বৈষম্য বলতে কি বোঝায়? এটি কতভাবে একটি অর্থনীতিতে বিদ্যমান থাকতে পারে? গিনি সহগ ও লরেঞ্জ রেখা সম্পর্কে আপনার ধারণা লিখুন।

অর্থনীতিতে সম্পদ বিতরণ প্রশ্নটি এখন পর্যন্ত সবচাইতে বিতর্কিত এবং অমীমাংসিত এলাকা। এই
প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ তাঁদের তাত্তি¡ক কাঠামো অনুযায়ী বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। আমরা
এসব বিষয়ে ইতোমধ্যে অনেকখানি আলোচনা করেছি। সক্ষেপে এখানে বিষয়টি নি¤œরূপ উপস্থিত
করা যায়।
ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন সমাজের সম্পদ তিনটি শ্রেণীর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রায় ভাগ হবে।
শ্রেণী তিনটি হল: ভ‚স্বামী, পুঁজিপতি ও শ্রমিক। তাদের মধ্যে উৎপাদিত ও প্রাপ্ত সম্পদ ভাগ হবে
যথাক্রমে খাজনা, মুনাফা ও মজুরি হিসাবে। এই মত অনুযায়ী যেহেতুসম্পদ নির্দিষ্ট সুতরাং কারও
প্রাপ্তি বাড়লে অন্যের কমবে। তাঁদের ধারণা অনুযায়ী, ক্রমান¦য়ে পুঁজি বিনিয়োগ ও উৎপাদন বিকাশের
মধ্য দিয়ে এক পর্যায়ে পুঁজিপতির মুনাফা ভ‚স্বামীর খাজনার তুলনায় কমে আসবে এবং তা সামগ্রিক
বিনিয়োগ পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দেবে।
নয়া ক্ল্যাসিকাল বা প্রান্তিক মতবাদের অর্থনীতিবিদেরা বিতরণকে উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিতভাবেই
দেখেন। তাঁরা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন উৎপাদন উপাদানের অবদান এবং সেই হিসেবে সেগুলোর
দাম নির্ধারণ করেন। তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রত্যেকটি উপাদানের প্রান্তিক অবদান অনুযায়ী যা সে
পায় সেটাই তার পাবার কথা। এখানে কোন অঙ্গতির কিছু নেই। তাদের এই তত্ত¡ প্রান্তিক
উৎপাদনশীলতা তত্ত¡ নামে পরিচিত। মার্কিন অর্থনীতিবিদ ঔড়যহ ইধঃবং ঈষধৎশ এই তত্ত¡ দাঁড় করানোর
ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন। বর্তমান অর্থশাস্ত্রে বিতরণের তত্ত¡সমূহের মধ্যে এটিই
সবচাইতে প্রভাবশালী। এই তত্ত¡ অনুযায়ী মজুরি হচ্ছে শ্রমিকের, খা প্রান্তিক উৎপাদনশীলতার প্রকাশ।
এর গাণিতিক চর্চা অর্থশাস্ত্রে খুবই প্রচলিত। যেখানে খুব সহজভাবে বিষয়টি দেখানোর জন্য দুটো
উৎপাদন উপাদান নিয়ে উৎপাদন অপেক্ষক দেখানো হয়। এগুলো হলো: শ্রম ও পুঁজি। ভ‚মিকে এখানে
পুঁজির মধ্যেই ধরে নেয়া হয়। এরপর একটিকে স্থির রেখে অন্যটির আংশিক অন্তরকলনের মাধ্যমে
তার দাম বের করা হয়। যেমন: পুঁজি স্থির রেখে যদি অতিরিক্ত শতকরা ১ ভাগ শ্রমশক্তি যোগ করলে
০.৬ ভাগ উৎপাদন বাড়ে তাহলে উৎপাদনের শতকরা ৬০ ভাগ হবে শ্রমিকের পাওনা। একই হিসাব
পুঁজির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এই তাত্তি¡ক কাঠামো অনুযায়ী, উৎপাদন পূর্ণাঙ্গভাবে বিতরণ হয়ে যায়। এই মডেলে শোষণ, অপচয়
বা বঞ্চনার কোন সুযোগ নেই। এই তাত্তি¡ক মডেল দাঁড় করবার ক্ষেত্রে যিনি বিশেষ ভ‚মিকা পালন
