মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে? এর কারণগুলো কি? মুদ্রাস্ফীতি কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা করুন।

মুদ্রাস্ফীতির সংজ্ঞা বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। বস্তুত, দামের ক্রমাগত বৃদ্ধিই
হলো মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতির অর্থ দাম বেশি থাকা নয়, বরং দামের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকাকেই
মুদ্রাস্ফীতি বোঝায়। মুদ্রাস্ফীতিকে নির্দিষ্ট সময়ের প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করা কঠিন। বরং এটি হলো
গতিশীল বিশ্লেষণ। এক বছরের প্রেক্ষিতে মুদ্রাস্ফীতিকে বিশ্লেষণ না করে দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষিতে দামের
ঞৎবহফ ষরহব-এর প্রেক্ষিতে মুদ্রাস্ফীতিকে বিশ্লেষণ করা হয়। মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপে ভোক্তার মূল্য সূচক
উৎপাদকের বা পাইকারি মূল্য সূচক এবং এঘচ উবভষধঃড়ৎকে ব্যবহার করা হয়।
মুদ্রাস্ফীতি বলতে কোনো এক-দুটি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিকে বোঝায় না। বরং সামগ্রিক অর্থনীতির সকল
পণ্যের গড় মূল্য বৃদ্ধিকে বোঝায়। জনগণের ব্যয়ের বেশির ভাগ অংশ যেসব পণ্যের জন্য ব্যয় হয়
সেসব পণ্যের মূল্য বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি হবেই। যেমন বাড়ি ভাড়া, খাদ্যদ্রব্য, জ্বালানি। এসব পণ্য ও
সেবার মূল্য বাড়লে মুদ্রাস্ফীতি দ্রæত ত্বরান্বিত হয়।
প্রফেসর এর মতে, ‘দামের বৃদ্ধি অবস্থাকে আমরা মুদ্রাস্ফীতি বলতে পারি, উচ্চ
দামকে নয়। অন্য ধারণায় মুদ্রাস্ফীতি হলো একটি অভারসাম্য অবস্থা। এটিকে গতিশীলভাবে বিশ্লেষণ
করা প্রয়োজন, স্থিতিশীলভাবে নয়।
প্রফেসর -এর মতে, ‘মুদ্রাস্ফীতি বলতে আমরা বুঝে থাকি যখন দ্রব্য ও উৎপাদনের
উপাদান দাম সার্বিকভাবে বাড়তে থাকে- রুটি, গাড়ি, চুলকাটার দাম বাড়তে থাকে; মজুরি, খাজনা
ইত্যাদির দাম বাড়তে থাকে।’
-এর মতে, ‘স্থিতিশীল দাম বৃদ্ধিকে মুদ্রাস্ফীতি বোঝায়।’
চড়রমড়ঁ-এর মতে, ‘যখন উৎপাদন কার্যের সম্প্রসারণের চেয়ে আর্থিক আয়ের সম্প্রসারণ বেশি হয়
তখন মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।’
ঔ.গ. কবুহবং-এর মতে, ‘পূর্ণ নিয়োগ অর্জিত হওয়ার পর সামগ্রিক চাহিদা বাড়লে দামস্তর বাড়ে’এটিই প্রকৃতপক্ষে মুদ্রাস্ফীতি। পূর্ণ নিয়োগের পূর্বেও যদি মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয় তা হবে
এর মতে, ‘মুদ্রাস্ফীতি সব সময় এবং সর্বত্রই আর্থিক ব্যাপার। উৎপাদনের চেয়ে
বেশি হারে অর্থের যোগান বাড়লেই এটি সৃষ্টি হয়।’
উপরের সংজ্ঞাসমূহ থেকে এ সিদ্ধান্তেআসা যায়, মুদ্রাস্ফীতি বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হয়। তবে মুদ্রাস্ফীতি
হলো অর্থনীতির একটি অবস্থা, যখন দামস্তর ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। সাময়িক দামস্তর বৃদ্ধিকে
মুদ্রাস্ফীতি বলা যাবে না। কারণ একই বছরে বাজার মূল্যের ওঠা-নামা হবেই। তাই একবার দামের উত্থান থেকে মুদ্রাস্ফীতি হয়নি বলে বছরব্যাপী দামের উত্থান-পতনের গড় এবং পূর্ববর্তী বছরের সঙ্গে বা
পূর্ববর্তী অন্য কোনো ভিত্তি বছরের দামস্তরের সঙ্গে তুলনা করেই মুদ্রাস্ফীতি অবস্থা বলা যায়।
মুদ্রাস্ফীতির কারণসমূহ
মুদ্রাস্ফীতি বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হতে পারে। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ মুদ্রাস্ফীতির বিভিন্ন কারণ উল্লেখ
