একটি অর্থনীতিতে চাহিদা তৈরি হবার পেছনে কি কি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে?

একটি নির্দিষ্ট দামে যে কোন পণ্যের চাহিদা তৈরির পেছনে ঐ পণ্যের দামের পরে আরও যে
কারণগুলো কোন না কোনভাবে প্রভাব বিস্তার করে সেগুলো নি¤œরূপ:
 গড় আয়
 বাজারের আয়তন
 সম্পর্কিত দ্রব্যাদির দাম
 পছন্দ বা অগ্রাধিকারের ধরন
 বিজ্ঞাপন
 অন্যান্য বিশেষ প্রভাব
আমরা এই বিষয়গুলো নি¤েœাক্তরূপে লিখতে পারি।
য়ফধ = ভ(ঢ়ধ
, ঢ়ন
.......ঢ়ু
, ু, ঃ, স, ধফ, ড়)
য়ফধ = ধ পণ্যের চাহিদা
ঢ়ধ = ধ পণ্যের দাম
ঢ়ন...ঢ়ু = সম্পর্কিত অন্যান্য পণ্যের দাম
ু = গড় আয়
ঃ = পছন্দ
স = বাজার
ধফ = বিজ্ঞাপন
ড় = অন্যান্য
আমরা যখন চাহিদা বিধিতে চাহিদা ও দামের সম্পর্ক দেখাই তখন অন্য উপাদানগুলো স্থির রয়েছে বা
অন্যান্য উপাদানগুলোর প্রভাব আর কার্যকর নেই বলে ধরে নেই। সেজন্য “অন্যান্য অবস্থা
অপরিবর্তিত থাকলে” কথাটি চাহিদা বিধির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত
থাকলে কোন দ্রব্যের চাহিদা তার নিজ দামের উপর নির্ভরশীল: য়ফধ = ভ(ঢ়ধ
). পূর্বে ইউনিট-২, পাঠ-১
এ চাহিদা বিধি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আমরা এই সম্পর্ককে ছক ও চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করেছি। এখন
আমরা “অন্যান্য অবস্থার” গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো আলোচনা করবো।
১. গড় আয়
আমাদের মতো দেশে বেশির ভাগ মানুষের আয় অনেক নিচে, আবার কিছুসংখ্যক মানুষের আয়
সেই তুলনায় অনেক বেশি। দুয়ের মধ্যে প্রায় আকাশ-পাতাল তফাৎ। এই সবকিছুমিলিয়েই গড়
আয় হিসাব করা হয়। গড় আয় দিয়ে একটি অর্থনীতির পুরো জনগোষ্ঠীর ভেতরের পার্থক্য বোঝা
যাবে না। তবে সাধারণভাবে ক্রয় ক্ষমতার অবস্থা গড় আয়ের স্তর থেকে আঁচ করা যাবে। যেমন
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় কম, তা দিয়ে বেশিরভাগ মানুষের খুবই কম আয় এবং সেই
কারণে বাজারভেদে পণ্যের প্রতি তাদের খুব কম চাহিদা বোঝা যায়। গড় আয় বাড়লে একটি

আমাদের মতো দেশে
বেশির ভাগ মানুষের আয়
অনেক নিচে, আবার কিছু
সংখ্যক মানুষের আয়
সেই তুলনায় অনেক
বেশি। দুয়ের মধ্যে প্রায়
আকাশ-পাতাল তফাৎ।
এই সবকিছু মিলিয়েই
গড় আয় হিসাব করা
হয়।

অর্থনীতিতে অনেক দ্রব্যেরই চাহিদা বেড়ে যায়। যেমন আমাদের বেশির ভাগ মানুষের আয় বাড়লে
তারা কাপড় পরবেন, জুতা পরবেন, লেখাপড়া করবেন। তাতে কাপড়, জুতা, কাগজ, কলম
ইত্যাদির চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। যেসব দেশে গড় আয় বেশি সেসব দেশে নিত্য প্রয়োজনীয়
দ্রব্যাদির চাহিদাও অনেক বেড়ে যায়।
২. বাজারের আয়তন
বাজারের আয়তন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার উপরই নির্ভর করে। যত বেশি সংখ্যক মানুষ ক্রয়
ক্ষমতার একটি ন্যূনতম জায়গায় আসতে সক্ষম হবেন ততই বাজারের আয়তন বাড়বে। বাজারের
আয়তন নির্ধারণে জনসংখ্যা একটি গুরুত্বপুর্ণ উপাদান কিন্তু যথেষ্ট উপাদান নয়। একটি দেশে
জনসংখ্যা বেশি থেকেও বাজারের আয়তন ছোট হতে পারে আবার জনসংখ্যা তুলনায় কম
থাকলেও বাজারের আয়তন বড় হতে পারে। যেমন পুরো ইউরোপ মহাদেশের যা জনসংখ্যা তার
