অর্থশাস্ত্রে বাজারের কতগুলো ধরন বিবেচনা করা হয়? বাজারের বিভিন্ন ধরনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো

বাজার কি?
বাজার বলতে সাধারণত: স্থান বোঝালেও আমরা আগেও বলেছি যে, অর্থশাস্ত্রে বাজার হলো একটি
প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দ্রব্য ও সেবা ক্রয় বিক্রয় হয়। আলফ্রেড মার্শাল ফরাসী অর্থনীতিবিদ এ কোরনটএর কাছ থেকে গৃহিত সংজ্ঞায় বলেছিলেন যে, বাজার হলো একটি বিশাল এলাকা যেখানে ক্রেতা ও
বিক্রেতারা এমনভাবে কেনাবেচা করতে পারবে যাতে একই দ্রব্যের দাম খুব দ্রæত এবং সহজে এক
হয়ে যেতে পারে। মার্শাল পরে এর সঙ্গে আরও যোগ করেছিলেন যে, ‘‘একটি বাজার যতই নিখুঁত
হবে ততই তার সকল এলাকা জুড়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট দ্রব্যের একই দাম হবে।''
বর্তমানকালে বাজার সম্পর্কে যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে তার উৎস পাওয়া যাবে এ্যাডাম স্মীথের লেখায়।
তিনি বলেছিলেন, ‘‘শ্রম বিভাজন নির্ভর করে বাজারের বিস্তৃতির উপর।'' উল্টো দিক থেকে দেখাটাই
অনেকে ঠিক মনে করেন; ‘‘বাজারের বিস্তৃতি নির্ভর করে শ্রম বিভাজনের বিকাশের উপর”।
উনিশ শতক পর্যন্ত ‘মূলধারার' অর্থনৈতিক তত্ত¡গুলোর অর্থাৎ ক্ল্যাসিকাল ধারার ও নয়া ক্ল্যাসিকাল
ধারার মধ্যে বিদ্যমান সম্পদ বিভিন্ন ব্যবহারকারীর মধ্যে বরাদ্দ করবার বিষয়ে যতটা মনোযোগী দেখা
যায় ততটা মনোযোগ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নিয়ে দেখা যায় না। সেসময়কালে বাজার নিয়ে সবচাইতে
সুসংগঠিতভাবে কাজ করেছিলেন লিয়ন ওয়ালরাস তাঁর ‘সাধারণ ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থার' (এবহবৎধষ
ঊয়ঁরষরনৎরঁস ঝুংঃবস) বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে। তিনি সে সময়ের তাত্তি¡ক পদার্থবিদ্যা দ্বারা গভীরভাবে
প্রভাবিত ছিলেন। তাঁর গাণিতিক কাঠামো এখন পর্যন্ত খুবই প্রভাবশালী কিন্তুতাঁর কাজে অনেকে দুটো
ত্রæটি বিশেষভাবে নির্দেশ করেন। এর একটি হল: সময়কে হিসাবের মধ্যে না নেয়া অর্থাৎ মানুষের
বর্তমান কাজের উপর তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তার প্রভাব বিবেচনা না করা এবং দ্বিতীয়টি হল মানুষের
বিভিন্ন অংশের ক্রয়ক্ষমতার প্রভাবকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করা। তাছাড়া বাস্তব জগতে এর প্রয়োগ নিয়ে
অর্থনীতিবিদদের মধ্যে সংশয় ব্যাপক।
এই সময়ের এই অর্থনীতিবিদদের মধ্যে প্রধান চিন্তাই ছিল যে, বাজারের অবাধ ক্রিয়া একদিকে পূর্ণ
কর্মসংস্থান এবং অন্যদিকে সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করবে। বেকারত্ব সৃষ্টি হতে পারে
কেবলমাত্র মজুরি বাড়লেই। এই তত্তে¡র কাঠামোর দূর্বলতা ৩০ দশকের মহামন্দায় আরও পরিষ্কার
হয়ে উঠে। এই তত্তে¡র কাঠামোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনেন মাইকেল কালেকী, জে. এম.