করেছেন তিনি হলেন খবড়হযধৎফ ঊঁষবৎ। তিনি দেখান কোন উৎপাদন অপেক্ষক ছ=ভ(খ,ক)-এ স্থির
উৎপাদন মাত্রা ধরে তার বিতরণ নিচের সমীকরণের মতো করে দেখানো যায়:
ছ = গচখ
.খ + গচক.ক। এটিইনামে পরিচিত।
এখানে ছ হচ্ছে মোট উৎপাদন, গচখ হচ্ছে শ্রমের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা, খ হচ্ছে নিয়োজিত শ্রমের
একক, গচক হল পুঁজির প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা এবং ক হল নিয়োজিত মোট পুঁজির একক।
অন্যদিকে, মার্কসও বিতরণ প্রশ্নটিকে উৎপাদনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবেই দেখেছেন। তবে তাঁর মডেলে
একদিকে ঐতিহাসিক ও অন্যদিকে সামগ্রিক কাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁর মতে সম্পদ তা
প্রাকৃতিক হোক বা উৎপাদিত হোক কি অনুপাতে বিতরণ হবে তা মুখ্যত: নির্ভর করে মালিকানা
ব্যবস্থার উপর। এর সঙ্গে রাষ্ট্রব্যবস্থা, সামাজিক সম্পর্ক সবকিছুই সম্পর্কিত। মার্কসীয় কাঠামোতে
বর্তমান শ্রমকে ধরা হয় জীবন্ত শ্রম হিসাবে আর পুঁজিকে বলা হয় মৃত শ্রম। মার্কসীয় কাঠামোয় এই
ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতাটি মৌলিক। অন্যরা যেখানে পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে চিরস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে
দেখেছেন, মার্কস সেখানে এটিকে দেখেছেন একটি অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে। পুঁজিবাদী
সামগ্রিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে শ্রমিক শ্রেণী ও পুঁজিপতি শ্রেণীও এই ব্যবস্থার অংশ হিসাবে গড়ে
উঠেছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও মনে করেন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শোষণ ও মূলধন সংবর্ধন এক সঙ্গেই চলে। এই প্রক্রিয়ায়
বিভিন্ন ধরনের সংকটও সৃষ্টি হয়। মানুষের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় উন্নততর কোন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হলে
সংকট মোকাবিলার মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদে আরও একচেটিয়াকরণ সৃষ্টি হয়। বেকারত্ব, বৈষম্যবৃদ্ধি
পুঁজিবাদী অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই অব্যাহত থাকে।
বৈষম্যের বিভিন্ন ধরন
আমরা প্রথম অধ্যায়েই আলোচনা করেছি যে, বাজার অর্থনীতি যে জায়গাগুলোতে তার প্রতিশ্রæত
ভ‚মিকা পালনে ব্যর্থ হয় তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল সমাজে বৈষম্য। স্যামুয়েলসন নিজেই প্রশ্ন করেছেন
যে, “বাজারের অদৃশ্য হস্ত কি আসলে সব চাইতে বঞ্চিত অংশের পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করতে
পারে? যারা দীর্ঘসময় ধরে কাজ করেন তাদের জন্য শোভন জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করতে পারে?”