দ্বিগুণেরও বেশি জনসংখ্যা আছে ভারতে কিন্তু যেহেতুভারতের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে
বাস করেন সেহেতু বাজারের আয়তনের দিক থেকে ভারত ইউরোপের চাইতে ছোট।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন বারো কোটিরও বেশি, কিন্তু বাজারের আয়তনের দিক থেকে
বিবেচনা করলে এখানে জনসংখ্যা এক কোটিও নয় কারণ এখানে বেশি সংখ্যক মানুষ খুব কম
ক্ষেত্রেই বাজার থেকে কেনাকাটার ক্ষমতা রাখেন। সেজন্য মানুষ হিসেবে তারা এদেশে অবস্থান
করলেও বাজার অর্থনীতির বিচারে তারা অনুপস্থিত।
৩. সম্পর্কিত দ্রব্যাদির দাম
সম্পর্কিত দ্রব্যাদির দাম সবসময়ই একটি দ্রব্যের চাহিদাকে প্রভাবিত করে। সম্পর্কিত দ্রব্যাদি হতে
পারে বিকল্প দ্রব্য কিংবা সম্পূরক দ্রব্য। বিকল্প দ্রব্যের দাম কমলে একটি দ্রব্যের আপেক্ষিক দাম
বেড়ে যায় তার ফলে এর চাহিদা কমে যায়। একইভাবে বিপরীতটিও সত্য। অর্থাৎ বিকল্প দ্রব্যের
দাম বাড়লে ভোক্তার কাছে সেই দ্রব্যের আপেক্ষিক দাম কমে যায়, ফলে তার চাহিদা বেড়ে যায়।
আবার সম্পূরক দ্রব্যের ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক অন্যরকম। সম্পূরক দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে তা
পরোক্ষভাবে এই দ্রব্যের দামও বৃদ্ধি করে। ফলে এর চাহিদাও কমে যায়।
৪. পছন্দ বা অগ্রাধিকারের ধরন
সব সমাজে, সব ধরনের মানুষের একই ধরনের রুচি, পছন্দ বা অগ্রাধিকার থাকে না। মানুষের
রুচি বা অরুচি কিংবা পছন্দ বা অপছন্দ নির্ভর করে অনেক কিছুর উপর। অঞ্চলের ভৌগোলিক
বিন্যাস, খাদ্য প্রাপ্তির ধরন, খাদ্যাভ্যাস, পোষাকের ধরন, রুচি, ধর্মীয় বিধিনিষেধ, সংস্কার ইত্যাদি
নানাকিছুএক্ষেত্রে ভ‚মিকা পালন করে। সেকারণে সব অঞ্চলে একই ধরনের দ্রব্যের প্রতি মানুষের
ঝোঁক দেখা যায় না। ক্রমবর্ধমান হারে উৎপাদন ও বাজারের বিশ্বায়নের ফলে অনেক অভিন্ন
দ্রব্যের প্রতি বিশ্বব্যাপী ঝোঁক দেখা যায়, তা সত্তে¡ও অনেক ক্ষেত্রেই অঞ্চলের বা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর
নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এখনও যথেষ্ট প্রবল। যেমন বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে মাছ যথেষ্ট
গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন কারণে এখানে শুয়োরের মাংস জনপ্রিয় নয়, অধিকাংশ
মানুষের চাহিদা গঠনের ক্ষেত্রে এর দামের উঠানামা তাই কোন গুরুত্ব বহন করে না। ভারতে
যেমন অধিকাংশ মানুষ গরুর মাংস খাওয়া ঠিক মনে করেন না, তাদের ক্ষেত্রে কিংবা
বাংলাদেশেরও অনেকে যারা শারীরিক কারণে বা ধর্মীয় কারণে গরুর মাংস খেতে চান না তাদের
ক্ষেত্রে গরুর মাংসের দাম বেশি হল না কম হল তাতে কিছুআসে যায় না। বাংলাদেশসহ
কাছাকাছি অঞ্চলের মেয়েরা শাড়ি পরতে অভ্যস্ত। এখানে শাড়ির দামের উঠানামা ব্যাপক সংখ্যক
মানুষকে প্রভাবিত করে। কিন্তু অন্য অনেক দেশেই শাড়ির দাম কোনভাবেই ভোক্তাদের
জীবনযাপনকে প্রভাবিত করবে না।
৫. বিজ্ঞাপন
প্রচার মাধ্যমের যতই প্রসার ঘটছে ততই বিজ্ঞাপনের প্রভাবও বাড়ছে। এমনিতে প্রয়োজন না
থাকলেও বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমরা অনেক দ্রব্যেরই চাহিদার মুখোমুখি হই। এই চাহিদা
