বিল

বিল

বিল (Beel) বৃহৎ আকৃতির প্রাকৃতিক জলাধার, যেগুলোতে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে অভ্যন্তরীণ ও পৃষ্ঠ নিষ্কাশনের মাধ্যমে বয়ে আসা পানি জমা হয়। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এই অবভূমিগুলো দেখতে পাওয়া যায় এবং এগুলোর অধিকাংশই ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট নিচু ভূসংস্থান ধরনের। বিল শব্দটি বৃহত্তর কুমিল্লা, ফরিদপুর, ঢাকা ও পাবনা জেলাতেই বেশি ব্যবহূত হয়। জলাভূমির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ক্ষুদ্র পিরিচের মতো অবনমনকে বিল বলা হয়। অনেক বিলই শীতকালে শুকিয়ে যায়, কিন্তু বর্ষায় প্রশস্ত, তবে অগভীর জলাধারে পরিণত হয়। এগুলোকে স্বাদুপানির উপহ্রদও বলা যেতে পারে।

সকল বিলের উৎপত্তিগত কারণ একরকম নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে বিলগুলোর অবস্থান নিষ্কাশন রেখা বরাবর হয় এবং অনেকটা নালার মতো দেখা যায়। এই বৈশিষ্ট্য ইঙ্গিত করে যে, বিলটি হয়তো কয়েক শতাব্দী পূর্বে কোন একটি বড় নদীর অংশবিশেষ ছিল, যেটি তার প্রবাহ পরিবর্তন করার ফলেই বিলটি সৃষ্টি হয়েছিল। আবার কখনও কখনও নদীতে শত শত বছর ধরে পলি জমার কারণে নদীর তলদেশ ও পাড় এত উঁচুতে উঠে যায় যে, নদী আশেপাশের এলাকার চেয়ে উঁচু অনুভূমিক তল দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এধরনের এক জোড়া সমান্তরাল নদীর মধ্যবর্তী এলাকাটি এক প্রকারের খাদে পরিণত হয় এবং অবশেষে এটিই বিল নামে     অভিহিত হয়।

বাংলাদেশের সুরমা-মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদীব্যবস্থার সক্রিয় বদ্বীপ এলাকায় বিভিন্ন আকার-আকৃতির প্রচুর বিল দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সম্ভবত এক হাজারেরও বেশি বিভিন্ন আকারের বিল রয়েছে। ঢাকার আড়িয়াল বিল, পাবনার চলন বিল এবং গোপালগঞ্জের গোপালগঞ্জ বিল দেশের সুপরিচিত বড় বিলগুলোর কয়েকটি। বিগত কয়েক দশকে দেশের বড় বড় বিলগুলো যথেষ্ট পরিমাণে সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। চলন বিলকে উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এর আয়তন ছিল ১,০৮৫ বর্গ কিমি, কিন্তু ১৯০৯ সালে এর আয়তন কমে দাঁড়ায় ৩৬৪ বর্গ কিমি-এ, যার মধ্যে কেবল ৮৫ বর্গ কিমি এলাকায় সারা বৎসর পানি থাকত। বর্তমানে তা আরও সংকুচিত হয়ে মাত্র ২৬ বর্গ কিমি হয়েছে।

বর্ষা মৌসুমে বড় বড় বিল এলাকায় চারদিকে পানি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। গ্রামগুলোকে পানির মধ্যে ছোট ছোট চরের মতো মনে হয়। গ্রামগুলো একটি অন্যটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় তখন নৌকাই হয়ে ওঠে যোগাযোগের একমাত্র বাহন। এসব বিল যে সড়ক পরিবহণে গুরুতর অন্তরায় সৃষ্টি করে তা সহজেই অনুমেয়। এরকম অবস্থায় সড়ক নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। অন্তত ৩.০৫ মিটার গভীর পানির চাপ ধারণ করতে পারার মতো উঁচু ও শক্ত বাঁধ দিয়ে সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা সহজ করা যেতে পারে।

বিলগুলো প্রধানত পৃষ্ঠ-জলনিকাশ থেকে সরবরাহ পেয়ে থাকে, তবে কিছু বড় বিল বর্ষা মৌসুমে নদী থেকেও বন্যার জল সরবরাহ পায়। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য আকৃতির বিলগুলো হলো- বড় বিল (পীরগঞ্জ), তাগরাই বিল (কুড়িগ্রাম), লুনিপুকুর (রংপুর), বড় মির্জাপুর, নড়াইল ও কেশপাথার বিল (বগুড়া)। চকচকি, সাবুল, ঘুগরি, কাঞ্চন, মালদা, উৎরাই, হিলনা, কুমার ও সোনা বিল আত্রাই নদীর পুরাতন প্রবাহ পথের উপর বা আশেপাশেই অবস্থিত। দক্ষিণাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য বিলগুলো হলো- বয়রা, ডাকাতিয়া, বড় বিল, কোলা, পটলা, চাতাল ও শ্রীরামপুর বিল। কাতলা, চাতাল, নগরকান্দা, চান্দা ইত্যাদি দেশের মধ্যাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বিল। পূর্বাঞ্চলের বিলগুলো আকারে তুলনামূলকভাবে ছোট। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু বিল বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত হয়ে একটি অন্যটির সঙ্গে একাকার হয়ে যায় এবং তখন এগুলোকে স্থানীয় ভাষায় হাওর বলা হয়। বর্ষার সময় সাধারণত বিলগুলোতে পানির গভীরতা অনেক বেশি থাকে এবং পাড়ের জমিগুলো প্রধানত বোরো বা অন্য কোন জলিধান চাষের জন্য ব্যবহূত হয়। বাঁওড়-এর মতো বিলও গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমির কাজ করে এবং এগুলো মূল্যবান মাছ ও অন্যান্য প্রাণিকূলের আবাসস্থল হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

বিস্তারিত


FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]