তিনিই আবার উত্তর দিয়েছেন, “না”। বলেছেন, “আসলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবচাইতে যার
দাবী বেশি বা যার পাবার কথা তার কাছে সম্পদ নিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে পারে না। এটি আরও
ব্যাপক বৈষম্যের দিকে সমাজকে নিয়ে যেতে পারে, তৈরি করতে পারে অসংখ্য অপুষ্ট শিশু যারা
আরও অপুষ্ট শিশু তৈরি করবে এবং প্রজন্ম পরস্পরায় এই বৈষম্য চলতে থাকবে।” স্যামুয়েলসনের
মতে, “এ্যাডাম স্মীথ এই ধারণায় পুরোপুরি ঠিক নন যে, অদৃশ্য হস্তের মাধ্যমে ব্যক্তির স্বার্থ ও
সমাজের স্বার্থ এক জায়গায় গিয়ে মিশবে।”
আমরা বিশ্বব্যাংক বা জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার তথ্য থেকে দেখি একদিকে এই বিশ্বের সম্পদ
বাড়ছে উচ্চহারে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ হচ্ছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কিন্তুসেইসঙ্গে অধিকাংশ
মানুষের জীবনই অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকছে। বৈষম্য বাড়ছে, দারিদ্র সীমার নিচে মানুষের সংখ্যা
ক্রমাগত বাড়ছে। এসব তথ্য থেকে আমরা বুঝতে পারি সম্পদের অভাব নয় অন্য কোন কারণ এর
পেছনে কাজ করছে। এরপর আমরা যখন দেখি বিশ্বের সবচাইতে সম্পদশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই
বৈষম্য, অপচয়, দারিদ্র পাহাড়প্রমাণ তখন আমাদের মধ্যে প্রশ্ন আরও বেড়ে যায়। আমরা এখানে
এসব প্রশ্নের সমাধান আলোচনা করতে পারবো না, কিন্তুঅন্তত: এ বিষয়ে তথ্য প্রমাণ থেকে বাস্তব
চিত্র বুঝতে চেষ্টা করবো।
বৈষম্য বা বঞ্চনার বিভিন্ন তথ্য থেকে আমরা দেখি বৈষম্য শুধুযে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ তা নয়
এটি একই দেশের মধ্যে নারী-পুরুষ, বিভিন্ন জাতি ও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলকে ঘিরে হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আয়ের ক্ষেত্রে জাতিগত ও লিঙ্গীয় বৈষম্য
জনগোষ্ঠী বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর আয়ের চিত্র (ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের শতকরা অংশ হিসেবে)
পুরুষ নারী
শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় (স্পেনীয় বাদে) ১০০ ৬৭
শ্বেতাঙ্গ হিস্পানিক ৭৩ ৫৭
এশিয়ান ৯৪ ৭১
কৃষ্ণাঙ্গ ৭৩ ৫৬
আদিবাসী আমেরিকান ৭১ ৫৩
চিত্র ৯.৪ : বিভিন্ন মাত্রায় বৈষম্য
উপরের ছকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি, যাতে ঐ দেশে মজুরি ও আয়ের ক্ষেত্রে
বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের চেহারা পাওয়া যাচ্ছে। বৈষম্য আমরা দেখছি নারী-পুরুষ, জাতিগত এবং
বর্ণগত। এর মধ্যে সবচাইতে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় পুরুষ, তার চাইতে
শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় নারীর আয় কম। আবার সবচাইতে খারাপ অবস্থায় আছেন যথাক্রমে কৃষ্ণাঙ্গ ও আদিবাসী আমেরিকান নারী।
উপরের ছকে নির্দিষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নারী-পুরুষের পেশাগত এমন একটি চিত্র আমরা পাচ্ছি যেখান
থেকে বোঝা সম্ভব কিভাবে পেশার শুরুতেই বৈষম্যের বীজ রোপিত হয়ে যায়। দেখা যাচ্ছে যেসব
পেশায় আয় কম মেয়েদের অংশগ্রহণ কিংবা কর্মসংস্থান সেগুলোতেই বেশি। এর অনুপাত শতকরা
