খাজনা, সুদ ও মুনাফাকে অর্থশাস্ত্রে কি কি ভাবে উপস্থাপন করা হয় আলোচনা করুন।

আমরা জানি উৎপাদনের প্রধান প্রধান চারটি উপাদান হিসেবে যেগুলোকে সাধারণত: নির্দিষ্ট করা হয়
সেগুলো হল: শ্রম, পুঁজি, ভ‚মি ও উদ্যোক্তা (সংগঠন)। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এই উপাদানগুলোর বিভিন্ন
মাত্রায় ভ‚মিকা থাকে। উৎপাদনের মধ্যে দিয়ে যে বাড়তি মূল্য সৃষ্টি হয় তার পেছনে এসব উপাদানের
ভ‚মিকা যেহেতুমুখ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেহেতুএগুলোর প্রাপ্য নির্ধারণ অর্থশাস্ত্রে একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বরাবরই বিবেচিত। পুঁজিবাদের আদিকাল থেকে, বাজার অর্থনীতি যখন খুব
সুসংগঠিত হয়নি তখন থেকেই উৎপাদন শেষে সম্পদ যে কয়ভাগে বিতরণের প্রশ্ন আমরা বিবেচিত
হতে দেখি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: মজুরি, সুদ, খাজনা, মুনাফা। মজুরি পান শ্রমিকেরা, সুদ পান
পুঁজির লগ্নীকারকেরা, খাজনা পান ভ‚স্বামীরা এবং মুনাফা পান উদ্যোক্তারা। সে হিসেবে ক্ল্যাসিকাল,
নয়া ক্ল্যাসিকাল, কেইনসীয় অর্থশাস্ত্রে মজুরি, সুদ, খাজনা ও মুনাফাকে যথাক্রমে শ্রম, পুঁজি, ভ‚মি ও
উদ্যোক্তার প্রাপ্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়। অন্যদিকে মার্কসীয় অর্থশাস্ত্রে মজুরিকে বলা হয় পরিবর্তনীয়
মূলধন বা শ্রমশক্তির মুল্যের পরিশোধিত অংশ এবং সুদ, খাজনা ও মুনাফাকে বলা হয় উদ্বৃত্ত মূল্যের
অংশ।
আমরা নিচে প্রথমে খাজনা, সুদ ও মুনাফা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো এবং পরে মজুরির প্রধান
প্রধান তত্ত¡ ও বিতর্ক বিষয়ে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করবো।
খাজনা, সুদ ও মুনাফা
অষ্টাদশ ও উনিশ শতকে স্মীথ, রিকার্ডোসহ ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদেরা এবং ভিন্নভাবে কার্ল মার্কস,
উনিশ শতকের শেষ থেকে আলফ্রেড মার্শাল সহ নয়া ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদেরা সকলেই এসব বিষয়
নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদদের কাছে সমাজ ছিল তিনভাগে
বিভক্ত: ভ‚স্বামী, শ্রমিক ও পুঁজিপতি। এই বিভাজন হল তৎকালীন বৃটেনের সমাজেরই একটি চিত্র। সে
সময় অর্থনীতিবিদদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানের বিষয় এই ছিল যে, কিভাবে সম্পদ এই তিন
শ্রেণীর মধ্যে বিতরণ হয়। ভ‚মি মালিকানা থেকে প্রাপ্ত ভ‚স্বামীদের আয় খাজনা হিসেবেই অভিহিত
হয়েছে। প্রচলিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, খাজনা হচ্ছে ভ‚মি কিংবা প্রকৃতি প্রদত্ত যে কোন সম্পদের মালিকানা
সূত্রে প্রাপ্ত আয়। বিভিন্ন ধরনের জমির খাজনা কিভাবে নির্ধারিত হবে এ নিয়ে ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদ
বিশেষত: ডেভিড রিকার্ডো এবং পরে কার্ল মার্কস তাঁদের তাত্তি¡ক কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন। উৎকৃষ্ট
জমি, নিকৃষ্ট জমি বা প্রান্তিক জমিতে খাজনার বিভিন্ন মাত্রার বিশ্লেষণ এসব থেকে পাওয়া যায়।
ক্ল্যাসিকাল অর্থশাস্ত্রে সুদ, মুনাফা, খাজনাকে বলা হয় উৎপাদিত সম্পদের উপর সমাজের বিভিন্ন
