ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রকারভেদ

ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রকারভেদ
বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর মধ্যে উদ্দেশ্যগত মিল থাকলেও প্রকৃতি, আয়তন ও কার্যক্ষেত্রে এদের মধ্যে পার্থক্য
রয়েছে। নি¤েœ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সংগঠনের প্রকারভেদ দেখানো হল১। আয়তন বিচারে র) ক্ষুদ্র ব্যবসা (: যে ব্যবসায়ের মূলধনের পরিমাণ কম, শ্রমিক সংখ্যা কম এবং স্বল্পমূলধন ও ছোট ছোট যন্ত্রপাতির সাহায্যে সীমিত আকারে দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করা হয় তাকে ক্ষুদ্র ব্যবসা বলে। যেমন- বাংলাদশের
তাঁত শিল্প, বেত শিল্প, লবণ শিল্প ইত্যাদি। শিল্পকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথা- উৎপাদন খাত ও সেবা খাত।
উৎপাদন খাতে জমি ও কারখানা ভবন বাদে ন্যূনতম ৫০ লক্ষ থেকে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলে এবং ২৫ থেকে ৯৯ জন শ্রমিক কাজ করলে তাকে ক্ষুদ্র উৎপাদন শিল্প বলা হবে। অন্যদিকে সেবা খাতে ৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং ১০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক যে কারখানায় কাজ করে তাকে বলা হবে ক্ষুদ্র সেবা শিল্প।
রর) মাঝারি শিল্প এবং ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প :২০১০ সালের শিল্প নীতি অনুসারে উৎপাদন খাতে জমি ও কারখানা ব্যতিরেকে ১০ থেকে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলে এবং ১০০ থেকে ২৫০ জন শ্রমিক কাজ করলে তাকে মাঝারি শিল্প বলা হবে। অন্যদিকে সেবা খাতে, জমি ও কারখানা ব্যতিরেকে ১ থেকে ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং ৫০ থেকে ১০০ জন শ্রমিক কর্মরত থাকলে তা হবে মাঝারি শিল্প।
ব্যবসায় সংগঠনের পরিধি বা আয়তন বিচারে মালিকানা বিচারে ১. ক্ষুদ্র শিল্প ২. মাঝারি শিল্প ৩. বৃহদায়তন শিল্প ১. এক মালিকানা ব্যবসা ২. অংশীদারী ব্যবসা ৩. যৌথ মূলধনী ব্যবসা ৪. সমবায় সমিতি ৫. রাষ্ট্রীয় ব্যবসা ৬. ব্যবসায় জোট ৭. যৌথ উদ্যোগের ব্যবসা
ররর) বৃহদায়তন শিল্প: ২০১০ সালের শিল্পনীতি অনুযায়ী উৎপাদনশীল খাতে, জমি ও কারখানা ব্যতিরেকে ৩০ কোটি টাকার উপর বিনিয়োগ হলে এবং ২০০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করলে অন্যদিকে সেবাখাতে ১৫ কোটি টাকার উপর বিনিয়োগ এবং ১০০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করলে তাকে বৃহৎ শিল্প বলা হবে। বাংলাদেশে বস্ত্র, পাট, কাগজ ইত্যাদি শিল্পকে বৃহৎ শিল্পের আত্ততাভুক্ত করা যেতে পারে। ২) মালিকানার ভিত্তিতে (১) একমালিকানা কারবার : যে কারবারে মালিক একাই মূলধন সংগ্রহ করে ব্যবসায় পরিচালনা করে তাকে একমালিকানা কারবার বলে। যে কোন ব্যক্তি খুব সহজেই এটি পরিচালনা করতে পারে। তাই এ কারবার গঠন করা অত্যন্ত সহজ। একমালিকানা কারবারের সুবিধা ) র) সহজ গঠন প্রনালী: একমালিকানা ব্যবসায় গঠনে তেমন কোন আইনগত জটিলতা নেই। সামান্য পুঁজি নিয়ে যে কেউ এ ধরণের ব্যবসায় শুরু করতে পারেন। তাই এ কারবার গঠন করা অত্যন্ত সহজ। রর) সহজ পরিচালনা: এরূপ ব্যবসায় আকারে ছোট ও সীমিত ঝুঁকির কারণে এর পরিচালনাও বেশ সহজ। যে কোন মানুষ খুব সহজেই এটি পরিচালনা করতে পারেন। ররর) দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: এরূপ কারবারে মালিক ও পরিচালক একই ব্যক্তি তাই যে কোন ব্যাপারে তিনি দ্রæত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। রা) মালিকের স্বাধীনতা: এরূপ ব্যবসায় কোন অংশীদার না থাকায় মালিকের কারো কাছে জাবাবদিহিতার প্রয়োজন হয় না। তিনি স্বাধীনভাবে আপন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেন। া) অপচয় রোধ: ব্যবসায় লোকসান হলে মালিককে একাই তা বহন করতে হয়। তাই তিনি ব্যবসায় পরিচালনায় সর্বোচ্চ সতকর্তা অবলম্বন করেন। এ কারণে অপচয় রোধ সম্ভব হয়। ার) গোপনীয়তা: একমালিকানা কারবারে মালিক নিজেই সমস্ত কাজ সম্পন্ন করে বলে ব্যবসায়ের গোপনীয়তা বজায় রাখা সম্ভব হয়। এতে গোপন তথ্য জানার সম্ভাবনা থাকে না। ারর) মালিক শ্রমিক সম্পর্ক: এ কারবারে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করেন বলে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। াররর) হিসাব রক্ষণের সুবিধা: একমালিকানা কারবারে হিসাবরক্ষণে যেহেতু আইনগত কোন বাধা নেই তাই মালিক সুবিধামত যে কোন পদ্ধতিতে হিসাব রাখতে পারে। রী) বিলোপ সাধন: এর বিলোপ সাধন পদ্ধতি খুব সহজ। মালিক তার ইচ্ছানুযায়ী এ ব্যবসায়ের বিলোপ সাধন করতে পারে। এতে কোন সরকারের পূর্বানুমতি বা আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হয় না। ী) উৎসাহ ও উদ্দীপনা: একমালিকানা ব্যবসায় মালিক কারবারের সকল মুনাফা ভোগ করেন। এর ফলে ব্যবসায়ের সাফল্যের জন্য যে উদ্দীপনা, উৎসাহ ও আন্তরিকতা প্রয়োজন তা বিদ্যমান থাকে। যা ব্যবসায়ের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে।
একমালিকানা কারবারের অসুবিধা
র) মুলধনের স্বল্পতা: একমালিকানা কারবারের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল পযাপ্ত পুঁজির অভাব। আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রচুর পুঁজির প্রয়োজন হয়। একমালিকানা কারবারের মালিকের পক্ষে এই বিপুল পরিমান মূলধন সংগ্রহ করা সম্ভবপর হয় না। রর) সামর্থ্যরে সীমাবদ্ধতা: ব্যবসায়ের উন্নতির জন্য শুধুমাত্র মূলধনের যোগানই নয়, পণ্যের গুনাগুন, মোড়কীকরণ, প্রচার ও প্রসার কাজে সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে হয়। একমাত্র মালিক সবদিকে দক্ষভাবে ব্যবসায়ের আশানুরূপ উন্নতি করতে পারে না। ররর) উৎপাদন ব্যয়ের আধিক্য: এক মালিকানা কারবারের আয়তন ক্ষুদ্রাকার বিধায় উৎপাদনে গড় ব্যয় বেশি হয়। এ ধরনের সংগঠন বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না। ফলে অনেক সময় অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। রা) ক্ষুদ্রায়তন উৎপাদন: একমালিকানা কারবারের আয়তন ছোট বিধায় বৃহদায়তন উৎপাদনের ব্যয় সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারে না। া) স্থায়ীত্বের অভাব: এ কারবারের স্থায়ীত্ব সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত। মালিকের মৃত্যু, বিদেশ গমন, অসুস্থতা, অনাগ্রহ যে কোন কারণে এ ব্যবসায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ারর) অপর্যাপ্ত তত্ত¡াবধান: একক মালিক যতই দক্ষ হোক না কেন, উৎপাদনের সকল পর্যায়ে নজর দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। এই অপর্যাপ্ত তত্ত¡াবধানের জন্য ব্যবসায় জটিলতা দেখা দিতে পারে। একমালিকানা কারবারের সুবিধা অসুবিধা পর্যালোচনা করে বলা যায়, সামগ্রিক বিচারে এর সুবিধাই বেশি। এ কারণে অধিকাংশ ব্যবসায়-ই শুরুতে এরূপ সংগঠনের আওতায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। (২) অংশীদারী কারবার : যে কারবারে কয়েকজন একত্রিত হয়ে মূলধন সংগ্রহ করে ব্যবসায় পরিচালনা করে তাকে অংশীদারী কারবার বলে। ন্যূনতম ২জন এবং সবোর্চ্চ ২০ জন ব্যক্তি এ কারবারের সদস্য হতে পারে। তবে ব্যাংকিং অংশীদারী কারবারে সর্বোচ্চ ১০ জন সদস্য থাকেন। একাধিক ব্যক্তির মালিকানা ও সমঝোতার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় অংশীদারী কারবার। অংশীদারী কারবারের সুবিধা ১) সহজ গঠন: কমপক্ষে ২জন ব্যক্তি মৌখিক বা লিখিত চুক্তির মাধ্যমে এ ব্যবসায় শুরু করতে পারে। এক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা তেমন নেই। ২) অধিক মূলধন: একাধিক মালিক থাকার কারণে এ ব্যবসায় মূলধনের যোগান বেশি হয়। তাই এ কারবারে পর্যাপ্ত মূলধন সংগ্রহ সম্ভব হয়। ৩) যৌক্তিক সিদ্ধান্ত: অংশীদারগণের আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে এ কারবারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে তা অধিক নির্ভরযোগ্য হয়। ৪) ঝুঁকি বন্টন: অংশীদারী কারবারে লোকসান হলে, তা চুক্তি অনুযায়ী বা সমানভাবে সকল মালিক এর দায় বহন করেন। ফলে এককভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ৫) মালিক শ্রমিক সম্পর্ক: অংশীদারী কারবার মাঝারি আয়তনের বিধায় এখানে মালিক শ্রমিকের মাঝে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়। মালিকের সরাসরি তত্ত¡াবধান থাকে বিধায় শ্রমিকদের ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে মালিক পক্ষ সচেতন থাকেন। ৬) শ্রমবিভাগ: এ ধরনের কারবারে বিভিন্ন প্রকার প্রতিভা সম্পন্ন ব্যক্তির সমাবেশ ঘটতে পারে। ফলে তাদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজের দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া যায়। ৭) করের সুবিধা: একমালিকানা কারবার অপেক্ষা অংশীদারী কারবারে করের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। ৮) জনসংযোগ: অংশীদারী কারবারে একাধিক মালিক থাকায় প্রত্যেকের মুনাফা, পরিচিতি ও সামাজিক মর্যাদার কারনে ও ব্যবসায় বড় রকমের জনসংযোগ তৈরি হয়। ৯) স্থিতিস্থাপকতা: অংশীদারী কারবারের প্রয়োজনে অংশীদারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়। ব্যবসায় সম্প্রসারণের সময় এ সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়। অংশীদারী কারবারের অসুবিধা ( ১) অসীম দায়: অংশীদারী কারবারের অংশীদারদের দায় অসীম অর্থাৎ ব্যবসায়ে বিনিয়োগের তুলনায় বেশি দায় দেনা তৈরী হতে পারে। ২) সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব: অংশীদারী কারবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সকল মালিকের মতামত নিতে হয়। ফলে সকল মালিককে সময়মত পাওয়া না গেলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হয়। ৩) মত বিরোধ: এ কারবারের অংশীদারদের ব্যবসায় সংক্রান্ত কোন বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দিলে ব্যবসায়ের ক্ষতি সাধন হয়। এর ফলে অনেক সময় কারবার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ৪) স্থায়িত্বের অনিশ্চয়তা: অংশীদারী কারবারের স্থায়িত্ব অনিশ্চিত প্রকৃতির। অংশীদারদের মৃত্যু, মস্তিষ্ক বিকৃতি, দেউলিয়া, পারস্পারিক বিরোধ বা অন্য যে কোন কারণে এর বিলোপ ঘটতে পারে। ৫) সদস্য সংখ্যা: এ কারবারের সদস্য সংখ্যার একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। এর বেশি সদস্য নিয়ে কারবার সম্প্রসারণ করা যায় না। ৬) পারস্পারিক বিশ^াসের অভাব: অনেক সময় অংশীদারগনের পরস্পরের প্রতি বিশ^াস ও আস্থার অভাব দেখা যায়। ৭) অপ্রচুর মূলধন: এ কারবারের একমালিকানা কারবারের চেয়ে বেশি মূলধন জোগার করা সম্ভব হয় কিন্তু বৃহদায়তন শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধনের তুলনায় তা অপর্যাপ্ত। অনেক সুবিধা থাকা সত্তে¡ও উপরের অসুবিধাগুলো এ কারবারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই বর্তমান অংশীদারী কারবারের স্থান যৌথ মূলধনী কারবার দখল করেছে। (৩) যৌথ মূলধনী কারবার ( যৌথ মূলধনী কারবার বলতে বহু সংখ্যক ব্যক্তির যৌথ মালিকানায় গঠিত কারবার প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেখানে তারা কোন কারবার করে তার লাভ লোকসান ভাগ করার জন্য যৌথভাবে সাধারণ তহবিলে অর্থ প্রদান করে। পা

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]