৮৮ থেকে শতকরা প্রায় ৯৯ ভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্যদিকে যেসব পেশায় আয় বেশি, সেগুলোতে
মেয়েদের প্রবেশাধিকার খুবই কম।
এই চিত্র শুধুযুক্তরাষ্ট্রেই নয় আন্তর্জাতিক। বাংলাদেশেও একই ঘটনা আছে। তবে বাংলাদেশের মতো
দেশে মজুরিবিহীন কাজে মেয়েদের একটি বড় অংশ নিয়োজিত আছেন। কৃষি এর একটি বড় ক্ষেত্র।
এছাড়া পারিবারিক শিল্প বা ব্যবসায়ে তাদের শ্রম স্বীকৃত নয়। শিশুপালন বা গার্হস্থ্য শ্রম তো আছেই।
বাংলাদেশে দিনমজুর বা শিল্পমজুর হিসেবে মেয়েদের অংশগ্রহণ এখন আগের তুলনায় বেশি। সেখানে
আমরা একইরকম চিত্র দেখি। একই কাজে পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের মজুরি কম।
ছক ৩: একই কাজে বিভিন্ন দেশে মজুরির তফাৎ
অঞ্চল শিল্পখাতে উচ্চ মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা (ঘন্টা প্রতি ডলার, ১৯৯৫)
জার্মানী ৩১.৮৮
জাপান ২৩.৬৬
যুক্তরাষ্ট্র ১৭.২০
ইটালী ১৬.৪৮
যুক্তরাজ্য ১৩.৭৭
দক্ষিণ কোরিয়া ৫.২৫
মেক্সিকো ১.৫১
ভারত ০.৭১
বাংলাদেশ ০.২০
উপরের ছক থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আয়ের আকাশ-পাতাল ব্যবধান দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের
তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে মজুরি প্রায় ৮০ গুণ এবং জার্মানীতে প্রায় ১৫০ গুণ বেশি। এই ব্যবধানের নানা
কারণ রয়েছে। উপরন্ত ক্রয়ক্ষমতার অভিন্ন মাপকাঠি বা চঁৎপযধংরহম ঢ়ড়বিৎ ঢ়ধৎরঃু (চচচ) দিয়ে
বিবেচনা করলে এই ব্যবধান কিছুটা কমে আসবে। তবে অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে দামের তারতম্য
থাকলে যেমন কম দামের এলাকা থেকে বেশি দামের এলাকার দিকে পণ্যের প্রবাহের একটা প্রবণতা
থাকে শ্রমের ক্ষেত্রেও তাই হয়। কিন্তুশ্রমের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ অনেক বেশি। বিশেষত: শিল্পোন্নত
দেশগুলোর প্রবল প্রতিবন্ধকতার কারণে ঐসব দেশে শ্রমের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে
ব্যবধানের উঁচুমাত্রা অব্যাহত থাকছে। ‘বাজার প্রক্রিয়ায়' ব্যবধান দূর হচ্ছে না।
ছক ৪: বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় আয়ে বিভিন্ন আয় গ্রæপের অনুপাত
বাংলাদেশ ১৯৯১-৯২ বাংলাদেশ ১৯৯৫-৯৬ যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৮ যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৫
সর্বনি¤œ ৫% ১.০৩ ০.৮৮ - -
প্রথম ২০% ৬.৫২ ৫.৭১ ৪.৬০ ৩.৭০
দ্বিতীয় ২০% ১০.৮৯ ৯.৮৬ ১০.৭০ ৯.১০
তৃতীয় ২০% ১৫.৫৩ ১৩.৮৮ ১৬.৭০ ১৫.২০
চতুর্থ ২০% ২২.১৯ ২০.৫০ ২৪.০০ ২৩.৩০
পঞ্চম ২০% ৪৪.৮৭ ৫০.০৮ ৪৪.০০ ৪৮.৭০
সর্বোচ্চ ৫% ১৮.৮৫ ২৩.৬২ ১৭.০০ ২১.০০
উপরের ছকে আমরা বিকশিত ও অবিকশিত ‘বাজার অর্থনীতি'র ভেতরের বৈষম্যের পরিষ্কার চিত্র
দেখতে পাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন মাত্রার উদাহরণ। বাংলাদেশ ‘দরিদ্র'
যুক্তরাষ্ট্রে যেসব পেশায় আয় কম মেয়েদের
অংশগ্রহণ কিংবা কর্মসংস্থান সেগুলোতেই বেশি। এর
অনুপাত শতকরা ৮৮ থেকে শতকরা প্রায় ৯৯
ভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্যদিকে যেসব পেশায়
আয় বেশি, সেগুলোতে
মেয়েদের প্রবেশাধিকার খুবই কম।
সারসংক্ষেপ
‘অনুন্নত' দেশ হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সবচাইতে সম্পদশালী, ক্ষমতাবান, সবচাইতে
শক্তিধর অর্থনীতি। কিন্তু আমরা যখন আকাশ পাতাল তফাতের এই অর্থনীতিগুলোর ভেতরের