করেছেন। নি¤েœএসব কারণগুলো উল্লেখ করা হলো।
১. অর্থের যোগান বৃদ্ধি : ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্তর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো অর্থের
যোগান বৃদ্ধি। যেমন কুলবর্ন বলেন ‘ঞড়ড় সঁপয সড়হবু পযধংবং ঃড়ড় ভবি মড়ড়ফং’. অর্থের যোগান
বেড়ে যাওয়াই মুদ্রাস্ফীতির কারণ। ফিশারের সমীকরণেগঠ=চঞ
চ=
গঠ

যখন ঠ এবং ঞ স্থির থাকে। তাই গ যদি  হারে বাড়ে তাহলে ঢ় ও  হারে বাড়বে। তথা
ঢ়=
গ-ঠ

২. সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি : সরকারি ব্যয় বাড়লে সামগ্রিক চাহিদা বাড়ে। তখন যোগান স্থির থাকলে দামস্তর
বাড়বে। সেজন্য সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ফলে দামস্তর বাড়ে তথা মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়।
৩. ঘাটতি অর্থ সংস্থান : কোনো অর্থনীতিতে সরকার যদি সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির জন্য ঘাটতি অর্থসংস্থান
করে তাহলে অবশ্যই সামগ্রিক চাহিদা বাড়বে এবং দামস্তর বেড়ে যাবে। এখানে শুধু অর্থের যোগান
বৃদ্ধির চেয়েও প্রতিক্রিয়া বেশি পড়বে। অথবা শুধু সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির চেয়ে প্রতিক্রিয়া বেশি পড়বে।
অর্থাৎ দামস্তর বেড়ে যাবে। সরকারি ব্যয় বাড়ার ফলে ওঝ রেখা ডানে সরে যায়। ফলে সামগ্রিক চাহিদা
বাড়ে এবং দামস্তর বাড়বে।
৪. অর্থের প্রচলন গতি বাড়া : অর্থের প্রচলন গতি বাড়লে তথা অর্থ মানুষের কাছে পূর্বের চেয়ে কম
পছন্দনীয় হলে মানুষের ব্যয় প্রবনতা বেড়ে যাবে। এতে দামস্তর বেড়ে যাবে।
সমস্যা : ১৯৯০ সালে কোনো দেশের মূল্যস্তরের সূচক ছিল ১০০। ১৯৯৭ সালে যদি মূল্যস্তরের সূচক
৫. যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ : কোনো দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে প্রচুর ব্যয় করতে হয়। এজন্য সরকার নতুন
মুদ্রা ছাপলে দামস্তর বাড়ে। অথবা ভোগ্য পণ্য শিল্পের কাঁচামাল, যুদ্ধান্ততৈরি শিল্পে স্থানান্তর হতে
পারে। সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা বিপর্যস্তহওয়ার ফলে দামস্তর বেড়ে যেতে পারে। পণ্যের সরবরাহ
ব্যবস্থা বিঘিœত হলেও দামস্তর বেড়ে যেতে পারে। আবার জনগণের মধ্যে যদি পণ্য পাওয়া যাবে নাএমন প্রত্যাশা সৃষ্টি হয় তাহলেও দামস্তর বেড়ে যেতে পারে। যুদ্ধের সময় সরকার যদি ঋণপত্রের
মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে তাহলে যুদ্ধপরবর্তী সময়ে উক্ত ঋণপত্রের অর্থ সরকার ফেরত দিলে জনগণের
ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং দামস্তর বাড়বে।
৭. কর হ্রাস-বৃদ্ধি : সরকার প্রত্যক্ষ কর হ্রাস করলে জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। ফলে দামস্তর বাড়তে
পারে। আবার পরোক্ষ কর আরোপ করলে ব্যষ্টিক দৃষ্টিতে দাম বাড়বে, ফলে দামস্তর বাড়বে। তাই কর
ব্যবস্থাও মুদ্রাস্ফীতির কারণ হতে পারে।
৮. মজুরি বৃদ্ধি : শ্রম বাজারে অপূর্ণ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান থাকলে মজুরি অনমনীয় হয়ে পড়ে। এরপরও
শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে মজুরি বৃদ্ধি পেলে অন্য কোনো কারণে উপকরণ মূল্য বাড়লে খরচ
বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হবে। খরচ বৃদ্ধি পেলে শ্রমের নিয়োগ কমে যায়। তখন সামগ্রিক যোগান