শ্রেণীর অংশ। মার্কসের বিশ্লেষণ মুনাফা, সুদ, খাজনা তিনটিই হল উদ্বৃত্ত মূল্যের অংশ। অর্থাৎ
উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যে মূল্য তৈরী হচ্ছে তার যে অংশ শ্রমিককে শোধ করা হয়নি তা মালিক শ্রেণীর
বিভিন্ন অংশের মধ্যে বিতরণ হয়। মুদ্রাপুঁজি যোগানদার ব্যাংক বা ঋণদাতা সুদ নেয়, উদ্যোক্তা/
মালিক মুনাফা নেয় এবং ভ‚স্বামী খাজনা নেয়। কার অংশ কত হবে তা তাদের আপেক্ষিক শক্তি
অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। নয়া ক্ল্যাসিকাল অর্থশাস্ত্রে সুদকে সাধারণত: পুঁজির দাম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যে মুদ্রা পুঁজি যোগান দিচ্ছে তার অপেক্ষার মূল্যও এটি। সেরকম মুনাফাকে বলা হয়
উদ্যোক্তার পারিশ্রমিক। বলাবাহুল্য, সুদ, খাজনা, মুনাফা কিভাবে নির্ধারিত হবে তা নিয়ে
অর্থনীতিবিদদের মধ্যেকার বিস্তর মতপার্থক্য তাঁদের অর্থনীতি বিষয়ে সামগ্রিক বিশ্লেষণের সঙ্গে
সম্পর্কিত।
মজুরি সংক্রান্ত বিভিন্ন তত্ত¡
মজুরি সংক্রান্ত বিভিন্ন তত্ত¡ যা আমরা বর্তমান সময়ে অর্থশাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখি সেগুলো
সবই সামন্তবাদী ব্যবস্থা ভেঙে যাবার পর শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং সম্পত্তিহীন স্বাধীন মজুর শ্রেণীর
উদ্ভবের পর থেকে উদ্ভুত হয়েছে। এ ব্যাপারে যথারীতি এ্যাডাম স্মীথকে পথিকৃৎ বলা হয়। যদিও
মজুরি তত্ত¡ সেসময় যথেষ্ট পরিষ্কার হয়নি। স্মীথ তাঁর সামগ্রিক তত্ত¡ীয় কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবেই
ভেবেছেন যে, অন্যান্য পণ্যের দামের মতো বাজারে যোগান এবং চাহিদার মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমেই মজুরি
নির্ধারিত হবে। মালিক ও মজুর নিজ নিজ স্বার্থেই পরষ্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত হবে এবং তাতে
সকলেরই সর্বোচ্চ কল্যাণ হবে। এই বক্তব্য পরবর্তীকালে অর্থশাস্ত্রের মূলধারার মজুরি তত্তে¡র ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।
মজুরি তত্তে¡র মধ্যে ‘টিকে থাকা তত্ত¡'ও স্মীথের ধারণা থেকেই গড়ে উঠেছে।
এই তত্ত¡ শ্রম বাজারে চাহিদার চাইতে যোগানের উপর বেশি নির্ভরশীল। এই তত্ত¡ অনুযায়ী, শ্রমিকদের
যোগানের উপরই নির্ভর করে প্রকৃত মজুরি টিকে থাকার মাত্রায় থাকবে নাকি তারও নিচে চলে যাবে।
স্মীথ তাঁর মূল গ্রন্থে (ডবধষঃয ড়ভ ঘধঃরড়হং) বলেছেন যে, শ্রমিকদের মজুরি তাদের বেঁচে থাকা ও
পুনরোৎপাদনের মতো যথেষ্ট হতে হবে। অন্যান্য ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদ যেমন রিকার্ডো ও
ম্যালথাসের মতামতে কিছু কিছু পার্থক্য ছিল। রিকার্ডো মনে করতেন, শ্রমের ‘প্রাকৃতিক দাম'
ই হলো তার টিকে থাকার ও শ্রমিকদের বংশবৃদ্ধির জন্য যথাযথ দাম। ম্যালথাসের
বক্তব্য ছিল এর কাছাকাছি। তাঁর বক্তব্য ছিল, খুব বেশিদিন শ্রমের বাজার দাম প্রাকৃতিক দাম থেকে
ভিন্ন থাকতে পারে না। যদি মজুরি টিকে থাকার মাত্রা থেকে বেশি হয় তাহলে বাজারে শ্রমিকের সংখ্যা
বেড়ে যাবে এবং মজুরি হার ঠিকই নেমে যাবে। আবার যদি মজুরি টিকে থাকার খুব নিচে নেমে যায়