কেইনস, জোয়ান রবিনসন প্রমুখ। বাজারের ভারসাম্য ধারণাকেই তাঁরা বিরোধিতা করেন। এই
ভারসাম্য ধারণা গড়ে উঠেছিল ‘‘নিখুঁত প্রতিযোগিতা''র উপর ভিত্তি করে। নিখুঁত প্রতিযোগিতায়
একটি পণ্য নিয়ে অসংখ্য উৎপাদক নিখুঁত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, প্রত্যেকে যোগান দেয় অনুল্লেখ্য
মাত্রায়। বাজারই পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। প্রত্যেক উৎপাদক ততটুকুমাত্রায় বিক্রি করে মুনাফা
সর্বোচ্চ করে যতটুকুতে প্রান্তিক ব্যয় দামের সমান হয়, অর্থাৎ এমন পরিমাণ যার থেকে উৎপাদন
বাড়লে প্রাপ্তির চাইতে ব্যয় বেশি হবে।
বাস্তব জগতে এরকম বাজারের অস্তিত্ব দেখা যায় না বলেই ‘‘ত্রæটিযুক্ত প্রতিযোগিতা'' (ওসঢ়বৎভবপঃ
পড়সঢ়বঃরঃরড়হ) ধারণা অর্থশাস্ত্রে যোগ হয়েছে ৩০ এর দশকেই। এখানে এই বিষয়টিই বিশেষভাবে
গুরুত্ব পেয়েছে যে, বাস্তব জগতে আসলে ‘‘নিখুঁত প্রতিযোগিতা''র কোন অস্তিত্ব নেই। এবং কারণেই এটাও বাস্তব যে, দাম নির্ধারণে ক্ষেত্রবিশেষে বাজার বহির্ভুত শক্তির নির্ধারক ভ‚মিকা
থাকতে পারে।
বর্তমান বাজারের প্রেক্ষাপট
বর্তমান সময়ে আমরা যে বাজার এবং বাজার প্রক্রিয়া দেখতে পাই তার একটি বিকাশ ধারা আছে।
এটি বিভিন্ন দিক থেকে বিকশিত হয়ে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে।
প্রথমত: বাংলাদেশে প্রাচীন বাজারের অস্তিত্ব আমরা দেখি পুরনো গ্রামীণ মেলায়। নিজের ভোগ আর
ভ‚স্বামীর খাজনা দেয়ার মাঝখানেও কৃষক এবং কারিগরেরা নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য কিছুদ্রব্য
নিয়ে বাজারে উপস্থিত হতো। যে বাজার বস্তুত: মেলা নামে পরিচিত।
দ্বিতীয়ত: আমরা বাজারের বিস্তার দেখি ভ‚স্বামীদের প্রাপ্ত খাজনার মধ্যে। এই খাজনা সাধারণত:
পরিশোধ করা হতো শস্যে। ভ‚-স্বামীরা এগুলো বিক্রি করে ভোগবিলাস, সেনাবাহিনী প্রতিপালনসহ
বিভিন্ন খরচ করতো। এর মধ্যদিয়ে বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বিভিন্ন নগরের উদ্ভব ঘটে।
তৃতীয়ত: আমরা বাজারের বিকাশের পেছনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা দেখি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের।
অনেক প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন দেশের বণিকেরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাহাড় পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন
ধরনের বাণিজ্য করেছেন। এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পণ্য চলাচল ও কেনাবেচা ক্রমাগত বাড়তে
থাকে এবং সেই সূত্রে বাজারও বিস্তৃত হতে থাকে। বাজারের সম্প্রসারণ ব্যাপক গতিবেগ লাভ করে
যখন শিল্প উৎপাদন আন্তর্জাতিক বানিজ্যের কেন্দ্রে আসতে সক্ষম হয় অর্থাৎ শিল্পোৎপাদিত দ্রব্য যখন
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মূল বিষয়ে পরিণত হয়।
বাজারের নির্ধারক
বাজার কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতি বিশেষত: নির্দিষ্ট খাতের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা
পালন করে এসেছে। বাজার কাঠামো নির্দিষ্টকরণের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হল: বাজারের বিভিন্ন ধরন
বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে বাস্তব ও কাল্পনিক সম্ভাবনা হিসেবে অর্থশাস্ত্রে বাজারের যে কয়টি ধরন
নির্দিষ্টভাবে বিবেচনা করা হয় সেগুলো হল:
১. নিখুঁত প্রতিযোগিতা
২. নিখুঁত একচেটিয়া
৩. একচেটিয়াসম প্রতিযোগিতা
৪. বিপরীত একচেটিয়া
৫. পৃথকীকৃত একচেটিয়া
৬. দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া
৭. দ্বৈত একচেটিয়া
৮. গোষ্ঠী একচেটিয়া
এর মধ্যে প্রথমটি বাদে সবগুলোই অনিখুঁত বা ত্রæটিমুক্ত প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত। প্রথম দুটো অর্থাৎ
নিখুঁত প্রতিযোগিতা ও নিখুঁত একচেটিয়া হল চরম দুই সম্ভাব্য অবস্থানের তাত্তি¡ক সূত্রায়ন যা বাস্তব
জগতে সুনির্দিষ্টভাবে পাওয়া কঠিন। এই সূত্রায়ন তুলনামূলক আলোচনার জন্যই বেশি কার্যকর। প্রতিদ্বন্দ¡ী নাই
বাজার কাঠামো নির্দিষ্টকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হল: শিল্পে উদ্যোক্তাদের কেন্দ্রীভবনের
মাত্রা, পণ্য পৃথকীকরণের মাত্রা, একজন নতুন উদ্যোক্তার শিল্পে প্রবেশের সুবিধা বা অসুবিধা এবং
তথ্যের প্রবাহের স্বরূপ। বাজারকে মূলত: নিখুঁত এবং অনিখুঁত প্রতিযোগিতায় ভাগ করা যায়।
নিখুঁত একচেটিয়া, একচেটিয়াসম প্রতিযোগিতা, বিপরীত একচেটিয়া, পৃথকীকৃত একচেটিয়া,
দ্বিপাক্ষিক একচেটিয়া, দ্বৈত একচেটিয়া, গোষ্ঠী একচেটিয়া বাজার অনিখুঁত প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. ক্ল্যাসিকাল ধারার তত্ত¡ অনুযায়ী বেকারত্ব সৃষ্টি হতে পারেক. শুধুমাত্র মজুরি বাড়লে
খ. শুধুমাত্র মজুরি কমলে
গ. বাজার শক্তির স্বাভাবিক ক্রিয়ায়
ঘ. কোন কারণ ছাড়াই
২. বাজার কাঠামো নির্দিষ্টকরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো:
ক. উৎপাদনের প্রযুক্তি
খ. উৎপাদনের খাত
গ. একজন নতুন উদ্যোক্তার শিল্পে প্রবেশের সুবিধা বা অসুবিধার ধরন
ঘ. বাজারের অবস্থান
৩. ওলিগোপলি বাজারের পণ্যের ধরন:
ক. শুধুমাত্র সমরূপ
খ. শুধুমাত্র পৃথকীকৃত
গ. কোন বিকল্প নেই
ঘ. সমরূপ কিংবা পৃথকীকৃত
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদদের মতে বাজারের সংজ্ঞা কি?
২. কি কি বিষয়ে লক্ষ্য রেখে বাজার কাঠামো নির্দিষ্ট করা হয়?
৩. নিখুঁত প্রতিযোগিতা ও অনিখুঁত প্রতিযোগিতার বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বাজার বলতে কি বোঝায়? অর্থশাস্ত্রে বাজার সম্পর্কিত বিশ্লেষণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
২. প্রাচীন অর্থনীতিতে বাজারের রূপ কি ছিল? বর্তমান সময়ে বাজার ব্যবস্থায় কি ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে?
৩. অর্থশাস্ত্রে বাজারের কতগুলো ধরন বিবেচনা করা হয়? বাজারের বিভিন্ন ধরনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]