বাংলাদেশের শিক্ষা কমিশন
জাতীয় শিক্ষা কমিশন (১৯৭২) বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদাকে চেয়ারম্যান করে ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই গঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’। ১৯৭২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কমিশনের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চেয়ারম্যানের নামানুসারে এই কমিশন কুদরত-ই-খুদা কমিশন নামেও পরিচিতি পায়। কমিশন প্রশ্নমালার আকারে শিক্ষিত এলিট শ্রেণীর লোকদের নিকট থেকে মতামত গ্রহণ করে, এবং ঐসব মতামত সতর্কতার সঙ্গে যাচাই বাছাই করে প্রণীত রিপোর্টে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের সুপারিশ করে। কমিশন ১৯৭৪ সালের ৩০ মে সরকারের নিকট রিপোর্ট পেশ করে।
দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের উপর ভিত্তি করে কমিশন তার রিপোর্ট প্রণয়ন করে। এই রিপোর্ট প্রণয়নে সমসাময়িক বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতও বিবেচনায় আনা হয়। কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষার সকল স্তরে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা চালু এবং ভবিষ্যত কর্ম-সংশ্লিষ্ট কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এতে শিক্ষার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কতিপয় বড় ধরণের পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়।
কমিশনের মতে প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ হবে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মোট আট বছর এবং মাধ্যমিক শিক্ষার মেয়াদ হবে নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মোট চার বছর। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি চার বছর মেয়াদী সম্মিলিত ডিগ্রি কোর্স এবং এক বছরের মাস্টার্স কোর্স চালু হবে। কমিশন প্রাথমিক স্তরে সর্বজনীন ও অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন, প্রচলিত অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা (১ম থেকে ৫ম শ্রেণী) ১৯৮০ সালের মধ্যে বাধ্যতামূলক করণ এবং ১৯৮৩ সাল নাগাদ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করে। প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় এনে নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করে পনের বছর বয়স পর্যন্ত তাদের শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়।
কমিশন রিপোর্টে মাধ্যমিক স্তরে সমন্বিত বহুমুখী কোর্স চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা হবে যুগপৎ তিন বছর মেয়াদী বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং চার বছর মেয়াদী সাধারণ শিক্ষা। মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা হবে অধিকাংশ ছাত্রের জন্য প্রান্তিক বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং স্বল্পসংখ্যক ছাত্রের জন্য উচ্চশিক্ষার প্রস্ততিমূলক স্তর। প্রান্তিক বৃত্তিমূলক শিক্ষা মোটামুটি একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এবং সাধারণ শিক্ষা দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এরূপে নবম শ্রেণী থেকে পাঠক্রম দুটি ভাগে বিভক্ত হবে: (ক) বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও (খ) সাধারণ শিক্ষা।
কারিকুলাম, সিলেবাস ও পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে কমিশন প্রাথমিক স্তরের জন্য সমরূপ কারিকুলাম চালুর সুপারিশ করেছে। কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য এডুকেশন্যাল রিসার্চ বোর্ড প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছে।
কমিশন উন্নতমানের মূল্যায়ন পদ্ধতির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার সকল স্তরে ছাত্রদের পড়াশুনার মান মূল্যায়নের ক্ষেত্রে লেটার গ্রেডিং পদ্ধতি প্রয়োগের সুপারিশ করেছে। সাধারণ ও বৃত্তিমূলক উভয় কোর্সের ছাত্ররা দশম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়নের পর পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে এবং সার্টিফিকেট পাবে।
দশম শ্রেণীর কোর্স সমাপ্তির পর সাধারণ কোর্সের ছাত্ররা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য নির্ধারিত বহুমুখী সাধারণ কোর্সের মধ্যে একটি কোর্স নির্বাচন করবে, এবং দ্বাদশ শ্রেণীর কোর্স সমাপ্ত করে তারা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবে। দ্বাদশ শ্রেণীর কোর্স সমাপ্তি শেষে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং উত্তীর্ণ ছাত্ররা সার্টিফিকেট লাভ করবে। বৃত্তিমূলক কোর্সের ছাত্ররা তাদের নবম ও দশম শ্রেণীতে পঠিত কোর্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাদশ শ্রেণীতে এক বছর বিশেষ প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর তাদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্পূর্ণ করবে। একাদশ শ্রেণীতে প্রশিক্ষণের পর তারা পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে এবং সার্টিফিকেট পাবে। বৃত্তিমূলক কোর্সের ছাত্ররা দশম শ্রেণীর বৃত্তিমূলক কোর্স সমাপ্তির পর দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে চাইলে তাদের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে যোগদানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। কোনো ছাত্র দশম বা একাদশ শ্রেণীর কোর্স সমাপ্ত করে সংশ্লিষ্ট বৃত্তিমূলক বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হলে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে।
কমিশন দৃঢ় মত প্রকাশ করেছে যে, মেয়েদের শিক্ষা এমন হতে হবে যা তাদের গার্হস্থ্য জীবনে সহায়ক হয়, এবং তাদের পাঠক্রমের মধ্যে অবশ্যই শিশুপালন, রুগীর সেবা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টি প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কমিশন আরো সুপারিশ করে যে, মেয়েদের ‘তাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী পেশায়’ নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে, যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, নার্সিং ও টাইপিং।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