একটি দেশে জনসংখ্যা
বেশি থেকেও বাজারের
আয়তন ছোট হতে
পারে আবার জনসংখ্যা
তুলনায় কম থাকলেও
বাজারের আয়তন বড়
হতে পারে।

পূরণের জন্য অনেক সময় ধারও করেন ভোক্তারা। বিজ্ঞাপনের এই প্রভাবের কারণে অনেক
বিক্রেতা সংস্থাই বিজ্ঞাপনের পেছনে অনেক অর্থ ব্যয় করে।
৬. অন্যান্য বিশেষ প্রভাব
এর মধ্যে আছে কোন বিশেষ ঘটনা, বিশেষ উপলক্ষ, কোন রাষ্ট্রীয় বা ধর্মীয় উৎসব ইত্যাদি।
যেমন বাংলাদেশে যখন ঈদ হয় তখন কেনাবেচা অনেক বেড়ে যায়। রোজার সময় বিশেষ ধরনের
খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা বেড়ে যায়। খ্রিস্টমাস-কে কেন্দ্র করে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ খ্রীষ্টান প্রধান
দেশসমূহে ভোগ্যপণ্য, উপহার সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধি পায় গড় অবস্থার চাইতে কয়েকগুণ বেশি।
বাংলাদেশে ফেব্রæয়ারি মাসে যখন বিভিন্ন স্থানে বই-এর মেলা হয় তখন বই এর বিক্রি অনেক
বেড়ে যায়, বৈশাখী মেলায় বেড়ে যায় হস্তশিল্প সামগ্রীর বিক্রি। তাছাড়া বর্ষাকালে ছাতা, শীতকালে
গরম কাপড়, বিশ্বকাপের সময় খেলোয়াড়দের নিয়ে নানা সামগ্রীর বিক্রি বৃদ্ধির বিষয়টা সকলেই
বুঝতে পারেন।
যোগানের পেছনে কি কি উপাদান কাজ করে
আবার অন্যদিকে একটি নির্দিষ্ট দামে যোগানের পরিমাণ নির্ধারণের পেছনেও ঐ দাম ছাড়াও
অনেকগুলো উপাদান কাজ করে। এগুলো হল নি¤œরূপ:
 উৎপাদন ব্যয়, উৎপাদন উপকরণের দাম
 সম্পর্কিত দ্রব্যাদির দাম
 প্রযুক্তিগত অগ্রগতি
 বাজার
 সরকারী নীতি
 বিশেষ প্রভাব
আমরা এই বিষয়গুলো নি¤েœাক্তরূপে লিখতে পারি।
য়ংধ = ম(ঢ়ধ
, পধ
, ঢ়ন
..... ঢ়ু
, ু, ঃহ
, ঃ, স, ড়)
য়ংধ = ধ পণ্যের যোগান
ঢ়ধ = ধ পণ্যের দাম
পধ = ধ পণ্যের উৎপাদন ব্যয়
ঢ়ন
... ঢ়ু = সম্পর্কিত অন্যান্য পণ্যের দাম
ু = আয়
ঃহ = প্রযুক্তি
ঃ = রুচি
ম = সরকারী নীতি
ড় = অন্যান্য বিশেষ প্রভাব।
যোগান ও দামের সম্পর্ক নির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করবার জন্য অন্যান্য উপাদান স্থির ধরা হয়। বলা হয়,
“অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে কোন দ্রব্যের যোগান তার নিজ দামের উপর নির্ভরশীল।”
অর্থাৎ, য়ংধ = ম(ঢ়ধ
)। পূর্বে ইউনিট-২, পাঠ ১ এ যোগান বিধি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আমরা এই
সম্পর্ককেই ছক ও চিত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছি। নিচে অন্যান্য উপাদানগুলো আলোচনা করা হল।
১. উৎপাদন ব্যয়
উৎপাদন ব্যয় হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে পণ্য যোগানের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ। অর্থাৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলে
পণ্য উৎপাদন ও সেই কারণে যোগান কমে যাবার সম্ভাবনা দেখা যায়। আবার পণ্য উৎপাদন ব্যয়
কমে গেলে তা অধিকতর লাভজনক হয়ে উঠার সম্ভাবনা দেখা দেয় বলে পণ্য উৎপাদন ও সেই
সূত্রে পণ্যের যোগান বেড়ে যাবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠে। কোন পণ্য উৎপাদনের ব্যয় নির্ভর
বাংলাদেশে যখন ঈদ
হয় তখন কেনাবেচা
অনেক বেড়ে যায়।
রোজার সময় বিশেষ
ধরনের খাদ্যদ্রব্যের
চাহিদা বেড়ে যায়।

