আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন সংঘটিত হয়? এর কারণগুলো ব্যাখ্যা করুন।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও তার বিকাশ
পারস্পরিক প্রয়োজনে মানুষ পরস্পর বিভিন্ন দ্রব্য ও সেবা বিনিময় করে। তা যখন বৃহৎ আকারে
সংঘটিত হয় তখন তাকে আমরা বাণিজ্য বলি। বাণিজ্য যখন নির্দিষ্ট রাষ্ট্র নামক ভৌগোলিক
কাঠামোর বাইরে সম্প্রসারিত হয়, যখন দুই বা ততোধিক রাষ্ট্র জুড়ে রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মাধ্যমে
বাণিজ্য সংঘটিত হয় তখন তাকে আমরা বলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য।
আজকের দিনে আমরা যাকে রাষ্ট্র বলে জানি সেরকম রাষ্ট্রের বয়স খুব বেশি দিনের নয়, কয়েকশো
বছর। এর আগে ছিল সাম্রাজ্য, তারও আগে আমরা পাই গোত্রীয় সমাজ। রাষ্ট্রের বয়স বেশি দিনের
নয় বলে বর্তমান কালে রাষ্ট্রীয় আইন, বিধিনিষেধ, সার্বভৈামত্ব, শুল্ক-অশুল্ক বাধা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে
যে বাণিজ্য তার অভিজ্ঞতাও বেশি দিনের নয়। কিন্তুএর অর্থ এই নয় যে, ‘আন্তর্জাতিক' বলতে
সাধারণ ভাবে আমরা দূরদুরান্তের যে বাণিজ্যের কথা জানি তা প্রাচীন কালে ছিল না। বহুকাল আগে
থেকেই মানুষ দূরদুরান্তে, নৌপথে, স্থলপথে বাণিজ্য করতে গেছে। প্রযুক্তিগত দূর্বলতা, যোগাযোগ
ব্যবস্থার পশ্চাদপদতা ইত্যাদি কারণে বাণিজ্য ছিল খুব সীমিত। তাছাড়া ক্রেতা সীমিত থাকায়, শ্রম
বিভাজন সীমিত থাকায় বাজারও খুব সীমিত ছিল। বাণিজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে বিনিময়ের মাধ্যমের
ক্ষেত্রেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। একসময়ে দ্রব্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে স্বর্ণ বা রৌপ্য ব্যবহার করা হতো। ক্রমে ধাতব মুদ্রা, চেক
এবং একপর্যায়ে এসে ক্রেডিট কার্ড চালু হয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র তার
সার্বভৌম প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার হিসাবে ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রা চালু
করেছে। এর ফলে বিভিন্ন মুদ্রার মধ্যে বিনিময় হার নির্ধারণের প্রশ্ন
এসেছে। এর মধ্যেও অনেক রকম বিবর্তন এসেছে।
সম্প্রতিকালে ইন্টারনেট এবং স্যাটেলাইট চ্যানেলের বিকাশের
কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার
মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ই-বাণিজ্যের প্রসার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের
ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কারণ
একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রধানত: চারটি কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হয়ে থাকে। এগুলো হল :
 প্রাকৃতিক সম্পদের বৈচিত্র্য ও প্রাপ্যতা।
 চাহিদার তারতম্য।
 প্রযুক্তিগত তফাতের কারণে উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি উৎপাদন।
 উৎপাদন খরচের পার্থক্য।
প্রাকৃতিক সম্পদের বৈচিত্র্য ও প্রাপ্যতা
বিভিন্ন দেশে বা অঞ্চলে সম্পদের প্রাপ্যতা বা প্রাচুর্য বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন আফ্রিকার অনেক
দেশে খনিজ সম্পদ বেশি আছে। এসব দেশ খনিজ সম্পদ রপ্তানি করতে পারে কিংবা খনিজ সম্পদ
নির্ভর শিল্প গড়ে তারা উৎপাদিত দ্রব্য রপ্তানি করতে পারে। আবার অন্যদিকে জাপানে প্রযুক্তিগত
সম্পদ আছে কিন্তুখনিজ সম্পদ নেই, সে ঐ খনিজ সম্পদ আমদানি করতে পারে। বাংলাদেশে প্রচুর
পাট উৎপাদন হয়। বাংলাদেশ তাই পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করতে পারে। আবার শ্রমশক্তি সুলভ
ও মজুরি অনেক নি¤œ থাকার কারণে এখানে গার্মেন্টস এর মত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যা প্রধানত:
রপ্তানির উদ্দেশ্যেই স্থাপিত।
চাহিদার তারতম্য
সম্পদের প্রাচুর্য্য এবং রুচি বা সামাজিক কোন কারণে তার কম চাহিদা থাকার কারণে কোন দেশ
কোন পণ্য রপ্তানিতে আগ্রহী হতে পারে। ভারতে গরুর সংখ্যা অনেক। কিন্তুধর্মীয় ও সামাজিক
