ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের মধ্যে পার্থক্যগুলো কি?

সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের প্রাথমিক ধারণা
সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রে অর্থনীতিকে সামগ্রিকভাবে দেখার জন্য সামষ্টিক বিশ্লেষণের বিভিন্ন তাত্তি¡ক
কাঠামো ক্ল্যাসিকাল, নয়া ক্ল্যাসিকাল কেইনসীয়তো বটেই এমনকি মার্কসীয় ধারণাকেও আশ্রয়
করে গঠে উঠেছে। ব্যষ্টিক অর্থশাস্ত্র প্রধানত: নয়া ক্ল্যাসিকাল কাঠামোর উপরই নির্ভরশীল।
নয়া ক্ল্যাসিকাল কাঠামোর সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির বিশ্লেষণের কাঠামোর মিশ্রণ নিয়েও তাত্তি¡ক
অবয়ব দাঁড়িয়েছে। সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক অর্থশাস্ত্র সম্পর্কে তুলনামূলক আলোচনা এবং এই
অর্থশাস্ত্রের বিভিন্ন উপাদান নিয়ে আমরা এখানে সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ করবো। এই সঙ্গে থাকছে
জাতীয় আয় ও তার পরিমাপ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা ও বাংলাদেশের জাতীয় আয় সম্পর্কিত
চিত্র। জাতীয় আয় সম্পর্কিত ধারণার ক্ষেত্রেও যে বিবর্তন ঘটেছে সে আলোচনাও এখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট
ব্যষ্টিক অর্থশাস্ত্র যেখানে একক ভোক্তা, একক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, একক পণ্যের দামের উঠানামা,
একক উদ্যোক্তার মুনাফা ইত্যাদি একক পর্যায়ের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করে সেখানে সামষ্টিক
অর্থশাস্ত্র সামগ্রিক অর্থনীতি বিশ্লেষণ করে থাকে। ক্ল্যাসিকাল অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ কাঠামোতে
সামগ্রিক অর্থনীতি থাকলেও তা পরবর্তীতে অব্যাহত থাকেনি। বিকাশের এক পর্যায়ে নয়া ক্ল্যাসিকাল
অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ কাঠামোর ব্যাপক প্রভাবে ব্যক্তিক পর্যায়ে বিশ্লেষণ কাঠামোর মধ্যে সেটিও
সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
নয়া ক্ল্যাসিকাল কাঠামোতে একক ব্যক্তি বা উৎপাদনী প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণই গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের
মতে বাস্তবে এটি সম্ভবও বটে। এই ধারার কোন কোন অর্থনীতিবিদদের মতে, জাতীয় অর্থনীতি বলে
কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। ব্যক্তির অর্থনীতিই অর্থনীতির কেন্দ্রীয় বিষয় এবং ব্যক্তিক অর্থনীতির
যোগফল হিসাবে, কখনো কখনো প্রয়োজন পড়লে, সামষ্টিক অর্থনীতিকে দেখা যেতে পারে। ব্যক্তিক
অর্থনীতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ, স্বাধীন এবং কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে দেখার পেছনে আরেকটি তাত্তি¡ক প্রশ্নও
খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সেটি হল, অর্থনীতিতে রাষ্টের ভ‚মিকা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গী।
ক্ল্যাসিকাল ও নয়া ক্ল্যাসিকাল উভয় দৃষ্টিভঙ্গীতেই পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বাজার প্রক্রিয়ার সার্বভৌমত্ব ও
স্বয়ংসম্পূর্ণতার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাজার প্রক্রিয়ায় অদৃশ্য হস্তই
অর্থনীতিকে সবচাইতে ভালভাবে ও দক্ষভাবে পরিচালিত করতে পারে। তাঁদের মতে, রাষ্ট্রের ভ‚মিকা
এখানে অনাবশ্যক ও ক্ষতিকর। তাদের সিদ্ধান্ত ছিল যে, পুঁজিবাদ বা বাজার অর্থনীতি কোন সংকটে
পতিত হলেও বাজার প্রক্রিয়া দিয়েই তার সব চাইতে কার্যকর সমাধান সম্ভব। অর্থনীতিতে স্বয়ংক্রিয়তা
