বাণিজ্য তত্তে¡র শুরু
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে বাণিজ্যতন্ত্রীদের তত্ত¡ যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করলেও এ্যাডাম স্মীথসহ
ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদরাই প্রথম এ বিষয়ে সুসংহত ও শক্তিশালী ভিত্তির উপর এই প্রশ্নটিকে স্থাপন
করেন। তাঁদের মতে এই বিষয়টির সঙ্গে তিনটি প্রশ্ন জড়িত। এগুলো হল:
১. বাণিজ্য থেকে সুবিধাগুলো কি যেগুলো একটি রাষ্ট্র পেতে পারে? বাণিজ্য না করলে কি কি ক্ষতি
হতে পারে?
২. বাণিজ্যের কাঠামো কি হবে? অর্থাৎ কি কি দ্রব্য আমদানি হবে, কি কি দ্রব্য রপ্তানি হবে? কি কি
মৌলিক বিধি বাণিজ্যের এই প্রবাহকে প্রভাবিত করে?
৩. বাণিজ্যের শর্ত কি কি? অর্থাৎ আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে কি ধরনের সম্পর্ক হতে পারে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ্যাডাম স্মীথ যে তত্ত¡ দাঁড় করান তাকে আমরা জানি
চরম সুবিধা তত্ত¡ হিসেবে। এরপর ডেভিড রিকার্ডো
আপেক্ষিক সুবিধার তত্ত¡ সূত্রায়ন করেন। এর
ধারাবাহিকতায় আরেকটি তত্ত¡ আমরা পাই যাকে বলা হয় সুযোগবর্জন তত্ত¡ (ঞযবড়ৎু ড়ভ ঙঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃু
ঈড়ংঃ)।
চরম সুবিধা তত্ত¡
এ্যাডাম স্মীথ বলেন, অবাধ বাণিজ্য একজনকে লাভবান করে অন্যজনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে
বাণিজ্যতন্ত্রীদের এই ধারণা ঠিক নয়। তাঁর মতে, আসলে এটি, চরম সুবিধা অনুযায়ী সকলকেই
লাভবান করবে। একটি দেশ (ক) যদি কোন কিছুউৎপাদনে অন্যদের চাইতে বেশি দক্ষতা প্রদর্শন
করে কিংবা যদি বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে এবং অন্যদেশে (খ) যদি সেই দ্রব্যের চাহিদা থাকে
কিন্তুউৎপাদন করা যদি সেখানে বেশি ব্যয়বহুল কিংবা অসুবিধাজনক হয় তাহলে দু'পক্ষের জন্যই
বাণিজ্য লাভজনক হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম দেশ ক ঐ দ্রব্য উৎপাদনে ক্রমাগত আরও বেশি বেশি
মনোযোগ দেবে এবং বিশেষীকরণ করবে এবং অন্য দেশ খ ঐ দ্রব্য উৎপাদন না
করে আমদানি করবে এবং অন্য দ্রব্য উৎপাদনে মনোযোগ দেবে। এর ফলে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দ্রব্য
উৎপাদনে দক্ষ হয়ে উঠবে, বিশেষীকরণ ঘটবে; এতে সব দ্রব্য উৎপাদনই দক্ষ ও লাভজনক হবে।
সকলে কম দামে ভাল দ্রব্য পাবার সুযোগ অর্জন করবে। স্মীথের মত অনুযায়ী, বাণিজ্যের মাধ্যমে এই
আন্তর্জাতিক বিশেষীকরণ ও বিনিময় অথবা আন্তর্জাতিক শ্রম বিভাজন একটি দক্ষ ও লাভজনক বৈশ্বিক
ব্যবস্থা দাঁড় করাবে।
চরম সুবিধা (প্রতি একক শ্রমে উৎপাদন)
বাংলাদেশ ভারত
পাটজাত দ্রব্য ৪ ২
প্রসাধনী দ্রব্য ২ ৬
১ একক শ্রম দিয়ে বাংলাদেশ ৪টি পাটজাত দ্রব্য ও ২টি প্রসাধনী দ্রব্য কিনছে। আর ভারত ১ একক
শ্রম দিয়ে ২টি পাটজাত দ্রব্য ও ৬টি প্রসাধনী দ্রব্য কিনছে। যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য না থাকে তাহলে