কারণে সেখানে গরুর মাংসের চাহিদা কম। অন্য দিকে বাংলাদেশে গরুর মাংসের চাহিদা বিপুল। যে
কারণে বাংলাদেশে ভারত থেকে বৈধ ও অবৈধ পথে প্রচুর গরু আমদানি হয়ে থাকে।
প্রযুক্তিগত তফাতের কারণে উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি উৎপাদন
সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কিংবা বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে প্রযুক্তিগত অবস্থানের ক্ষেত্রে অনেক
পার্থক্য দেখা যায়। যেসব দেশ প্রযুক্তিগত ভাবে এগিয়ে, সেসব দেশে উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য অনেক
দেশের চাইতে বেশি যেখানে প্রযুক্তিগত এই অগ্রগতি হয়নি। তার ফলে কোন কোন দেশে কোন কোন
পণ্য প্রচুর পরিমানে উৎপাদন হচ্ছে কিংবা উদ্বৃত্ত হচ্ছে। সে চাইবে এসব পণ্য অন্য কোথাও রপ্তানি
করতে। অন্যদিকে যেসব দেশ প্রযুক্তিগত কারণে এসব পণ্য যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদন করতে
পারছেনা কিন্তু তার চাহিদা রয়েছে সে সব দেশ এসব পণ্য আমদানি করতে চাইবে। যেমন
বাংলাদেশের মত দেশ যুক্তরাষ্ট্র বা তাইওয়ান থেকে কম্পিউটার কিংবা ভারত বা জাপান থেকে গাড়ী আমদানি করে ।
উৎপাদন খরচের পার্থক্য
উৎপাদন খরচের পার্থক্য তৈরী হয় সম্পদের প্রাপ্যতা বা প্রাচুর্যের তফাৎ কিংবা প্রযুক্তিগত তারতম্যের
কারণে। বাংলাদেশে শ্রমশক্তির প্রাচুর্য আছে, পাটের প্রাচুর্য আছে। সুতরাং এখানে শ্রমপ্রধান শিল্প
কিংবা পাটকেন্দ্রিক উৎপাদনের উৎপাদন খরচ কম পড়বে। আবার মিসর বা পাকিস্তানে তুলা আছে।
সুতা উৎপাদনে তাদের খরচ কম পড়বে। প্রযুক্তিগত দক্ষতার কারণে জাপান বা কোরিয়ায় গাড়ী
উৎপাদনে খরচ কম পড়বে। আপেক্ষিক দক্ষতার কারণে আবার জাপান বা কোরিয়া কম্পিউটার
উৎপাদনে যে সুবিধা পাবে তা যুক্তরাষ্ট্র পাবে না। কিন্তুযুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিগত কারণে বা আপেক্ষিক
দক্ষতার কারণে বিমান বা কম্পিউটার উৎপাদনে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারে।
তবে এখানে বলে রাখা দরকার যে, খরচের ক্ষেত্রে এই পার্থক্য অনেক সময় কৃত্রিমভাবে বা
বলপ্রয়োগের মাধ্যমেও করা হয়। এরকম চর্চা শুধুআজকের নয়। এটি শুরু হয়েছে ঔপনিবেশিক আমলেই। চারটি কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হয়ে থাকে। এগুলো হল: প্রাকৃতিক সম্পদের বৈচিত্র্য
ও প্রাপ্যতা, চাহিদার তারতম্য, প্রযুক্তিগত তফাতের কারণে উদ্বৃত্ত বা ঘাটতি উৎপাদন এবং
উৎপাদন খরচের পার্থক্য। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে বিনিময়ের মাধ্যমে অনেক
পরিবর্তন এসেছে। স্বর্ণ বা রৌপ্য থেকে ক্রমে ধাতব মুদ্রা, চেক এবং এক পর্যায়ে এসে ক্রেডিট
কার্ড চালুহয়েছে। ই-বাণিজ্যের প্রসার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ১০.১
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. দ্রব্য বিনিময়ের মাধ্যমের বিবর্তন ধারা:
ক. স্বর্ণ বা রৌপ্য, ধাতব মুদ্রা, চেক, ক্রেডিট কার্ড খ. ধাতব মুদ্রা, স্বর্ণ বা রৌপ্য, চেক, ক্রেডিট কার্ড
গ. স্বর্ণ বা রৌপ্য, চেক, ধাতব মুদ্রা, ক্রেডিট কার্ড ঘ. ধাতব মুদ্রা, চেক, স্বর্ণ বা রৌপ্য, ক্রেডিট কার্ড
২. আফ্রিকার খনিজ সম্পদ বেশি আছে বলে তা সেক. রপ্তানি ও শিল্প উৎপাদন কাজে লাগাতে পারে। খ. পাচার করতে পারে।
গ. লুটপাট করতে দিতে পারে। ঘ. নষ্ট করতে পারে।
৩. বাংলাদেশে আপেক্ষিক সুবিধা আছেক. কম্পিউটার শিল্প খ. স্বর্ণ
গ. শ্রমপ্রধান শিল্প ঘ. সুতা উৎপাদন
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. দ্রব্য বিনিময়ের মাধ্যমের বিবর্তন ব্যাখ্যা করুন।
২. চাহিদা ও প্রযুক্তিগত তারতম্যের কারণে কিভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হয়ে থাকে?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. বাণিজ্য কখন আন্তর্জাতিক রূপ নেয়? এ সম্পর্কে আপনার ধারণা ব্যাখ্যা করুন।
২. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন সংঘটিত হয়? এর কারণগুলো ব্যাখ্যা করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]