কমে এবং দামস্তর বেড়ে যায়। ফলে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়।
৯. জনসংখ্যা বৃদ্ধি : মুদ্রাস্ফীতি একটি গতিশীল ধারণা। তাই জনসংখ্যাগত চলকের পরিবর্তন হলে
মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হতে পারে। জনসংখ্যা দ্রæত বাড়ে কিন্তু ভোগ্য পণ্যের উৎপাদন তত বাড়ে না তখন দাম
স্তরে বেড়ে যায়। মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়।
১০. প্রাকৃতিক দুর্যোগ : কোনো দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে দামস্তর বাড়তে পারে। যোগানের
মৌলিক প্রয়োজনীয় উৎপাদান এবং উৎপাদন ব্যবস্থা বিপর্যস্তহয়। এতে পণ্যের যোগান কমে যায় এবং
দামস্তর বেড়ে যায়।
১১. দ্রব্য বাজারে অপূর্ণ প্রতিযোগিতা : দ্রব্য বাজারে যদি সরকার হস্তক্ষেপ করে তথা ন্যূনতম দাম
নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হতে পারে আবার একচেটিয়া, অলিগোপলি ধরনের বাজার
সৃষ্টি হলেও মূল্যস্তর বেড়ে যেতে পারে।
উপরে মুদ্রাস্ফীতির বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এর যে কোনো একটি কারণে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি
হতে পারে; আবার একাধিক কারণ একসঙ্গে ঘটতে পারে। যার ফলে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয়।
মুদ্রাস্ফীতিজনিত অবস্থা
মুদ্রাস্ফীতিজনিত অবস্থায় কোনো অর্থনীতি ভুগছে কিনা তা নি¤েœর লক্ষণসমূহ দেখে আমরা বুঝতে
পারবপ্রথমত : গত দিনের দামের চেয়ে পরের দিনের দাম বেশি এবং এরূপ প্রতিদিনই যদি মূল্য বাড়তে
থাকে এবং তা দীর্ঘ সময় চলতে থাকে তাহলে মুদ্রাস্ফীতি রয়েছে বলে ধরা যায়। এক মাসে দাম বাড়ে
পরের মাসে কমে- এতে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে বলা যাবে না।
দ্বিতীয়ত :অপশষবু-এর মতে, মুদ্রাস্ফীতি কোনো ঝঃধঃরপ বিষয় নয়, উুহধসরপ বিষয়। বছরের পর বছর যদি দাম বাড়তে থাকে তবে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে বলা যাবে। তৃতীয়ত :এর মতে, মুদ্রাস্ফীতি হলো একটি আর্থিক ঘটনা। অর্থের যোগানের
হেরফেরের কারণেই এটি সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক চলকের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে এটি তীব্র হয়ে
ওঠে।
চতুর্থত :কবুহবং-এর মতে, অর্থনীতিতে অতিরিক্ত সামগ্রিক চাহিদাই দামস্তর বৃদ্ধির মূল কারণ। তাই
অর্থনীতিতে যদি উৎপাদনশীলতা না বাড়ে তাহলে মুদ্রাস্ফীতি অবস্থা সৃষ্টি হবে।
পঞ্চমত : কোনো অর্থনীতিতে যদি মজুরি বাড়তে থাকে, উপকরণের দাম বাড়তে থাকে, আমদানি
পন্যের মূল্য বাড়তে থাকে, মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয় তাহলে অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে
অথবা অচিরেই হবে বুঝতে হবে।
ষষ্ঠত : মুদ্রাস্ফীতির হার ১%, ২%, ৩%, ৫%, ১০%, ৫০%, ১০০%, ৫০০% হতে পারে। কত
% হবে তা সুনির্দিষ্ট নয়। তবে দামের বৃদ্ধি ঘটছে এবং তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে মুদ্রাস্ফীতি
রয়েছে বলা যাবে।
মুদ্রাস্ফীতির প্রকারভেদ
বিভিন্ন বিষয়কে ভিত্তি ধরে মুদ্রাস্ফীতিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। মুদ্রাস্ফীতির হার বা গতির ভিত্তিতে
মুদ্রাস্ফীতিকে নিচের ছকে দেখানো যায়।
মুদ্রাস্ফীতি
এই প্রকারগুলো আবার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলগতিভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি
ক্রিপিং মুদ্রাস্ফীতি : দামস্তর যখন খুবই আস্তেবাড়তে থাকে, তখন তাকে ক্রিপিং মুদ্রাস্ফীতি বলে।
পদসঞ্চরী মুদ্রাস্ফীতি : দামস্তর যখন শতকরা ৫ ভাগ হারে বাড়তে তাকে তখন তাকে পদসঞ্চরী
মুদ্রাস্ফীতি বলে।
ধাবমান মুদ্রাস্ফীতি : দামস্তর যখন দ্রæত গতিতে বাড়তে থাকে এবং বৃদ্ধি প্রক্রিয়া যদি সরকারের নিয়ন্ত্রণ
না তাকে তখন তাকে ধাবমান মুদ্রাস্ফীতি বলে।
লম্ফমান মুদ্রাস্ফীতি : মুদ্রাস্ফীতির হার যখন ১০০%-এর ওপরে উঠে যায় তখন তাকে লম্ফমান মুদ্রাস্ফীতি বলে।
সময়ভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি
শান্তিকালীন মুদ্রাস্ফীতি : স্বাভাবিক অবস্থায় যখন কোনো দেশে যুদ্ধবিগ্রহ না থাকে তখন যে মুদ্রাস্ফীতি
হয় তাকে শান্তিকালীন মুদ্রাস্ফীতি বলে।
যুদ্ধকালীন মুদ্রাস্ফীতি : যুদ্ধকালীন সময় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায়, সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হওয়ায়,
আমদানি ব্যাহত হওয়ায়, নতুন মুদ্রা ছাপানো ইত্যাদি কারণে যে দামস্তর বাড়ে তাকে যুদ্ধকালীন মুদ্রাস্ফীতি বলে।
গতিভিত্তিক সময়ভিত্তিক অঞ্চলভিত্তিক কারণভিত্তিক প্রত্যাশাভিত্তিক নিয়ন্ত্রণভিত্তিক
দামস্তর যখন শতকরা ৫ ভাগ হারে বাড়তে তাকে তখন তাকে পদসঞ্চরী মুদ্রাস্ফীতি বলে।
যুদ্ধ পরবর্তী মুদ্রাস্ফীতি : যুদ্ধ পরবর্তী সময় সরকার যুদ্ধকালীন সময়ে গৃহীত ঋণ পরিশোধ ও সুদ
পরিশোধের ফলে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে এবং দামস্তর বাড়ে যাকে যুদ্ধ পরবর্তী মুদ্রাস্ফীতি বলে।
অঞ্চলভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি
জাতীয়/দেশীয় মুদ্রাস্ফীতি : একটি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চলকের পরিবর্তনের ফলে যে
মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হয় তা দেশীয় মুদ্রাস্ফীতি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রাস্ফীতি : একটি দেশের দ্রব্যমূল্য যখন অন্যান্য দেশের মুদ্রাস্ফীতি দ্বারা তাড়িত হয় তখন
তাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রাস্ফীতি বলে। বিদেশে মুদ্রাস্ফীতি হলে দেশের রপ্তানি বেড়ে যায় এবং আমদানি কমে যাবে, দ্রæত মুদ্রাস্ফীতি হবে।
কারণভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি
চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতি : সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি বা ভোগ বৃদ্ধি পেলে সামগ্রিক চাহিদা বাড়ে
এবং দামস্তর বাড়ে। দামস্তরের এই বৃদ্ধিকে চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে।
মুদ্রাজনিত মুদ্রাস্ফীতি : অর্থের যোগান বৃদ্ধির ফলে দামস্তর বেড়ে থাকে। একে মুদ্রাজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে।
ঘাটতি অর্থ সংস্থানজনিত মুদ্রাস্ফীতি : নতুন মুদ্রা ছাপানোর মাধ্যমে অর্থসংস্থান করে ব্যয় বাড়লে দামস্তর
বেশি হারে বাড়বে। দামস্তরের এই বৃদ্ধিকে ঘাটতি অর্থসংস্থানজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে।
ঋণ সম্প্রসারণজনিত মুদ্রাস্ফীতি : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণের সম্প্রসারণ করলে অর্থনীতির ব্যয় করার ক্ষমতা বাড়ে এবং দামস্তর বাড়ে। একে ঋণ সম্প্রসারণজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে।
খরচজনিত মুদ্রাস্ফীতি
মজুরি বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি : মজুরি বৃদ্ধি পেলে বা উপকরণাদির দাম বাড়লে শ্রমের নিয়োগ না কমে