তাহলে শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাবে এবং মজুরি হার আবার উর্ধ্বগামী হবে। অর্থনীতিবিদদের মধ্যে
যখন এসব তত্ত¡ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছিল তখন ইউরোপেই সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক টিকে থাকার চাইতে অনেক
কম মজুরি পাচ্ছিলেন। এই মজুরিকে যারা অনমনীয় বা অপরিবর্তনীয় মনে করতেন তাদের বক্তব্যকে
মজুরির দৃঢ় আইন এর প্রবক্তা বলা হতো।
এর সঙ্গে সম্পর্কিত আরেকটি তত্ত¡ হল মজুরি-তহবিল তত্ত¡ স্মীথ ও রিকার্ডো
তাঁদের বক্তব্যে মজুরির জন্য নির্ধারিত তহবিলের উপর যে গুরুত্ব দিয়েছেন তার উপরই এই তত্ত¡
প্রতিষ্ঠিত। এর মূল কথা হলো, মজুরি নির্ধারিত হয় তার জন্য নির্ধারিত তহবিল দ্বারা। এটি
পুঁজিপতিদের অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর পর উদ্বৃত্ত এবং পুঁজির অংশ। নির্দিষ্ট সময়ে এর যেহেতু
পরিবর্তন হয় না সেহেতুএর পরিমাণ বেশি হলে গড় মজুরি বেশি হবে আর পরিমাণ কম হলে গড়
মজুরি কম হবে। আবার অন্যদিকে মজুরের যোগান বেশি হয়ে গেলে মজুরি কমে যাবে এবং মজুরের
যোগান কমে গেলে মজুরি বেড়ে যাবে। সুতরাং মজুরি বাড়াতে গেলে মূলধন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে
শ্রমিকদের কাজ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। এবং একই কারণে আইন করে মজুরি বাড়ানো কার্যকর হবে না।
১৮৬৫ সালের পর সিনিয়র, মিল, থর্নটন, লঞ্জ এবং ওয়াকার এই তত্ত¡ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন।
তাঁরা বলেন, শ্রমের চাহিদা মজুদ তহবিল দিয়ে নির্ধারিত হয় না, নির্ধারিত হয় ভোক্তাদের উৎপাদিত ১৯৩০-এর দশকে মহামন্দার পর কেইনস ও অন্যান্যরা ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকারী ভোগ ও
বিনিয়োগ ব্যয়ের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। এই সময়েই দেখা যায় মজুরি কমালে কর্মসংস্থান
বাড়বে এই তত্ত¡ ঠিক নয়। উপরন্ত মজুরি হ্রাস ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের মাধ্যমে অধিকতর বিনিয়োগের পথ
বন্ধ করতে পারে। এটি ‘ক্রয়ক্ষমতা তত্ত¡' নামে পরিচিত। এই তত্ত¡ অবশ্য একক প্রতিষ্ঠান নয় সমগ্র
অর্থনীতি নিয়েই আলোচনা করে।
অন্যদিকে মার্কসীয় অর্থশাস্ত্রে মজুরিকে দেখা হয় পুঁজিবাদে মূলধন সংবর্ধন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ
অংশ হিসেবে। এই অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী শ্রমিক ও মজুরি পুঁজিবাদের আগে ছিল না, পুঁজির বিকাশ ধারার
সঙ্গেই এর বিকাশ ঘটে এবং এর বিভিন্ন প্রবণতাও গড়ে উঠে। এই ধারার মতে অর্থনীতিতে
গতিশীলতা থাকলে মজুরি বৃদ্ধিতে মূলধন সংবর্ধন হ্রাস পায় না। তাঁরা আরও মনে করেন, মজুরি হচ্ছে
শ্রমশক্তির পরিশোধিত অংশের মূল্য। এর পরিমাণ বা অনুপাত পূর্বনির্ধারিত নয়। এটা নির্ধারিত হয়
শ্রমশক্তির যোগান, শ্রমশক্তির চাহিদা, প্রযুক্তিগত অবস্থান, সাংস্কৃতিক স্তর এবং সর্বোপরি শ্রমিক ও
পুঁজিপতিদের আপেক্ষিক শক্তি বিন্যাসের উপর। এই ধারার মতে, শ্রমিকেরা সংগঠিত ও শক্তিশালী