যদি এভাবে কাজ করে তাহলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একক অর্থনীতি বিশ্লেষণ যথেষ্ট।
১৯২০ এর দশকের শেষ দিকে শুরু হয়ে ১৯৩০ এর দশকে অর্ধেকেরও বেশি সময়কাল জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র
ও ইউরোপের অর্থনীতিতে যে গভীর, দীর্ঘস্থায়ী, একটানা ও অনমনীয় সংকট দেখা দেয় তাকে আমরা
মহামন্দা বলে জানি। এর আগেও মন্দাসহ নানা সংকট পুঁিজবাদী বিশ্বে এসেছে কিন্তুএর মতো বিপুল
ও সর্বব্যাপী চেহারা তার কখনই ছিল না। এর মতো দীর্ঘস্থায়ীও তা কখনো হয়নি। এই মহামন্দা
অর্থশাস্ত্রে কয়েকটি বিষয়ে নতুনভাবে চিন্তা করবার তাগিদ সৃষ্টি করে: সন
 নিখুঁত প্রতিযোগিতা বাস্তবে কার্যকর নয়। ১৯৭২
 অর্থনীতি একক ভোক্তা বা একক উৎপাদকের নয়। এই একক নানাভাবে অন্য অনেকের সঙ্গে ১৯৭৪
যুক্ত। ১৯৭২
 একক ভোক্তা বা একক উৎপাদকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে অর্থনীতির অনেক উপাদান আছে যা ব্যষ্টিক ১৯৭২
অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। ১৯৭২
 বাজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাজার অর্থনীতির সংকট দূর করতে পারে না। ১৯৭২
 রাষ্ট্রের ভ‚মিকা এবং জাতীয় অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ব্যষ্টিক পর্যায়ের অর্থনীতির বিকাশ ও তার ১৯৭৩
সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৩
এই পরিপ্রেক্ষিতে মাইকেল কালেকী, জোয়ান রবিনসন ও জে. এম কেইনস অনিখুঁত বাজার এবং ১৯৭৩
অর্থনীতির সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাত্তি¡ক অবদান রাখেন। আজকের সামষ্টিক অর্থশাস্ত্র ১৯৭৪
প্রধানত: এদের এই তাত্তি¡ক অবদানের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। বিশেষত : সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রে ১৯৭৪
পাঠ - ১ ১৯৭৪
মাইকেল কালেকী, জোয়ান ১৯৭৪
রবিনসন ও জে. এম ১৯৭৬
কেইনস অনিখুঁত বাজার ১৯৭৯
এবং অর্থনীতির সামগ্রিক ১৯৭৯
পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে ১৯৮১
গুরুত্বপূর্ণ তাত্তি¡ক অবদান ১৯৮১
রাখেন। আজকের সামষ্টিক ১৯৮২
অর্থশাস্ত্র প্রধানত: এদের ১৯৯৪
এই তাত্তি¡ক অবদানের ১৯৯৭
উপর ভিত্তি করেই গড়ে ২০০২
উঠেছে। বিশেষত : ২০০৪
সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রে যার ২০০৪
উপস্থিতি বেশি দেখা যায় ২০০৬
কিংবা যার কাঠামো ২০১০
অবলম্বন করে এই অর্থশাস্ত্র ২০১১
সবচাইতে বেশি বিস্তার ২০১১
লাভ করেছে তিনি হচ্ছেন
জে.এম. কেইনস।
যার উপস্থিতি বেশি দেখা যায় কিংবা যার কাঠামো অবলম্বন করে এই অর্থশাস্ত্র সবচাইতে বেশি বিস্তার
লাভ করেছে তিনি হচ্ছেন জে.এম. কেইনস।
১৯৩৩ সালে নরওয়েজিয়ান অর্থনীতিবিদ রেগনার ফ্রিচ -ই প্রথম অর্থশাস্ত্রের
বিশ্লেষণের দুটো ভিন্ন এলাকাকে বোঝানোর জন্য "' ধারণা সন
চালু করেন। এগুলোই পরবর্তীতে যথাক্রমে 'বা ব্যষ্টিক অর্থশাস্ত্র এবং ১৯৭১
বা সামষ্টিক অর্থশাস্ত্র হিসেবে পরিচিত হয়। সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও তার উপাদান সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের উপাদান হিসেবে আমরা যেসব বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখি তার মধ্যে আছে: জাতীয় আয়, কর্মসংস্থান, গড় চাহিদা-যোগান, দামস্তর, মুদ্রাস্ফীতি, সরকারী রাজস্ব নীতি, মুদ্রানীতি, বাণিজ্য। উপরের চিত্রে একটি অর্থনীতিতে কি কি উপাদান গড় চাহিদা ও গড় যোগান গঠন করে এবং সেগুলো মিলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে কি কি উপাদানকে নির্ধারণ করে তার একটি পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। ব্যষ্টিক অর্থশাস্ত্রে যেখানে একক (ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান) চাহিদা, যোগান, আয়, কর্মসংস্থান, পণ্যের দাম ইত্যাদি বিশ্লেষণই প্রাধান্য বিস্তার করে থাকে সেখানে সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রে গুরুত্ব দেয়া হয় গড় ও সামগ্রিক ক্ষেত্রে চাহিদা, যোগান, আয়, কর্মসংস্থান, দামস্তর ইত্যাদির উপর। এছাড়া বিশ্লেষণ কাঠামোর কারণেই ব্যষ্টিক অর্থশাস্ত্রে সরকারের ভ‚মিকাকে গুরুত্ব দেয়া হয় না, অন্যদিকে যে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের উদ্ভব তার কারণেই সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রে সরকারের ভ‚মিকা যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। নিচের ছকে ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের পার্থক্য সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। সারসংক্ষেপ ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের পার্থক্য ব্যষ্টিক অর্থশাস্ত্র সামষ্টিক অর্থশাস্ত্র একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা যোগান অর্থনীতির সামগ্রিক চাহিদা ও যোগান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয় সমগ্র অর্থনীতির আয় বা জাতীয় আয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থান সমগ্র অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান একক পণ্যের দাম ও তার পরিবর্তন সমগ্র অর্থনীতির দামস্তর একক ব্যক্তির ভোগ সমগ্র অর্থনীতির ভোগ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সমগ্র অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সরকারের ভ‚মিকার খুব গুরুত্ব নেই সরকারের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় হল জাতীয় আয়। আমরা পরের পাঠে জাতীয় আয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেবার সঙ্গে সঙ্গে সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের বিশ্লেষণ কাঠামো সম্পর্কেও ধারণা পাবো। ক্ল্যাসিকাল ও নয়া ক্ল্যাসিকাল দৃষ্টিভঙ্গীতে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বাজার প্রক্রিয়ার সার্বভৌমত্ব ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু১৯৩০ এর দশকের মহামন্দা অর্থশাস্ত্রে নতুনভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন সৃষ্টি করেছিল যার ফলশ্রæতিতে সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের উদ্ভব হয়। জাতীয় আয়, মুদ্রাস্ফীতি, কর্মসংস্থান, দামস্তর, সরকারী রাজস্ব নীতি, সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের উপাদান। সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন ১. অর্থশাস্ত্রকে দুটো ভিন্নভাগে প্রথম বিশ্লেষণ করেছেন: ক. জোয়ান রবিনসন খ. মাইকেল কালেকী গ. জে.এম কেইনস ঘ. রেগনার ফ্রিচ ২. সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়: ক. একক পণ্যের দাম খ. ব্যক্তির বিনিয়োগ গ. সমগ্র অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান ঘ. একক ব্যক্তির ভোগ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ১. ১৯৩০-এর দশকে মহামন্দার পরে অর্থশাস্ত্রে কি কি প্রশ্ন উত্থাপিত হল? ২. ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের মধ্যে পার্থক্যগুলো কি? রচনামূলক প্রশ্ন ১. কি ভাবে বর্তমান পর্যায়ের সামষ্টিক অর্থশাস্ত্র গড়ে উঠলো? ২. সামষ্টিক অর্থশাস্ত্রের বৈশিষ্ট্য কি? ব্যষ্টিক অর্থশাস্ত্রের সঙ্গে তার পার্থক্য চিহ্নিত করুন।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]