বাংলাদেশে ৪টি পাটজাত দ্রব্যের সঙ্গে বিনিময় হবে ২টি প্রসাধনী দ্রব্য আর ভারতে ২টি পাটজাত
দ্রব্যের সঙ্গে বিনিময় হবে ৬টি প্রসাধনী দ্রব্য। যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হয় তাহলে
বাংলাদেশ ৪টি পাটজাত দ্রব্য দিয়ে ২টির বদলে পেতে পারে ৬টি প্রসাধনী দ্রব্য। আর ভারত ৬টি
প্রসাধনী দ্রব্য দিয়ে ২টির বদলে পাচ্ছে ৪টি পাটজাত দ্রব্য। এভাবে, অবাধ বাণিজ্য থাকলে, তত্ত¡
অনুযায়ী দু'দেশই লাভবান হচ্ছে।
আপেক্ষিক সুবিধার তত্ত¡
এ্যাডাম স্মীথ বিভিন্ন দেশ কিছুদ্রব্য উৎপাদনে যে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে সেটাকে বলছেন চরম
সুবিধা। অর্থাৎ কোন কোন পণ্যে কিছুকিছুদেশ চরম সুবিধা পেয়ে থাকে। এই ধারণায় প্রযুক্তিগত
বিকাশকে হিসাবে আনা হয়নি। ডেভিড রিকার্ডো পরে এই ধারণাকে সংশোধন করে বলেছেন, চরম
সুবিধা নয়, বাণিজ্যের প্রধান শর্ত হল আপেক্ষিক সুবিধা।
আপেক্ষিক সুবিধা (প্রতি একক শ্রমে উৎপাদন)
বাংলাদেশ ভারত
পাটজাত দ্রব্য ৪ ৪
প্রসাধনী দ্রব্য ২ ১২
এখানে ধরা হচ্ছে যে, ভারত প্রযুক্তিগত এমন উন্নয়ন করছে যাতে তার উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ হয়ে
গেছে। এর ফলে তার পক্ষেও এক একক শ্রম দিয়ে ৪টি পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন সম্ভব। একই শ্রম
দিয়ে ভারত এখন ১২টি প্রসাধনী দ্রব্য উৎপাদন করতে পারে। রিকার্ডোর বক্তব্য হল এরকম অবস্থায়
দুটো পণ্য উৎপাদনেই ভারত চরম সুবিধায় আছে। কিন্তুআপেক্ষিকভাবে ভারতের জন্য প্রসাধনী দ্রব্য
উৎপাদনে মনোযোগ দেয়া অনেক বেশি সুবিধাজনক। রিকার্ডোর মতে, এই আপেক্ষিক সুবিধাই
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনা করে। আপেক্ষিক সুবিধা অনুযায়ী, ভারত প্রসাধনী দ্রব্য উৎপাদনে
এবং বাংলাদেশ পাটজাত দ্রব্য উৎপাদনে মনোযোগ দিলে দুই দেশেরই মোট উৎপাদন বাড়বে এবং
অবাধ বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে দুই দেশই লাভবান হবে। অর্থাৎ চরম সুবিধা নয় আপেক্ষিক সুবিধা
অনুযায়ী প্রতিটি দেশ বিশেষীকরণ ও উৎপাদনে গুরুত্ব দিলে পুরো বিশ্বে সামগ্রিক উৎপাদনই বৃদ্ধি
পাবে।
অর্থাৎ আমরা আপেক্ষিক সুবিধা তত্তে¡র বিষয়টি এভাবে সারসংক্ষেপ করতে পারি যে, সবগুলো দেশই
লাভবান হবে যদি প্রত্যেকে তার নিজ নিজ আপেক্ষিক সুবিধা অনুযায়ী, তুলনামূলক কম খরচে যেগুলো
উৎপাদন করা সম্ভব সেগুলো বিশেষীকরণ ও রপ্তানি করে এবং আপেক্ষিক সুবিধা যেগুলোতে নেই
অর্থাৎ যেগুলো উৎপাদনে আপেক্ষিকভাবে বেশি খরচ পড়ে সেগুলো যদি আমদানি করে।
সারসংক্ষেপ
স্যামুয়েলসন এই প্রসঙ্গে একদিকে শিল্পে অনুন্নত দেশ ও অন্যদিকে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রকে বিবেচনায়
নিয়ে বলছেন- ‘অনুন্নত' দেশগুলো যদি জাপানে তেল রপ্তানি করে, জাপান যদি যুক্তরাষ্ট্রে ভোগ্য