অবস্থানে থাকলে পণ্যের মূল্যের উপর তাদের অংশীদারীত্ব বাড়বে কিন্তু মালিকানা ব্যবস্থা,
রাজনৈতিক, মতাদর্শিক ও আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে কখনোই তারা তাদের শ্রমশক্তির পূর্ণ মূল্যের উপর কর্তৃত্ব পাবে না।
শ্রমের চাহিদা ও যোগান এবং মজুরি
শ্রমের চাহিদা ও যোগানের নমনীয়তা মজুরি নির্ধারণে কি ভ‚মিকা পালন করতে পারে সেটা একটি
জরুরী বিষয়। কেননা এই ধারণা ছাড়া মজুরি নির্ধারণ বা একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘উৎপাদন উপাদানের দাম'
সম্পর্কে তাত্তি¡ক ধারণা অসম্পূর্ণ হবে।
শ্রমের চাহিদার নমনীয়তা
১. কোন পণ্য যেটি উৎপাদিত হচ্ছে, তার চাহিদা নমনীয়তার উপর সেই পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত
শ্রমের চাহিদার নমনীয়তা নির্ভর করে। যেমন, ধরা যাক কাগজ যদি অনমনীয় চাহিদা সম্পন্ন পণ্য
হয় তাহলে এর মজুরদের মজুরি বাড়বার ফলে যদি কাগজের দাম বাড়ে তাহলে সেই হারে
কাগজের চাহিদা কমবে না। তার ফলে শ্রমের চাহিদার উপরও উল্লেখযোগ্য কোন প্রভাব পড়বে
না।
২. যে কোন উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ব্যয়ে মজুরির অনুপাত কেমন তা নমনীয়তা নির্ধারণে
অনেকখানি ভ‚মিকা পালন করে। যদি উৎপাদন ব্যয়ের বড় অংশ জুড়ে মজুরি থাকে তাহলে মজুরি
বৃদ্ধি পুরো ব্যয়ের উপর উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখে। শ্রমের চাহিদা সেক্ষেত্রে নমনীয় হয় এবং
নিয়োগ কমিয়ে ব্যয় কমানোর প্রবণতা থাকে।
৩. স্বল্পমেয়াদে শ্রমের চাহিদা নমনীয়তা কম হবে যদি শ্রমের বিকল্প না থাকে। সেক্ষেত্রে যদি মজুরি
বৃদ্ধি পায়ও তাহলেও শ্রমের চাহিদা সে হারে কমবে না। তবে দীর্ঘমেয়াদে যেহেতুপুঁজি দ্বারা শ্রম
প্রতিস্থাপন করা যায় সেহেতুশ্রমের চাহিদা নমনীয় হয়।
শ্রমের যোগানের নমনীয়তা
শ্রমের মোট যোগান পুরোপুরি অনমনীয় হতে পারে না। কেননা মজুরির বৃদ্ধি সবসময়ই অধিক থেকে
অধিকতর শ্রমিককে শ্রমশক্তির সঙ্গে যুক্ত করে এবং অন্য কর্মরত শ্রমিকদেরও বাড়তি সময় কাজে
উৎসাহিত করে।
শ্রমের যোগান মজুরি ছাড়াও আরও অনেক শর্তের উপর নির্ভরশীল। বিশেষত: শ্রমের সময়, কাজের
পরিবেশ, কাজের নিশ্চয়তা, কাজের অভিজ্ঞতার গুরুত্ব, নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ইত্যাদি
অনেক বিষয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমের যোগান বিভিন্ন রকম করে থাকে। এছাড়াও শ্রমের যোগানের
ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ছাড়াও পেশাগত বা ভৌগোলিক আরও অন্যান্য উপাদান যথেষ্ট ভ‚মিকা পালন করে।
সারসংক্ষেপ
পেশাগত অচলতা
কোন কোন পেশা আছে যেখানে পেশাগত শর্ত কিংবা দক্ষতার বিকাশহীনতার কারণে সেখান থেকে
শ্রমিকরা বা পেশাজীবীরা অন্য কোথাও যেতে পারে না। কোন কোন দক্ষতা অন্য কোন পেশার জন্য
উপযোগী হয় না।
ভৌগোলিক অচলতা
বেকার থাকলেও কিংবা কাজের খুব প্রয়োজন থাকলেও মানুষ সবসময় নিজের ভৌগোলিক অবস্থান
ছেড়ে বের হতে পারে না। পরিবারের প্রয়োজন, নতুন জায়গার অনিশ্চয়তা, প্রশিক্ষণের সমস্যা ইত্যাদি
কারণে অনেকেই নিজের এলাকার মধ্যেই আটকে থাকেন।
সামাজিক অচলতা
