলে। বিভিন্ন মনীষী সংগঠন সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছেন তার কয়েকটি নি¤েœ দেয়া হল:
অধ্যাপক হানির মতে, “কোন সাধারণ উদ্দেশ্য বা উদ্দেশ্যাবলী সাধনের জন্য বিশেষায়িত উপাদানের মাঝে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধনকে সংগঠন বলে।”
অধ্যাপক সিলওয়ার্ড বলেন,“ কর্ম ও কর্মীর মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ পারস্পরিক সম্পর্কই হল সংগঠন।” অর্থনীতিবিদ টেরি ও ফ্রাঙ্কলিন বলেন,“ সংগঠন হল কতিপয় ব্যক্তির মধ্যে কার্যকর আচরণগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা, যাতে তারা দক্ষতার সাথে কিছু লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনে পারিপাশির্^ক অবস্থার প্রেক্ষিতে সন্তুষ্টি সহকারে একত্রে কাজ করতে পারে।” উপরের আলোচনা থেকে সংগঠনের নি¤œলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ লক্ষ্য করা যায়: র) সংগঠনের মাধ্যমে উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানগুলোর মধ্যে সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় সাধন করা হয়। রর) সংগঠন উৎপাদনের একটি অপরিহার্য উপাদান। ররর) উৎপাদন ও বিপণনের সহায়ক কার্যাবলী সংগঠনের অন্তর্গত সংগঠনের বৈশিষ্ট্য
র) সংগঠন উৎপাদনের একটি অন্যতম উপকরণ। রর) উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ ও তাদের মধ্যে সুষ্ঠ সমন্বয় সাধন হয় সংগঠনের মাধ্যমে। ররর) সংগঠন একটি বিমূর্ত ধারণা। রা) সংগঠনের মাধ্যমে পরিকল্পনা, উৎপাদন পরিচালনা ও বিপণন কার্য সম্পাদিত হয়। া) মানুষের বস্তুগত ও অবস্তুগত চাহিদা পূরণে সংগঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সংগঠক বা উদ্যোক্তা সংগঠন পরিচালনা করেন যিনি, তিনিই উদ্যোক্তা বা সংগঠক। উদ্যোক্তাই উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানগুলোকে একত্রিত করে তাদেরকে প্রয়োজন অনুসারে সমন্বয় সাধন করে। একজন সফল উদ্যোক্তাই উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদানগুলোকে সুসংবদ্ধভাবে সমন্বয় সাধন করে স্বল্প সময়ে ও অল্প ব্যয়ে অধিক পরিমান উৎপাদন করার পদ্ধতি গ্রহণ করেন। বর্তমান সময়ে উদ্যোক্তা বলতে ঐ রকম শিল্প প্রতিভাকে বোঝায় যারা শিল্পের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। উদ্যোক্তা
মুনাফার নতুন নতুন পথ আবিষ্কার করে শিল্পের অগ্রগতি সাধন করে। তবে অনেক সময় তাকে ক্ষতির ঝুঁকিও বহন করতে হয়। অধ্যাপক মার্শাল সংগঠককে “শিল্পের চালক” বলে অভিহিত করেছেন। আবার অর্থনীতিবিদ হারভি লাইবেন স্টাইন বলেন-“অর্থনৈতিক সম্ভাবনার অনুসন্ধান, আবিষ্কার, মূল্যায়ন, অর্থনৈতিক সম্পদের সমাবেশ, ব্যবস্থাপনার ঝুঁকি বহন, নতুন তথ্যাদির অনুসন্ধান এবং প্রাপ্ত দ্রব্যের নতুন বাজার, কলাকৌশল ও দ্রব্যে রুপান্তর এবং কর্মী শ্রেণীকে নেতৃত্ব প্রদান করাই হলো উদ্যোক্তার কাজ।” উদ্যোক্তার কার্যাবলী/সংগঠকের কার্যাবলী বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশে^, জটিল উৎপাদন ব্যবস্থায় উদ্যোক্তা বা সংগঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। উৎপাদনের শুরু থেকে শেষ পযর্ন্ত সকল প্রকার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কাজ তাকে তদারকি করতে হয়। নি¤েœ উদ্যোক্তার কার্যাবলী আলোচনা করা হল: ১। লক্ষ্য নির্ধারণ: উদ্যোক্তার প্রথম কাজ হল লক্ষ্য নির্ধারণ করা। সে মূলত কী করতে চায়, কীভাবে তা অর্জন করা সম্ভব হবে, এরূপ সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাকে প্রথমেই গ্রহণ করতে হয়। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্যই যাবতীয় কার্যপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। ২। পরিকল্পনা প্রণয়ন: উদ্যোক্তাকে লক্ষ্য নির্ধারণের পর বিভিন্ন উপাদানকে একত্রিত করে উৎপাদন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নের উপর উদ্যোক্তার সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। যেমন- কোন দ্রব্য, কোথায়, কীভাবে উৎপাদন হবে, সকল প্রকার শ্রমিক, বিশেষখাত ও নিপুন কারিগর সংগ্রহ করা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল সংগ্রহ ইত্যাদি সকল ব্যাপারে সংগঠককে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। ৩। উপাদান সমূহের সমন্বয় সাধন: উদ্যোক্তার একটি অন্যতম প্রধান কাজ হল উৎপাদনের উপাদান সমূহ যেমন-ভূমি, শ্রম, মূলধনের মাঝে সমন্বয় সাধন করা। বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয় এমনভাবে করতে হয় যাতে ব্যয়ের দিক থেকে ন্যূনতম হয় এবং মুনাফা সর্বাধিক হয়। ৪। মূলধন সংগ্রহ: উৎপাদন কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য উদ্যোক্তাকে মূলধন সংগ্রহ করতে হয়। বিভিন্ন ব্যক্তিগত তহবিল এবং স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী উৎস থেকে উদ্যোক্তা মূলধন সংগ্রহ করে থাকে। ৫। মুনাফা অর্জন: উদ্যোক্তার কর্মপ্রচেষ্টার মূল উদ্দেশ্য হল সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করা। উৎপাদন কাজ পরিচালনা এবং উৎপাদনের ঝুঁকি বহনের পুরস্কার হিসেবে উদ্যোক্তা মুনাফা অর্জন করে। ৬। ঝুঁকি বহন: উদ্যোক্তার সর্বপ্রধান কাজ হল ব্যবসায়ের আর্থিক ও ব্যবসায়িক ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার ভার বহন করা। উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানকে এ ধরনের ঝুঁকি বহন করতে হয় না। উদ্যোক্তার পর্যবেক্ষণ সঠিক হলে, যে মুনাফা করবে আর ভুল হলে সে লোকসান করবে। ৭। দূরদর্শী ও উদ্ভোবনী শক্তি সম্পন্ন: উদ্যোক্তাকে দূরদর্শী হতে হয় অর্থাৎ যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে জানতে হবে। কেননা তার দূরদর্শীতা ও উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবসায়ের মুনাফা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৮। নতুন বাজার অনুসন্ধান: উদ্যোক্তাকে তার উৎপাদিত দ্রব্যের বাজার সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগী হতে হয়। বাজার সম্প্রসারিত হলে উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কাজেই বাজার সম্প্রসারণ উদ্যোক্তার দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। ৯। বাজারজাতকরণ: কেবল উৎপাদনই নয়, বরং উৎপাদিত দ্রব্য বাজারজাতকরণ করা উদ্যোক্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। উদ্যোক্তাকে ভোক্তার চাহিদা, রুচি, পছন্দ, দ্রব্যেরমান ইত্যাদি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রেখে উৎপাদিত দ্রব্য বাজারজাত করতে হয়। ১০। উপাদানের আয় বন্টণ: উদ্যোক্তাকে উৎপাদনের উপাদান গুলোর মধ্যে আয় বন্টণ করতে হয়। এ আয় উপাদান সমূহের মধ্যে প্রত্যেকের পারিশ্রমিক হিসেবে বন্টণ করা হয়। যেমন-ভূমির উপর খাজনা, মূলধনের সুদ, শ্রমিকের মজুরি দেওয়া হয়। আর এরপর যা অবশিষ্ট থাকে তা উদ্যোক্তার মুনাফা। ১১। বিপণন ও প্রচার: উদ্যোক্তার লক্ষ্য থাকে তার উৎপাদিত দ্রব্যের জন্য বাজার সৃষ্টি করা। আর তাই উৎপাদিত দ্রব্যের বাজার সম্প্রসারণ এবং ক্রেতাকে দ্রব্যের প্রতি আগ্রহী করার জন্য তাকে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সহায়তায় দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি করতে হয় ।
১২। উৎপাদন কাজ পরিচালনা ও তত্ত¡াবধান: উদ্যোক্তার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উৎপাদন কাজ পরিচালনা ও তত্ত¡াবধান করা। উদ্যোক্তার দক্ষ পরিচালনার উপর শ্রমিক ও কর্মচারীদের কাজের পরিমাণ অনেকটা নির্ভর করে। শ্রম, মূলধন, কাঁচামাল প্রভৃতির যাতে অপচয় না হয় সেদিকে উদ্যোক্তা দৃষ্টি রাখেন। শ্রমিকরা যাতে কাজে ফাঁকি না দিতে পারে সেদিকেও তাকে লক্ষ্য রাখতে হয়। সুতরাং আধুনিক যুগের বৃহদাকার উৎপাদন প্রণালীতে উদ্যোক্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গতিময় এবং আত্মনির্ভরশীল সমাজে বর্ধিষ্ণু চাহিদা মেটানোর জন্য উৎপাদনে বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীতা দেখা দেয়। আর সে বিশেষজ্ঞই একজন উদ্যোক্তা বা সংগঠক।  কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদনের উপকরণ ভূমি, শ্রম, মূলধনের আনুপাতিক সংগ্রহ, সংযোজন ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে উৎপাদন পরিচালনা ও বিপণনের ব্যবস্থা করে থাকে সংগঠন।  সংগঠনের বৈশিষ্ট্য ১) সংগঠন উৎপাদনের একটি অন্যতম উপকরণ। ২) সংগঠনের মাধ্যমে উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হয়। ৩) মানুষের বস্তুগত ও অবস্তুগত চাহিদা পূরণে সংগঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।  একজন সফল উদ্যোক্তাই উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদানগুলোকে সুসংবদ্ধভাবে সমন্বয় সাধন করে স্বল্প সময়ে ও অল্প ব্যয়ে অধিক পরিমাণ উৎপাদন করার পরিচালন পদ্ধতি গ্রহণ করেন।  উদ্যোক্তার গুনাবলী ১) লক্ষ্য নির্ধারণ ২) পরিকল্পনা প্রণয়নঃ ৩) ঝুঁকি বহন ৪) দূরদর্শী ও উদ্ভোবনী শক্তি সম্পন্ন ৫) নতুন বাজার অনুসন্ধান ৬) বিপণন ও প্রচার ৭) উৎপাদন কাজ পরিচালনা ও তত্ত¡াবধান ইত্যাদি।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ১। ভূমি, শম ও মূলধন সমন্বয় সাধনের কাজকে কি বলে? (ক)সংগঠক (খ) সংগঠন (গ) স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান (ঘ) সমন্বয় সাধন ২। উদ্যোক্তার ভূমিকা র. মূলধন সংগ্রহ রর. সুদক্ষ পরিচালনা ররর. দূরদর্শী ও উদ্ভোবনী শক্তি সম্পন্ন নিচের কোনটি সঠিক? (ক) র ও রর (খ) রর ও ররর (গ) র ও ররর (ঘ) র, রর ও ররর ৩) কে উদ্দ্যোক্তাকে শিল্পের চালক বলেছেন? (ক) অধ্যাপক মার্শাল (খ) অধ্যাপক হেনরি (গ) অধ্যাপক সোহেল (ঘ) অধ্যাপক পিগু

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]