জাতীয় সংসদের নেতা/বিরোধী দলীয় নেতা
সংসদীয় কমিটি আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাব মূল্যায়ন এবং সরকারের নির্বাহী বিভাগের কর্মকান্ড সমীক্ষার উদ্দেশ্যে সংসদ-সদস্যদের নিয়ে গঠিত কমিটি। পৃথিবীর অধিকাংশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ই এ ধরনের সংসদীয় কমিটি রয়েছে। এ কমিটিগুলো জাতীয় সংসদ সদস্যদের কার্যত কর্মব্যস্ত রাখে; নিজেদের তারা সংসদের কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন এবং নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ব্যাপারেও তারা সজাগ থাকেন।
বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় কমিটি গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সংবিধানের ৭৬ অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদকে সরকারি অর্থ কমিটি এবং বিশেষ অধিকার কমিটিসহ বেশ কিছু সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এসব কমিটির কাজ হচ্ছে আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিল বিবেচনা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনা এবং সঠিকভাবে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের বিষয় পর্যালোচনা করা। সংসদ কর্তৃক প্রণীত কার্যপ্রণালী বিধিমালা দ্বারাই এসব কমিটির প্রায়োগিক দায়দায়িত্ব, সামগ্রিক কর্মতৎপরতা এবং কার্যপরিধি নির্দেশিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এসব কমিটির আওতায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উপ-কমিটি গঠনেরও বিধান রয়েছে। সংসদে স্থায়ী কমিটিগুলো হলো মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি, অর্থ ও হিসাব নিরীক্ষা কমিটি এবং অপরাপর স্থায়ী ধরনের কমিটি। তবে বাছাই কমিটি ও বিশেষ বিষয় সম্পর্কিত কমিটিগুলো এদের থেকে আলাদা।
স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ সংসদ কর্তৃক নিযুক্ত হতে পারেন অথবা স্বয়ং স্পিকার তাদের মনোনয়ন দিতে পারেন। অর্থবিষয়ক কমিটি এবং বিশেষ অধিকার কমিটি, সরকারি আশ্বাস সংক্রান্ত কমিটি, কার্যপ্রণালী বিধিমালা কমিটি ও বেসরকারি সদস্য বিল সংক্রান্ত কমিটিসহ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের সংসদ নিয়োগ দিয়ে থাকে। অন্যদিকে পিটিশন ও লাইব্রেরি সম্পর্কিত কমিটিসহ হাউজ কমিটি ও কার্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা স্পিকার কর্তৃক মনোনীত হন। কমিটিগুলির বৈঠক, তাদের আলোচনা ও শুনানি কার্যক্রম পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হয়। সাংবিধানিকভাবেই সংসদ ইচ্ছা করলে আইন করে কোন সংসদীয় কমিটি বা কমিটিসমূহের উপর এমন ক্ষমতা ন্যস্ত করতে পারে, যে ক্ষমতাবলে সে কমিটি বা কমিটিসমূহ নির্দিষ্ট কোন ঘটনা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি হাজির করতে বা সাক্ষীদের সশরীরে উপস্থিত হতে বাধ্য করতে পারে। সংসদীয় কমিটিগুলোর বৈঠকের কোরাম গঠনের জন্য কমিটির এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতি প্রয়োজন। বৈঠকের আলোচ্যসূচির উপর কমিটির উপস্থিত অধিকাংশ সদস্যই সাধারণত বক্তব্য রাখেন। বৈঠকে কোনো বিষয় নিয়ে ভোটাভুটির ক্ষেত্রে পক্ষ ও বিপক্ষের ভোট সমান হলে বৈঠকের সভাপতি যেকোন পক্ষে তার কাস্টিং ভোট প্রদান করতে পারেন। কমিটিগুলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে এবং অধিবেশন চলাকালে সংসদে তা উপস্থাপন করে।
স্থায়ী কমিটিগুলো দৈনন্দিন সংসদীয় কার্যক্রমসহ সংসদ-সদস্যদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা, নির্বাহী সরকারের অর্থ পরিচালন নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সুনির্দিষ্ট কোন বিষয় বা ঘটনার উপর নিরীক্ষা চালানোর মতো বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। অন্যদিকে কেবলমাত্র প্রস্তাবিত বিলসমূহের উপর কাজ করার জন্যই এডহক ভিত্তিতে বাছাই কমিটি নিয়োগ করা হয়। নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে সেগুলোর উপর রিপোর্ট প্রদানের জন্যই অস্থায়ী ভিত্তিতে বিশেষ কমিটিগুলো গঠন করা হয়। মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলো নির্বাহী সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে। এছাড়া অধিবেশন চলাকালে বিভিন্ন সময়ে সংসদ যেসব বিল বা বিষয় তাদের বরাবরে পাঠায়, তারা সেগুলোও পর্যালোচনা করে। প্রশাসনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য প্রতিমাসে এই কমিটিগুলোর অন্তত একবার বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা।
অর্থ ও হিসাব নিরীক্ষা কমিটি সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনার উপর নজরদারির দায়িত্ব পালনের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত। এভাবেই একজন সংসদ-সদস্যের সভাপতিত্বে সরকারি হিসাব কমিটি সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বার্ষিক হিসাবপত্রের উপর নিরীক্ষাকার্য সম্পাদন করে। অনুরূপভাবে সরকারের এসব সংস্থার আর্থিক ব্যয় ব্যবস্থাপনা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দেওয়া অনুমোদন অনুযায়ী সঠিকভাবে পরিচালিত হয়েছে কিনা বা কোথাও কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা তাও এ কমিটি নির্দেশ করে। তাছাড়া এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সুপারিশ এবং প্রতিকারের ব্যবস্থাও কমিটির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়। ব্যয় প্রাক্কলন কমিটি সারা বছর ধরে সরকারের বার্ষিক ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সরকার পরিচালনায় আর্থিক ব্যয় সংকোচন ও দক্ষতার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবপত্র এবং রিপোর্ট সরকারি অঙ্গীকার সংক্রান্ত কমিটি কর্তৃক পর্যালোচিত হয়। এ পর্যালোচনায় কমিটি সরকারি দপ্তরসমূহের হিসাবপত্র এবং সরকারের প্রচলিত নীতিমালার মধ্যকার ব্যবধানের চিত্রটি তুলে ধরে। অন্যান্য স্থায়ী কমিটি যেসব বিষয়ের সঙ্গে জড়িত, তার মধ্যে রয়েছে সংসদ-সদস্যদের অধিকার ও রেয়াতের বিষয়, আর্জিতে প্রদত্ত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, সরকারি বিল উপস্থাপনে সময় বরাদ্দের বিষয়, বেসরকারি সদস্য বিল, সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে কর্মকান্ড পরিচালনার নিয়মকানুন ও রীতিনীতি, পাঠাগার সুবিধার সম্প্রসারণ এবং সংসদ-সদস্যদের জন্য আবাসিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা।
সংসদীয় কমিটি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। স্থায়ী কমিটি বৈঠকে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে নিজেদের সম্পাদিত কর্মকান্ডের ব্যাখ্যা প্রদান এবং ক্ষেত্রবিশেষে সংশ্লিষ্ট কমিটির সামনে প্রয়োজনীয় তথ্য পেশ করে থাকেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মকান্ডের উপর নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে জনপ্রতিনিধিগণ রাষ্ট্র পরিচালনার বাস্তব চিত্র সম্পর্কে নিজেদের ওয়াকেবহাল রাখার সুযোগ পান। হিসাব ও সরকারি ব্যয়ের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে আর্থিক কমিটিগুলো সরকারের আর্থিক ক্ষমতা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা নিরূপণ করে। একই সঙ্গে অনুমোদিত রীতিনীতি অনুযায়ী সরকারি অর্থ ব্যয় হয়েছে কিনা তাও যাচাই করে।
জাতীয় সংসদ বরাবরই এর কমিটি কাঠামো বিন্যাস করে আসছে। প্রথম সংসদের অধীনে ১৪টি কমিটি গঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয় সংসদে কমিটির সংখ্যা ছিল ৫১, স্বল্প মেয়াদী তৃতীয় সংসদে ৬ এবং চতুর্থ সংসদে ৪৮ টি। সময়ের পরিবর্তন ও রাষ্ট্রীয় কার্যপরিধি বৃদ্ধির কারণে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সংখ্যা পঞ্চম সংসদের অধীনে ৫৩ এবং সপ্তম সংসদে ৪৮-এ দাঁড়ায়। একই সঙ্গে উপ-কমিটির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সপ্তম সংসদ গঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর প্রধান ছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিগণ। সপ্তম সংসদের পঞ্চম অধিবেশনেই কার্যপ্রণালী বিধিতে একটি সংশোধনী গৃহীত হয়। এ সংশোধনী অনুযায়ী স্থায়ী কমিটির সবগুলোতেই মন্ত্রীদের পরিবর্তে সংসদ-সদস্যদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। নির্বাহী বিভাগের কাছ থেকে কার্যকরভাবে জবাবদিহিতা আদায়ে কমিটিগুলোকে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অষ্টম সংসদে স্ট্যান্ডিং কমিটির সংখ্যা ছিল ৪৮ এবং ২০০৬ সালের জুলাই পর্যন্ত এ সংসদে ১৩১ টি উপ-কমিটি গঠন করে। এসব কমিটি ও উপ-কমিটি অক্টোবর ২০০১ থেকে জুলাই ২০০৬ পর্যন্ত সময়ে যথাক্রমে ১১৫৭ এবং ৪২১ টি সভায় মিলিত হয়। উক্ত সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত কমিটি ১২ টি প্রতিবেদন পেশ করে। ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে নবম জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার পর সংসদে দলীয় প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে সংসদের সমন্বয়ে ৪৮ টি কমিটি গঠন করা হয় এবং এসব কমিটির দুটির প্রধান হিসেবে বিরোধী দলীয় সাংসদ রয়েছেন।
অবশ্য, বাংলাদেশের সংসদীয় কমিটিগুলো এখন পর্যন্ত বিল পরীক্ষন, নির্বাহীর কার্যক্রমের তদারকী এবং সরকারের আচরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদের দক্ষ হাতিয়ার হিসেবে গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি প্রধান সমস্যা দৃশ্যমান হয়েছে, যেমন, অনিয়মিত কমিটি সভা, অপর্যাপ্ত উপস্থিত, সংসদের কার্যপ্রনালী বিধির সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাব, কমিটি সদস্যদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি, বিচার বিভাগীয় বিষয়ে নির্বাহী নিয়ন্ত্রন, কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্বাহীদের অনীহা, লজিস্টিক সহায়তার স্বল্পতা, ইত্যাদি। সংসদীয় কমিটিগুলোর অর্থপূর্ণ কর্মকান্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতা নির্মান, কমিটি কাঠামোতে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা এবং কমিটি প্রক্রিয়ায় জনমত ও সিভিল সমাজের সংশ্লিষ্টতা বিশেষভাবে জরুরী।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