বৈষম্যের চিত্র দেখি তখন সেখানে বৈষম্যের অনুপাতে কোন আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখি না। দেখি
দুই অর্থনীতিতেই একই ধরনের বৈষম্য। এমনকি গত কয়েক বছরে বৈষম্য বৃদ্ধির প্রবণতাও একই
রকম। দেখা যাচ্ছে দুদেশেই সর্বোচ্চ শতকরা ৫ ভাগ ও ২০ ভাগ জনগোষ্ঠীর হাতে সম্পদ
তুলনামূলকভাবে বেশি বেড়েছে। অন্যদিকে নি¤œ আয়ের শতকরা ৫ ও ২০ ভাগ জনগোষ্ঠীর সম্পদের
অনুপাত কমেছে।
বৈষম্যের পরিমাপক
অর্থশাস্ত্রে বৈষম্য পরিমাপের জন্য যে দুটি ধারণা বহুল ব্যবহৃত সেগুলো হল: গিনি সহগ ও লরেঞ্জ রেখা।
গিনি সহগ (
ইটালীয় পরিসংখ্যানবিদ গিনি (ঈ. এরহর)-র নামানুসারে এই অনুপাত বৈষম্যের মাত্রা বোঝার জন্য
ব্যবহার হয়। এই অনুপাত শতকরা ১০০ ভাগের দিকে যত যাবে ততই সেখানে বেশি বেশি বৈষম্যের
সৃষ্টি হবে। আর অনুপাত যত ০-এর দিকে যাবে ততই সেখানে বৈষম্য হ্রাস পাচ্ছে বলে ধরে নেয়া
যাবে।
লরেঞ্জ রেখা
লরেঞ্জ রেখা হল এমন একটি রেখা যার মধ্য দিয়ে একটি দেশের বিভিন্ন আয়গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পদ
বিতরণের আনুপাতিক বন্টন বোঝা যায়। একটি অর্থনীতিতে বিভিন্ন আয়গোষ্ঠীর মধ্যে আয় বন্টন যদি
পুরোপুরি নিখুঁত সমতাভিত্তিক হয় তাহলে রেখাটি থাকবে ০ থেকে ৪৫ ডিগ্রী কৌণিক অবস্থানে।
সম্পদ বিতরণ প্রশ্নে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে। বাজার অর্থনীতি বৈষম্য সৃষ্টি
করে না তার নিরসন করে সেটি নিয়েও অর্থনীতিবিদদের মধ্যে কোন ঐক্যমত নেই। তবে বাস্তব
তথ্য থেকে বিভিন্ন দেশে শ্রেণীগত, নারী পুরুষ কিংবা আঞ্চলিক বৈষম্য বৃদ্ধির ঘটনাই দেখা যায়।
আন্তর্জাতিকভাবে দেখা যায় যেসব পেশায় আয় কম মেয়েদের অংশগ্রহণ কিংবা কর্মসংস্থান
সেগুলোতেই বেশি। বাংলাদেশে মজুরিবিহীন কাজে মেয়েদের একটি বড় অংশ নিয়োজিত
আছেন। অর্থশাস্ত্রে বৈষম্য পরিমাপের জন্য গিনি সহগ ও লরেঞ্জ রেখা - এই দুটো ধারণা বহুল ব্যবহৃত হয়।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত¡ অনুযায়ী এক একক শ্রমশক্তি যোগ করে ০.৬ ভাগ উৎপাদন বাড়লে
ক. উৎপাদনের ৬০ ভাগ হবে শ্রমিকের পাওনা খ. উৎপাদনের ১০০ ভাগ শ্রমিকের পাওনা
গ. উৎপাদনের ৪০ ভাগ শ্রমিকের পাওনা ঘ. কোন অংশই পায় না পাওনা
২. ‘অদৃশ্য হস্তের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বার্থ ও সমাজের স্বার্থ এক জায়গায় গিয়ে মিশবে'- এ ধারণার
বিরোধিতা করেছেন:
ক. মিল্টন ফ্রিডম্যান খ. এ্যাডাম স্মীথ
গ. পল স্যামুয়েলসন ঘ. আলফ্রেড মার্শাল
৩. মেয়েদের কর্মসংস্থান কোন্ ধরনের পেশায় বেশি
ক. যেসব পেশায় আয় বেশি খ. যেসব পেশায় আয় কম
খ. যেসব পেশায় নিরাপত্তা বেশি ঘ. যেসব পেশায় আয় ও ঝুঁকি বেশি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. বৈষম্য বলতে কি বোঝায়? এটি কতভাবে একটি অর্থনীতিতে বিদ্যমান থাকতে পারে?
২. গিনি সহগ ও লরেঞ্জ রেখা সম্পর্কে আপনার ধারণা লিখুন।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বিতরণ প্রশ্নে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীর ঐক্য ও অনৈক্য পর্যালোচনা করুন।
২. বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে বৈষম্যের চিত্রের একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর
পাঠ - ১ : ১. ক ২. ক ৩. খ
পাঠ - ২ : ১. গ ২. ক ৩. গ
পাঠ - ৩ : ১. ক ২. গ ৩. খ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]