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম রপ্তানি করে, যুক্তরাষ্ট্র যদি তেল রপ্তানি কারক দেশগুলোতে মেশিনপত্র রপ্তানি করে
তাহলে সকলেই লাভবান হবে। বলা দরকার যে, এরকম পরামর্শে বিভিন্ন দেশের আপেক্ষিক সুবিধাকে
অপরিবর্তনীয় বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তুযদি প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হয় কিংবা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয় তাহলে এই আপেক্ষিক সুবিধার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসবে। ‘অনুন্নত দেশ'
সেক্ষেত্রে শুধুপ্রাথমিক পণ্য রপ্তানিতে কেন্দ্রীভ‚ত নাও থাকতে পারে। শুধুমাত্র তেল রপ্তানিকারক না
হয়ে শিল্পায়নে সেই দেশের আপেক্ষিক সুবিধা তৈরি হতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের তত্ত¡ প্রথম সুসংহতভাবে উপস্থিত করেন ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদরা।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি, বাণিজ্য কাঠামো-আমদানি-রপ্তানির সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের
উত্তর অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ্যাডাম স্মীথ ও ডেভিড রিকার্ডো যথাক্রমে চরম সুবিধা তত্ত¡ ও
আপেক্ষিক সুবিধার তত্ত¡ সূত্রায়ন করেন। এছাড়াও সুযোগবর্জন তত্ত¡ও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। চরম ও
আপেক্ষিক সুবিধার তত্তে¡ বিভিন্ন দেশের চরম বা আপেক্ষিক সুবিধাকে অনেক ক্ষেত্রেই
অপরিবর্তনীয় বিবেচনা করা হয়।
সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. বাণিজ্যতন্ত্রীদের পর সুসংহত বাণিজ্য তত্ত¡ প্রদান করেনক. ফিজিওক্র্যাট অর্থনীতিবিদরা খ. কেইনসীয় অর্থনীতিবিদরা
গ. ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদরা ঘ. প্রান্তিক অর্থনীতিবিদরা
২. চরম সুবিধা তত্ত¡ অনুযায়ী অবাধ বাণিজ্যে-
ক. সকলেই লাভবান হয় খ. কেউ লাভবান হয় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়
গ. সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘ. কারও কিছুআসে যায় না
৩. ‘চরম সুবিধা নয়, বাণিজ্যের প্রধান শর্ত হলো আপেক্ষিক সুবিধা' বলেছেনক. পল স্ট্রীটেন খ. ডেভিড রিকার্ডো
গ. এ্যাডাম স্মীথ ঘ. আলফ্রেড মার্শাল
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. কি কি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বাণিজ্য তত্তে¡র উদ্ভব হয়েছে?
২. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কে কি কি তত্ত¡ গুরুত্বপূর্ণ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. এ্যাডাম স্মীথের “চরম সুবিধা তত্ত¡” ব্যাখ্যা করুন। যেকোন দুটো দেশের দৃষ্টান্ত দিয়ে বিষয়টিকে
উপস্থাপন করুন।
২. “চরম সুবিধা তত্ত¡”-এর সঙ্গে “আপেক্ষিক সুবিধা তত্ত¡”-এর তফাৎ কি? কি কারণে দ্বিতীয়টি
অধিকতর ব্যবহৃত হয় তা ব্যাখ্যা করুন।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত