বিচার বিভাগ বাংলাদেশের বিচার বিভাগ মূলত উচ্চতর বিচার বিভাগ (সুপ্রিম কোর্ট) ও অধস্তন বিচার বিভাগ (নিম্ন আদালতসমূহ) এ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত।
সুপ্রিম কোর্ট সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবং এটি দুটি বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত, যথা হাইকোর্ট বিভাগ ও আপীল বিভাগ। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও প্রত্যেক বিভাগের বিচারপতিদের সমন্বয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত। সংবিধানের বিধান সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকগণ বিচার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগ দান করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্য থেকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের নিয়োগ করা হয়।
হাইকোর্ট বিভাগ বিচারকার্য পর্যালোচনার ক্ষমতার অধিকারী। যেকোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ প্রজাতন্ত্রের যেকোন কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিসহ যেকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর সংবিধানে প্রদত্ত যেকোন মৌলিক অধিকার কার্যকর করার নির্দেশনা বা আদেশ জারি করতে পারে। হাইকোর্ট মৌলিক অধিকারসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যদি দেখতে পায় যে, কোনও আইন মৌলিক অধিকার বা সংবিধানের অন্য যে কোন অংশের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তাহলে সে আইনের ততটুকু অকার্যকর ঘোষণা করতে পারে যতটুকু অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কোম্পানি, এডমিরালটি, বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়, ট্রেডমার্ক ইত্যাদি সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রেও হাইকোর্টের মৌলিক এখতিয়ার রয়েছে। অধস্তন আদালতে বিচারাধীন কোনও মামলার ক্ষেত্রে যদি সংবিধানের ব্যাখ্যা সম্পর্কিত আইনের প্রশ্ন বা জনগুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয় দেখা দেয়, তাহলে হাইকোর্ট সে মামলা অধস্তন আদালত থেকে প্রত্যাহার করে তার নিষ্পত্তি করতে পারে।
হাইকোর্ট বিভাগের আপিল বিবেচনা ও পর্যালোচনার এখতিয়ার রয়েছে। হাইকোর্ট যদি এ মর্মে প্রত্যয়ন করে যে, হাইকোর্টে প্রদত্ত কোনও রায়, ডিক্রি, আদেশ বা দন্ডাদেশের সঙ্গে বাংলাদেশ সংবিধানের ব্যাখ্যার ব্যাপারে আইনের প্রশ্ন জড়িত, বা হাইকোর্ট কোনও ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা আদালত অবমাননার দায়ে শাস্তি প্রদান করেছে, তাহলে ওই সব রায়, ডিক্রি, আদেশ বা দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করা যাবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগই রেকর্ড আদালত। ১৯২৬ সালের আদালত অবমাননা আইনের অধীনে যেকোন আদালত অবমাননার মামলা তদন্ত করা ও শাস্তি প্রদানের আইনগত এখতিয়ার উভয় বিভাগেরই রয়েছে। আপিল বিভাগের ঘোষিত আইন মেনে চলা হাইকোর্ট বিভাগের জন্য অবশ্য পালনীয় এবং সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের যেকোনটির ঘোষিত আইন মেনে চলা সকল অধস্তন আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক। দেশের সকল নির্বাহী ও বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টকে সহায়তা দান করবে। জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত যেকোন আইনের অধীনে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের কর্মকান্ড ও কার্যপ্রণালী পরিচালনার বিধিবিধান তৈরি করে। কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে যেকোন কার্য সম্পাদনের জন্য সুপ্রিম কোর্ট দুই বিভাগের যেকোন একটিকে বা এক বা একাধিক বিচারককে দায়িত্ব দিতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেন প্রধান বিচারপতি বা তাঁর দ্বারা দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য বিচারক বা কর্মকর্তাগণ। কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকুরির শর্তাবলি নির্ধারণের জন্য সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে সুপ্রিম কোর্টের প্রণীত বিধানাবলির অনুসরণে সুপ্রিম কোর্ট কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ করে থাকে। সকল অধস্তন আদালত ও আইন দ্বারা গঠিত ট্রাইব্যুনাল তত্ত্বাবধানের ক্ষমতা থাকে হাইকোর্ট বিভাগের হাতে।
অধস্তন দেওয়ানি বিচার বিভাগ অধস্তন দেওয়ানি আদালত চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত, যথা সহকারি জজের আদালত, সাবজজ আদালত, অতিরিক্ত জজের আদালত এবং জেলা জজের আদালত। প্রত্যেক জেলার বিচার বিভাগের প্রধান হলেন জেলা জজ। পার্বত্য জেলাসমূহে পৃথক কোনও দেওয়ানি আদালত নেই; সেসব জেলায় ম্যাজিস্ট্রেটগণ দেওয়ানি আদালতের কার্য সমাধা করেন। হাইকোর্ট বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীনে প্রতিটি জেলার সকল দেওয়ানি আদালত পরিচালনার দায়িত্ব থাকে জেলা জজের হাতে। জেলা জজ প্রধানত আপিল মামলা বিচারের এখতিয়ার রাখেন, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁর মূল মামলার বিচার এখতিয়ারও রয়েছে। অতিরিক্ত জজের বিচার এখতিয়ার জেলা জজের এখতিয়ারের সঙ্গে সমবিস্তৃত ও যৌথ। তিনি জেলা জজ কর্তৃক নির্ধারিত মামলার বিচারকার্য সম্পাদন করেন। সহকারি জজ ও অধস্তন বিচারকদের প্রদত্ত রায়, ডিক্রি ও আদেশের বিরুদ্ধে আপিল পেশ করা হয় জেলা জজের আদালতে। একইভাবে সহকারি জজদের প্রদত্ত রায়, ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তির জন্য জেলা জেজ সেগুলি অধস্তন আদালতে স্থানান্তর করতে পারেন। অধস্তন আদালতগুলোর হাতেই থাকে মূলত মূল দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তির অবাধ এখতিয়ার।
উত্তরাধিকারী ও উত্তরাধিকার নির্ধারণ, বিবাহ, বর্ণ বা ধর্মীয় রীতিনীতি সম্পর্কিত মামলার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দেওয়ানি আদালতগুলো মামলার পক্ষ মুসলমান হলে মুসলিম আইন এবং পক্ষ হিন্দু হলে হিন্দু আইনের মাধ্যমে বিচারকার্য সম্পন্ন করে। আইনসভা কর্তৃক প্রণীত কোন বিধিবলে ওই সব আইন পরিবর্তন বা বিলোপ না করা পর্যন্ত তা কার্যকর থাকে।
অর্থ ঋণ আদালত অর্থ ঋণ আদালত আইন ১৯৯০-এর অধীনে সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে অর্থ ঋণ আদালত স্থাপন করেছে। সরকার সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এসব আদালতের বিচারক হিসেবে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ করে। ব্যাংক, বিনিয়োগ করপোরেশন, গৃহনির্মাণ অর্থায়ন প্রতিষ্ঠান, লিজিং কোম্পানিসমূহ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত আইন ১৯৯৩-এর বিধানাবলি অনুসারে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ঋণ সংক্রান্ত সকল মামলা অর্থ ঋণ আদালতে দায়ের করতে হয় এবং শুধুমাত্র এ আদালতই এসব মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন করে। অর্থ ঋণ আদালত একটি দেওয়ানি আদালত। দেওয়ানি আদালতের সকল ক্ষমতাই এ আদালতের রয়েছে।
দেউলিয়া আদালত এ আদালত দেউলিয়া আইন ১৯৯৭-এর অধীনে গঠিত। প্রত্যেক জেলায় জেলা আদালতই হচ্ছে ঐ জেলার দেউলিয়া আদালত। জেলা জজ এ আদালতের প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। জেলার সীমানায় দেউলিয়া মামলাগুলি নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পিত। প্রয়োজনবোধে তিনি একজন অতিরিক্ত (জেলা) জজের উপরও অনুরূপ মামলার বিচারকার্যের দায়িত্ব অর্পণ করতে পারেন।