করে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত অনেক বিষয়ের উপর। যেসব উপাদান প্রত্যক্ষভাবে
উৎপাদন ব্যয়কে প্রভাবিত করে সেগুলোর মধ্যে আছে:
 উৎপাদনের কাঁচামাল
 যন্ত্রপাতির খরচ
 প্রযুক্তির উৎপাদন ক্ষমতা
 জ্বালানী যেমন বিদ্যুৎ, গ্যাস
 ভবনের খরচ (ভাড়া, খাজনা, রক্ষণাবেক্ষণ)
 প্রশাসনিক খরচ (কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য)
 শ্রমিকদের মজুরি
তাছাড়া সরাসরি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত না হলেও পরোক্ষ আরও নানা উপাদান আছে
যেগুলো বিভিন্নভাবে উৎপাদন ব্যয়কে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা থেকে কিছুবিষয়
উল্লেখ করলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। এগুলোর মধ্যে আছে:
 আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং আর্থিক চাপ : অনুমোদনের জটিলতা, ঘুষ, কমিশনের দাবি।
 মাস্তানদের চাঁদা, সন্ত্রাস।
 বিদ্যুৎ-এর লোডশেডিং, গ্যাস-এর সরবরাহে জটিলতা।
 রাজনৈতিক সংঘাত, উত্তেজনা, অচলাবস্থা।
২. উৎপাদন উপকরণের দাম
আগেই বলেছি উৎপাদন উপকরণের দাম প্রত্যক্ষভাবে পণ্যের উৎপাদন ও যোগানকে প্রভাবিত
করে। উৎপাদন উপকরণের মধ্যে যেমন আছে কাঁচামাল, তেমনি আছে শ্রম, আছে পুঁজি। পাটের
দাম যদি বেড়ে যায় তাহলে পাটশিল্পের খরচ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে প্রযুক্তিগত স্থবিরতা বা
ব্যবস্থাপনাগত দূর্বলতা কিংবা অন্যান্য কোন কারণে শ্রমের উৎপাদনশীলতা হ্রাস ঘটতে পারে
তাতে ব্যয় বেড়ে যায় সেটিও উৎপাদন ও যোগানের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। অর্থ
সংস্থানকারী প্রতিষ্ঠানের জটিলতা বা সুদের হার বৃদ্ধির কারণে পুঁজি সংগ্রহের খরচ বেড়ে গেলেও
একই রকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
৩. প্রযুক্তিগত অগ্রগতি
প্রযুক্তিগত অবস্থা সরাসরি পণ্য উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির একটি সহজ
অর্থ হলো, কম খরচে কম সময়ে কম পরিশ্রমে আরও বেশি উৎপাদনের ক্ষমতা তৈরি হওয়া। এর
ফলে যুক্তিসঙ্গত কারণেই একক প্রতি উৎপাদন ব্যয় কমে যায়। এর ফলে আরও বেশি উৎপাদনের
শর্ত তৈরি হয়। অন্যদিকে কোন পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রযুক্তির অগ্রগতি যদি কোন কারণে সম্ভব
না হয়, যদি প্রযুক্তি একই জায়গায় আটকে থাকে তাহলে অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় বিশেষত:
যেসব ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত বিকাশ ঘটেছে তার তুলনায় আপেক্ষিকভাবে এর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে
যাবে। ফলে এর উৎপাদন ও যোগান লাভজনক থাকবে না। তাছাড়া, একই প্রযুক্তির অধিক দিন
ব্যবহারে তারও ক্ষয় হয়, স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাও তাতে কাজ করে না। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত¡
প্রতিষ্ঠানগুলো এর খুব ভালো দৃষ্টান্ত। এসব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ত¡ করা হয়েছিল স্বাধীনতার পরপরই।
তারপর থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তিগত কোন উন্নয়ন ঘটনো হয়নি, এমনকি যে মেশিনপত্র