উৎপাদন কমে, সামগ্রিক যোগান কমে। ফলে দামস্তর বাড়ে। একে মজুরি বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে।
যোগান ঘাটতিজনিত মুদ্রাস্ফীতি : প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধের সময় অর্থনীতির সামগ্রিক যোগান হ্রাস পায়
এবং দামস্তর বাড়ে। একে যোগান ঘাটতিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে।
মুনাফাজনিত মুদ্রাস্ফীতি : একচেটিয়া ও অলিগোপলি বাজারের প্রভাবে উৎপাদনকারীরা বাড়তি মুনাফা
বাড়াতে চেষ্টা করলে উৎপাদন কমবে, দাম বাড়বে। দামস্তরের এই বৃদ্ধিকে মুনাফাজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে।
প্রত্যাশাভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতি
প্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতি : যে ধরনের মুদ্রাস্ফীতি জনগণ আশা করে তা যদি ঘটে যায় তবে তাকে
প্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতি বলে। বাংলাদেশে ৫% মুদ্রাস্ফীতিকে প্রত্যাশিত ধরা হয়।
অপ্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতি : যে ধরনের মুদ্রাস্ফীতি জনগণ আশা করে না, হঠাৎ কোনো কারণে ঘটে যায়। এ ধরনের মুদ্রাস্ফীতিকে অপ্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতি বলে। অবদমিত মুদ্রাস্ফীতি : কোনো দেশের সরকার যদি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে
তাহলে সেই মুদ্রাস্ফীতিকে অবদমিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।
অবাধ মুদ্রাস্ফীতি : যদি কোনো দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেন তাহলে তাকে অবাধ মুদ্রাস্ফীতি বলে।
(সঠিক উত্তরটি চিহ্নিত করুন)
১. সরকার প্রত্যক্ষ কর হ্রাস করলে জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। ফলে দামস্তর কমতে পারে।
সত্য/মিথ্যা
২. সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ফলে সামগ্রিক চাহিদা ও দামস্তর বাড়ে। একে চাহিদাজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে।
সত্য/মিথ্যা
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. মুদ্রাস্ফীতির হার কি?
২. একটি অর্থনীতি মুদ্রাস্ফীতিজনিত অবস্থায় ভুগছে, সেটা কিভাবে বোঝা যায়?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে? এর কারণগুলো কি?
২. মুদ্রাস্ফীতি কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত আলোচনা করুন।
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর
১. মিথ্যা ২. সত্য
মুদ্রাস্ফীতি হলো অর্থনীতির এমন একটি অবস্থা, যখন দামস্তর ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। বিভিন্ন কারণে মুদ্রাস্ফীতি
সৃষ্টি হতে পারে। যেমন, অর্থের যোগান বৃদ্ধি, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, ঘাটতি অর্থ সংস্থান, অর্থের প্রচলন গতি
বাড়া, যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ, করের হ্রাস বৃদ্ধি, মজুরি বৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি। এগুলোর যে কোনো একটি
কারণে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হতে পারে, আবার একাধিক কারণ একসঙ্গে ঘটতে পারে। মুদ্রাস্ফীতির হার বা গতির
ভিত্তিতে মুদ্রাস্ফীতিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।
সারসংক্ষেপ

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]