অধস্তন ফৌজদারি ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অধস্তন ফৌজদারি আদালত পাঁচটি শ্রেণীতে বিভক্ত, যথা দায়রা আদালত, মহানগর হাকিমের আদালত, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এবং তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তিনটি পার্বত্য জেলায় দায়রা আদালতের কাজ করেন বিভাগীয় কমিশনার। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মহানগর পৌর এলাকার জন্য মহানগর দায়রা আদালত গঠন করা হয়।
প্রতিটি থানায় ম্যাজিস্ট্রিয়াল কার্যাদি সম্পাদনের জন্য ন্যূনপক্ষে একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকেন। এ কাজের জন্য সরকার সাধারণত তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারের একজন জুনিয়র সিভিল সার্ভেন্টকে নিয়োগ দিয়ে থাকে। অবশ্য সিভিল সার্ভেন্ট নন এমন যেকোন সম্মানিত ব্যক্তির হাতেও সরকার ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতা অর্পণ করতে পারে। বেতনভুক সিভিল সার্ভেন্ট ম্যাজিস্ট্রেট থেকে পৃথক এ ধরনের ম্যাজিস্ট্রেটদের বলা হয় অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট (জাস্টিস অব দ্য পিস)।
প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল কোনও আইনবলে বা কোনও আইনের দ্বারা সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত সম্পত্তি বা সরকারের ব্যবস্থাপনাধীন সম্পত্তি, প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনও ব্যক্তির চাকুরির শর্তাবলি ইত্যাদি সম্পর্কে উদ্ভূত বিষয়াদি নিষ্পত্তির আইনগত এখতিয়ার দিয়ে জাতীয় সংসদ আইনবলে এক বা একাধিক প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টসুপ্রিম কোর্ট শুধু কলকাতা শহর ও কোম্পানি কর্তুক পরিচালিত কুঠিগুলির জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি বিচারিক আদালত। রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৭৩ সালে। বিচার প্রশাসন সম্পর্কিত সুপ্রিম কোর্ট যা সাধারণভাবে সুপ্রিম কোর্ট বা কলকাতা সুপ্রিম কোর্ট হিসেবে পরিচিত হয়। আরো অতিরিক্তকিছু ব্যবস্থাসহ সুপ্রিম কোর্ট প্রাক্তন মেয়র’স্ কোর্টের স্থলাভিষিক্ত হয়। একজন প্রধান বিচারক ও অন্ততঃপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যারিস্টারদের মধ্য থেকে রাজা কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত তিনজন সহযোগী বিচারক নিয়ে কোর্টটি গঠিত ছিল। ইংল্যান্ডের কিংস বেঞ্চের মতোই এ বিচারকদের কর্তৃত্ব ছিল। সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি এবং অ্যাডভোকেটদের অন্তর্ভুক্তি তাদের হাতে ন্যস্ত ছিল। প্রধান বিচারকদের বার্ষিক বেতন ৮০০০ পাউন্ড স্টার্লিং নির্ধারিত ছিল এবং প্রত্যেক সহযোগী বিচারকের বার্ষিক বেতন ছিল ৬০০০ পাউন্ড স্টার্লিং। সে সময়ের কোম্পানি কর্মচারীদের মতো বাণিজ্যিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ এবং উপঢৌকন গ্রহণ করা তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। ইংরেজ কোর্ট অব চ্যান্সরির মতো সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব ছিল কোর্ট অব ইক্যুয়িটি বা ন্যায় বিচারের নিরপেক্ষ কোর্ট হিসেবে কাজ করা।
সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা এবং অধীনস্থ ফ্যাক্টরির জন্য ওয়ের (Oyer) ও টারমিনার (Terminer) ছিল। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের কারাদন্ড প্রদানের এখতিয়ারও ছিল। একটি উচ্চ আদালত হিসেবে এটি কোর্ট অব রিকোয়েস্ট, কোর্ট অব কোয়ার্টার সেশনস এবং আদালতের মেজিস্ট্রেটদের তত্ত্বাবধান করার আইনগত অধিকারী ছিল। বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যার কোর্ট অব অ্যাডমিরলটি হিসাবে সুপ্রিম কোর্ট এর আওতাধীন গভীর সমুদ্রে সংঘটিত ষড়যন্ত্র, হত্যা, দস্যুতা ইত্যাদির শাস্তি প্রদান করতে পারত। বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যায় বসবাসরত সকল ব্রিটিশ নাগরিক এ কোর্টের আওতাধীন ছিল। কিন্তু রেগুলেটিং অ্যাক্ট এবং রাজকীয় সনদ (Royal Charter) সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ার সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা প্রদান করে তা ছিল বেশ অস্পষ্ট। ফলে সুপ্রিম কোর্ট কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই এর অতিরিক্ত এখতিয়ারের দাবি সম্পর্কে সমালোচনা হয়। নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ইউরোপীয়গণ প্রায়শই এ কোর্টকে ব্যবহার করত। এ ক্ষেত্রে বহুল আলোচিত মহারাজা নন্দ কুমারের আইনি হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। রেগুলেটিং অ্যাক্ট স্থানীয়দের এ কোর্টের আওতার বাইরে রাখলেও অনেক জমিদারের বিচার এর মাধ্যমে করা হয়। রাজস্ব বকেয়ার বিষয়টি কোম্পানি কখনও কখনও ঋণগ্রস্ততা বলে গণ্য করে। ইউরোপীয় এবং স্থানীয়দের মধ্যে ঋণ সম্পর্কিত বিতর্কিত বিষয় সুপ্রিম কোর্টের আওতাধীন ছিল বলে জমিদারগণের রাজস্ব বকেয়াকে অনেক সময় ঋণ হিসেবে ধরা হতো। কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাসরত স্থানীয়দেরকে সুপ্রিম কোর্টের আওতাধীন করা হয়। কিন্তু কলকাতাবাসী নয় এমন বাঙালিদের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বিচার পরিচালনা করেছে এমন ঘটনার দৃষ্টান্তও দুর্লভ নয়।
সুপ্রিম কোর্ট এবং গভর্নর জেনারেলের বিরোধ সমসাময়িকদের মাঝে একটি সাধারণ আলোচিত বিষয় ছিল। রেগুলেটিং অ্যাক্ট গভর্নর জেনারেল এবং কাউন্সিলকে বিভিন্ন আইন, অর্ডিন্যান্স এবং নীতিসমূহ প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করে। ফোর্ট উইলিয়মের বেসামরিক প্রশাসন ও অধীনস্থ ফ্যাক্টরিসমূহে শৃংখলা আনয়ন করা এর উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু শুধু সুপ্রিম কোর্টে রেজিস্ট্রিকৃত আইনসমূহই সুপ্রিম কোর্ট আমলে নিতে পারত। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে প্রচলিত আইনসমূহের বিরোধী কোন আইন যাতে গভর্নর জেনারেল প্রণয়ন করতে না পারেন সে দিকে সুপ্রিম কোর্ট দৃষ্টি দিত। আইন প্রণয়নে যেকোন ধরনের বিশ্বাসভঙ্গতার জন্য জরিমানা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত ছিল। আইন প্রণয়ন ও প্রশাসন সম্পর্কিত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট এবং গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিলের বিরোধ একটি নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ এবং অতিরিক্ত অভিভাবকত্বের বিষয়ে কোম্পানি প্রশাসন সব সময়ই সমালোচনামুখর ছিল। অন্যদিকে কোম্পানি প্রশাসনের সমালোচকরা যেমন, মুক্ত ব্যবসায়ী ও ধর্ম প্রচারকগণ সুপ্রিম কোর্টের তৎপরতাকে আবশ্যকীয় বলে প্রশংসা করে। নিজ মাতৃভূমির আইনের শাসন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেও সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে একটি বণিক নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে তাদের প্রশংসা অর্জন করে।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের অনেক কর্মকান্ড বিতর্ক সৃষ্টি করলেও এটি কোম্পানি শাসনের শেষ সময় পর্যন্ত বহাল ছিল। ১৮৫৮ সালে কোম্পানি বিলুপ্ত করা হলে কলকাতা সুপ্রিম কোর্ট তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলে। সুতরাং ১৮৬১ সালের ভারতীয় হাইকোর্ট অ্যাক্টের মাধ্যমে এর বিলুপ্তি ঘটে। এ আইন গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিলকে সুপ্রিম কোর্টের পরিবর্তে কলকাতা, মাদ্রাজ এবং বোম্বেতে হাইকোর্ট স্থাপনের কর্তৃত্ব প্রদান করে। ১৮৬৫ সালে এ হাইকোর্টসমূহ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিলুপ্তি ঘটে।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