ব্যবহার করা হতো ৩০ বছর আগে সেগুলোরও পুনঃস্থাপন করা হয়নি। ব্যবস্থাপনারও কোন
উন্নয়ন করা হয়নি। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রমান¦য়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে
লোকসান।
৪. সম্পর্কিত দ্রব্যাদির দাম
চাহিদার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, সম্পর্কিত দ্রব্যাদির দাম চাহিদার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব
ফেলে। অবশ্য এখানে সম্পর্ক কেমন তার উপর নির্ভর করে ফলাফল কেমন হবে। নির্দিষ্ট কোন
প্রযুক্তিগত অগ্রগতির
একটি সহজ অর্থ হলো,
কম খরচে কম সময়ে
কম পরিশ্রমে আরও
বেশি উৎপাদনের
ক্ষমতা তৈরি হওয়া।
এর ফলে যুক্তিসঙ্গত
কারণেই একক প্রতি
উৎপাদন ব্যয় কমে
যায়।

পণ্যের যোগানের ক্ষেত্রেও সম্পর্কিত দ্রব্যাদির দাম গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। সম্পর্কিত দ্রব্য যদি
বিকল্প হয় তবে তার দাম বৃদ্ধি ঐ পণ্যের যোগান বাড়াবে ফলে এই পণ্যের যোগান কমে যাবার
সম্ভাবনা দেখা দেবে, আবার কোন সম্পূরক দ্রব্যের দাম যদি বাড়ে তাহলে সাথে সাথে তা এই
পণ্যের দামেরও বৃদ্ধি ঘটাবে এবং তাতে তার যোগান বাড়ানোর ক্ষেত্রে উৎপাদকদের উৎসাহিত
করবে।
৫. সরকারী নীতি
বাজার অর্থনীতিতে যদিও “আদর্শ অবস্থায়” সরকারের কোন ভ‚মিকা থাকবার কথা নয় তবুও
বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখি যে, বাজার অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে সরকারের ভ‚মিকা
সবসময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পনীতি, আমদানি-রপ্তানি নীতি, মুদ্রানীতি কিংবা অবকাঠামো উন্নয়ন
বা বিদেশে বাজার তৈরির ব্যবস্থা ইত্যাদি পণ্যের যোগানের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।
৬. বিশেষ প্রভাব
বিশেষ প্রভাব যেমন চাহিদার গঠন ও মাত্রাকে প্রভাবিত করে তেমনি তা একইভাবে যোগানকেও
প্রভাবিত করে। কোন উৎসব, ধর্মীয় উপলক্ষ্য বা জাতীয় ঘটনা ধরে যখন নির্দিষ্ট কিছুজিনিসের
প্রতি মানুষের চাহিদা কিছুসময়ের জন্য হলেও বেড়ে যায় তখন এসব দ্রব্যের উৎপাদক বা
যোগানদাররাও এগুলো অধিক হারে উৎপাদন করতে বা যোগান বাড়াতে উৎসাহিত হন। এটা
ফেব্রæয়ারি মাসে প্রকাশকদের গ্রন্থ প্রকাশ, ঈদের সময় পোশাক বা খাবার যোগান, বৃষ্টির সময়
ছাতা, শীতের সময় গরম কাপড় থেকে শুরু করে জনসভা বা মেলা বা ওয়াজ মাহ্ফিলে বাদাম বা
শসা বা অন্যকোন খাবারের দোকানের বৃদ্ধি পর্যন্ত একইভাবে দেখা যায়।
একটি নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা ও যোগানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ ও প্রভাব
নিচের ছকে আমরা দেখছি একটি নির্দিষ্ট পণ্যের এক একটি ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ফলে একই সময়ে
তার চাহিদা ও যোগানের উপর কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।
ছক ৫ : চাহিদা ও যোগানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ ও প্রভাব
অন্যান্য সবকিছু অপরিবর্তিত রেখে
যেকোন একটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন
চাহিদার উপর প্রভাব যোগানের উপর প্রভাব
ঐ পণ্যের দাম বৃদ্ধি
ঐ পণ্যের দাম হ্রাস
বিকল্প পণ্যের দাম বৃদ্ধি
বিকল্প পণ্যের দাম হ্রাস
সম্পূরক পণ্যের দাম বৃদ্ধি
সম্পূরক পণ্যের দাম হ্রাস
পণ্যের উৎপাদন উপকরণের দাম বৃদ্ধি
পণ্যের উৎপাদন উপকরণের দাম হ্রাস
প্রযুক্তির বিকাশ
গড় আয় বৃদ্ধি
চাহিদা হ্রাস
চাহিদা বৃদ্ধি
চাহিদা বৃদ্ধি
চাহিদা হ্রাস
চাহিদা হ্রাস
চাহিদা বৃদ্ধি
চাহিদার হ্রাস (দাম বৃদ্ধির কারণে)
চাহিদার বৃদ্ধি (দাম হ্রাসের কারণে)
চাহিদার বৃদ্ধি (উৎপাদনশীলতার বৃদ্ধি)
চাহিদা বৃদ্ধি
যোগান বৃদ্ধি
যোগান হ্রাস
যোগান বৃদ্ধি
যোগান হ্রাস
যোগান হ্রাস
যোগান বৃদ্ধি
যোগান হ্রাস (ব্যয় বৃদ্ধির কারণে)
যোগান বৃদ্ধি (ব্যয় হ্রাসের কারণে)
যোগান বৃদ্ধি
যোগান বৃদ্ধি
উপরের ছক থেকে দেখা যাচ্ছে, দাম হ্রাস বা বৃদ্ধির সঙ্গে চাহিদার বিপরীত সম্পর্ক ও যোগানের
একমুখী সম্পর্ক থাকলেও তা কার্যকর হবার পেছনে নানা প্রক্রিয়া কাজ করে। অন্যান্য উপাদানের
প্রভাবও এখানে খুবই গুরুত্বপুর্ণ।
দাম ছাড়া চাহিদা গড় আয়, বাজারের আয়তন, সম্পর্কিত দ্রব্যাদির দাম, পছন্দ বা অগ্রাধিকারের
ধরন, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি দ্বারা নির্ধারিত হয়। অন্যদিকে যোগান উৎপাদন ব্যয়, উৎপাদন উপকরণের

দাম, সম্পর্কিত দ্রব্যাদির দাম, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, বাজার, সরকারী নীতি ইত্যাদি উপাদান দ্বারা
প্রভাবিত হয়। চাহিদা ও যোগানে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের আবহাওয়া, খাদ্যাভাস, ধর্ম, উৎসব,
বিশেষ দিবস অনেকখানি ভ‚মিকা পালন করে।


সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিন
১. বাজারের আয়তন কিসের উপর নির্ভর করে?
ক. পণ্যের পরিমাণ খ. মানুষের ক্রয়ক্ষমতা
গ. মানুষের ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষা ঘ. বাজারের অবস্থান
২. উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পেলেক. যোগান বাড়ে খ. চাহিদা বাড়ে
গ. যোগান ও চাহিদা ভারসাম্য হয় ঘ. চাহিদা কমে
৩. বিদ্যুৎ-এর লোডশেডিং কি প্রভাব ফেলে?
ক. সঞ্চয় বাড়ায় খ. স্বস্তি আনে
গ. উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করে ঘ. অর্থনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. একটি অর্থনীতিতে চাহিদা তৈরি হবার পেছনে কি কি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে?
২. “অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে”-এই শর্তটি একটি চাহিদা ও যোগান বিধির জন্য কেন
গুরুত্বপূর্ণ?
৩. একটি নির্দিষ্ট দ্রব্যের একটি ক্ষেত্রের পরিবর্তনের ফলে চাহিদা ও যোগানের উপর যে প্রভাব পড়ে, সেটি ছকের মাধ্যমে দেখান।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. গড় আয় ও বাজারের আয়তন চাহিদা নিরূপণে কি ভ‚মিকা পালন করতে পারে, বাংলাদেশের
অভিজ্ঞতা মনে রেখে তা আলোচনা করুন।
২. অন্যান্য দ্রব্যের দাম কোন পণ্যের চাহিদা ও যোগানকে কিভাবে প্রভাবিত করে উদাহরণসহ আলোচনা করুন।
৩. বাংলাদেশের বিশেষ কয়েকটি উপলক্ষ আলোচনা করুন যেগুলো বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা ও যোগান নির্ধারণে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]