সামাজিক মূল্যবোধ, বিশ্বাস, বিধিনিষেধ ইত্যাদি কারণে যখন শ্রমের বাজারে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়
তখন সামাজিক অচলতা দেখা যায়। বিশেষত: পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধের কারণে নারীশ্রমের সচলতার ক্ষেত্রে এই অবস্থা দেখা যায়।
বাংলাদেশে শ্রমের যোগানের বর্তমান ধারা খেয়াল দেখা যাবে যে, কাজের চাহিদা এবং বিদ্যমান কাজে
প্রকৃত আয়ের নি¤œমাত্রার কারণে ভৌগোলিক বা সামাজিক অচলতা এখন অনেকখানি অকার্যকর হয়ে
গেছে। অর্থনৈতিক চাপে পরিবারে ভাঙন, পরিবার থেকে একাধিক সদস্যের কাজের চাপ ইত্যাদি
এখন খুব পরিচিত ঘটনা। ঢাকায় কাজের খোঁজে মানুষের অব্যাহত প্রবাহ দেখা যাচ্ছে, শিশু নারী
পুরুষ বৃদ্ধ সকলেই যে হারে কাজ খুঁজছেন সে হারে কাজ তৈরি হচ্ছে না।
সামন্তবাদী ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাবার পর শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং সম্পত্তিহীন স্বাধীন মজুর শ্রেণীর
উদ্ভবের পর মজুরি সংক্রান্ত বিভিন্ন তত্ত¡ উদ্ভুত হয়েছে। ক্ল্যাসিকাল, নয়া ক্ল্যাসিকাল, কেইনসীয়
অর্থশাস্ত্রে মজুরি, সুদ, খাজনা ও মুনাফাকে যথাক্রমে শ্রম, পুঁজি, ভ‚মি ও উদ্যোক্তার প্রাপ্য হিসাবে
বর্ণনা করা হয়। অন্যদিকে মার্কসীয় অর্থশাস্ত্রে মজুরিকে বলা হয় পরিবর্তনীয় মূলধন বা শ্রমশক্তির
মূল্যের পরিশোধিত অংশ এবং সুদ, খাজনা ও মুনাফাকে বলা হয় উদ্বৃত্ত মূল্যের অংশ। মজুরি
নির্ধারণে শ্রমের চাহিদা ও যোগানের নমনীয়তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমের যোগান মজুরি ছাড়াও আরও অনেক শর্তের উপর নির্ভরশীল।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. মজুরিকে পরিবর্তনীয় মূলধন বলা হয়ক. মার্কসীয় অর্থব্যবস্থায় খ. কেইনসীয় অর্থব্যবস্থায়
গ. ক্ল্যাসিকাল অর্থব্যবস্থায় ঘ. নয়া ক্ল্যাসিকাল অর্থব্যবস্থায়
২. ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদদের মতে সম্পদ বিতরণ হয়ক. সমাজের তিন শ্রেণীর কাছে তাদের প্রাপ্য অনুযায়ী খ. প্রান্তিক উৎপাদন অনুযায়ী
গ. ভ‚স্বামীর ইচ্ছা অনুযায়ী ঘ. জবরদস্তি করে
৩. শ্রমের ভৌগোলিক বা সামাজিক অচলতা অনেকখানি অকার্যকর হয়ে গিয়েছেক. সম্পদের অচলতার কারণে
খ. কাজের চাহিদা এবং বিদ্যমান কাজে প্রকৃত আয়ের নি¤œমাত্রার কারণে
গ. ভৌগোলিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে
ঘ. খেয়ালখুশির কারণে
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. “বিভিন্ন উৎপাদন উপাদানের নির্দিষ্ট দাম আছে”- ব্যাখ্যা করুন।
২. ক্রয়ক্ষমতা তত্ত¡ বলতে কি বোঝায়?
৩. সামাজিক অচলতা শ্রমের যোগানকে কিভাবে প্রভাবিত করে?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. খাজনা, সুদ ও মুনাফাকে অর্থশাস্ত্রে কি কি ভাবে উপস্থাপন করা হয় আলোচনা করুন।
২. অর্থশাস্ত্রের বিভিন্ন ধারায় ‘মজুরি'-কে কিভাবে দেখা হয়েছে ব্যাখ্যা করুন।
৩. শ্রমের চাহিদা নমনীয়তা কি? এটি কিভাবে মজুরিকে প্রভাবিত করে আলোচনা করুন।
৪. শ্রমের যোগান কি কি শর্তের উপর নির্ভরশীল? মজুরি কি শ্রমের যোগানকে প্রভাবিত করে?

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]